Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘুরে আসুন প্রবাল দ্বীপ সেইন্ট মার্টিন

সেইন্ট মার্টিন সৈকতে; Image Courtesy: banglarshomoy.com

ও আমার বাংলা মা তোর
আকুল করা রূপের সুধায়
হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে।।

এ কথার সত্যতা যথাযথভাবে বোঝা যায় যখন আমার প্রাণের দেশ, বাংলাদেশের নানান জায়গার দর্শনীয় রূপ আমাদের মুগ্ধ করে। এমনই একটি স্থান বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেইন্ট মার্টিন। স্থানীয় জনগণের কাছে এটি ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামেই বেশি পরিচিত। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ- এই সময়টি বেড়ানোর জন্য বেশি উপযোগী। বছরের অন্যান্য সময়গুলোতে পানিতে জোয়ার বেশি থাকায় সমুদ্রপথে যাতায়াত করা থেকে একটু সাবধান থাকাই শ্রেয়।

 

যাতায়াত

ঢাকা থেকে টেকনাফ

সরাসরি ঢাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বাসে যাবার ব্যাবস্থা আছে। চাইলে সড়কপথে কক্সবাজার হয়েও আসতে পারেন টেকনাফ। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ৭-৮ ঘণ্টা এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ আরো ৩ ঘণ্টার পথ। আর ভ্রমণের ক্লান্তি এড়াতে চাইলে চলে আসুন আকাশপথে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্লেনে একজনের আসার খরচ এয়ারলাইন ভেদে ভিন্ন হতে পারে; তবে সর্বনিম্ন ৫,০০০-৫,৫০০ টাকা। সময় লাগবে ৪৫ মিনিটের মতো। খরচ বেশি হলেও লম্বা ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে আপনাকে একদম ভাবতে হবে না।

ভ্রমণ ক্লান্তি এড়াতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন আকাশপথে; Image Courtesy: greenchannelbd.com

টেকনাফ থেকে সেইন্ট মার্টিন

 টেকনাফ থেকে দ্বীপে পৌঁছানোর একটাই রাস্তা- নাফ নদী। নাফ, যেটি আরাকান ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের অন্যান্য সীমানা থেকে উৎপন্ন হয়ে মায়ানমার এবং বাংলাদেশের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ করে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। যেতে হবে সী-ট্রাকে, অবশ্য অনেক সময় ট্রলারও ভাড়া করে নিতে পারেন। সী-ট্রাকে দ্বীপ পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মতো। শ্রেণিভেদে বিভিন্ন দামের টিকিট পাবেন, টিকিটটি অবশ্যই ফেলে দিবেন না, কারণ যাওয়া-আসার টিকিট সাধারণত একসাথেই কেটে নিতে হয়।

নাফ নদীতে,গাঙচিলগুলো ঠিক সাথে সাথে উড়ে চলেছে; Image Source: poriborton.com

নাফ নদী দিয়ে যাওয়ার পথের মনমুগ্ধকর দৃশ্য,সেই সাথে গাঙচিলদের পাশাপাশি উড়ে চলা দেখতে দেখতে দারুণ সময় কাটবে।সকালে সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফ থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন দ্বীপে। যদি খুব কম সময় নিয়ে বেড়াতে যান, তাহলে রাতে না থেকে ঐদিনই আবার বিকেল তিনটার সী-ট্রাকে করে ফিরে আসতে পারেন টেকনাফ। আর যদি নারিকেল জিঞ্জিরার রাতের সত্যিকার মোহনীয় রূপ দেখতে চান, তবে থেকেই যান না রাত টা! ফিরে আসতে পারবেন পরদিন বিকেলেই।

লঞ্চে যেতে যেতে প্রায়ই চোখে পড়বে এমন মাছ ধরা নৌকা; Image Source: nishachor.com

থাকার ব্যবস্থা

সেইন্ট মার্টিনে এখন থাকার জন্য বেশ ভালো কিছু হোটেল-মোটেলের ব্যাবস্থা আছে। এই দ্বীপে বিদ্যুতের কোনো সুবিধা নেই, তবে সেটি আপনি কিছুতেই বুঝতে পারবেন না, কারণ প্রায় সব থাকার জায়গাতেই জেনারেটরের সুব্যবস্থা আছে। একটু কম খরচে থাকতে চাইলে দ্বীপে প্রবেশের মুখে বাজারের আশেপাশে পর্যাপ্ত হোটেল রয়েছে। তবে একই জায়গায় বেশকিছু হোটেল থাকায় এই জায়গাটা একটু ঘনবসতিপূর্ণ। যারা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন, সোজা একটা ছাউনিওয়ালা ভ্যান ভাড়া করে চলে যান দ্বীপের একেবারে শেষের দিকে ফাঁকা জায়গায় অবস্থিত “কোরাল ভিউ” রিসোর্টে। ভ্যানওয়ালাকে নাম বললেই পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে। এত চমৎকার পরিবেশ পাবেন সেখানে সেইন্ট মার্টিনকে ভালো করে দেখার জন্য যেটি অকল্পনীয় সুন্দর! থাকার খরচ একটু বেশি পড়লেও চমৎকার মনোরম পরিবেশ সেই আফসোস একশো ভাগ মিটিয়ে দেবে। ছোট্ট একটি টিপস, একেবারে বেড়ানোর মৌসুমে এলে, অবশ্যই কক্সবাজার থেকে রওনা দেবার আগে এখানে রুমের বুকিংটা দিয়ে দেবেন। তাহলেই নিশ্চিন্ত!

“কোরাল ভিউ” রিসোর্ট; Image Source: onuvromon.com
এখানে রুমের বারান্দায় বসেই দেখতে পাবেন এমন দৃশ্য; Image Source: onuvromon.com

খাওয়া দাওয়া

থাকার ব্যাবস্থা হয়ে গেলে খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা নাই, কম বেশি সব থাকার জায়গাগুলোতেই সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার ব্যাবস্থা আছে। সকালে পছন্দমতো পেয়ে যাবেন পরটা, রুটি, ডিম ভাজি আর চা। তবে সকালের নাস্তা যদি হোটেলেই করতে চান, তাহলে রাতে অন্তত একবার জানিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া বাজারের ভেতর যে খাবারের হোটেলগুলো আছে, ওখানেও পছন্দ অনুযায়ী নাস্তা পাবেন।

দ্বীপ দেখতে যেয়ে তাজা মাছ না খেয়েই ফিরে আসবেন, তাই কি হয়! দুপুর এবং রাতের খাবারে ভর্তা, ভাত, ডাল, তাজা মাছ ভাজা নিতে পারেন। নানা রকমের ভর্তা পাওয়া যায় এখানে, এত চমৎকার করে সাজিয়ে আনে যে চোখের তৃপ্তি আর রসনাবিলাশ দুই-ই হবে! শুঁটকি মাছের ভর্তা- মাস্ট ট্রাই! তাজা মাছের ভেতর পেয়ে যাবেন  কোরাল, স্যামন, সুন্দরী, ভেটকি, রূপচাঁদা ইত্যাদি। হলুদ, লবন দিয়ে মেরিনেশন করাই থাকে, মাছ দেখে পছন্দ করে দিলে আপনার চোখের সামনেই ভেজে গরম গরম পাতে তুলে দিবে।

নানান রকমের মাছ পাবেন,একদম টাটকা; Image Source: bd.surjeralo.com
কাঁকড়া ভাজা; Image Source: i.imgur.com

ছেঁড়া দ্বীপ

 বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকের সর্বশেষ বিন্দু হলো এই ছেঁড়াদ্বীপ। এরপর সরাসরি বঙ্গোপসাগর, আর ওপাশে তাকালেই মায়ানমার। সেইন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘ছেঁড়াদিয়া’ বলা হয়ে থাকে।ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ ভূখন্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ।প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর রয়েছে এখানে।

শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রবাল; Image Source: journeyoutgoing.blogspot.com

সেইন্ট মার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যাবে হেঁটে অথবা ট্রলারে, হেঁটে আসলে ঘন্টা দুয়েক আর ট্রলারে আধা ঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিট লাগতে পারে। তবে যদি হেঁটে আসার পরিকল্পনা থাকে, অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময়টা জেনে নিবেন। কারণ ভাটার সময় পথ চোখে পড়লেও এর অধিকাংশই জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায়। তাইতো ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ করে ফিরতে হবে জোয়ারের পানি ওঠার আগেই। যতটুকু সময়ই থাকেন, স্বচ্ছ, কাকচক্ষু নীলচে পানি মুহূর্তেই মনে একটা অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেবে। এখানকার পানি এত স্বচ্ছ যে, বেশ নীচের পাথর পর্যন্ত পরিস্কার দেখা যায়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায়, অতিরিক্ত পর্যটকের আনাগোনায় এখানকার পরিবেশ প্রায় বিপন্ন। এই এলাকাটি সরকারের ঘোষিত একটি “পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা”।

আমাদের দেশের দক্ষিণের সর্বশেষ অংশ ছেঁড়া দ্বীপ; Image Source: probashnews.com

অন্যান্য

কক্সবাজারের মতো এখানেও বাজারের ভেতর হরেক জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন দোকানীরা। সময় কাটাতে একটু ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এখানে। শামুক, ঝিনুক, পুঁতি ও মুক্তার তৈরী নানা ধরণের শো-পিস, গয়না, ব্যাগ নিশ্চয়ই মন কেড়ে নেবে আপনার।

সৈকতে পাবেন ডাব; Image Source: offroadbangladesh.com

বিকেলের দিকে যদি সৈকতে যান, অবশ্যই খেয়ে দেখবেন নারিকেল জিঞ্জিরার মিষ্টি ডাব। ডাব খেতে খেতে,সমুদ্র দেখে এখানে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারেন অনায়াসেই। তবে হ্যাঁ, ডাবওয়ালা মামার সাথে অবশ্যই একটু দরদাম করে নিতে হবে!

রিকশা-ভ্যান জাতীয় একধরনের ছাউনি দেওয়া বাহনে চেপে বিকেল বেলাটা পুরো দ্বীপটা একটু ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় লোকজন অনেক আন্তরিক, ভ্যানের চালক কপালগুণে যদি ভালো পেয়ে যান, তাহলে সে নিজেই ঘুরিয়ে দেখাবে দ্বীপ। দেখে আসতে পারেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি‘সমুদ্র বিলাস’ও।

হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ‘সমুদ্র বিলাস’, Image Courtesy: archive.prothom-alo.com

যদি “কোরাল ভিউ” রিসোর্টে অবস্থান করেন, তাহলে সন্ধ্যা বা রাতের সময়টা খুব ভালো কাটবে। এখানে বারবিকিউয়ের সুবিধা আছে। পছন্দ অনুযায়ী মাছ বা মাংস অর্ডার করলে তারাই সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিবে। চমৎকার খোলা লন-এ টেবিল চেয়ার পেতে রাতের খাবারটা দিব্যি এখানেই সেরে ফেলতে পারবেন। বারবিকিউ না করতে চাইলে রুমের বারান্দায় বসে চোখের সামনে সমুদ্র দেখে অথবা সৈকতের আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করেই কাটিয়ে দিতে পারবেন সন্ধ্যাটা।

কেয়ারী ফল, Image Source: i.imgur.com

সতর্কতা

 আপনার নিজের সাবধানতা আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। পানিতে নামার সময় অবশ্যই সাবধান থাকবেন, মনে রাখবেন আবেগের থেকে জীবনের মূল্য অনেক বেশি! ভাটার সময়টাতে পানিতে না নামাই ভালো।

প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবন থেকে একটু মুক্তি পেতে চাইলে ঘুরেই আসুন না অসম্ভব সুন্দর এই সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে। দেখুন প্রকৃতি কি অপরূপ পসরা সাজিয়ে আপনার আসার অপেক্ষায় আছে!

This article is in Bangla Language. Its about Saint Martin's island.
References:

1. youtube.com/watch?v=BVKN6R2hKgs&t=261s

2. youtube.com/watch?v=133l-efiL84

3. bn.wikipedia.org/wiki/ছেঁড়া_দ্বীপ

Featured Image: commons.wikimedia.org

Related Articles