Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সর্বোচ্চ টুইন টাওয়ারগুলো

টুইন টাওয়ার শুনলে আমাদের অনেকেরই চোখের সামনে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু সেটিই বিশ্বের একমাত্র টুইন টাওয়ার না। টুইন টাওয়ার বলতে বোঝানো হয় এমন এক জোড়া ভবনকে, যারা দেখতে প্রায় হুবহু একই রকম, যাদের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য একই রকম, যাদের উচ্চতা প্রায় একই, যাদের অবস্থান পরস্পর থেকে কাছাকাছি, এবং যারা একই কমপ্লেক্সের অংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সুউচ্চ টুইন টাওয়ারের সংখ্যা কম নয়। চলুন পরিচিত হয়ে নেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০টি সর্বোচ্চ টুইন টাওয়ারের সাথে।

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, মালয়েশিয়া

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার; Source: seatrade-maritime.com

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এক জোড়া বহুতল ভবন। বর্তমানে বিশ্বের জোড়া বহুতল ভবনগুলোর মধ্যে এদের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এরা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং পরিচিতিমূলক স্থাপনা। ১৯৯৮-২০০৪ সাল পর্যন্ত এই ভবন দুটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। ভবন দুটি ৪১ এবং ৪২ তম তলায় একটি ৫৮.৪ মিটার দীর্ঘ সেতু দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত।

পেট্রোনাস টাওয়ারের সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতা ৪৫১.৯ মিটার, যদিও এর মূল কাঠামোর উচ্চতা ৩৭৮.৬ মিটার। প্রতিটি ভবনে মূল ৮৮টি তলা ছাড়াও মাটির নিতে আরো ৫টি করে তলা আছে। টাওয়ার-১ নামক ভবনটি ব্যবহৃত হয় মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানি, পেট্রোনাসের মূল কার্যালয় হিসেবে। এর নামানুসারেই বিল্ডিং দুটোর নামকরণ করা হয়েছে। টাওয়ার-২ ভবনটি ব্যবহৃত হয় পেট্রোনাসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানীর কার্যালয় হিসেবে। ভবন দুটির জ্যামিতিক নকশা তৈরি করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক স্থাপত্যকলার সাথে মিল রেখে। ভবনগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট মার্কিস, আরব আমিরাত

জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট মার্কিস টুইন টাওয়ার; Source: worldpropertyjournal.com

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই চোখ ধাঁধানো বহুতল অত্যাধুনিক ভবনের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ারের অনেকগুলোরই অবস্থান দুবাইতে। জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট মার্কিস (JW Marriott Marquis) দুবাই টাওয়ার দুটো হচ্ছে দুবাইয়ের সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টুইন টাওয়ার। এর পূর্ব নাম ছিল এমিরেটস পার্ক টাওয়ার্স হোটেল।

জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট মার্কিস মূলত পাশাপাশি অবস্থিত এক জোড়া হোটেল ভবন, যা ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা পরিচালিত হয়। ৭২ তলা বিশিষ্ট হোটেলটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু হোটেল। প্রতিটি ভবনের সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতা ৩৫৫ মিটার, তবে মূল কাঠামোর সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৯৮ মিটার। ভবন দুটিতে মোট ১,৬০৮টি কক্ষ আছে। এগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৯ কোটি মার্কিন ডলার।

হুয়াগুয়ান টাওয়ার, চীন

হুয়াগুয়ান টুইন টাওয়ারের মডেল; Source: lwkp.com

বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবনটি এখনও চীনের দখলে না গেলেও সর্বোচ্চ ভবনগুলোর অধিকাংশেরই অবস্থান চীনে। চীনের গুইয়াং শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুয়াগুয়ান টাওয়ার (Huaguoyuan Tower) হচ্ছে চীনের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার। সদ্য নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া এই জোড়া ভবনটির উচ্চতা ৩৩৫ মিটার। বর্গাকৃতির প্ল্যান বিশিষ্ট ভবন দুইটির প্রতিটিতে ৭৪টি তলা আছে। ভবন দুটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, দোকানপাট এবং বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

বাহরাইন ফাইন্যানশিয়াল হারবার, বাহরাইন

বাহরাইন ফাইন্যানশিয়াল হারবার টুইন টাওয়ার; Source: Getty Images

বাহরাইন ফাইন্যানশিয়াল হারবার (Bahrain Financial Harbour), সংক্ষেপে BFH মূলত একটি একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প, যার অন্যতম প্রধান অংশ এর টুইন টাওয়ার। রাজধানী মানামায় অবস্থিত ভবন দুটো বাহরাইনের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার। এর নির্মাণ সম্পন্ন হয় ২০০৯ সালে। ৫৩ তলা বিশিষ্ট এই জোড়া ভবনের উচ্চতা ২৬০ মিটার। ভবনটির ব্যবহার বহুবিধ, তবে এটি মূলত অফিস হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। এর নির্মাণকাজে খরচ হয় প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এটি বাহরাইনের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

দ্য ইম্পেরিয়াল, ভারত

দ্য ইম্পেরিয়াল টুইন টাওয়ার; Source: mountainsoftravelphotos.com

ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত দ্য ইম্পেরিয়াল টুইন টাওয়ারটি ভারতের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার। সম্প্রতি কলকাতায় ‘দ্য ৪২’ ভবনটি নির্মিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটিই ছিল ভারতের সবচেয়ে উঁচু ভবন। কনক্রিটের তৈরি দ্য ইম্পেরিয়াল মূলত ৬০ তলা বিশিষ্ট এক জোড়া আবাসিক ভবন। প্রথম ৪০ তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় চারটি করে অ্যাপার্টমেন্ট আছে। এরপরের তলাগুলো দুটি অ্যাপার্টমেন্ট বিশিষ্ট। বিল্ডিং দুটির কাঠামোগত উচ্চতা ২১০ মিটার। তবে এদের চূড়ার সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৫৪ মিটার। এগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে।

টাইম ওয়ার্নার সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র

টাইম ওয়ার্নার সেন্টার টুইন টাওয়ার; Source: Getty Images

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচু এবং সবচেয়ে বিখ্যাত টুইন টাওয়ার ছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যা ৯/১১ এর কুখ্যাত সন্ত্রাসী হামলায় ধ্বসে পড়ে। পরবর্তীতে সে স্থানে অবশ্য নতুন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটি টুইন টাওয়ার না। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার হচ্ছে নিউ ইয়র্কের টাইম ওয়ার্নার সেন্টার। এটির বড় অংশ জুড়ে টাইম ওয়ার্নার কোম্পানির অফিস অবস্থিত হলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, শপিং মল প্রভৃতিও আছে এতে।

টাইম ওয়ার্নার সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০০ সালে এবং শেষ হয় ২০০৩ সালে। ভবন দুটির উচ্চতা ২৩০ মিটার। এদের প্রতিটিতে ৫৫টি করে তলা আছে। টুইন টাওয়ার হিসেবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচু হলেও ভবন হিসেবে এর অবস্থান ৮৮ তম স্থানে। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার।

ওয়ান শাংরি লা প্লেস টাওয়ার, ফিলিপাইন

ওয়ান শাংরি লা প্লেস টুইন টাওয়ার; Source: ZipMatch

ফিলিপাইনের আকাশরেখা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যদিও দুবাই, হংকং কিংবা সাংহাইয়ের চেয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে, কিন্তু প্রতি বছরই সেখানে নতুন নতুন আকাশ ছোঁয়া বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। মেট্রো ম্যানিলায় অবস্থিত ওয়ান শাংরি লা প্লেস (One Shangri-La Place) টাওয়ারযুগল সে দেশের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার। এটি সে দেশের নবম সর্বোচ্চ ভবন। ক্রংক্রিটের তৈরি সম্পূর্ণ আবাসিক এই ভবন দুটির প্রতিটি ৬৪ তলা বিশিষ্ট। এদের উচ্চতা ২২৭ মিটার। ভবন দুটি উন্মুক্ত করা হয় ২০১৪ সালে।

পার্ক সেন্ট্রাল কমপ্লেক্স, ভেনেজুয়েলা

পার্ক সেন্ট্রাল কমপ্লেক্স টুইন টাওয়ার; Source: Wikimedia Commons

ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অবস্থিত পার্ক সেন্ট্রাল কমপ্লেক্সের টুইন টাওয়ারটি সে দেশের এবং সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার সর্বোচ্চ ভবন। এটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। তখন থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এটি সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার সর্বোচ্চ ভবন ছিল। ভবন দুটির প্রতিটি ৫৯ তলা বিশিষ্ট। এদের মূল কাঠামোর উচ্চতা ২২৫ মিটার, যদিও ছাদের উপর অবস্থা অ্যান্টেনার চূড়া পর্যন্ত হিসেব করলে এই উচ্চতা হয় ২৫৫ মিটার।

ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, অফিস প্রভৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮২ সালে অগ্নিকাণ্ডে একটি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যদিও পরে তা আবার সংস্কার করা হয়। বিশ্বের অন্য অনেক টুইন টাওয়ারের তুলনায় পার্ক সেন্ট্রাল কমপ্লেক্সের টুইন টাওয়ার দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।

দ্য পিক টুইন টাওয়ার্স, ইন্দোনেশিয়া

দ্য পিক টুইন টাওয়ার; Source: skyscrapercenter.com

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অবস্থিত দ্য পিক হচ্ছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্প, যেখানে দুই জোড়া টুইন টাওয়ার আছে। টাওয়ার ১ এবং ২ হচ্ছে ৫৫ তলা বিশিষ্ট এবং এদের উচ্চতা ২১৯ মিটার। অন্যদিকে টাওয়ার ৩ এবং ৪ অপেক্ষাকৃত ছোট, ৩৫ তলা বিশিষ্ট। কনক্রিটের কাঠামোর এই টুইন টাওয়ারগুলো যখন ২০০৬ সালে প্রথম উন্মুক্ত হয়েছিল, তখন অস্ট্রেলিয়ার ইমেজ পাবলিশিং একে বিশ্বের সেরা ৫০টি ভবনের তালিকায় স্থান দিয়েছিল।

কিংনাম হ্যানয় ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার, ভিয়েতনাম

কিংনাম হ্যানয় ল্যান্ডমার্ক টুইন টাওয়ার; Source: Booking.com

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অবস্থিত কিংনাম হ্যানয় ল্যান্ডমার্ক মূলত একটি আবাসন প্রকল্প, যার কেন্দ্রে আছে ৭২ তলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন এবং ৪৮ তলা বিশিষ্ট দুটি হোটেল ভবন। এই হোটেল ভবন দুইটি একই আকৃতির টুইন টাওয়ার। এদের প্রতিটির উচ্চতা ২১২ মিটার। এই টুইন টাওয়ারে পাঁচ তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ছাড়াও বিনোদন কেন্দ্র এবং শপিং মল আছে। ভবন দুটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে।

ফিচার ইমেজ- YouTube (জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট মার্কিস টুইন টাওয়ার)

Related Articles