Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অন্য এক সেন্টমার্টিন

সারি সারি নারকেল গাছ, কেয়া বন আর প্রবালে ঘেরা দ্বীপটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। আজ অন্য এক সেন্টমার্টিনের কথা বলব। কল্পনা করুন সেন্ট মার্টিন একটি দ্বীপ নয়। একটি  প্রাণ। একটি অস্তিত্ব। একটি বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রামের ভূখণ্ড। এখানে ঢেউ ভাঙার শব্দের সাথে ভেসে আসে ভীষণ প্রশান্তি অথবা নীরব হাহাকার। সমুদ্রের ঢেউগুলো প্রবালঘেরা তটে ভেঙে পড়ছে যে অনিন্দ্য ছন্দে, তারা আসলে কী বলতে চায়? শুধুই নৈসর্গিক সৌন্দর্য নয়, আরেকটু গভীর থেকে চলুন ঘুরে আসি।

বাড়ির পাশে গড়ে উঠছে বিলাসবহুল স্থাপনা, চেয়ে দেখছে দ্বীপের দুই শিশু; Image Source: Noyon Asad

অব্যক্ত হাহাকার

সমুুদ্রের নীল জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বিলাসবহুল জাহাজ কর্ণফুলি এক্সপ্রেস। কক্সবাজার থেকে প্রায় ছয় ঘন্টার সমুদ্রপথ। কক্সবাজারের একটি নামকরা হোটেলে গত রাত কেটেছে আমাদের। সেখান থেকে খুব ভোরে সেন্টমার্টিনের জাহাজে তুলে দিতে আমাদের নিতে আসে ‘চান্দের গাড়ি’। চাঁদের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও এর নাম কেন চান্দের গাড়ি হয়েছে সেই সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। এই যান আমাদের পৌঁছে দিলে কক্সবাজারের জেটিতে। টিকেটের আনুষ্ঠানিকতা আগেই সারা ছিল, জাহাজে উঠে বসলাম সবাই মিলে। 

সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে এগিয়ে চলছিল আমাদের জাহাজ। নাফ নদীর ভেসে আসা জলে কত হাসি-কান্নার স্রোত বইছে, তা উঁকি দিল হঠাৎ। সামনের ডেকে দাঁড়িয়ে উপভোগ্য একটি সকাল পাওয়া গেল। এর মধ্যেও যারা ভেতরে বসে ঘুমাচ্ছিলেন, তারা বোধকরি একটি অনন্য সকালের নাগাল পেয়েও হারালেন!

কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলেন, মাছ কেমন? তাদের মুখে অব্যক্ত হাহাকার; Image Source: Noyon Asad

দুপুর নাগাদ দূর থেকে আবছায়া মতো দ্বীপের দেখা মিলল। এই প্রথম কোনো দ্বীপে পা ফেলব, একটু পর। মনে তীব্র উত্তেজনা। জাহাজের পাশে অনেকগুলো জেলেনৌকা। একটি নৌকা একেবারেই কাছে দিয়ে যাচ্ছিল। নৌকার জেলেদের রোদে পোড়া চেহারায় দৃষ্টি পড়তেই উদয় হলো নতুন ভাবনার। কেউ একজন স্থানীয় ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন, “মাছ কেমন?” তাদের মুখ মলিন। চেহারায় স্পষ্ট অব্যক্ত হাহাকার। সামনের দ্বীপেই তাদের ঘর-বাড়ি। মনে হলো, এই দ্বীপ আর এই মানুষগুলো তো আলাদা নয়। তাদের মলিন আর রোদে পোড়া চেহারার সাথে নীরব হাহাকার যেন একাকার হয়ে আছে। দুপুরের তীব্র রোদ আমাকে নিয়ে গেল ভেতরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে। জেলেনৌকাটি সমুদ্রের দিকে ফিরে গেল আবার। সমুদ্রেই তাদের জীবন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় তাদের নিত্যসঙ্গী।

সেন্টমার্টিনের সাগরতীরে সদ্য ধরা মাছ বিক্রির জন্য রাখা হচ্ছে ; Image Source: Noyon Asad

একটি শান্ত বিকাল

দ্বীপে পা ফেলার পর জেটির মুখেই দেখা মিলল ডাবের দোকানের। দোকানদার একজন প্রবীণ মানুষ। তার  সাথে দু’মিনিটেই গল্প জমে গেল। পর্যটন মৌসুমে কিছু বেচা-কেনা হয়। তারপর সারাবছর সংসার চলে নানা কর্ম করে। চোখ পড়ল একটু দূরের সরকারি নলকূপের দিকে। একজন স্থানীয় বয়স্ক মানুষ সেই নলকূপ থেকে পানি তুলতে পারছেন না। চারদিকে তাকিয়ে কারো সাহায্য পেতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু সবাই ব্যস্ততায় এড়িয়ে যাচ্ছেন তাকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলাম, কিন্তু সত্যিই মন খারাপ হয়ে গেল। এই দ্বীপের অবস্থাও সাহায্য না পাওয়া রুগ্ন মানুষটির চেয়ে ভালো নয়, যা বুঝেছি পরের দু’দিনের অভিজ্ঞতা থেকে। বিপুল মানুষের জঞ্জালের ভার বহন করে, অসচেতনা-অপরিচ্ছন্নতা-অপরিকল্পনায় দ্বীপটি সত্যিই রুগ্ন।

অসচেতনায়, অপরিচ্ছন্নতায়, অপরিকল্পনায় দ্বীপটি সত্যিই রুগ্ন; Image Source: Noyon Asad

সৈকতের কাছেই একটি হোটেল আমাদের আগে থেকে ঠিক করা ছিল। যেহেতু অল্প সময়ের জন্য আসা, কাজেই বিশ্রাম প্রাধান্য পেল না। সেখানে উঠে কিছুক্ষণ পরই চলে এলাম দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে। তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল। বালুময় তটে চড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ‍কুকুর। এরা এই দ্বীপের জীব-বৈচিত্রের অংশই হবে হয়তো।

সেন্টমার্টিনের জেটি, কুকুরগুলো এখন এখানকার জীববৈচিত্রের অংশ; Image Source: Noyon Asad

সাগরে নামার পর যেন ক্লান্তি দূর হয়ে গেল নিমেষেই। দ্বীপের সমুদ্রতটে শহুরে গন্ধ নেই, নগরের জঞ্জাল নেই, কিংবা নেই কোন যান্ত্রিক কোলাহল। যেদিকে চোখ যায় শুধুই নীল জলরাশির ঢেউয়ের মেলা আর মাছ ধরার ট্রলার। পুরো বিকেল কাটল সমুদ্রেই। সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে সমর্পণ করে এক অপার্থিব অনুভূতির স্বাদ মিলছিল যেন।

দ্বীপের জীবনযাত্রায় বৈষম্য খুবই লক্ষ্যণীয়; Image Source: Noyon Asad

উত্তর বীচে ঝুঁকির কথা বললেন কেউ কেউ। রিপ কারেন্ট নামে একধরনের স্রোত তৈরি হয় এখানে যা মানুষকে টেনে সাগরের ভেতরে নিয়ে যায়। বেশ কয়েকবার ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও। সাঁতার না জানলে তো কথাই নেই, জানলেও ঝুঁকিপূর্ণ। গুগল করে সত্যতা পেলাম, কিন্তু তেমন সতর্কবার্তা চোখে না পড়ায় অবাক লাগল। ফেরার পথে চেষ্টা করলাম সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটু জানতে। অল্প দেখাতেও মনে হলো- দ্বীপের জীবনযাত্রায় বৈষম্য বেশ চোখে পড়ার মতো। 

মার্বেল খেলায় মত্ত একদল শিশু; Image Source: Noyon Assad

নিরাপদ দ্বীপে সাঁঝের মায়া

সমুদ্র থেকে হোটেলে ফিরে আবারও বের হলাম দ্বীপের ভেতরটা ঘুরে দেখতে। সেন্টমার্টিনের উত্তরপাড়ার রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম। একটি নিভৃত, শান্ত গ্রাম। একেবারেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। কিন্তু স্থানীয়দের বাড়িঘরের দেখা মিলছিল অল্পই। ছোট-বড় রিসোর্ট দ্বীপকে ঢেকে দিয়েছে বলা যায়। দেখে বোঝাই যায়- কোনোকিছুই পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি এখানে।

সমুদ্রে সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর; Image Soure: Noyon Asad

যা-ই হোক, সন্ধ্যা গড়িয়ে আসছে। হাঁটছি দ্বীপের পশ্চিমদিকের সমুদ্রতটের উদ্দেশ্যে। শুনেছি- এই দ্বীপ নিরাপদ। তাই আর চিন্তার কিছু ছিল না। পশ্চিম তটে গিয়ে দেখা মিলল সারি সারি প্রবালের। সূর্য ডুবছে, প্রবালঘেরা নীরব সমুদ্রতটে বসে সমুদ্রের গর্জন আর ঢেউ ভাঙার শব্দে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে। কখন কেটে গেল কয়েকটা ঘন্টা তা বুঝতেই পারি নি। ঘোর লাগা কেটে গেল দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানের শব্দে। এশার আযান। নিকষ অন্ধকারে তীর ধরে হাঁটতে শুরু করলাম অচেনা পথে। অসংখ্য পর্যটক তীরে ভীড় করছেন তখনও। ক্রমাগত ঢেউ ভাঙার শব্দে মোহিত হচ্ছে হৃদয়।

দ্বীপের অপূর্ব সৌন্দর্য মন ভোলায়; Image Source: Noyon Asad

মোহনীয় রাত

সমুদ্রতীর থেকে জেটির মুখে এই দ্বীপের প্রধান বাজার। পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে সেটা। নানা প্রজাতি ও আকারের সামুদ্রিক মাছে সয়লাব থাকে এই বাজার। সারি সারি সাজানো মাছ থেকে বেছে নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী এগুলোর মুখরোচক রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে প্রায় সব খাবারের দোকানে। লবস্টার, কোরাল, রুপচাঁদা, টুনা, ছুরি, নানা জাতের স্কুইডসহ অসংখ্য মাছের মেলা থেকে কয়েকটি মাছ বাছাই করে রান্নার জন্য দেওয়া হলো। রান্নার পর চললো ভূরিভোজন। এই মাছ এবং রান্নার স্বাদ মনে রাখার মতো।

বাহারি মাছ এবং রান্নার স্বাদ মনে রাখার মতো; Image Source: Noyon Asad

মাছ সাবার করে আবার চললাম সমুদ্রের দিকে। রাত্রির আঁধারে ঢাকা সমুদ্র এক অভাবনীয় মনোমুগ্ধকর আবহ সৃষ্টি করেছে তখন। নোঙর করা ট্রলারগুলোর ছোট ছোট লাল-নীল বাতি সেই আবহে রঙ চড়িয়েছে যেন। তটের কিটকটগুলোতে শুয়ে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের শব্দ, শীতল বাতাস, আর দূরে দ্বীপ থেকে ভেসে আসা মৃদু কোলাহল। এই স্মৃতি আমার হৃদয়ে খোদাই হয়ে রইল। গভীর রাত পর্যন্ত এই অনন্য এক আবহে অবগাহন করে উপলদ্ধি হলো- মানুষের আসলে কখনো কখনো এমন দ্বীপে সমুদ্রের সাথে সময় কাটানো উচিত। আশ্চর্য মোহনীয়তায় মন রাঙিয়ে যাবে তাতে। 

তাদের শৈশব অনেকের মতো রঙিন নয়; Image Source: Noyon Asad

এই সময় পরিচয় হলো দ্বীপের এক ছোট বাসিন্দা ইমাম শরীফের সাথে। তার সাথে আমার গল্প চললো অনেকটা সম নিয়ে। তাদের অভাবের সংসার। এটা-সেটা করে চলে দিন। লেখাপড়া করে। মাঝে মাঝে স্কুলে যায়। বাকিটা সময় সংসারে সহযোগিতার চেষ্টা করে। এখন যেমন কিটকটগুলোর দেখাশোনা করছে। আমি তাকে বোঝালাম- লেখাপড়া করতে হবে। সে জানাল, প্রচন্ড ইচ্ছা তার লেখাপড়া করার। কিন্তু এই দ্বীপে থেকে সে যে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে গেছে, তা তাকে কতটা এগিয়ে যেতে দেবে সেটা নিয়ে ঘোরতর সংশয় আমার মন খারাপ করে দিল। ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাত প্রায় বারোটা। হোটেলে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। পেছনে পড়ে রইল অসাধারণ কিছু মুহুর্তের স্মৃতি। 

দ্বীপরে একটি মসজিদের সামনে নান্দনিক শানবাঁধানো পুকুর; Image Source: Noyon Asad

অনন্য এক সকাল

ক্লান্ত শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গিয়েছি কখন! ঘুম ভাঙল যখন, তখন ভোর হয়ে গেছে। উঠে পড়লাম বিছানা ছেড়ে। স্থানীয় মসজিদে দেখা মিলল কয়েকজন পুরাতন দ্বীপবাসীর। একটু বেলা হলেই তারা পাড়ি জমাবেন সাগরে। তারা জানালেন, মসজিদের আশেপাশে অল্প কয়েকটি বাড়ি আছে। আগে পুরোটা গ্রাম ছিল। কিন্তু এখন চারপাশের সব জায়গা হোটেল-মোটেলের জন্য কিনে নিয়েছে নানা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। তাই মসজিদে বেশি মানুষ আসেন না। চারপাশ ঘুরে তা-ই মনে হলো। দেখা হলো একদল শিশুর সাথে। দলবেধে যাচ্ছে মক্তবে। আমি আবারও সমুদ্রতটে গিয়ে দাঁড়ালাম। সকালের মৃদু শীতল বাতাস আমার ভেতরকে যেন পরিশুদ্ধ করে তুলছিল। জেলেনৌকা থেকে নামানো হচ্ছে মাছ। একটু পরে সেগুলো পাওয়া যাবে খাবারের দোকানে।

সাগর থেকে পাওয়া মাছ নেওয়া হচ্ছে দ্বীপে; Image Source: Noyon Asad

বাজারে গিয়ে একটা সাইকেল ভাড়া নিলাম। বীচে অবশ্য সাইকেল চালানো নিষেধ। ভেতরের একমাত্র রাস্তা ধরে চলতে লাগলাম ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্য। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় দীর্ঘ পথ সাইকেল চালাতে ভর করছিল তীব্র ক্লান্তি। এখানকার ডাব আমাকে সেই ক্লান্তি থেকে মুক্তি দিল। দুবার নেমে ডাবের পানির স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি গল্প জমলো স্থানীয়দের সাথে। ভীষণ রকমের বিনয়ী সবাই। আগেও শুনেছিলাম যে এই দ্বীপের মানুষজন অনেক ভালো। 

যা-ই হোক, একটি অস্থায়ী দোকানে সাইকেল রেখে হেঁটে হেঁটে পথ ধরলাম ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশে। এটি এক নিঃসঙ্গ দ্বীপ। কোথাও কোনো বসতি নেই। প্রবালঘেরা চিকন, লম্বা একটি দ্বীপ। মূল দ্বীপের সাথে সংযোগ থাকলেও জোয়ারে তলিয়ে যায় সেই পথ। জোয়ার আসার আগে তাই ফিরতে হবে। ছেড়া দ্বীপে না এলে এর অনিন্দ্য সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণাই পেতাম না। সমুদ্র, কেয়াবন আর প্রবালের সৌন্দর্যে অন্তরে এক ভিন্ন আবহ নাড়িয়ে যাচ্ছিল। এখানে এখনও জীবিত প্রবালের দেখা মেলে। ছেড়া দ্বীপ দেশের সর্বশেষ ভূখণ্ড। বিষয়টা মনে আলাদা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।

কেয়াবন, প্রবাল আর সমুদ্রের মিশেলে ছেড়া দ্বীপের মোহনীয়তা আশ্চর্য করবে; Image Source: Noyon Asad

ফেরার স্মৃতি

অল্প সময়ের ভ্রমণ। একদিন পরই এলো ফেরার পালা। ফিরতি জাহাজে উঠে বসলাম। এখানে আসার সময় সী-সীকনেসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সতর্কতা হিসেবে এবার আগে থেকেই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন বিকাল। তড়িঘড়ি করে জাহাজের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাজারও গাঙচিল উড়ে বেড়াচ্ছে জাহাজের পেছনে। এই দৃশ্য আসার সময় পাইনি। একদিকে সূর্যাস্ত, অন্যদিকে গাঙচিলের বিক্ষিপ্ত ওড়াওড়ি আমাকে আরেকবার নিয়ে গেল মনভোলানো আবহে। জীবনের স্মৃতিতে যোগ হলো চমৎকার এক বিকাল।

জাহাজের আশেপাশে গাঙচিলদের মনভোলানো ওড়াওড়ি; Image Source: Noyon Asad

সন্ধ্যা নেমে এলো সাগরে। জাহাজের ইঞ্জিনের শব্দ আর জাহাজের গায়ে সমুদ্রের ঢেউ ভাঙার শব্দ একাকার হয়ে সাগরের বুকে এক ছোট জাহাজ এগিয়ে চলছে গন্তব্যে। আমার মনে পড়ল গত রাতের স্মৃতি। ইমাম শরীফের সাথে আমার কথোপকোথন; গল্পের ছলে তাকে বলেছিলাম, কোনো এক দিন হয়তো আবার আসব এই দ্বীপে। হতে পারে সেটা পনের কিংবা বিশ বছর পর। বলেছিলাম, আমি তার সাথে সেদিন আবার কথা বলতে চাই। মনে থাকবে এই রাতের কথা? অনেকক্ষণ ভেবে সে জানাল, তার আরেকটা নাম আছে। কালো মানিক। সেই নামে তার বাবা-মা আগে ডাকতো। এখন ঐ নামে আর কেউ ডাকে না। সে বলছিল, আপনি যখন অনেক দিন পর আসেন, আমাকে ঐ নাম ধরে খুঁজবেন, তাহলে মনে পড়বে। তার বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান! আমার খুব ভালো লাগবে ইমাম শরীফের সাথে যদি আবার দেখা হয়।

মাছ ধরার ট্রলারগুলো দ্বীপের মোহনীয়তারই অংশ; Image Source: Noyon Asad

আমি এই দ্বীপের তীরে এমন একটা রাতে আবারও এমন সময় কাটাতে চাই। আমি আরো অনেকবার এখানকার সমুদ্রের বাতাস বুক ভরে টেনে নিতে চাই, প্রবালের সারিতে হাঁটতে চাই, কেয়া বনে হারিয়ে যেতে চাই। ভালো থাকুক সেন্ট মার্টিন, ভালো থাকুক ইমাম শরীফরা।

This Bengali travel article is about the lifestyle of Saintmartin island, Bangladesh.

Feature Image: Noyon Asad

Related Articles