Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সীতাকুণ্ড ভ্রমণ: পাহাড় আর সমুদ্রের শহরে একদিন

আমাদের যান্ত্রিক জীবনে পিকনিক বা বনভোজন বিষয়টি ইদানীং ক্লিশে হয়ে উঠেছে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রা, সেখানে আড্ডা ও খাওয়াদাওয়া এবং কিঞ্চিৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার বিষয়টি এখন আর যান্ত্রিক জীবনে তেমন পরিবর্তন এনে দিতে পারে না। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনে যখন অভিযানের মতো কোনো রোমাঞ্চ এসে উপস্থিত হয়, তখন যে কেউ আবির্ভূত হতে বাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের সামনে বারান্দার আড্ডায় হুট করে যখন অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়, তখন আর দশটা মানুষের মতো আমার মনও আনচান করে উঠেছিল। 

প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার। চট্টগ্রামে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান থাকার পরেও আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড় বাছাই করি সময় স্বল্পতার কারণে। কারণ, আমরা ২/৩ দিনের জন্য ভ্রমণে বের হতে পারবো না। আমাদের দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে হবে, এবং আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন পাহাড়ি দুর্গম রাস্তায় কিছু রোমাঞ্চকর স্মৃতি নিয়ে ফেরত আসার। এজন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, খুব ভোরে আমরা রওনা দেবো, যাতে দ্রুত সীতাকুণ্ডে পৌঁছে যেতে পারি। এজন্য আমরা সহায়তা নিলাম মাইক্রোবাসের। কারণ ভোরে বের হলে এভাবে পৌঁছানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পন্, নেই। তবে কেউ যদি চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং এর আশেপাশের কিছু সুন্দর স্থান দেখতে চায় এবং তার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে সবচেয়ে ভালো হয় ট্রেনে গেলে। ঢাকা থেকে রাতে চট্টগ্রাম মেইলে চড়ে বসলে খুব ভোরে পৌঁছে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড স্টেশন। 

কাঁচপুর ব্রিজে সূর্যোদয় © Arnab kabir

কাকডাকা ভোরে যখন রওনা দিলাম, পরিচিত ঢাকা এক ভিন্ন চিত্র দেখাল। সারাদিনের ব্যস্ত সেই চেনা রাস্তা রাতের আলো-আঁধারের মাঝে কেমন যেন গা ছমছমে। আসাদগেট, খামারবাড়ি- যেসব রাস্তায় সারাদিন জ্যাম লেগেই থাকে, সেসব রাস্তা শূন্য, নির্জন। শূন্য রাস্তায় খুব দ্রুত আমরা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। তখন ভোর হচ্ছে মাত্র, সূর্য ওঠেনি। সুবিশাল কাঁচপুর ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখন মাত্র সূর্যিমামা উঁকি মারতে শুরু করলেন।

অনেকদিন পর যেন সুন্দর একটি ভোর দেখলাম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে একটি সূর্যোদয় আমাদের স্মৃতিতে জমা হলো। ঢাকা ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা হয়ে আমরা চট্টগ্রামে ঢুকলাম সকাল দশটার ভেতরে। তখনও সীতাকুণ্ড আসেনি, কিন্তু চট্টগ্রামের রাস্তা চলতে চলতেই দূরে দেখা মিলল সুবিশাল পাহাড়ের। সীতাকুণ্ডে পৌঁছে, সীতাকুণ্ড বাজারের ভেতর দিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে হয়। কিন্তু প্রথমেই পথভ্রষ্ট। আমরা সীতাকুণ্ড বাজার ছাড়িয়ে এগিয়ে যাই ইকো পার্কের দিকে। ম্যাপ দেখে যতক্ষণে বুঝতে পারি, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ইউ টার্ন খুঁজে ফেরত আসতে আসতে আরও এক ঘণ্টার মতো নষ্ট। তবে যখন আমরা পাহাড়ের নিচে পৌঁছাই তখন ঘড়িতে এগারোটার একটু বেশি বাজে।

খুব সকালে আমরা বের হয়েছি। উত্তেজনার বশে আমাদের যে ঠিকভাবে নাশতা করা হয়নি, তা বুঝলাম গাড়ি থেকে নেমে। অতঃপর অভিযান পর্বের আগে পেটকে শান্ত করা। সীতাকুণ্ডে পাহাড়ের আশেপাশে অনেক ছোট দোকানপাট। সেখান থেকে ভালো একটা বাছাই করে আমরা ঢুকে পড়লাম নাশতা করতে। লুচি আর সবজি দিয়ে দ্রুত নাশতা সেরে নিয়ে আমরা রওনা হলাম লাঠির খোঁজে। খাবার আহামরি না হলেও দামে চড়া। তবে এমন দর্শনীয় স্থানে সবকিছুর দাম যে একটু বেশিই হবে তা অনুমেয়।

বাঁশের লাঠির দাম ২০ টাকা। খাঁড়া পাহাড়ে ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য এই বাঁশের লাঠি বেশ কার্যকরী। যদিও পাহাড় থেকে নেমে আসার পর তা যদি নষ্ট বা ভেঙে না যায়, তবে ফেরত দিয়ে ১০ টাকা পেতে পারেন আপনি। পর্যাপ্ত পানি ও হালকা খাবার আমাদের সাথেই ছিল। তাই এসব কেনার ঝামেলায় আর যেতে হয়নি। আর এখান থেকেই আমাদের মূল অভিযান পর্বের শুরু।

পাহাড়ে উঠতেই চোখে ধরা দিলো এমন দৃশ্য © Arnab Kabir

পাহাড়ে ওঠার রাস্তা প্রথমে যেখানে শুরু, সেখানে মূলত পাহাড়ি রাস্তা কেটে সুন্দর ঢালাই করে নতুন রাস্তা বানানো হয়েছে। যদিও তা খুব বেশি নয়। হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে তারপর চট্টগ্রামের সাথে মিশেছে। চট্টগ্রাম শহরের সবথেকে উঁচু স্থান এই চন্দ্রনাথ মন্দির। তাই নিচ থেকেই দেখা যাচ্ছিল দুই পাহাড়ের চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত দুই মন্দিরকে। পাহাড়ের ঢালু রাস্তায় চলা শুরু করতে না করতেই এই জায়গার মাহাত্ম্য বোঝা হয়ে গেল। চারপাশে যেন তপস্যা ও পূজোর আবহ। কিছু দূর এগিয়ে চোখে পড়ল শ্রী শ্রী সীতা মন্দির। এ মন্দির যেন হুট করে ইতিহাসের স্মৃতি নাড়িয়ে গেল। এ স্থান শুধু হিন্দুদের অন্যতম বড় তীর্থস্থান নয়, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির অন্যতম বড় শক্তি-পীঠ। শক্তি-পীঠ কী, আর এ মন্দিরের সাথে সম্পর্ক? গল্পটি বলা যাক।

সত্য যুগে এক দক্ষ রাজা মহাদেবের উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এক যজ্ঞের আয়োজন করে। এ যজ্ঞের কারণ ছিল ঐ দক্ষ রাজার কন্যা সতী। কারণ পিতার অনুমতি ছাড়াই সতী বিয়ে করেছিল মহাদেবকে। দক্ষ নারাজ ছিলেন নিজের মেয়ের উপর, বিরক্ত ছিলেন মহাদেবের উপরও। দক্ষ রাজা মহাদেব ও সতী ছাড়া বাকি সকল দেব-দেবীকে সেই যজ্ঞে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মহাদেবের অনিচ্ছা থাকার পরও সতী মহাদেবের সকল অনুসারীদের নিয়ে যজ্ঞের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। 

সতী আমন্ত্রণ না পেয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। দক্ষ রাজা তাকে কোনো সম্মান তো করেনই না, উল্টে মহাদেবকে প্রবল অপমান করেন। স্বামীর এই অপমান সতী সইতে না পেরে সাথে সাথে আত্মহত্যা করে বসেন। সতীর মৃত্যু সংবাদ শুনে মহাদেব শোকে ও অপমানে প্রচণ্ড রেগে যান। দক্ষের যজ্ঞের বারোটা তো বাজানই, সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। মহাদেবের এই কাণ্ডে পৃথিবী ধ্বংস হবার উপক্রম হয়। অন্যান্য দেবতা অনেক অনুরোধ করে মহাদেবকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সকল দেবতার অনুরোধে বিষ্ণুদেব তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহকে ছেদন করেন। ফলে তার দেহের বিভিন্ন অংশ ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে পড়ে। তার দেহের অংশবিশেষ যেসব অঞ্চলে গিয়ে পড়ে সেসব অঞ্চলকে শক্তি-পীঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিংবদন্তী অনুসারে, সতীর দেহের বাম হাত এসে পড়েছিল সীতাকুণ্ডের এই চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায়। শাক্ত ধর্মের অনুসারীদের কাছে এই শক্তি-পীঠ পবিত্র তীর্থস্থান রূপে গণ্য হয়। এবং এই শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১টি।

ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা রাস্তা যখন শেষ হলো, তখন সামনে দুটো রাস্তা। একটি খাড়া সিঁড়ির রাস্তা, যা সোজা চলে যায় চন্দ্রনাথ মন্দিরের মুখে। অন্যটি পাহাড়ি রাস্তা, যেটি বিরূপাক্ষ মন্দিরের পথ। খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওঠার থেকে পাহাড়ি রাস্তায় ওঠা সহজ। নিয়মও তাই। আমরাও সেই নিয়ম পালন করে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। ১,২০০ ফুট ওপরে চন্দ্রনাথ মন্দিরকে লক্ষ্য করে প্রথমে ওঠা বেশ সহজ। কোলাহলমুক্ত নির্জনতা, আরামদায়ক শীতল বাতাস ও সবুজের মাঝে আরও বেশি রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম যখন কিছু দূর ওঠার পর প্রকৃতি দৃশ্যমান হচ্ছিল। ধীরে ধীরে চোখের সামনে ফুটে উঠছিল আশেপাশের অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতির রূপ, যা অগ্রাহ্য করে পথ চলা সম্ভব নয়। তাই মাঝে মাঝে বিশ্রামের নামে এই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছিলাম আমরা সবাই।

এমন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছিলাম আমরা সবাই © Arnab Kabir

তবে প্রথমদিকে কষ্ট না হলেও যখন বিরূপাক্ষ মন্দিরের পথ অর্ধেকের মতো পার করা হয়েছে, তখন আবির্ভূত হলো প্রকৃতির কঠোর মুখ। প্রায় খাড়া পাহাড়। কখনও বা চলতে হচ্ছিল এক পাশে পাহাড় ও অন্যপাশে গভীর খাদ রেখে। সে রাস্তা এমনই সরু যে পাশাপাশি দুজন চলা মুশকিল। আবার প্রাচীন রাস্তার ধাপও বেশ বড়। তাই এই খাঁড়া রাস্তায় চলা যেমন ক্লান্তিকর, তেমনই বিপদজনক। আর শীতকাল বলে রাস্তা শুকনো, তবে বর্ষাকালে এই রাস্তা কতটা বিপদজনক হতে পারে তা যেন চিন্তারও বাইরে। তবে এই রাস্তায় উঠতে উঠতে খেয়াল করলাম পাহাড় কেটে কত সালে কোন ব্যক্তি এই প্রাচীন রাস্তা নির্মাণ করেছে তার স্মৃতিফলকও দেয়া আছে। 

পাহাড় আর পাহাড় © Arnab Kabir

পাহাড়ে তো আর প্রতিদিন চড়া হয় না, দলের সবাই সেভাবে অভ্যস্ত না হবার কারণে আমাদের মাঝে মাঝে থামতে হচ্ছিল। তাই শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দিরে পৌঁছাতে লাগল ২ ঘণ্টার মতো। বলা হয়ে থাকে, এই মন্দির হলো শিবের বাড়ি। প্রতি বছর এই মন্দিরের শিবরাত্রি পূজো হয়। এবং এই মন্দিরের পূজো উপলক্ষে সীতাকুণ্ডে বেশ বড়সড় মেলা বসে, যা সেখানে শিবচতুরদর্শী মেলা নামে প্রচলিত। এই মেলা ও পূজোর সময় লাখেরও বেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে এই মন্দির এলাকায়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা চললাম দ্বিতীয় পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। প্রথম মন্দিরের পথ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পথ যথেষ্ট কঠিন। কারণ এখানে পুরো পথই পার হতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠে। যেখানে নিজেকে সামলে রাখা বেশ কঠিন কাজ। আর এই সময় বুঝলাম পাহাড়ি রাস্তায় বাঁশের লাঠির কার্যকারিতা।

বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে তোলা চন্দ্রনাথ পাহাড় © Arnab Kabir

কঠিন হলেও পথ অল্প। আমাদের লাগল ৪৫ মিনিটের মতো। সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্থানে দাঁড়িয়ে একপাশে সমুদ্র ও অন্যপাশে পাহাড়ের বিশালতা ও নির্জনতা। ১,২০০ ফুট ওঠার কষ্ট এক নিমিষেই উবে গেল। আর আমরা যে রাস্তা বেয়ে উঠে এসেছি, তা চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে আরও বিপদজনক ভাবে দৃশ্যমান। তাই এই কঠিন রাস্তা পার করে আসাতে গর্ববোধও হচ্ছিল। তার চেয়ে মজার কথা- এই পাহাড়ে উঠে অদূরে সমুদ্র দেখে আমাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যাবার, কারণ চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত খুব বেশি দূরের পথ নয়।

জলরাশির এক পাশে কেওড়া বন © Arnab Kabir

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে নামতে আমাদের ৪৫ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। পাহাড় থেকে নামতেও মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছি। পাহাড় থেকে নামার রাস্তাকে যেন নানা ধরনের গাছপালা আগলে রেখেছে। আর আছে দুই পাহাড়ের মাঝের সুরঙ্গ রাস্তা। এই রাস্তার একদম শেষ প্রান্তে ছোট্ট একটি ঝর্ণাও আছে। যদিও তা তেমন আকর্ষণীয় নয়। পাহাড় ছেড়ে বের হতে আসতে না আসতেই মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল। এমন পরিবেশকে এত কম সময়ের জন্য পেয়ে ঠিক মনঃপুত হয় না। কিন্তু কিছু করার নেই। সমুদ্রসৈকতকে দর্শন দিয়ে আমাদের রাতেই ঢাকায় ফেরত যেতে হবে। 

পাহাড় থেকে নেমে ফ্রেশ হওয়া বা দুপুরের খাওয়া বাদ ভুলে গিয়ে আমরা চেপে বসলাম গাড়িতে। আর গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের পথ দেখাতে লাগল গুগল ম্যাপ। যদিও তার দেখানো পথে গিয়েও আমরা পথ হারালাম। তাই সাহায্য নিতে হলো স্থানীয় মানুষদের। বিকেলের শেষ আলোর দিকে যখন আমরা সমুদ্র সৈকতে পোঁছালাম তখন ভাটা চলছে। সমুদ্র বেশ দূরে আর পথের মাঝে বেশ কাদা। তাই সমুদ্রের খুব কাছে না গিয়েই, সেখানের পরিবেশ উপভোগ করতে শুরু করলাম।

অন্য সব সমুদ্রসৈকত থেকে গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকত বেশ আলাদা। সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচার মতো ঘাস মুগ্ধ করল। দূরে জলরাশি ও একপাশে কেওড়া বনও নজর কাড়ল। সবচেয়ে অবাক হলাম সৈকতের পাড়ে যে সবুজ গালিচার মতো ঘাস, সেখানে নালা একে-বেঁকে গেছে। স্থানীয়রা জানালো, জোয়ারের সময় এই নালা যখন পানিতে পরিপূর্ণ হয় যায়, তখন দেখতে আরও বেশি অপূর্ব লাগে। তবে এই দৃশ্য দেখার জন্য জোয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করার ভাগ্য আমাদের ছিল না। খুব দ্রুত সৈকতে ছবি তুলে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সন্ধ্যা নামার আগেই। 

সৈকত-জুড়ে সবুজ গালিচার মতো ঘাস মুগ্ধ করেছে © Kaniz Fatima Meem

একদিনের এই ছোট্ট সফল আর অভিযান আমাদের স্মৃতির পাতায় তো থাকবেই, আর থাকবে ছোট্ট একটু দুঃখ। চন্দ্রনাথ পাহাড় আমাদের দেশের সম্পদ ও অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। অথচ পাহাড়ের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে পলিথিন, পানির বোতল ও সিগারেটের অর্ধাংশ পড়ে নেই। এবং এগুলো আস্তে আস্তে ঢুকে যাচ্ছে গহীন অরণ্যে, যা সারাজীবন পরিবেশের ক্ষতি করে যাবে। অথচ একটু সতর্ক থাকলেই এই দূষণ থেকে পরিবেশকে মুক্তি দেয়া সম্ভব।

Related Articles