Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পদব্রজে নাফাখুম জয়

[পূর্বের গল্প এখানে]

একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাত সাড়ে দশটার একটু পরেই শুয়ে পড়তে বাধ্য হলাম। আয়োজক বলেছিলেন, নিজস্ব কাঁথা-কম্বল সাথে নিতে। অনভিজ্ঞতা শুধু আমাদেরই ছিল না! এই কম্বল আমাদের ব্যাগের ওজন বাড়িয়ে দিয়েছিল বেশ কয়েক কেজি। অথচ রেমাক্রির এই কটেজে, এমনকি তৃতীয় রাতে থানচিতে যে হোটেলে ছিলাম সেখানেও পরিষ্কার, দুর্গন্ধহীন লেপ-কাঁথা-কম্বল-বালিশ সবই ছিল। আমি তাই আমার নিজস্ব কম্বলটি একেবারেই ব্যবহার করিনি। আমার পরিবারের সকলেই এ কারণে আমাকে কুরুচিসম্পন্ন বলে ভর্ৎসনা করেছিল। কিন্তু পরদিন সকালে দরজায় কড়া নাড়া শুনে যখন ঘুম ভাঙলো, তখন জানতে পারলাম যে আমি ছাড়া আমার পরিবারের অন্য সকলেই ঠান্ডায় বেশ কষ্ট পেয়েছেন, তাদের ঘুমও এই কারণে ভাল হয়নি। এমনকি একমাত্র আমারই শেষ রাতের দিকে কিছুটা ঘাম ছুটেছিল। আমি কটেজের সাধারণ লেপটিই গায়ে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম।

ভোরের কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ের কোলে রেমাক্রি বাজারের একটি কুঁড়েঘর; ছবি: লেখক

তবে শীতের কারণে না হলেও, ঘুম নষ্ট হওয়ার আরও বেশ কিছু কারণ ছিল। আমাদের কটেজের অন্য অতিথিদের মধ্যে কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র-ছাত্রী ছিল। তারা কটেজের নিচতলায় উঠোনে বার-বি-কিউ করছিল আর বেশ শোরগোল করছিল। ঠিক আমাদের মাথার কাছেই ছিল পাশের ঘরের দরজা, যেটা ঐ ছাত্রদের কয়েকজন একটু পর পর বিশ্রী আওয়াজ করে খুলছিল আর বন্ধ করছিল। এই শব্দ দূষণের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের মাথা আর চোখ যখন নিজস্ব কাজে মনঃসংযোগ করতে সক্ষম হয়েছে, ঠিক তখনই “এই ধর! ধর! চোর! চোর!” চিৎকার শুনে রীতিমক ভিড়মি খেতে হলো। একটু ধাতস্থ হতে বুঝতে পারলাম, চিৎকারটি আমাদের পাশের ঘর থেকে আমাদের দলেরই একজনের ছিল। সেই সাথে এটাও শুনলাম যে, ঐ ঘরের অন্য যারা চোরের দেখা পায়নি, তারা উক্ত ভাইটিকে “ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছ” বলে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু উঠোন থেকেও যখন হইচই শোনা গেল, তখন নিশ্চিত হতে পারলাম যে, আসলেই চোর এসেছিল। সে এসেছিল ঐ ঘরের জানালাটি দিয়ে, যাতে কোনো গরাদ নেই এবং যেটি আমাদের ভাইয়েরা এই ভীষণ শীতেও ‘লুঙ্গি শুকাতে দেওয়ার জন্য’ খুলে রেখেছিলেন। আর পালিয়েছিল ঘরের সামনের বারান্দার রেলিং টপকে।

কুয়াশাঢাকা ভোরে রেমাক্রি ঝর্ণা; ছবি: লেখক
রেমাক্রি বাজারের ধারে রঙিন ডিঙি যাত্রার জন্য প্রস্তুত; ছবি: লেখক
কুয়াশা ঢাকা ভোরে জেগে উঠছে রেমাক্রিন জনজীবন; ছবি: লেখক

এই ঘটনায় আমাদের ঘরের সবার ঘুম কিছুটা হারাম হয়ে গেল। তাই আমরা গল্প করতে শুরু করি। কিন্তু ঠিক এই সময়ে পাশের ঘরের আমাদের একজন ভাই বলে উঠলেন, “আর কথা বলো না, এখন ঘুমাও! আমি ১-১০ পর্যন্ত গুণছি, এর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ো।” আমার একইসাথে অবাক লাগছিল এবং রাগ হচ্ছিল। আমরা কথা বলব না ঘুমাব সেটা বলার তিনি কে? পাগল নাকি? মনে মনে ভাবলাম, সকালে উঠে বোঝাপড়াটা সেরে নিব। এই রহস্যের সমাধান হয় ঐদিন অর্থাৎ তৃতীয় রাতের খাবারের পরে। ভাইয়ার ঐ ধারাপাত আওড়ানো হুমকি ছিল অন্য ঘরের একটি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে। আসলে আমরা ঐ কথোপকথনের শুধু একপাশের লাইনগুলোই শুনেছিলাম। তাই ভুল বুঝেছিলাম।

ঘুম যার যেমনই হোক, খুব ভোরে উঠেই সবাই তৈরি হয়ে নিলাম ট্রেকিংয়ে বেরোনোর উদ্দেশ্যে। সবাই মানে আমার মা, খালাত বোন ও তার মেয়ে বাদে। আমাদের রওনা হতে হতে ভোর ৬:৩০ এর মতো বেজেছিল। ঘর থেকে বেরিয়েই কুয়াশা ঢাকা রেমাক্রি মন ছুঁয়ে দিল। কী অপরূপ সৌন্দর্য! রীতিমতো নৈসর্গিক! এরকম সুন্দর একটা ভোর দেখে আমার আর তর সইছিল না বেরোনোর জন্য। আমদের প্রথম গন্তব্য ছিল রেমাক্রি বাজার, সকালের চা-নাস্তা পর্ব সেরে নেওয়ার জন্য। কটেজ থেকে বেরিয়ে শীতের ভোরে সাঙ্গুর সেই খালটি হেঁটে পেরিয়ে তবেই রেমাক্রি বাজার।

তৈরি হচ্ছে বিরাটকায় চিনি দেওয়া ভাপা পিঠা; ছবি: লেখক
ভোরের শীতে আগুনের উষ্মতা বেশি ছিল না এই হাসির? ছবি: লেখক

এখানে লক্ষ্য করলাম- সব ধরনের মিষ্টি খাবারেই কিছুটা লবণ ব্যবহার করা হয়। আর ভীষণ বড় আকারের পাহাড়ি ভাপা পিঠায় সাধারণ নিয়মানুযায়ী গুড়ের বদলে চিনি দেওয়া হয়। ভাপা পিঠা (একটা কয়েকজন ভাগ করে খেয়েছিলাম), পরোটা, ডিম ভাজি, সুজির হালুয়া (এটা লবণাক্ত হওয়ায় কেউই আসলে খেতে পারিনি), পাহাড়ি কলা ও চা দিয়ে নাস্তা সারি। এসব সেরে নিয়ে মূল ট্রেকিং শুরু করতে করতে প্রায় সকাল ৮টা বেজে যায়। এর মধ্যে আমি আমার মুঠোফোনে মন ভরে ভোরের কুয়াশা ঘেরা এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য ও এর আদিবাসীদের সকালের জীবনযাত্রাকে বন্দী করার চেষ্টা করি।

নাফাখুম ট্রেক

এটি আমার জীবনের একটি অন্যতম বিশেষ ও চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ২০১১ সালে একটি দুর্ঘটনায় আমার ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়ে আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অনেকটাই বাধাগ্রস্থ করে দিয়েছে। কিন্তু একইসাথে আমার এই বাধাকে জয় করার জেদটাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই যত কষ্টই হোক, অটল ছিলাম- এই ট্রেক আমি শেষ করবই। আমি শেষ করেছিলাম- দলের সবচেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন ও শেষ সদস্য হিসেবে। কিন্তু এই দীর্ঘ আর বন্ধুর যাত্রাপথটি ছিল প্রকৃতির নিজ হাতে অতি আদরে সাজানো। আর সেই সাথে ভরে দিয়েছিল আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি। কিন্তু কিছু আক্ষেপও রয়ে গেছে। লাইফজ্যাকেট থাকলেও ‘ওজন বেড়ে যাবে” এই কারণে সাথে নিয়ে যাইনি, তাই ইচ্ছা থাকলেও সাঁতার না জানায় ঝর্ণার পানিতে দাপাদাপি করতে পারিনি। অথচ, শীতের প্রকোপে গায়ে চাপানো গরমের কাপড় ঠিকই সেই ওজন বাড়িয়ে দিয়েছিল, মোটামুটি ১০ মিনিট হাঁটার পরেই। আমাদের বলা হয়েছিল, “৬-৭ ঘন্টার হাঁটা”, কিন্তু এই হাঁটা যে এতটা বন্ধুর পথে হবে সে ধারণাই ছিল না আমার বা আমার বোনের।

প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে জয়ী পাহাড়ি নারী; ছবি: লেখক

যাত্রা শুরুর কিছুটা সময় পরেই ঝোপের আড়ালে থাকা একটি পাথরের আঘাতে আমি বেশ ব্যথা পাই আর ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এসেই বুঝতে পারি, ভালই কেটেছিল। আমার ভাইটি তখন সবে অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা শেষ করেছে। আর পরিশ্রমের অভ্যাস ওর একেবারেই নেই। তাই এই পথ পাড়ি দেওয়া ছিল তার মনোবল বৃদ্ধির বেশ বড় একটি সুযোগ। কিন্তু শারীরিকভাবে সে বেশ ভেঙে পড়েছিল। যাত্রাপথে একটু পরপরই আমাদের বিভিন্ন গভীরতার জলাশয় পার হতে হয়েছিল। এর মধ্যে একটি অংশ প্রায় আমার কোমরের কাছাকাছি পর্যন্ত গভীর ছিল। আর আমরা যখন ঐ অংশটির ঠিক মধ্যস্থানে পৌঁছাই, তখন একজন আদিবাসী রাখাল একদল পাহাড়ি গরু নিয়ে একই স্থান পাড়ি দেয়। আমরা গরুগুলোর শারীরিক গড়ন দেখে বেশ ঘাবড়ে যাই। ফেরার পথে তেষ্টা মেটাবার জন্য এখানেই আঁজলা ভরে পানি পান করেছিলাম। তবে পানির তেষ্টা মেটাতে পাহাড়ি ঝর্ণার হালকা মিষ্টি, পরিষ্কার, ঠান্ডা পানি, তা-ও যদি তেষ্টায় গলা ফাটা অবস্থায় মেলে, সেটাকেই বোধ হয় অমৃত বলা যায়।

অসংখ্য ছবি যে তুলেছিলাম, তা বলাই বাহুল্য। ট্রেকিং যে শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং তা-ই নয়। বরং, এই ধরনের ট্রেকিংয়ে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার বলে শারীরিক অক্ষমতাকে সহজেই পরাজিত করা সম্ভব। নাফাখুমের একেবারে কাছে পৌঁছৈ একটি স্থানে আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, শেষ করা বোধহয় আর হলো না। আল্লাহর রহমতে তাৎক্ষণিকভাবেই একটি বিকল্প এবং তুলনামূলকভাবে বিপজ্জনক পদ্ধতি আমার মাথায় আসে। আর আমি অন্যদের দেখে স্বাভাবিক উপায়ে না পারলেও ঝুঁকি নিয়েই ঐ স্থানটি সফলতার সাথে পেরোই।

পথপ্রদর্শক পাহাড়ি কিশোর; ছবি: লেখক

গন্তব্যের চেয়ে যাত্রা বেশি আকর্ষণীয়; নাফাখুম পৌঁছে আরও একবার এই সত্যের সম্মুখীন হই। শীতকালে ঝর্ণার দানবাকৃতি রূপ দেখতে পাবো- এটা আশা না করলেও, এতখানি প্রতিকূল পথ এত কষ্ট করে পাড়ি দিয়ে পথচলাতেই বেশি অ্যাডভেঞ্চার অনুভূত হয়। ফেরার পথে দেখলাম অনেক গ্রুপ তাঁবু আর তাজা মুরগি ‍নিয়ে এগোচ্ছে ঝর্ণার দিকে, অর্থাৎ রাতে চলবে ক্যাম্পিং আর বার-বি-কিউ। ওদের দেখে আমার মনে পড়ে গেল ষোল বছর আগে পড়া তিন্দু ও এর আশেপাশের এলাকা ভ্রমণ নিয়ে লেখা একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত আর্টিকেলের কথা, যেখানে প্রথমবার আমি ’তিন্দু’ সম্পর্কে জানতে পারি। আরও দেখলাম ৫-৬ বছরের বাচ্চা ও পঞ্চাশোর্ধ প্রবীণ দাদা-দাদী এবং মধ্যবয়সী মা-বাবার একটি পরিবারকে। তাদের দেখে আমাদের সকলেরই আত্মবিশ্বাস বেশ বেড়ে যায়। বেলা প্রায় ৩টার দিকে আমরা ট্রেকিং শেষ করে রেমাক্রিতে কটেজে পৌঁছাই। হাতে সময় বেশি না থাকায় বেশ তাড়াহুড়ো করেই আগের রাতের আদিবাসী বাড়িতেই ভাত, ডাল, ভর্তা ও মুরগি দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নৌকায় করে ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করি থানচি বাজারের উদ্দেশ্যে।

এই বাজারে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সন্ধ্যার পরে নানা ধরনের শুটকি মাছের পসরা বসে। এত ধরনের মাছের শুটকি যে আমাদের দেশে পাওয়া যায়, সে সময় পর্যন্ত আমার ধারণাই ছিল না। সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম বিভিন্ন বয়সী শার্ক তথা হাঙর মাছের শুটকি দেখে। আমি আজও এই ব্যাপারে আমার অনুভূতি ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি না। একদিকে মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন খাদ্য, আর অন্যদিকে হাঙরের বংশ নির্বংশ। আমার মনে হয়েছিল, এটাও কি ইলিশের ডিম বা জাটকা ধরার মতো নয়? কী জানি! কিন্তু আমি যে আরও অবাক হতে পারি এটা টের পেলাম যখন দেখলাম যে আমার চ্যাপা শুটকির অন্ধভক্ত মা একটি শুটকিও ছুঁয়ে দেখেনি, কেনা তো দূরের কথা!

পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ফিরতি যাত্রা; ছবি: লেখক
বাঁশের তৈরি ভেলা; ছবি: লেখক

থানচি বাজারে আমরা মোট দুবার বিরতি নিয়েছিলাম। একবার যাওয়ার পথে দুপুরের খাবার আর অনুমতি নেওয়ার জন্য, আর দ্বিতীয়বার নাফাখুমের ট্রেকিং শেষ করে ফিরতি পথে তথা তৃতীয় রাতে, যেটা আমরা এই বাজারেরই একটি আবাসিক হোটেলে কাটিয়েছিলাম। এই হোটেলটির উচ্চতা দোতলার চেয়ে কম, কিন্তু একতলার চেয়ে বেশি। এই উচ্চতার কারণে এসকল হোটেলের ভিতরে কার্ডবোর্ড দিয়ে দোতলা হোটেলের মতো ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। এই হোটেলে এসেই আমার দেখা হয় একজন স্থানীয় ’কবি’র সাথে, যিনি সকালে আমাদের সাথে নাফাখুমেও ছিলেন, তবে ভিন্ন দলে। তিনি আমাকে তার একটি বই উপহার দিয়েছিলেন, যাতে কবিতার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছবির সংখ্যাই বেশি ছিল।

তবে তার সাথে ‘পরিচিত’ হওয়ার সুবাদে আমরা খুব সহজেই চারটি ঘর ভাড়া পেয়ে যাই, যা কিছুক্ষণ আগেও প্রায় অসম্ভব ছিল। এসকল হোটেলের সবচেয়ে খারাপ দিক এগুলোর ওয়াশরুম। তাই হোটেল ভাড়া নেওয়ার আগে একটু যাচাই করে নেবেন। আর অবশ্যই চেষ্টা করবেন অগ্রিম বুকিং করতে, যদিও সেটা অন্যান্য হোটেলে বুকিংয়ের মতো সহজ কাজ হবে না। এখানে আরও রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ, যেখানে উপজাতীয় নয়, বরং সাধারণ দেশি খাবারই বিক্রি হয়ে থাকে। থানচিতে আমরা দ্বিতীয় দিনের দুপুরের, তৃতীয় দিনের রাতের খাবার ও চতুর্থ দিনের সকালের নাস্তা করেছিলাম। সাধারণ ডাল, ভাত, মুরগি, মাছ, সবজি, রুটি, পরোটা ও ডিম ভাজি ছিল মেন্যুতে। খাবারের স্বাদ মোটামুটি মানের।

চতুর্থ দিন, অর্থাৎ ট্রিপের শেষ দিন খুব ভোরে নাস্তা সেরে আমরা আবারো চান্দের গাড়িতে করে বান্দরবানের পথে যাত্রা শুরু করি। এটি ছিল খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব- বড়দিন। আমাদের প্রথম বিরতি ছিল মেঘে ঢাকা নীলগিরি। নিজের পায়ের তলায় মেঘ দেখতে পাব- এটা এতদিন রূপকথার মতোই ছিল আমার কাছে। চারদিক থেকে আমরা যেন মেঘবন্দী হয়ে ছিলাম। কিন্তু সকাল ১০টার রোদের আলো ছবি তোলার জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। এমনকি বেশ গরম লাগছিল। আসলে নীলগিরি আরও সকালে অথবা বিকালের দিকে রোদ পড়ে যাওয়ার পরেই আরামদায়কভাবে দেখা যায়। এরপরে পরিকল্পনায় থাকলেও কোনো স্থানেই আমরা আর থামিনি। শুধু একবার চা-বিরতি দেওয়া হয়েছিল। এরপরে একেবারে বান্দরবান শহরে হোটেলে পৌঁছেই বিরতি।

তাঁতে বোনা শাল বিক্রেতা পাহাড়ি রমণী; ছবি: লেখক

শহরের একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার সেরে আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মতো করে শপিং করি ও শহরটা ঘুরে দেখি। আমি হাতের কাছে কফি পেয়ে দুবার তার আস্বাদ নিই। একই হোটেলে রাতের খাবার সেরে প্রায় ১০:৩০ এর দিকে ঢাকাগামী বাসে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। ভোর ৪ টায় আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই। কিন্তু মন পড়ে থাকে পাহাড়ে। আমরা ট্রেকিংয়ে গেলে মালপত্র পাহারায় আমাদের দলের বাকি ৩ জন ছিল। ফিরে এসে মায়ের আক্ষেপ শুনে মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায়। তিনি কটেজ থেকে বেরিয়ে রেমাক্রি ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের সবারই মনে হয়েছিল, তৃতীয় রাতটাও রেমাক্রিতে কাটালেই ভালো হতো। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, বেঁচে থাকলে আবার যাব সেই স্বর্গে। সেখানকার সহজ সরল জীবন যাপন সত্যিই ঈর্ষণীয়!

ট্রেকিংয়ের জন্য একধরনের রাবারের তৈরি জুতা পাওয়া যায়। দাম একশ থেকে দেড়শ টাকা। ঢাকা থেকেও এটি কিনে নেওয়া যায়, আবার চাইলে বান্দরবানের যেকোনো জায়গাতেই কেনা যাবে। আমরা কিনেছিলাম রেমাক্রি বাজার থেকে। জুতার দাম ট্রিপের প্রাথমিক খরচ জনপ্রতি ৭ হাজার টাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

নীলগিরিতে পুরো দল; ছবি: লেখক

This article is written in Bengali that depicts an experience of the author trekking in the hilly regions of Bandarban to get to the Nafakhum Falls. It also contain helpful information.

Feature image: Author

Related Articles