Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জব চার্নকের শহর ‘কলকাতা’ ভ্রমণ কড়চা

সদ্য ঘুরে এলাম কলকাতা থেকে। এবার নিয়ে আমার ছ’সাতবার যাওয়া হলো এ শহরটায়। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাসের কারণে কলকাতা শহরকে আমার কাছে খুব কাছের মনে হয়।  ইতিহাস প্রেমী, ভোজন রসিক বা বা বইপোকা যাই হন না কেনো, কলকাতা সফরে আপনি সবটাই পাবেন। আজ আপনাদের সাথে কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি জায়গা আর কলকাতা ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা হয়তো আপনাদের ভ্রমণকেও আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।

যাত্রা পর্ব

কলকাতায় আপনি যেতে পারেন বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে করে। সবচেয়ে সহজ উপায় বিমান যাত্রা, তাই খরচাটাও পড়বে বেশি। তবে এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি আগে থেকে ঠিকমত ফ্লাইট নির্বাচন করতে পারলে বাড়তি অন্তত একটা দিন পেয়ে যাবেন, যেটা বাসে বা ট্রেনে গেলে সম্ভব না। তবে কম খরচে সারতে চাইলে আর হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে বাস বা ট্রেন একদম উপযোগী।

কলকাতার রাস্তা; Image courtesy: ashraful Arefin

হোটেল ব্যবস্থা

কলকাতা পৌঁছানোর পর থাকার ব্যবস্থা বা হোটেল নির্বাচন নিয়ে সবার উদ্বেগ থাকে। আপনি হয়ত স্বাভাবিকভাবেই মনে করবেন, নিউমার্কেটের আশেপাশে যে হোটেলগুলো আছে, তার একটাতে উঠে পড়ি। প্রথমদিকে আমিও তাই করেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, নিউমার্কেটের আশেপাশে না থেকে একটু ভেতরের দিকে হোটেল নির্বাচন করা। কারণ নিউমার্কেটের আশেপাশে মানে মার্কুইস বা সাদ্দার স্ট্রিট বা এর কাছাকাছি হোটেলগুলোতে অসম্ভব চাপ থাকে সারা বছর৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি দু’বার এই বিপদে পড়েছিলাম। সবকিছু ফোনে ঠিক করার পরেও গিয়ে দেখি রুম নেই, এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় আপনি চাইলেও সহজেই আরেকটা মানসম্মত হোটেল খুঁজে পাবেন না।

তাই আমার মতে, নিউমার্কেটের থেকে কিছুটা দূরে থাকুন। একই পয়সায় অনেক ভাল হোটেল পাবেন। আগোডাতে বা বুকিং ডট কমে একটু খুঁজে দেখতে পারেন৷ অনেক ভাল হোটেল কাছাকাছি দামে পেয়ে যাবেন। সাদ্দার স্ট্রিটে (অনেকে সদর স্ট্রিটও বলেন) ‘গোল্ডেন এপেল’ কিংবা পার্ক স্ট্রিটের পার্ক হোটেলে থাকতে পারেন। একটি তিন অথবা চার তারকা হোটেলে থাকা আপনার পুরো ভ্রমণটাকে অনেক আরামদায়ক করে দিতে পারে। রাফি আহমেদ কিদওয়ায়ি রোডেও অনেকগুলো ভাল ভাল হোটেল আছে। এইসব এলাকার সুবিধে হচ্ছে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে শান্তিতে থাকতে পারবেন। পার্ক হোটেল থেকে রাসেল স্ট্রিটের মোড়ে হেঁটে যেতে দু’মিনিট। এরপর টানা রিকশা বা অটোতে চেপে যান না আপনার নিউমার্কেট।

যাতায়াত ব্যবস্থা 

অনেকেই একটা সমস্যার কথা বলেন কলকাতায়। সেটা হলো অত্যধিক ট্যাক্সি ভাড়া। আর অপরদিকে ট্রাম বা বাসের রুট আমাদের জানা নেই। এজন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হচ্ছে উবার। এখানকার উবার চালকেরা কাজের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। চাইলেই পাওয়া যায় যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়। এসি উবারের ভাড়া হলুদ নন-এসি এম্বাসেডরের থেকেও কম। এছাড়া কলকাতার মেট্রো দারুণ একটা জিনিস। অনেক দূরে যেতে পারবেন স্বল্প খরচ আর অল্প সময়ে। 

নতুন ভ্রমণকারীরা কারেন্সি ভাঙ্গানোর জন্য অনেক সময় বিপাকে পড়ে যায়। অনেক জায়গা আছে, তবে সাদ্দার স্ট্রিটের দোকানগুলোই সম্ভবত সবচেয়ে ভাল রেট দেয়। ডলার এবং বাংলাদেশি টাকা- দুটোই ভাঙ্গাতে পারবেন। 

কলেজ স্ট্রিট; Image courtesy: krishanu das

ভ্রমণ পর্ব

দু’শ বছরের পুরনো জব চার্নকের শহরের প্রতিটা অলিতেগলিতে ইতিহাস আক্ষরিক অর্থেই লেপটে আছে। আর এখানেই কোলকাতার মূল আকর্ষণ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এমন কয়েকটা জায়গায় যেতে পারেন। যেমন- মার্বেল প্যালেস, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, পার্ক স্ট্রিটে কুইন্স ম্যানসন, কলেজস্ট্রিট, কফি হাউজ, হাওড়া ব্রিজ, এসপ্ল্যানেড। আমি বেলুড়, দীঘা, ডায়মন্ড হার্বার, শান্তিনিকেতন- এসব জায়গায় যাইনি। কালীঘাটেও নয়। তবে ইচ্ছে আছে সামনের দিনগুলোতে যাব।

এছাড়া আরও আছে অসংখ্য রোড, স্ট্রিট আর লেনের ছড়াছড়ি।

ইতিহাস আর গল্প সাহিত্যের অসংখ্য চরিত্রের স্মৃতিচারণ করা যায় কলকাতা শহরের অলিতে গলিতে। হ্যারিসন রোডে ব্যোমকেশ আর অজিত থাকত। মট লেনে তারানাথ তান্ত্রিক। রজনী সেন রোডে কে থাকত বলুন তো? ঠিক। ফেলুদা আর তোপসে। কিরীটী রায়ের আলিশান বাড়ি টালিগঞ্জে। আর বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনে থাকতেন আমাদের প্রিয় ‘ঘনাদা’। কলেজস্ট্রিট তো শিক্ষার তীর্থ। কী নেই এখানে? প্রেসিডেন্সি কলেজ, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজ, হিন্দু কলেজ, কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, হেয়ার স্কুল। এই এক জায়গাতেই আপনি সবই পাবেন। যখন হেঁটে যাবেন দু’ধারে বইয়ের দোকানগুলোকে রেখে, মনে হবে আপনি ইতিহাসে অধ্যায় পেরুচ্ছেন। আরও আছে বড়বাজার, বউবাজার, ইত্যাদি।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি; Image courtesy: manwar hossain

এছাড়া আছে বিখ্যাত পার্ক স্ট্রিট, যার সরকারী নাম ‘মাদার টেরিজা সরণি’। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট নামেই এর বেশি পরিচয়। পার্ক স্ট্রিট সেমিট্রি হলো বিশ্বের প্রাচীনতম নন-চার্চ সেমিট্রিগুলির একটি। ঊন-বিংশ শতাব্দীতে সম্ভবত এটিই ছিল ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম খ্রিস্টান কবরখানা। তখন এর নাম ছিল ‘বেরিয়াল গ্রাউন্ড রোড’। পরে নাম দেয়া হয় পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিট নামটা  এসেছে সতের শতকের ইংরেজ চীফ জাস্টিস স্যার এলিজাহ’র ডিয়ার পার্ক ছিল এখানে। সেখান থেকেই পার্ক স্ট্রিট।

বাচ্চাদের ঘুরাঘুরির জন্য সবচেয়ে মোক্ষম জায়গা হচ্ছে সাইন্স সিটি। সারাদিন না হোক, তিন-চার ঘণ্টা তো অনায়াসেই কেটে যাবে। কেবল কারে চড়ে একটার পর একটা বিল্ডিং ঘুরে দেখানো যায় বাচ্চাদের। এছাড়া যেতে পারেন বিড়লা প্ল্যানেটরেইয়ামে।

সারাদিনের জন্য আরেকটা অপশন হলো নিক্কো পার্ক। সল্টলেক এলাকায় এই এমিউজমেন্ট পার্কটায় অসংখ্য রাইড পাবেন। বাচ্চাদের পছন্দ হবেই। তবে টিকিটের দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে। সাউথ সিটি মলের টপ ফ্লোরে বাচ্চাদের আরেকটা খেলার জায়গা আছে। পাঁচশ টাকার টিকিটে অনেকগুলো খেলা খেলতে পারবে ওরা। আর বাচ্চারা বই পড়ুয়া হলে, ‘অক্সফোর্ড’ নামের বইয়ের দোকানটায় ঢুকিয়ে দিন। বই পড়বে, খাবে, কিনবে। আমার মতে বাচ্চাদের জন্য আদর্শ একটা জায়গা এই বুকস্টোরটা।

 সাইন্স সিটি; Image courtesy: localguidesconnect.com
 

আপনি যদি বইপোকা হন, তাহলে কলেজস্ট্রিট আপনার কাশী-মক্কা-বেথেলহ্যাম। বই আরে বই, দু’র‍্যাকের মাঝখানে সরু সরু আইল। আর দু’ধারে কাতারে কাতারে বই। একতলা, দু’তলা মিলিয়ে যে কত বই, তা হিসেবের বাহিরে। মোটামুটি ঢাকার থেকে অর্ধেক দামে আপনি আসল বই পাবেন।

বিকেলে চলে যেতে পারেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। ওটার বিস্তৃত লনে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে পারেন। উত্তর ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দু-দিকে দুই প্রকাণ্ড জলাধার একাধারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মনোরম শোভা বর্ধন করে। যে দৃশ্য চাক্ষুষ করে অথবা লেন্স বন্দি করে সব বয়সের প্রেমিকপ্রেমিকা-ই রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে যায়! 

 হাওড়া ব্রিজ; Image courtesy: holidify.com
 

সন্ধ্যার আগেই একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে যেতে পারেন মিলেনিয়াম পার্ক। গঙার ধারে এই জায়গাটা থেকে আপনি হাওড়া ব্রিজ দেখতে পাবেন। এত সুন্দর একটা জায়গা, যা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। এরপর আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামবে।

খাবার পর্ব

কলকাতা আমার যে কারণে সবচেয়ে প্রিয় সেটা হলো এর খাবারের বিচিত্রতা,  সহজলভ্যতা আর অকল্পনীয় সস্তা দাম। কলকাতায় গেলে আমার নজর থাকে রাস্তার পাশে বসে থাকা ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলোর দিকে। কলকাতার স্ট্রীটফুড সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। কলকাতায় গেলে আমার খাবারের তালিকায় ইডলি-দোসা থাকে, পাউভাজি থাকে, সব ধরণের মোমো থাকে, মসলাদার চাউমিন থাকে। ছোট ছোট পাতার কাপে পানিপুরি খাওয়া হয়। গত দু’বার নিজামের রোল খেলাম। আর এইবার নতুন যোগ হলো রয়ালের মাটন চাপ। লুচি আর আলুর দম নিয়ে বলার কিছু নেই। এবার সুযোগ হয়নি, তবে গতবার নিউমার্কেটের এক দোকানে শিক কাবাব আর নান এবং মাটন রেজালা দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। দহি-চাট আরেক অনবদ্য খাবার, থাকে পাপড়ি চাটও। আর মাটির ভাঁড়ের মালাই চায়ের স্বাদ অসাধারণ।

কফি হাউজের ফিশ কাটলেট; Image courtesy: TripAdvisor
 

কফি হাউসে গিয়ে খেয়েছি ফিশ কাটলেট আর কবিরাজি কাটলেট। বর্ধন মার্কেটের সামনের ঘুগনি চাট আর ঝালমুড়ি সেই রকম। এখানে একটা পাপড়িচাঁটওয়ালা আছে, খেয়ে দেখবেন। আর আছে একজন বড়াওয়ালা, এই দোকানে ইংল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড ক্যামেরন পর্যন্ত খেয়ে গিয়েছে। কথাটা কিন্তু একদম সত্যি। দোকানদারের সাথে ক্যামেরনের ছবিও আছে !

এছাড়া হার্টফোর্ড লেনে একটা জুসের দোকান আছে, যেটা আমার খুবই পছন্দের। কলকাতা থাকাকালীন প্রায় প্রতিটা দিন সেখানে যাওয়া হয়। তবে আমি সবচেয়ে তৃপ্তি পাই আখের রস খেয়ে। বরফ দিয়ে ঠাণ্ডা করে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে যখন গ্লাসে করে দেয়, তার স্বাদ অসাধারণ। সাথে আছে হরেক রকমের লাচ্ছি। কোনোটা কেসর দিয়ে, আবার কোনোটা পেস্তাবাদামের স্বাদে।

ডেসার্ট হিসেবে কুলফির বিকল্প নেই। দাম যেহেতু অবিশ্বাস্য সস্তা, সুতরাং লিস্ট ধরে ধরে সবগুলোই খাওয়াই যায়। এছাড়া মিষ্টি যে কত রকমের হতে পারে সেটা আমি ‘হলদিরামে’ গিয়ে টের পেয়েছি। এবার ইচ্ছে ছিল ‘সেন মশাই’ আর হেদুয়ার ‘নকুড় নন্দী’র রাবড়ি চেখে দেখার। আর ছোটবেলার গানে শোনা সেই ‘ভীমনাগের’ সন্দেশ। সময়ের অভাবে সুযোগ করে উঠতে পারিনি। তবে রাবড়ি, রসমালাই আর মাখন ভাসানো লাচ্ছির জন্য ‘রফি আহমেদ কিদোয়াই’ রোডে আমার একটা দোকান ঠিক করা আছে। কলকাতায় এসেছি অথচ সেখানে যাইনি, এমনটা কখনও হয়নি।

পানিপুরি; Image courtesy indiatimes.com
 

এর বাইরে যে অন্য রেস্টুরেন্টে যাইনি, তা নয়। ফ্লুরিসে নাস্তা করা অথবা পিটার ক্যাট বা মোক্যাম্বো বা তুং ফং- এ রাতের খাবার মন্দ লাগেনি। তবে এরকম রেস্টুরেন্ট ঢাকায় অসংখ্য আছে। আমি যেহেতু সচরাচর নিউমার্কেটের আশেপাশেই থাকি, ‘ব্লু স্কাই ক্যাফে’তেই বেশিরভাগ সময় যাওয়া হয়। আর ‘ভোজ কোম্পানী’। মোগলাই ডিশের জন্য ‘আরসালান’ ভাল পছন্দ হতে পারে। আর বাংলা খাবারের জন্য কস্তুরি, প্রিন্স, সোনারগাঁ – এরকম হাজারটা আছে।

এই সব নিয়েই আমার মত করে আমি কলকাতার স্বাদ চাখি। আপনিও দেখতে পারেন।

মুভি পর্ব

সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে আপনি একটা শপিংমলে ঢুকে ফুডকোর্টে খেয়ে নিয়ে ঢুকে পড়ুন ‘আইনক্সে’। যদিও খুব বেশি যাইনি, তবে আমি চারটা জায়গার ব্যাপারে বলতে পারি। ফোরাম, কোয়েস্ট, সাউথসিটি, এক্রোপলিস, লেক মল- এগুলোতে যেতে পারেন। সবগুলোর মুভি থিয়েটারই অনবদ্য। তবে এবারে অভিজ্ঞতা হলো অকল্পনীয়।

মুভি থিয়েটার; Image courtesy: questmall.in
 

সাউথ সিটির ‘ইন্সিগিনিয়া’ থিয়েটারে অন্তত একবার মুভি দেখা উচিৎ। সেখানে প্রত্যেকের জন্য নিজস্ব সিট থাকে, যেটা বসা থেকে শোয়া অব্দি যায় শুধু কয়েকটা বাটনের কারসাজিতে। অনেকটা প্লেনের ফার্স্টক্লাস সিটের মত। ইন্টারমিশনে পপ-কর্ণের জন্য দৌড়াতে হবে না। এটেন্ডেন্টের জন্য বাটন আছে। সেই নিজেই মেন্যু নিয়ে চলে আসবে। আপনি শুধু কষ্ট করে অর্ডারটা দিন। এমনকি ‘পজ’ মেশিন নিয়ে এসে বিলও নিয়ে যাবে। এবারের ভ্রমণের এই ব্যাপারটা ছিল সবচেয়ে উপভোগ্য।

মনে রাখবেন, সব মলের সব হলে কিন্তু এই ব্যবস্থা নেই। সাউথসিটি আর ফোরামের ‘ইন্সিগনিয়া’ থিয়েটারটাতেই শুধু এই ব্যবস্থা আছে। এই মলগুলোতে অন্য থিয়েটারও আছে। সেটা আর দশটা আইনক্সের মত।

কেনাকাটা পর্ব

কলকাতায় যাবেন কেনাকাটার ফর্দটা অনেকটা লম্বাই হবে। তবে আপনার দরকষাকষির ক্ষমতা যদি তেমন জোরালো না হয়, তাহলে ঘা খেয়ে যেতে পারেন। এই ঝামেলাটা এড়াতে চাইলে এবং দামের দিক থেকে স্বাচ্ছন্দ্য পেতে চাইলে সোজা চলে যান আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ে। গড়িয়াহাটারা ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের গা ঘেঁসেই তিনতলার এই বিশাল দোকানটায় হেন শাড়ি আর পাঞ্জাবি নেই যে আপনি পাবেন না। এছাড়া যেতে পারেন ‘নাল্লি’তে। এটার মূল দোকান সম্ভবত দিল্লিতে। বড়বাজারের ‘সুন্দরী’ও আপনার চাহিদা মেটাতে পারবে সহজেই। সুন্দরীর শাখা পার্ক স্ট্রিটেও আছে। এইখানেই পাবেন সারোভার, সারং- এই দোকানগুলো।

নিউ মার্কেট; Image courtesy: Total Travel Guide
 

অল্প দামে দুর্দান্ত সব জামাকাপড়ের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো শেকসপিয়র সরণির (আগের নাম থিয়েটার রোড) ‘ফ্যাশন বিগ বাজার’। এখানে দাম অত্যন্ত সহনীয়। নিউমার্কেট এলাকাতেও অনেকগুলো দোকান পাবেন এই ধরণের। মেয়েরা কুর্তিজাতীয় পোশাকের জন্য চলে যেতে পারেন ভিভা’তে। ক্যামাক স্ট্রিট ধরে এগোলেই ভার্ধান মার্কেট এর পর পর এই দোকানগুলো আছে।সালোয়ার কামিজের জন্য ‘মিলান’ আর ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’। সবগুলোই নিউ মার্কেটের আশেপাশে। ঘড়ি আর সানগ্লাস বা চশমার জন্য যথাক্রমে ‘টাইটান’ এবং ‘টাইটান আই’ই সেরা আমার মতে। দুটোই পার্ক স্ট্রিটে।

পাঞ্জাবি কেনার জন্য কাওয়াই লেনের ‘সুলতানে’ চলে যান। এটা হার্ডফোর্ড লেনে, যেটা সাদ্দার স্ট্রিট আর লিন্ডসে স্ট্রিটকে যুক্ত করেছে। এই লিন্ডসে স্ট্রিটেই নিউমার্কেট। ছোট্ট একটা তথ্য। নিউমার্কেটের আদি নাম হগ মার্কেট। স্যার স্টুয়ার্ট হগের নামানুসারে, এবং এর জন্ম ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে।

আর হ্যাঁ, শ্রী-লেদার। চামড়ার জিনিসের জন্য চমৎকার একটা দোকান। এর বিশদ বর্ণনা আজ আর না দেই।

এইভাবেই আমি ঘুরে দেখেছি কলকাতা শহর। খুব শীঘ্রই আবার দেখার অপেক্ষায় থেকে আপাতত বিদায় কল্লোলিনী কলকাতা।

কলকাতা নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ

১) তিন শতকের কলকাতা

২) আমার কলকাতা

৩) কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত

This article is about travelling in Kolkata. Kolkata's historical sites, hotel, monuments, foods have been explored here. We can get idea about the shopping experience and the costing also.

Featured Image: Ashraful Arefin

Related Articles