Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাকপ্যাকিং আসলে কী?

‘ব্যাকপ্যাকিং’ বা ‘ব্যাকপ্যাকার্স’ আজকাল ট্রাভেলারদের জন্য একটি পরিচিত শব্দ। সবার মুখে মুখে শোনা যায় ‘ব্যাকপ্যাকার্স ট্রাভেলার’ যারা, তাঁদের জন্য এই ভ্রমণ পরিকল্পনা প্রযোজ্য। কিন্তু আমরা ক’জন জানি ব্যাকপ্যাকিং বা ব্যাকপ্যাকার্স কাকে বলা হয়? কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে গেলেই কি সেটাকে ব্যাকপ্যাকিং বলা হয়? নাকি ব্যাগের ভেতরে আরও কিছু থাকতে হয়?

Photo Credit- unpackingaustralia.wordpress

ব্যাকপ্যাকিং কনসেপ্টটি বাংলাদেশে প্রায় নতুন। আরবান ডিকশনারিতে রয়েছে, ব্যাকপ্যাকার্স তাঁদেরকেই বলা হয়, “যারা কাঁধে একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা কিংবা অ্যাডভেঞ্চারের সন্ধানে বের হয়ে যায় অথবা কোথাও ঘুরতে গেলে কোনো কিছুর চিন্তা করে না, যেটা সাধারণত তরুণরাই করে থাকে। তবে সব বয়সের মানুষকেই কম বেশি এতে অংশ নিতে দেখা যায়।” ব্যাকপ্যাকিং হচ্ছে কম খরচে স্বতন্ত্র ভ্রমণের একটি মাধ্যম; পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করা, একদম সস্তা হোটেলে থাকা, যা ইচ্ছে তা-ই খাওয়া। সব ধরনের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া একজন ব্যাকপ্যাকার্সের বৈশিষ্ট। প্রচলিত ছুটির ভ্রমণের তুলনায় এদের ভ্রমন দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়। সাধারণত এরা দর্শনীয় স্থান এবং স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাতে পছন্দ করে। এছাড়াও ব্যাকপ্যাকার্সরা ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চার করতে বেশী আনন্দ পায়। অ্যাডভেঞ্চার বলতে সাধারণ প্রচলিত কর্মকাণ্ডের বাইরে স্বভাবসিদ্ধ বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডকে বুঝায়। রোমাঞ্চকর, দুঃসাহসিক, আপাত অস্বাভাবিক, বিপদসঙ্কুল অভিযান হলো অ্যাডভেঞ্চার। সুতরাং এক কথায়  বলা যায়, কাঁধে একটি ব্যাগ আর ঘুরে বেড়ানোর অদম্য ইচ্ছা নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে বেরিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ব্যাকপ্যাকিং ট্রাভেলার।

Photo Credit- wysetc.org

ব্যাকপ্যাকিং একটা লাইফস্টাইল। এটি কেবলমাত্র একটা ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নয়। এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজের বাইরে গিয়ে নিজস্ব নিয়মে চলাফেরার একটা জীবনদর্শন। শুধু পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যাওয়া মানেই ব্যাকপ্যাকিং নয়। ব্যাকপ্যাকিং বলতে বোঝানো হয় এমন এক জীবনধারা যেখানে আপনার পিঠের ব্যাগে করে নিত্য প্রয়োজনীয় যা যা লাগে সেসব বহন তো করবেনই, পাশাপাশি সেগুলোর উপরে ভরসা করে চলে যাবেন লোকালয় থেকে দূরে। রাত্রিযাপন থেকে শুরু করে ক্ষুধা লাগলেও নির্ভর করবেন ঐ ব্যাগের উপরেই। ব্যাকপ্যাকিং ছুটির চেয়ে বেশী কিছু, কারণ একবার আপনি বেরিয়ে পড়লে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা আসবে। তরুণরা তো এটি উপভোগ করেই, পাশাপাশি কর্মজীবন থেকে অবসরপ্রাপ্তদের অনেকেই ব্যাকপ্যাকিং আরও বেশী উপভোগ করেন। আমাদের দেশে হয়ত এমন খুব কম দেখা যায়। তবে পরদেশীরা এই ব্যাপারটিকে খুব উৎফুল্ল মনেই গ্রহণ করে নেয়।

Photo Credit- happytrips.com

যারা নিয়মিত ব্যাকপ্যাকিং করেন, তারা সহনশীল, মানসিকভাবে উদার ও মানুষ হিসেবে খুব ভালো হয়ে থাকেন। তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেবার মতো দৃঢ় ইচ্ছা ও নতুন অভিজ্ঞতা নেবার ক্ষেত্রে সবসময় উন্মুখ থাকেন। ব্যাকপ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে; যেমন আপনি হয়ত ভাবতে পারেন অনেকদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ছেন, তাই অনেক কাপড় লাগবে। কিন্তু আপনার ধারণাটি একেবারেই ভুল। সাথে করে যতটা সম্ভব কম কাপড় নিবেন, কারণ একটি সময় আসবে যখন আপনার কাপড় বদলানোর ইচ্ছেটুকুও হবে না।

Photo credit- Vitchelo.com

খুব অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে ব্যাকপ্যাকার্সরা বেরিয়ে পড়েন পৃথিবীর নতুন সব রহস্য উদঘাটন করতে; নতুন মানুষ, নতুন স্থান, নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি দেখে বেড়াবার জন্য। তারা আরামদায়ক বিছানা আশা করেন না; যেখানে রাত, সেখানেই কাঁত হয়ে পড়েন তারা। একটু নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখানেই তারা ক্ষণস্থায়ী বসতের ব্যবস্থা করে নেন। বেশিরভাগ সময় তাদের কোনো বিশেষ পরিকল্পনাও থাকে না, কোথাও মন বসে গেলে সেখানেই কিছুদিন থেকে যান, নয়তো একটু বিরতি নিয়ে চলে আসেন। ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে, যেদিকে দু’চোখ যায়। ব্যাকপ্যাকার্সরা পাঁচ তারকা হোটেলের থাকার স্বপ্ন দেখে না। বরং তারা পাঁচ হাজার বিলিয়ন স্টার তথা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান। ভোরের সূর্যটাকে ঘুম থেকে উঠেই চোখ মেলে দেখেন তারা। এমন সব জায়গায় তারা ভ্রমণ করেন, যেখানে যাবার কথা সাধারণ মানুষ ভাবতেও পারে না। এমন সব জিনিস তারা দেখেন, যেগুলো দেখার ভাগ্য পৃথিবীর খুব কম মানুষেরই হয়। কারণ আমরা নিশ্চয়ই জানি কষ্টের ফল মধুর মতো মিষ্টি হয়। সুতরাং যারা অনেক বেশী আরামপ্রিয়, তাদের জন্য এই কনসেপ্ট একদমই বিবর্জিত।

অনেকের কাছে ব্যাকপ্যাকিং শব্দটি রোমান্টিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা হয়ত সঠিকভাবে জানেনই না আসলে এটি কি। বর্তমান সময়ে ব্যাকপ্যাকিং অনেকের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শো-অফের বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে ভাবে একদিন/দুইদিন কম খরচে ঘুরে আসলেই ব্যাকপ্যাকার্স হয়ে যাওয়া যায়। প্রকৃত ব্যাকপ্যাকার্স তাদেরকেই বলা হয় যাদের জগৎ সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, যাদের মন শুধু পাখির মতো ওড়ে; আজ এখানে, তো কাল ওখানে। ‘যাযাবর’-এর অপর নামই ব্যাকপ্যাকার্স। যাদের ঘরে এক সেকেন্ডও মন টেকে না, নিত্যনতুন হাওয়ায় নিঃশ্বাস না নিলে দম বন্ধ হয়ে আসে, নতুন নতুন মানুষদের সাথে মিশতে না পারলে, নতুন নতুন জায়গা দেখতে না পারলে মনটাই খারাপ হয়ে যায়, সত্যিকার ব্যাকপ্যাকার্স আসলে তারাই।

Photo credit- Thoughtcatalog.com

যুগে যুগে এমন অনেক ব্যাকপ্যাকার্সের নজির আছে যারা ঘুরে বেরিয়েছেন একদম শূন্য পকেটে। অন্যের গাড়িতে লিফট নিয়ে পথ পাড়ি দেয়া কিংবা কোনো উপায় না পেয়ে হেঁটেই তারা পেরিয়েছেন অনেকখানি পথ। শুনতে অনেক সহজ বা মজার মনে হলেও কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং ধৈর্যসাপেক্ষ ব্যাপার। তারা অনেক সময়ই না খেয়ে দিন-রাত পার করতেন, অনেক সময় তাদের থাকতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে, অনেক সময় তাদের অসহায়তার সুযোগ নিতে চেয়েছে স্থানীয় খারাপ মানুষেরা। তারপরও তারা হাল ছেড়ে দেননি। নিয়মিতভাবে এগিয়ে গেছেন, একজন খারাপ মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দশজন ভাল মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছেন, তাদের সহায়তা পেয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ে। সবাই ব্যাকপ্যাকার্স হতে পারে না। অনেকেরই অনেক রকম দায়িত্ব থাকে যেগুলো অস্বীকার করার কোনো উপায় থাকে না। ব্যাকপ্যাকার্স হওয়ার জন্য দরকার অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণ একটি মন আর অল্প সময়ের নোটিশে অ্যাডভেঞ্চারে বেড়িয়ে যাবার মন মানসিকতা এবং অটুট সাহস।

Photo credit- ramblingduo.com

আমার কাছে ভ্রমণ হচ্ছে শিক্ষা! ভ্রমণ সবসময়ই একটি খোলা বইয়ের মতো। আপনি যত পৃষ্ঠা উল্টাবেন, ততই নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে শিখতে পারবেন এবং অবাক হবেন। বিশ্ব সম্পর্কে জানবেন, নিজেকে চিনতে পারবেন, আরও বুঝতে পারবেন এই জগৎ সংসারের রহস্য। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, শেখার কোনো শেষ নেই। ভ্রমণ আপনাকে ভালবাসতে শেখাবে, একজন ভালো মানুষ হতে শেখাবে। একদা ডুবে গিয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেদিন শিখেছি জীবনের মূল্য কতটুকু।

হ্যাপি ভ্রমণিং!

Related Articles