Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার মন ভোলানো কিছু পর্যটন স্থান

দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের দেশ ‘বলিভিয়া’ আন্দিজ পর্বতমালার অনেক উঁচুতে অবস্থিত। দেশটিতে আছে বরফাবৃত পর্বতশ্রেণী, উন্মুক্ত মালভূমি (সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে উঁচু বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি যার চারপাশ থাকে ঢালু) ও সবুজে ঘেরা বনাঞ্চল।

পৃথিবীর ছাদ নামে খ্যাত দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া; Source: globalsummit.tech

দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্র দেশটিতে রয়েছে এক অপূর্ব মায়াবি সৌন্দর্য যা অনেকটাই প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হয়েছে। দেশটির অধিকাংশ পর্যটন স্থান প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে এই দেশে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষী হওয়ার উদ্দেশ্যে।

পাহাড় পর্বতে ঘেরা আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত দেশ বলিভিয়া; Source: hiltonhotels.com

লা পাজ

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩,৪০০ ফুট বা ৪,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটিকে ধরা হয়ে থাকে পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ দেশীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি বলিভিয়ার তৃতীয় জনবহুল শহর। শহরটির পুরো বা সাংবিধানিক নাম হলো ‘নয়েস্ত্রা সেনিওরা দ্য লা পাজ’, যার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘আওয়ার লেডি অফ পিস’ বা ‘আমাদের শান্তির রানী’।

রাতের অন্ধকারে হাজার বাতির আলোয় লা পাজ শহর; Source: trvl.com

কুকুয়াইপু নদী হতে উৎপন্ন টিটিকাকা হ্রদ থেকে ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণে শহরটির অবস্থান। শহরটি চিলি ও পেরুর বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলোর সাথে রেলপথ ও সমুদ্রপথে যুক্ত রয়েছে। ফলে বলিভিয়ার জন্য শহরটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শহরটির বিমানবন্দরটিও বেশ উঁচুতেই অবস্থিত। আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত উচ্চ মালভূমি অঞ্চল ‘আলতিপ্লানো’তে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ‘এল আলতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৪,০৬১ মিটার বা ১৩,৩২৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

বলিভিয়ার সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর; Source: milesreport.com

অনেক উঁচুতে অবস্থান করাতে এই শহরের প্রতি রয়েছে অনেক পর্যটকের বিশেষ আকর্ষণ। এই শহর থেকে বলিভিয়ার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা অনেকটাই সুবিধাজনক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শহরটিতে রয়েছে বিশাল বিশাল বাজার, চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য ও স্থাপত্য, অলংকৃত গীর্জা এবং রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ। এই শহরে স্বল্প মূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য বেশ সুবিধাজনক।

লা পাজের পথে প্রান্তরে; Source: flickr.com

মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক

আন্দিজ পর্বতমালা হতে অ্যামাজন পর্যন্ত বিস্তৃত উদ্যানটি ‘মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক’ নামেই সুপরিচিত। আয়তনের দিক থেকে উদ্যানটি প্রায় ৭,০০০ বর্গ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। ধারণা করা হয়, বিশ্বের জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্যানগুলোর মধ্যে এটি একটি।

মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক; Source: youtube.com

পৃথিবীর প্রায় ৯,০০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ এই বনে পাওয়া যায়। এছাড়াও উদ্যানটি বানরের একটি প্রজাতির ‘টিটি মাংকি’র জন্যেও বেশ বিখ্যাত। কারণ পৃথিবীর আর কোথাও এই বানরের উপস্থিতি নেই।

ইয়ানগাস রোড

লা পাজ থেকে বলিভিয়ার অ্যামাজন রেইনফরেস্ট অঞ্চল পর্যন্ত যাওয়ার পথটিকে ধারণা করা হয় বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। লা পাজ থেকে ‘করোয়কো’ শহরে পৌঁছানোর পূর্বে প্রথমে ১৫,০০০ ফুট খাড়া উপরে উঠে যেতে হয়, তারপর আবার ৪,০০০ ফুট নিচে নেমে আসতে হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক রাস্তা ইয়ানগাস রোড; Source: roadtrippers.com

এই রাস্তায় অনেকগুলো দুর্ঘটনার নজির আছে এবং হতাহতের সংখ্যাও অনেক। তবে ইয়ানগাসের ঢালু পাহাড়ের গায়ে ৪০ মাইলের রাস্তা পাড়ি দেয়ার জন্যে মোটর সাইকেলে পর্বতারোহীদের জন্য জায়গাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

টিটিকাকা হ্রদ

দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম হ্রদটির নাম হলো টিটিকাকা। বলিভিয়া এবং পেরু সীমান্তে হ্রদটির অবস্থান। এই অঞ্চলকে ‘ইনকা’ সভ্যতার অধিবাসীদের মতো অনেক আদি জনগোষ্ঠীর উৎপত্তিস্থল ধরা হয়। এই হ্রদটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল জুড়ে রয়েছে ‘তিওয়ানাকু’ নামে এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ।

টিটিকাকা হ্রদ; Source: retreat.guru

অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন, প্রাচীন ইনকা সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল এই রাজ্য থেকেই। টিটিকাকা হ্রদটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি পছন্দের স্থান। অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত চারপাশ এবং পর্যটন সুব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে এই হ্রদে ঘুরতে আসে ভ্রমণপিপাসুরা।

সালার ডি ইউনি

আকাশকে কী ছোঁয়া যায়? দিগন্তজোড়া আকাশ যখন বিস্তৃত খোলা মাঠে এক হয়ে যায়, তখনই প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক অপার বিস্ময়। এমনটা যে খুব সচরাচর দেখা যায় তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বলিভিয়াতে এমন সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রকৃতি সাজিয়েছে এক অপরূপ রূপে যার নাম ‘সালার ডি ইউনি’।

সালার ডি ইউনি- যেখানে আকাশ মিশে যায় ধরণীতে; Source: tripzilla.com

হাজার হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে বিশাল এক হ্রদ ছিল, যার নাম ‘লেক মিনচিন’। কিন্তু মরু অঞ্চলীয় খরার কারণে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে এই হ্রদ। একসময় এই হ্রদ পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়ে জন্ম দিল বিশাল এক মরুভূমির, যার উপরের আবরণ পুরো ঢেকে গেল লবণে। আর এর মধ্যভাগে জমা হল লিথিয়াম। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর ৫০-৭০ ভাগ লিথিয়ামের মজুদ রয়েছে এই অঞ্চলে।

সালার ডি ইউনির সল্ট ফ্লেট; Source: atlasandboots.com

তবে ‘সালার ডি ইউনি’র সৌন্দর্য দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হয় প্রকৃতির জন্য। কেননা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এটি একটি বিস্তৃত শুভ্র মরুভূমি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তবে এক পশলা বৃষ্টি পড়ে যখন পুরো আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়, তখন এই অঞ্চল পরিণত হয় এক বিশাল আয়নায়। যে আয়নার প্রতিচ্ছবিতে পুরো আকাশ ধরা দেয় পায়ের নিচে। সমতলে লবণের আস্তরণ থাকার ফলে যাকে ইংরেজিতে ‘সল্ট-ফ্ল্যাট’ বলা হয়, স্থলভাগ পুরোটাই স্বচ্ছ আয়নায় রুপ নেয়। আন্দিজ পর্বতমালা খুব কাছে হওয়াতে এখান থেকে খালি চোখে আকাশকে অনেকটাই কাছে মনে হয়।

আকাশকে অনেক কাছে মনে হয় এই স্থানে; Source: reddit.com

প্রায় ১০,৫৮২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই আয়নার বিস্তৃতি। প্রকৃতির আজব খেয়ালে আকাশ এবং স্থল মিশে গিয়ে এক ধরনের বিভ্রম বা মায়ার সৃষ্টি করে। আর তাই এই স্থানে পর্যটকদের ছবি তোলার বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হলে অবশ্যই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে হবে।

প্রকৃতির মাঝে একধরনের বিভ্রমের সৃষ্টি; Source: banjotours.com

এই লবণভূমির খুব কাছে গাড় গোলাপি পানির হ্রদ রয়েছে। ‘ডেনেইলাইলা সেলাইনা’ নামক একধরনের ছত্রাকের কারণেই মূলত হ্রদগুলোর রং গোলাপি হয়। এই হ্রদটি ফ্লেমিংগো পাখির প্রজননের অন্যতম স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সালার ডি ইউনির নিকটবর্তী গোলাপী হ্রদ; Source: forwardtravel-com

তিওয়ানাকু

তিওয়ানাকু হলো বলিভিয়ার হ্রদ টিটিকাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে অবস্থিত প্রাচীন ইনকা সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ধারণা করা হয়, ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দীর দিকে আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণের এই অংশে এক বিশেষ সম্প্রদায় আঞ্চলিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য কীর্তি তিওয়ানাকু; Source: youtube.com

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরটিতে প্রায় ১৫,০০০-৩০,০০০ অধিবাসীর বসবাস ছিল। তিওয়ানাকু হলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক অনন্য স্থাপত্য, যার খুব অল্প অংশই এখন পর্যন্ত খনন করা সম্ভব হয়েছে। বলিভিয়ার এই অনন্য স্থাপনা দেখতে নিয়মিত বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সমাগম বেড়ে চলেছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। কিছু স্থান রয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত, আবার কিছু আছে মানুষের তৈরি। প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ এই বলিভিয়া। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির দর্শনীয় স্থানগুলো তাই পৃথিবীর অনেককেই মোহিত করে।

ফিচার ইমেজ- imaginative-traveller.com

Related Articles