Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর অনিন্দ্য সুন্দর এক ডজন জাতীয় উদ্যান

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বন-জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সব দৃশ্য। আর সেসব অপরূপ জায়গাকে সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই রয়েছে জাতীয় উদ্যান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে রাখা এ জাতীয় উদ্যানগুলো প্রতিটি নিজস্ব সৌন্দর্য্যে একে অপরকে হারিয়ে দিতে পারে। বেশিরভাগ জাতীয় উদ্যানই উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপে অবস্থিত। তবে অন্যান্য মহাদেশেও বেশ সুন্দর জাতীয় উদ্যান রয়েছে। চলুন জানা যাক পৃথিবীর সুন্দরতম ১২টি জাতীয় উদ্যানের কথা।

১) ব্যানফ জাতীয় উদ্যান, কানাডা

রকি পর্বতমালার কোলে অবস্থিত ব্যানফ জাতীয় উদ্যান কানাডার সর্বপ্রথম জাতীয় উদ্যান। কানাডার আলবার্টায় অবস্থিত এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে থাকা এ উদ্যানে রয়েছে হ্রদ, পাহাড় ও হিমবাহ। উদ্যানটির উত্তরে লুইস হ্রদ থেকে জ্যাসপার জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত রয়েছে বরফের বিশাল মাঠ। পশ্চিমে রয়েছে বন আর ইয়োহো জাতীয় উদ্যান। দক্ষিণে রয়েছে কোটেনি জাতীয় পার্ক। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো জাতীয় উদ্যানের ঠিক মাঝখানে থাকা বো নদীর তীরে অবস্থিত ব্যানফ গ্রাম। প্রতি বছর প্রায় ৫০ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন ঘুরতে। ১০-২০ ডলার দিয়ে এর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়।

Source: Traveldigg

Source: George Oze

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

২) জিওন জাতীয় উদ্যান, আমেরিকা

আমেরিকার উতাহ রাজ্যে অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যানটি ১৯১৯ সালে তৈরি করা হয়। প্রায় ছয়শ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর অবস্থিত এটি। এখানে প্রায় ৯০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে যার অনেকগুলোই অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। পাহাড় আর মালভূমিতে যেমন রয়েছে মরুভূমি, তেমনই রয়েছে সবুজের সমারোহ। পাহাড় আর মালভূমির বুক চিরে বয়ে গিয়েছে ভার্জিন নদী। শুরুর বছরে মাত্র তিন হাজারের মতো পর্যটক এখানে এসেছিল। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রায় ২৭ লক্ষ পর্যটকের পদধূলি পড়েছিল এ উদ্যানে।

Source: Sand Hollow Resort

Source: Sand Hollow Resort

Source: Sand Hollow Resort

Source: Sand Hollow Resort

৩) প্লিটভিস হ্রদ জাতীয় উদ্যান, ক্রোয়েশিয়া

ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় এই জাতীয় উদ্যান ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ খেতাব প্রাপ্ত। ১৬টি হ্রদ এমনভাবে অবস্থিত যেন মনে হয় বহুতল বিশিষ্ট অনেকগুলো হ্রদ! সবগুলো হ্রদ জলপ্রপাত দিয়ে একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এখানে ঘোরার জন্য পায়ে হাঁটা পথের যেমন ব্যবস্থা আছে, তেমন বৈদ্যুতিক নৌকায় করেও ঘোরা যায়। পিক মৌসুমে এখানে দিনে প্রায় পনেরো হাজার পর্যটক আসেন।

Source: National Geographic

Source: Huck Finn Adventure Travel

Source: The Telegraph

৪) স্নোডোনিয়া জাতীয় উদ্যান, ওয়েলস

গ্যারেথ বেলের দেশ ওয়েলেসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ওয়েলসের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান স্নোডোনিয়া। ওয়েলসের সর্বোচ্চ পাহাড় স্নোডোনিয়া এখানেই অবস্থিত, সে পাহাড়ের নামেই এর নাম। এখানে প্রায় একশরও বেশি হ্রদ রয়েছে। এছাড়াও পশ্চিমে রয়েছে সাগর, পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে বন, নদী আর জলপ্রপাত। পাহাড় আর উপত্যকার সৌন্দর্যও কম যায় না এখানকার। ওয়েলসের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক হ্রদ লিন টেজিগ এখানেই অবস্থিত। হাইকিং, মাউন্টেইন বাইকিং, সার্ফিং- অ্যাডভেঞ্চারের প্রায় সবগুলোই করতে পারবেন এখানে।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

৫) ইয়োলোস্টোন জাতীয় উদ্যান, আমেরিকা

আমেরিকার তিনটি রাজ্য নিয়ে এই উদ্যান অবস্থিত। মজার ব্যাপার, এই উদ্যানটি একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত। এরপরেও নজরকাড়া সৌন্দর্য্য নিয়ে টিকে আছে ইয়োলোস্টোন জাতীয় উদ্যান। এখানে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত উষ্ণ প্রস্রবণ। এছাড়াও পাহাড়, জলপ্রপাত, নদীর পাশাপাশি রয়েছে নানারকম পশুপাখি।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

৬) খাওসক জাতীয় উদ্যান, থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের ২২তম জাতীয় উদ্যান খাওসক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। ৭৩৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপরের অবস্থিত এ উদ্যানে রয়েছে রেইনফরেস্ট, জলপ্রপাত, চুনাপাথরের পাহাড় আর হ্রদ। জাতীয় উদ্যান হিসেবে নতুন হলেও এ এলাকাটি কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে এখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে হাজার রকমের গাছগাছড়া আর পশুপাখি।

Source: Khaosok.com

Source: Khaosok.com

Source: Khaosok.com

৭) স্ক্যাফটাফেল জাতীয় উদ্যান, আইসল্যান্ড

১৯৬৭ সালে আইসল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত এই জাতীয় উদ্যানটি বালু আর হিমবাহের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এক অদ্ভুত মরুদ্যান। আগ্নেয়গিরি এবং হিমবাহের ফলে সৃষ্ট এ এলাকাটিতে রয়েছে কালো বালু, সাদা হিমবাহ আর সবুজ পাহাড়। লক্ষ লক্ষ বছর আগের হিমবাহের প্রবাহের ফলে সৃষ্ট বরফের গুহা এখানকার অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা। প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত এ উদ্যানে কোনো রাস্তা নেই, কিন্তু হাইকিং করার জন্য রয়েছে অসংখ্য ট্রেইল। প্রকৃতি আর অ্যাডভেঞ্চার একসাথে পাবার জন্য স্ক্যাফটাফেলের কোনো তুলনা হয় না।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

৮) কাকাডু জাতীয় উদ্যান, অস্ট্রেলিয়া

উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত কাকাডু জাতীয় উদ্যান অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান। পাহাড় থেকে শুরু করে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত এ উদ্যান প্রায় বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর অবস্থিত। বিশাল এ উদ্যানে রয়েছে পাহাড়, হ্রদ, নদী, জলপ্রপাত ও জলাশয়। এছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির পশুপাখি আর গাছপালা। এদের অনেকগুলোই দুর্লভ প্রজাতির, গোটা পৃথিবীতে একমাত্র এখানেই পাওয়া যায়।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

৯) ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান, নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এ জাতীয় উদ্যানটি প্রায় বারো লক্ষ হেক্টর জমির উপরে অবস্থিত। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান ফিওর্ডল্যান্ড। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে প্রকৃতি সাজিয়েছে ফিওর্ডল্যান্ডকে। পাহাড়ঘেরা এ এলাকায় জনবসতি বেশ কম। তবে পর্যটনের জন্য সেটা মোটেও সমস্যা নয়। পর্যটনের বাইরেও মাছ ধরা কিংবা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয় এ উদ্যানকে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় এখানকার প্রকৃতিও। নদী আর জলপ্রপাতগুলো কখনো একদম শান্ত। আবার ঋতু বদলে গেলে শান্ত নদী আর জলপ্রপাতগুলোই গর্জন করে।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

১০) ইয়োসোমিতে জাতীয় উদ্যান, আমেরিকা

আমেরিকার ক্যালেফোর্নিয়ায় অবস্থিত এ জাতীয় উদ্যানটি প্রকৃতির সৌন্দর্যের আরেকটি অপরূপ উদাহরণ। পাহাড়, নদী, জলপ্রপাতের এই উদ্যানের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা হলো ‘হর্সটেইল ফায়ারফল’। নাম ফায়ারফল হলেও এ জলপ্রপাতে আসলে এখানে আগুনের কোনো কারসাজি নেই। ফেব্রুয়ারি মাসে সূর্যাস্তের সময় এই জলপ্রপাতে সূর্যের আলোয় মনে হয় যেন পানি নয় বরং লাভা পড়ছে। ক্ষণিকের এ দৃশ্য দেখতেও অসংখ্য পর্যটক আসেন এখানে।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

১১) লস গ্লাসিয়ারিস জাতীয় উদ্যান, আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা ও চিলির সীমান্তে অবস্থিত এ জাতীয় উদ্যানটি বরফ আর হিমবাহের এক অপূর্ব মিলনমেলা। ১৯৩৭ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত লস গ্লাসিয়ারিস প্রায় ছ’লক্ষ হেক্টর জায়গায় উপরে অবস্থিত। বরফ যুগের হিমবাহের ফলে সৃষ্ট ঢাল আর্জেন্টিনো ও ভিয়েদমা নামের দু’টি হ্রদে গিয়ে মিশেছে। বরফখন্ড যখন ভেসে যায় হিমবাহ দিয়ে তখন চারপাশের নীল, সাদা আর সবুজ মিলে অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা করে, যার শেষ হয় বরফখন্ডের হ্রদে হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

১২) গ্রেট স্মোকি মাউন্টেইন জাতীয় উদ্যান, আমেরিকা

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উপাধি পাওয়া গ্রেট স্মোকি মাউন্টেইন জাতীয় উদ্যান আমেরিকার সবচেয়ে বেশি পরিদর্শনকৃত উদ্যান। ঘন কুয়াশা ঘিরে রাখে এ এলাকাকে, যে কুয়াশার কারণেই এর নাম হয়েছে ‘স্মোকি’। এটি পৃথিবীর দুর্লভ জায়গাগুলোর একটি, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব কোনোদিন পড়েনি। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এর জীববৈচিত্র্য একইরকম আছে। পাহাড়, জলপ্রপাত, নদী, হ্রদ ছাড়াও রঙিন সব গাছ যে কাউকে মুগ্ধ করে রাখার জন্য যথেষ্ট।

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

Source: Traveldigg

ফিচার ইমেজ- Found the World (Banff National Park)

Related Articles