Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক বিমানবন্দরগুলো

বিশ্বে এমন কিছু বিমানবন্দর রয়েছে যেগুলোতে অবতরণের সময় আপনার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড় হবে। এমনকি দূর থেকে বিমনাবন্দরগুলোর বিপদজনক ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের রানওয়ে দেখলেও আপনার শক্তিশালী স্নায়ুশক্তি দুর্বল হবার সম্ভাবনা থাকবে। আসুন আজ এমনই কিছু বিমানবন্দর সম্পর্কে জানা যাক যেগুলো তাদের অবস্থান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, দুরূহ অবতরণ এবং আকারে ছোট রানওয়ের জন্য পৃথিবীজুড়ে খুবই বিপদজনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত।

১০. সাবা বিমানবন্দর

সিন্ট মার্টেন থেকে মাত্র ২৮ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত এই সাবা বিমানবন্দরকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রানওয়ে সম্বলিত বাণিজ্যিক বিমানবন্দর, যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৪০০ মিটার বা ১,৩০০ ফুট। এজন্য বিমানবন্দরটিকে অবতরণের দিক দিয়ে সবচেয়ে বিপদজনক হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়।

সাবা বিমানবন্দর; Source: to-mati.com

তবে অবতরণের দৃশ্যটি বেশ উপভোগ্য হবে যদি আপনি বিপদের কথাটি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন। অত্যন্ত দক্ষ ও স্বীকৃত পাইলটদেরই অনুমতি রয়েছে এখানে বিমান অবতরণ করার।

৯. টনকন্টিন বিমানবন্দর, টেগুচিগালপা, হন্ডুরাস

হন্ডুরাসের টেগুচিগালপায় ‘সেফ ল্যান্ডিং’ বা নিরাপদ অবতরণের একমাত্র উপায় হলো বিভিন্ন পর্বতের মাঝখান দিয়ে উড়ে আসা। সেখানকার টনকন্টিন বিমানবন্দরে অবতরণের ক্ষেত্রে রয়েছে আরো অনেক বাধা। যেমন বিমানবন্দরটি একটি উপত্যকার উপর অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,২৯৪ ফুট বা ১,০০৪ মিটার উপরে।

টনকন্টিন বিমানবন্দর; Source: wonderlist.com

উপত্যকাটির ৭,০০০ ফুট রানওয়েতে অবতরণের সময় প্রতিটি বিমানকে কিনারা দিয়ে ৪৫ ডিগ্রি কোণে বাঁক নিতে হয়। সেই সাথে পার্বত্য এলাকা হওয়ায় অবতরণের সময় হুট করেই উচ্চতা দ্রুত কমিয়ে আনতে হয় রানওয়ের সাথে বিমানটিকে মুখোমুখি করতে; যা যাত্রীদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। মাঝে মাঝে উদ্দাম হাওয়া অবতরণের প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তোলে যে কারণে অভিজ্ঞ পাইলটদের একদম শেষ মুহূর্তে এসেও অনেক জটিল সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

৮. লা-গার্দিয়া বিমানবন্দর

বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত। বিমানবন্দরটির প্রধান আকর্ষণ হলো জাঁকজমকপূর্ণ শহরের দৃশ্য। তবে অত্যাশ্চর্য এই দৃশ্য দেখার পাশাপাশি বিপদের কথাটিও মাথায় রাখতে হয়। ১৯৬৫ সালে বিমানবন্দরটির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির পর থেকে বিভিন্ন ধরনের মানোন্নয়নের জন্য এটি এখনো নির্মাণাধীন। তবে এতকিছুর পরও এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিপদজনক বিমানবন্দর নামেই পরিচিত।

লা-গার্দিয়া বিমানবন্দর; Source: wonderlist.com

এটির পাশেই রয়েছে আরো দুটি ব্যস্ত বিমানবন্দর জেএফকে এবং নিওয়ার্ক। এজন্য পাইলটদের খুবই সতর্ক থাকতে হয় অন্যান্য বিমানগুলো ও তাদের সময়সূচীর ব্যাপারে; যাতে কোনো প্রকারের সংঘর্ষ না ঘটে। চিন্তার আরেকটি যে বিষয় রয়েছে তা হলো বিমানবন্দরটি মিডটাউন ম্যানহাটন শহর থেকে মাত্র ৮ মাইল দূরে। অর্থাৎ অবতরণের ক্ষেত্রে সামান্য গণ্ডগোল হলেও তা অনেক মানুষ ও আবাসস্থলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৭. ওয়েলিংটন বিমানবন্দর, নিউজিল্যান্ড

যদি দেখেন এমন একটি ছোট্ট বিমানবন্দরে আপনাকে অবতরণ করতে হচ্ছে যার সামনে এবং পেছনে রয়েছে সাগরের অথৈ পানি, তখন কেমন অনুভূতি হবে। অর্থাৎ অবতরণের ক্ষেত্রে পাইলট একটু ভুল করলেই বিমানটি সরাসরি আছড়ে পড়বে সাগরের নীল পানিতে!

ওয়েলিংটন বিমানবন্দর; Source: wikimedia commons

নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিই হলো সরাসরি এমন একটি উদাহরণ। শুধু শুরুতে এবং শেষে সাগরের পানিই যে এর মূল বিপদ তা নয়! বিমানবন্দরটির রানওয়েও আকারে বেশ ছোট। মাত্র ৬,৩৫১ ফুট। তাই ওয়েলিংটনের এই বিমানবন্দরে অবতরণের সময় প্রায়ই যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

৬. লুকলা বিমানবন্দর, নেপাল

নামে লুকলা বিমানবন্দর নামে পরিচিত হলেও পরবর্তীতে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘তেনজিং-হিলারি এয়ারপোর্ট’; যে দুই ব্যক্তি সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন তাদের নামে। এভারেস্ট পর্বতমালা দেখতে আসা ভ্রমণকারীরা অধিকাংশ সময়ই এই নেপালি বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে থাকেন। তবে বিমানবন্দরটি ঠিক এভারেস্টের মতোই যেন বিপদজনক। কারণ সেখানে অবতরণ এবং আরোহণের জন্য বরাদ্দকৃত যে স্থানটি রয়েছে তা আকারে অনেক ছোট।

লুকলা বিমানবন্দর; Source: ilmkidunya.com

সেই সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফুট বা ২,৪৩৮ মিটার উপরে অবস্থিত এই বিমানবন্দরে নেই কোনো উন্নত ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোও। খুব অল্প পরিসরে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা। এটিকে বলা হয় সবচেয়ে বিপদজনক ‘এয়ারপোর্ট ল্যান্ডিং’, কারণ মাউন্ট এভারেস্ট হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থানগুলোর একটি যার উপর দিয়েই বিমানগুলোকে উড়ে আসতে হয়।

৫. কোর্চেভেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ফ্রান্স

কোর্চেভেল বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্যই যেকোনো যাত্রীকে দুঃস্বপ্ন দেখাতে যথেষ্ট। কারণ সাবা বিমানবন্দরের পরই, বিশ্বের অন্যতম ছোট রানওয়েটি রয়েছে এখানেই, যা মাত্র ৫২৫ মিটার লম্বা, যার নতিমাত্রা মাত্র ১৮.৬%।

কোর্চেভেল বিমানবন্দর; Source: deskgram.org

এখানে অবতরণের জন্য পাইলটদের আল্পস পর্বতমালা পার হয়ে সতর্কতার সাথে অবতরণ করতে হয়। সেই সাথে অবতরণের ঠিক পূর্বে বিমানগুলোকে একটি নির্দিষ্ট কোণে চালিয়ে নিয়ে আসতে হয় শুধুমাত্র বিমানের গতি কমানোর জন্য। সেই সাথে রানওয়েতে নেই কোনো তত্ত্বাবধানকারী যন্ত্রাংশ এবং আলোক ব্যবস্থা। তাই নিচু মেঘ বা কুয়াশা থাকলে এখানে অবতরণ করা একপ্রকারের অসম্ভবই বলা চলে।

৪. কাই টাক বিমানবন্দর, হংকং

কাই টাক বিমানবন্দরটি অবতরণ এবং আরোহণ উভয়দিক দিয়েই একসময়ের সবচেয়ে বিপদজনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। শক্তিশালী বায়ুর প্রবাহ এবং চারপাশের পর্বতমালা বিমানবন্দরটিতে অবতরণের প্রক্রিয়ায় এনেছিলো আরো জটিলতা। এজন্য এই বিমানবন্দরটি থেকে আরোহণ করতে, পাশাপাশি এখানে অবতরণের সময়েও পাইলটদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা লাগতো।

কাই টাক বিমানবন্দর থেকে আরোহণের দৃশ্য; Source: canacopegdl.com

তবে একসময় যাত্রীরা বেশ আশাবাদী ছিলেন বিমানবন্দরটিকে নিয়ে। কিন্তু সেটিও এর নাম ‘দ্য মাদার অব অল স্ক্যায়ারি এয়ারপোর্টস’ নামে ভূষিত হবার অনেক আগে। অত্যধিক প্রতিকূলতার কারণে ১৯৯৮ সালে বিমানবন্দরটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৩. আইসল্যান্ডের ‘আইস রানওয়ে’

বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থানের বিমানবন্দরটি যে খুব একটা সুবিধাজনক হবে না তা আন্দাজ করাই যায়। আসলে এখানে কোনো সত্যিকারের রানওয়েই নেই। বিমান যেখানে অবতরণ করে সেটি শুধু পরিষ্কার করা বরফ এবং তুষারে আচ্ছাদিত স্থান।

আইস রানওয়ে; Source: ilmkidunya.com

এখানকার রানওয়েতে অবতরণের সময় যে বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হয় তা হলো বিমানটির ওজন। এজন্য অবতরণের পূর্বেই প্রত্যেকটি বিমানের যথাযথ ওজন মাপা হয়। কারণ ওজন একটু বেশি হলেই তা বরফের রানওয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আর অতিরিক্ত ওজনের কারণে যে সমস্যা হবে তা হলো বিমানটি বরফের রানওয়েতে থাকা তুষারে আটকেও যেতে পারে।

২. প্রিন্সেস জুলিয়ানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ক্যারিবিয়ানের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর হলো এটি। এখানে অবতরণের জন্য পাইলটদের অনেকগুলো জটিল বিষয় মাথায় রাখতে হয়। এই প্রিন্সেস জুলিয়ানা বিমানবন্দরে যথাযথভাবে অবতরণ করতে পাইলটদের প্রথমে সাগরের সৈকতের কিছু ছোটোখাটো অংশ, তারপর সুরক্ষা বেড়া, তারপর রাস্তা পার হয়ে রানওয়েতে প্রবেশ করতে হয়। যে কারণে এটিকে বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক বিমানবন্দর বলা হয়।

বিমানবন্দরটির ‘ল্যান্ডিং স্ট্রিপ’টিও অপেক্ষাকৃত ছোটো। মাত্র ৭,১৫০ ফুট। অথচ বড় বিমানের কমপক্ষে ৮,০০০ ফুট এবং ভারী বিমানগুলোর ১০,০০০ ফুট রানওয়ে দরকার হয় নিরাপদ অবতরণের জন্য। প্রকৃতপক্ষে, বিমানবন্দরটি ছোটোখাটো ও মাঝারি আকারের বিমানের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিলো। তবে বড় আকৃতির জাম্বো A340s এবং 747s বিমানও এখানে অবতরণ করে থাকে।

১. পারো বিমানবন্দর, ভুটান

বিশ্বের সবচাইতে মারাত্মক ও বিপদজনক বিমানবন্দরের তালিকা তৈরি করলে ভুটানের এই পারো বিমানবন্দরের নাম সবার উপরেই থাকবে। জেনে অবাক হবেন যে, সর্বসাকুল্যে মাত্র ৮ জন পাইলটকে এই বিমানবন্দরে অবতরণ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

পারো বিমানবন্দরে অবতরণ; Source: bocahndeso.com

বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় মাইল উপরে অবস্থিত, যার চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ১৮,০০০ ফুটেরও দীর্ঘ সব চূড়া। অপরদিকে বিমানবন্দরটির রানওয়েটি মাত্র ৬,৫০০ ফুট লম্বা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এমন উঁচুতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এত ছোটো রানওয়ে পৃথিবীতে খুব একটা নেই। তাই এই রানওয়েতে অবতরণের সময় যাত্রীদের স্নায়ুর উপর যে অনেক বেশিই চাপ পড়ে তা বলাই বাহুল্য।

ফিচার ইমেজ: timeless-news.de

Related Articles