Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঢাকার অদূরে কাশফুল আর গোলাপের রাজ্যে একদিন

দিয়াবাড়ি

খোলা আকাশের নিচে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ; ঢাকার অদূরে কাশফুলের রাজ্য আর বিষণ্ন মন ভালো করার জন্য দিয়াবাড়ি একটি আদর্শ জায়গা। দিয়াবাড়ি ঢাকা জেলার উত্তরার ১৫ নাম্বার সেক্টরে অবস্থিত। উত্তরা থেকে মিরপুর যাওয়ার সহজ মাধ্যম হিসেবে দিয়াবাড়ি জায়গাটি ব্যবহৃত হয়। এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে শরৎকালে আসতে হবে। শরতে দিয়াবাড়ির কাশফুলের যেন জুড়ি নেই। ঢাকার ভেতর কাশফুল দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী।

দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ঘিরে চারপাশে কাশফুলের মেলা; ছবি: আবু সুফিয়ান কাব্য

দূষণে আচ্ছাদিত ব্যস্ততম এই নগরীতে ছুটি পেলেই প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ খুঁজে সেখানে আমরা ছুটে যাই। কিন্তু ঢাকার মধ্যে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন দিয়াবাড়ি থেকে। ছুটির দিন ছাড়া কর্মব্যস্ত দিনগুলোতেও দর্শনার্থীদের বেশ আনাগোনা থাকে এখানে। রাজউকের তত্ত্বাবধানে দিয়াবাড়িতে নির্মিত রাজউক অ্যাপার্টমেন্টের চারপাশের দৃশ্য সত্যিই চোখে পড়ার মতো।

ইট, পাথরের রাজধানীতে কর্মব্যস্ততাকে একটু ফাঁকি দিয়ে পড়ন্ত বিকেলে নির্মল বাতাসে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে কাটিয়ে দিয়ে পারেন এক অসাধারণ মুহূর্ত। এছাড়াও সুদৃশ্য লেক, বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে কাশফুলের সমাহার, দূষণমুক্ত পরিবেশ, এবং এরই সাথে নদীতে পানির স্রোতে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস আপনাকে সত্যিই মুগ্ধ করবে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে- চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগে এখান থেকে আপন গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার, কারণ আমরা সবাই জানি নির্জন, কোলাহলমুক্ত জায়গা সন্ধ্যার পর মোটেও নিরাপদ নয়। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ডে ট্রিপের জন্য এই জায়গাটি অন্যতম পছন্দের।

অসাধারণ সুন্দর এই দিয়াবাড়ির মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা নদীটি হলো তুরাগের একটি শাখা নদী। দিয়াবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনানুযায়ী এই নদীকে পুনঃপরীক্ষা করে লেকে পরিণত করা হয়েছে। আর এই লেকের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য লেকের উপর হাতিরঝিলের আদলে তৈরি করা হয়েছে একটি ব্রিজ, যার নাম রংধনু ব্রিজ। তবে স্থানীয়দের কাছে এটি আঠারো নাম্বার ব্রিজ হিসেবেও বেশ পরিচিত। গোধূলির পর রংধনুর মতো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে থাকে ব্রীজটি। ভ্রমণকে আরো আনন্দময় করার জন্য লেকে রয়েছে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ।

পড়ন্ত বিকেলে লেকের শুনশান নীরবতা; ছবি: আবু সুফিয়ান কাব্য

বেশ কয়েক বছর আগের বিশাল এক বটগাছ দর্শনার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে। একইসাথে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে ছিল এক শান্তির ছায়া। দু’পাশে রাস্তার মাঝখানে এই বটগাছের নিচে মানুষের উপস্থিতি এতটাই ছিল যে, জনসাধারণের কাছে এটি দিয়াবাড়ি বটতলা নামেই বেশ পরিচিতি পায়। তবে বর্তমানে গাছ কেটে রাস্তা প্রসারিত করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। সেই পরিচিত জায়গা দিয়াবাড়ির বটতলা, কাশফুল আর লেকের উপর নির্মিত রংধনু ব্রিজকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ সময়ই এখানে বিভিন্ন নাটকের শুটিং হতে দেখা যায়।

এখানে আসলে একটি জিনিস আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে সেই ছোটবেলার দিনগুলোর কথা- আকাশের বুকে উড়ে চলা বিমান মাথা থেকে বেশি উঁচু নয়, কাছে থেকেই সাঁই সাঁই গর্জন করে উড়ে যাবে তার গন্তব্যস্থলে। নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য সুন্দর এক দৃশ্য জায়গা করে নিতে পারে আপনার মনে। প্রকৃতির আবহ, দিগন্তবিস্তৃত কাশবন, আর লেকের টলটলে স্বচ্ছ পানি- রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন জগত।

মাথার খুব কাছ থেকে এভাবেই সাঁই সাঁই গর্জন করে উড়ে যায় উড়োজাহাজ; ছবি: মোছাব্বের হোসেন

কীভাবে যাবেন: রাজধানী ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে সর্বপ্রথম উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ে আসতে হবে। সেখান থেকে সোনারগাঁও জনপথ যাওয়ার সড়কে মাসকট প্লাজার সামনে রিকশা কিংবা লেগুনায় চেপে চলে যান দিয়াবাড়ি বটতলা। বটতলা থেকে পায়ে হেঁটে বা রিকশায় কিছু দূর এগোলেই দেখা মিলবে হাতিরঝিলের আদলে নির্মিত সেই রংধনু ব্রিজের। 

যাতায়াত খরচ: উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে দিয়াবাড়ি বটতলা পর্যন্ত লেগুনাতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ টাকা, এবং সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকা। আর রিকশায় চড়ে যাওয়ার জন্য গুনতে হবে ৭০-১০০ টাকা। এছাড়াও বটতলা থেকে রিকশায় রংধনু ব্রিজে যাওয়ার জন্য গুনতে হবে ২০-৩০ টাকা।

নৌকাভ্রমণ খরচ: দিয়াবাড়িতে নৌকাভ্রমণের জন্য দুই ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। ত্রিশ মিনিটের জন্য গুনতে হবে ১৫০-২০০ টাকা, এবং ষাট মিনিটের জন্য গুনতে হবে ৩০০ টাকা। তবে আপনি চাইলে আরো বেশি সময় নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গুনতে হবে।

খাবার ব্যবস্থা: দিয়াবাড়ি লেকপাড়ে হালকা, শুকনো খাবার ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। তবে সামনে কিছুদূর এগোলেই রেস্টুরেন্ট বা হোটেলের দেখা মিলবে। 

গোলাপ গ্রাম

গ্রামীণ পরিবেশ, প্রকৃতির শীতল আবহ, সরু রাস্তা, কিছুক্ষণ পর আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, পথের দু’ধারে বিস্তীর্ণ ফুলের বাগান। বাগানের মাঝে সুগন্ধের মাঝে কয়েক কদম এগোলেই অন্তরের গহীনে এক অন্যরকম প্রশান্তি; মনে হবে, ফুলের বাগান নয়, ফুলের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন! বলছি ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামের গোলাপ বাগানের কথা। বিশাল গোলাপের বাগান, ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য পুরো গ্রামজুড়েই। আর এতেই সাদুল্লাহপুর গ্রাম থেকে হয়ে উঠেছে গোলাপ গ্রাম। স্থানীয়দের কাছে সাদুল্লাহপুর ও গোলাপ এই দুটি নাম পরিচিত হলেও দর্শনার্থীদের কাছে গোলাপ গ্রাম নামটিই অধিক পরিচিত।

বাগ্নিবাড়ি গোলাপ গ্রামের প্রবেশ পথ; ছবি: লেখক

একটি প্রবাদ রয়েছে, “এক ঢিলে দুই পাখি মারা।” গোলাপ গ্রামে আসলে শুধু তাজা, লাল টকটকে গোলাপ ফুল পাবেন তেমনটা নয়, খুব সকালে আসলে দেখতে পাবেন গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে। চাইলে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৌটা বা গ্লাসে করে রসও পান করতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, বাসা, পরিবার কিংবা প্রিয়জনের জন্যও খাঁটি রস সংগ্রহ করতে পারেন।

সাদুল্লাহপুর গ্রাম  ছাড়াও নিকটস্থ শ্যামপুর, বাগ্নিবাড়ি ও কমলাপুর গ্রামগুলোর বসতবাড়ির আঙিনা, দোকানপাট, এমনকি বিদ্যালয়গুলোর আঙিনাতেও মিরিন্ডাসহ বিরল প্রজাতির গোলাপ ফুল চাষ করা হয়। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করতে দেখা যায়। বছরের পুরোটা সময় জুড়ে বাগানগুলোতে গোলাপ দেখা গেলেও অন্যান্য জাতের ফুলগুলো নির্দিষ্ট সময় ছাড়া দেখা যায় না।

বাগ্নীবাড়ি গোলাপ বাগানের পাশে সূর্যমুখী ও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বাগান; ছবি: আবু সুফিয়ান কাব্য

গোলাপচাষীরা সকাল এই সময়টা ফুল দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত থাকেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ফুল উত্তোলন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বিক্রির জন্য ফুলগুলোকে একই অবস্থানে নিয়ে আসেন। পশ্চিমাকাশে সূর্য ডোবার পর থেকে বিক্রির জন্য ফুলগুলো নিয়ে যাওয়া হয় আশেপাশের বাজারগুলোতে। গোধূলির পর থেকে বাজারগুলো হয়ে ওঠে সরগরম।

শীতকালে ছুটির দিনগুলোতে গোলাপ গ্রামে ঢের দর্শনার্থী লক্ষ্য করা যায়। এখানে আসা কিছু দর্শনার্থীকে নৌভ্রমণও করতে দেখা যায়। এছাড়াও সিংহভাগ স্থানীয় বাসিন্দা বিরুলিয়া থেকে সাদুল্লাহপুর গ্রামে যাতায়াতের জন্য নৌকাভ্রমণ করে থাকেন। গোলাপ গ্রাম ভ্রমণের পাশাপাশি হাতে কিছুটা সময় নিয়ে বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি ও লেক আয়ারল্যান্ড খ্যাত ছোট চিড়িয়াখানাতেও ঘুরে আসতে পারেন।

যাবার উপায়: সড়ক ও নৌ- এই দুই পথেই যাওয়া যায় গোলাপ গ্রামে।

সড়কপথে, প্রথমত, ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে সর্বপ্রথম উত্তরা হাউজবিল্ডিং আসতে হবে। সেখান থেকে সোনারগাঁও সড়কে থাকা লেগুনা কিংবা রিকশায় করে দিয়াবাড়ি খালপাড় আসতে হবে। ভাড়া পড়বে লেগুনায় জনপ্রতি ১০-১৫ টাকা, এবং রিকশায় ৩০-৪০ টাকা। খালপাড় থেকে ২০-২৫ টাকার বিনিময়ে ব্যাটারিচালিত অটোবাইকে করে পঞ্চবটি নামক জায়গায় আসতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বা রিকশা করে কিছুদূর এগোলেই বিরুলিয়া সেতু পড়বে, তবে চাইলে খালপাড় থেকে পঞ্চবটি না নেমে সরাসরি বিরুলিয়া সেতু ধরতে পারেন। সেতু থেকে রিকশা বা অটোতে চেপে বসে চলে যান আক্রাইন বাজার। বাজার থেকে বামে যাওয়া পথ ধরে রিকশা, অটো বা পায়ে হেঁটে কিছুদূর এগোলেই দেখা মিলবে সৌরভ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত গোলাপ গ্রামের।

বাগ্নীবাড়ি গোলাপ বাগানের পাশে প্রকৃতিঘেরা জলাশয়; ছবি: লেখক

দ্বিতীয়ত, আশুলিয়া বেড়িবাঁধ অথবা মিরপুর ১ নম্বর থেকে মোহনা বা আলিফ পরিবহনে করে বিরুলিয়া সেতুতে নামতে হবে। পরিবহনে ভাড়া গুনতে হবে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ থেকে ১০-১৫ টাকা, এবং মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১৫-২০ টাকা। অতঃপর বিরুলিয়া সেতু থেকে একইভাবে অটো বা রিকশায় চড়ে আক্রাইন বাজার, বাজার থেকে বামে যাওয়া পথ ধরে রিকশা বা পায়ে হেঁটে কিছুদূর এগোলেই পৌঁছে যাবেন গোলাপ গ্রামে।

নৌপথে মিরপুর, আশুলিয়া কিংবা যেকোনো জায়গা থেকে সর্বপ্রথম আসতে হবে মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট। ত্রিশ মিনিট পর পর ধারাবাহিকভাবে ঘাট থেকে নৌকা বা ট্রলার সাদুল্লাহপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বটতলা ঘাট থেকে সাদুল্লাহপুর যেতে সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট, ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা।

ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন গোলাপ গ্রামে। এক্ষেত্রে বিরুলিয়া সেতু হয়ে যেতে হবে।

খাবেন কোথায়: গোলাপ বাগানের আশেপাশে ভারী খাবারের দোকান নেই বললেই চলে, তবে হালকা বা শুকনো খাবার, চা, পানি বা নাস্তার জন্য কয়েকটি দোকান রয়েছে। বাগান থেকে বাজারের দিকে এগোলে কিছু হোটেলের দেখা পাবেন। চাইলে সেখানে খাবার সেরে নিতে পারেন। এছাড়াও সাদুল্লাহপুর ঘাটের আশেপাশে মিষ্টান্নের দোকান রয়েছে।

সতর্কতা

১. অনুমতি ছাড়া গোলাপ ফুল তোলা থেকে বিরত থাকুন।
২. বাগানে কফ, থুথু ফেলা, ও হুড়োহুড়ি থেকে বিরত থাকুন।
৩. বাগানগুলোতে অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন।
৪. বাগানমালিক কিংবা ফুলচাষিদের সাথে নম্র, ভদ্র আচরণ করুন; অশালীন মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন।

Related Articles