Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এই সৌদি আরব প্রকৃত সৌদি আরব নয়: সৌদি প্রিন্স মুহাম্মাদের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

মাত্র ৩২ বছর বয়সী সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমানকে ইতোমধ্যে ধরে নেয়া হচ্ছে আরবের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে, অথচ রাজা তিনি এখনো হননি। ২০১৭ সালে তাকে তার ৮২ বছর বয়সী বাবা কিং সালমান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে ‘M-B-S’ (Mohammed bin Salman) নামেও তার পরিচিতি। ১৫,০০০ প্রিন্সের দেশে নারীদের অধিকার নিয়ে নতুন আইন, সৌদি আরবে সংগীত ও সিনেমার প্রচলন এবং দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রিন্স মুহাম্মাদ ইতোমধ্যে হয়েছেন আলোচিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার সমালোচিত। প্রথমবারের মতো তিনি আমেরিকান কোনো মিডিয়ায় তথা CBS নেটওয়ার্কের নোরা ও’ডনেলের (Norah O’Donnell) কাছে দিয়েছেন সাক্ষাৎকার যেখানে তিনি কথা বলেছেন নিজের দেশ ও অনেক কিছু নিয়েই। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার পুরোটা পরিবেশন করা হলো।

সাক্ষাৎকার শুরু আগে প্রিন্স মুহাম্মাদ হেঁটে আসছেন নোরা ও’ডনেলের সাথে; Source: CBS News

নোরা: অনেক আমেরিকানই সৌদি আরব বলতে বোঝেন ওসামা বিন লাদেন আর নাইন-ইলেভেনের কথা। তাদের মনে পড়ে যায় যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমেরিকার মাটিতে বিন লাদেন নিয়ে আসে তার কথা।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: কথা সত্য। খুব স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে ওসামা বিন লাদেন নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী আক্রমণের জন্য ১৫ জন সৌদিকে দলে নিয়েছিল। সিআইএ নথিপত্র আর কংগ্রেসের তদন্ত অনুযায়ী, ওসামা বিন লাদেন চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য আর পশ্চিমা দুনিয়ার মাঝে, সৌদি আরব আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বিভেদ তৈরি করতে।

নোরা: কেন ওসামা বিন লাদেন পশ্চিমা বিশ্ব আর সৌদি আরবের মাঝে ঘৃণা তৈরি করতে চেয়েছিল?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: তার মৌলবাদী ধারণার প্রসার ও অনুসারী দলে টানবার জন্য দরকার ছিল অনুকূল একটা পরিবেশ তৈরি করা; যেখানে সে তার এ ধারণা প্রচার করতে পারবে যে পশ্চিমা বিশ্ব তোমাদের ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। সত্যি বলতে, সে সফলই হয়েছে এ বিভেদ তৈরিতে।

নোরা: এখন এটা পরিবর্তনের উপায় কী? কারণ, দেখে মনে হচ্ছে আপনারা যা করছেন তা কেবল নিজের দেশের ভেতরেই কেবল পরিবর্তন আনার।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ঠিক। আমার বিশ্বাস, গত তিন বছরে আমরা অনেক ব্যাপারেই সাফল্য পেয়েছি।

প্রিন্স মুহাম্মাদ; Source: CBS News

[সিবিএস এর ১০ সদস্যের টিম যখন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে দেখা করতে যান, তখন তিনি ছিলেন রাজধানী রিয়াদের রাজদরবারে। মুষল বৃষ্টির মাঝে তিনি এলেন দেখে করতে, এ বৃষ্টিটাকে মরু রাজ্যের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়। তার সংস্কারের জন্য সৌদিতে তার প্রশংসা করছেন অনেকেই, কিন্তু তার ক্ষমতায় আরোহণের পদ্ধতিকে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তার কর্মকাণ্ডে তার অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে, এ কারণে বিশ্বের সবচেয়ে পাহারায় থাকা মানুষগুলোর একজন তিনি। এ রাজদরবারেই তিনি শুরু করেন তার দিনের কাজ।]

নোরা: খুব কাজের চাপ বুঝি?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: (এবার ইংরেজিতে) সারাক্ষণ।

[পুরো সাক্ষাৎকার জুড়ে তিনি বেশিরভাগই আরবিতেই উত্তর দেন, যদিও তিনি ইংরেজিতেও পারদর্শী। ছোটবেলায় তিনি সিনেমা দেখে দেখে ইংরেজি শিখেছেন। তিনি অবগত যে, তার দেশের ৭০% নাগরিকই তার মতো- ৩৫ এর নিচে যাদের বয়স।]

নোরা: তো, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: (ইংরেজিতে) অনেক চ্যালেঞ্জ। আমার মতে, প্রথম বড় চ্যালেঞ্জটা হলো, আমরা যা করছি তাতে মানুষের আস্থা আনা।

নোরা: এরকম প্রসিদ্ধ একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, সৌদিতে প্রচলিত ইসলাম হলো কড়া, কঠোর, অনমনীয়। কথা কি সত্য?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ১৯৭৯ সালের পর থেকে, সত্য। আমরা পরিস্থিতির স্বীকার। বিশেষ করে আমার প্রজন্ম থেকে।

[ক্রাউন প্রিন্সের মতে, সৌদি আরবের সকল সমস্যার গোড়া সেই ১৯৭৯ সালে। সে বছর পাশের রাষ্ট্র ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনার পত্তন করেন। একই বছর, সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয় মক্কার মসজিদুল হারাম, যা কিনা মুসলিমদের কাছে বিশ্বের পবিত্রতম স্থান। (মসজিদুল হারামের সে আক্রমণ সম্পর্কে রোর বাংলার বিস্তারিত আর্টিকেল পড়বার জন্য ক্লিক করুন এখানে।) তখন থেকেই ধর্মীয় কড়াকড়ি শুরু হয় সৌদি আরবে।]

নোরা: গত চল্লিশ বছর ধরে কী চলছে সৌদি আরবে? এটা কি আসল সৌদি আরব?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: প্রশ্নই আসে না। এটা আসল সৌদি আরব না। আপনার দর্শকদের আমি বলব স্মার্টফোনে একটা সার্চ করে জেনে নিতে। গুগল করলেই তারা দেখতে পাবেন ষাট আর সত্তরের দশকের সৌদি আরব কেমন ছিল। সেখানেই সহজে পাবেন সত্যিকারের সৌদি আরব।

১৯৬০ এর দশকে রিয়াদে সোফায় বসে আছেন (বাঁয়ে) ফ্যাশন ডিজাইনার পারভিন শাথ তার বান্ধবীদের সাথে; Source: imgur

নোরা: ১৯৭৯ সালের আগে কেমন ছিল সৌদি আরব?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মতোই স্বাভাবিক জীবন ছিল আমাদের। নারীরা গাড়ি চালাত। ছিল মুভি থিয়েটার। নারীরা সবখানে কাজ করত। ১৯৭৯ এর আগে স্বাভাবিক একটা দেশ ছিলাম আমরা।

নোরা: নারীরা কি পুরুষের সমান?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: পুরোপুরি। আমরা সবাই মানুষ। আমাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।

নোরা: আপনি বলেছেন যে আপনারা সৌদি আরবকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আসল রূপে, মডারেট ইসলামে। এর মানে কী?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: আমাদের মাঝে চরমপন্থীরা আছেন যারা নারী পুরুষের মেলামেশা নিষিদ্ধ করেন, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও। তাদের পোষণ করা এরকম অনেক ধারণাই নবী (সা) ও খলিফাদের যুগের সাথে মেলে না। সেটা হলো সত্যিকারের উদাহরণ, রোল মডেল। শরিয়া আইন স্পষ্ট করে বলা আছে যে, নারীরা পুরুষদের মতোই শালীন ভদ্র পরিধান করবে। এর মানে এই না যে, নারীদের একটা কালো আবায়া আর মাথা ঢাকবার কালো কাপড় পরে থাকতে হবে। কী রকম ভদ্র শালীন পোশাক একটা মেয়ে পরবে সেটা সম্পূর্ণ তার সিদ্ধান্ত।

চলছে সাক্ষাৎকার; Source: CBS News

নোরা: আপনি স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, আপনার সরকারের বিরোধিতা করায় ডজন ডজন লোককে আপনি জেলে দিয়েছেন গত বছর। এর মাঝে অর্থনীতিবিদ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীরাও আছেন। এটা কি কোনো মুক্ত সমাজ হলো?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: তাদের ব্যাপারে তথ্য আমরা চেষ্টা করব দ্রুত ও যতটা সম্ভব প্রচার করতে যেন বিশ্ব জানতে পারে সৌদি সরকার আসলে মৌলবাদ প্রতিহত করছে।

নোরা: এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কী বলবেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: সৌদি আরব মানবাধিকার নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু কথা হলো, আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড আর সৌদি স্ট্যান্ডার্ড যে এক না সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। বলছি না যে আমাদের অপারগতা নেই একদমই। অবশ্যই আছে। কিন্তু আমরা স্বভাবতই চেষ্টা করছি আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে।

নোরা: মানে, রিৎজ-কার্লটন হোটেলে কী হয়েছিল? আপনি তো রিৎজ-কার্লটনকে জেল বানিয়ে ফেলেছেন।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: আমরা যেটা করেছি সেটা সৌদি আরবের জন্য খুব দরকারি ছিল। যা যা করা হয়েছে সবই আইন মেনে।

নোরা: এটা কি ক্ষমতা দখলের জন্য না?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: আমার যদি ক্ষমতা থাকে, বা রাজার যদি ক্ষমতা থাকে এরকম প্রভাবশালী মানুষদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবার, তাহলে আমরা ইতোমধ্যে ক্ষমতাশালী। তাই ক্ষমতায় আরোহণ দখলের জন্য এসব করা- এরকম অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এই সেই হোটেল; Source: The Ritz-Carlton

নোরা: কত টাকা ফিরে পেলেন আপনি?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। তবে টাকার অঙ্কটা বড় কথা না এখানে। আসল কথা হলো দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে অন্যদের এই মেসেজ দেয়া যে, দুর্নীতি করলে তার শাস্তি হবে ভয়াবহ।

নোরা: আরেকটি উদ্দেশ্য কি বলা যায় যে, আপনারা চাইছেন এরকম একটা মেসেজ দিতে বিশ্বকে, যেমনটা আমরা আমেরিকার বলে থাকি- there’s a new sheriff in town?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ঠিক। একদম ঠিক।

নোরা: নিউ ইয়র্ক টাইস পত্রিকার খবর আসে যে, সম্প্রতি প্রিন্স নিজে অর্ধ বিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি প্রমোদ তরী কিনেছেন। আর একটি ফ্রেঞ্চ অট্টালিকা। এ বিষয়ে তার বক্তব্য কী?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: দেখুন, আমার ব্যক্তিগত জীবন আমি ব্যক্তিগতই রাখতে চাই, সেটার ব্যাপারে মিডিয়ার মনোযোগ আনার ইচ্ছা আমার নেই। কোনো পত্রিকা এটা নিয়ে রিপোর্ট করতে চাইলে, সেটা তাদের ইচ্ছে। আমার খরচের বিষয়ে বলতে গেলে, আমি ধনী মানুষ, আদৌ দরিদ্র নই। আমি গান্ধী বা ম্যান্ডেলা নই। আমি এমন এক পরিবারের সদস্য যারা শত শত বছর ছিল এবং আছি, এমনকি সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই। আমাদের অনেক জমি আছে। আর আমার ব্যক্তিগত জীবন ১০ কি ২০ বছর আগে যেমনটা ছিল, তেমনই আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার সম্পদের একটা অংশ দান করি, ৫১% ব্যয় করি মানুষের জন্য, আর ৪৯% আমার নিজের জন্য।

[প্রিন্স মুহাম্মাদের আরেকটি দাপ্তরিক উপাধি হলো ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রী’। এ কাজ করতে গিয়ে তার ইরান বিষয়ে অটল মতের কারণে প্রতিবেশী ইয়েমেনের সাথে তার কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়।]

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ইয়েমেনের কিছু অংশে ইরানি আদর্শ ঢুকেছিল। তখন সেনাবাহিনী আমাদের সীমানার কাছে মিলিটারি কাজকর্ম চালাচ্ছিল, এমনকি আমাদের দিকে মিসাইল তাক করছিল। ইরানি মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা ইয়েমেন দেশটিকে ব্যবহার করেছে রিয়াদের দিকে মিসাইল ছুড়তে। আমি কল্পনাও করতে পারি না, একদিন মেক্সিকোতে মিলিশিয়া ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক আর লস এঞ্জেলেসের দিকে মিসাইল ছুড়ছে, অথচ মার্কিনিরা চুপচাপ বসে বসে দেখছে। ব্যাপারটা কিন্তু এরকমই। ভাবতে পারেন?

[জাতিসংঘের মতে, সৌদি এয়ারস্ট্রাইকের কারণে ইয়েমেনে মারা গেছে কয়েক হাজার মানুষ।]

নোরা: আপনি কি মানেন যে একটা মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে ওখানে? ৫,০০০ মানুষ মারা গেছেন, শিশুরা না খেয়ে মরছে!

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: সত্যি এটা খুব দুঃখজনক। আমি আশা করি, এই মানবিক দুরবস্থার জের ধরে মিলিশিয়া আন্তর্জাতিক মহল থেকে সহানুভূতি কোড়ানো বন্ধ করবে। তারাই সাহায্য ঢুকতে দিচ্ছে না যেন দুর্ভিক্ষ ও মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়।

নোরা: ইয়েমেনে যা করছেন, তা কি ইরানের জন্য প্রক্সি যুদ্ধ? ঝি-কে মেরে বউকে শেখাচ্ছেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ইরান যা করছে তা খুবই ক্ষতিকর। ইরানি শাসনব্যবস্থার অধীনে অনেক আল কায়েদা অপারেটিভ লুকিয়ে আছে, ন্যায্য বিচারের অধীনে তাদের আনা যাচ্ছে না। ইরান তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সমর্পণ করছে না। এদের মধ্যে আছে আল কায়েদার নতুন নেতা, ওসামা বিন লাদেনের ছেলে। সে ইরানেই বাস করে, ইরান থেকেই কাজ চালায়। ইরান তাকে সমর্থন দিচ্ছে।

নোরা: ইরান বনাম সৌদির এ শিয়া সুন্নি বিভেদের গোড়ায় কী আছে? এটা কি ইসলামের জন্য দ্বন্দ্ব?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ইরান সৌদি আরবের শত্রু না। এমনকি ইরানের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের সেরা পাঁচেও নেই। ইরানি অর্থনীতির তুলনায় অনেক বড় সৌদি অর্থনীতি। সৌদির সমকক্ষ হতে অনেক দেরি ইরানের।

নোরা: আমি দেখেছি, আপনি ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনিকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘নতুন হিটলার’ ডেকেছেন।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: একদম ঠিক।

নোরা: কেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: কারণ তিনি চান রাজ্যবিস্তার। তিনি চান হিটলার ইউরোপে যেমন করছিল তেমন করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রজেক্ট বানাতে। বিশ্বের অনেক দেশ, এমনকি ইউরোপেও অনেকে বোঝেনি হিটলার কত ভয়ংকর, যতক্ষণ না ঘটনা ঘটেই গেল। আমি চাই না মধ্যপ্রাচ্যেও একই ব্যাপার ঘটুক।

নোরা: সৌদি আরবের কি ইরানকে মোকাবেলা করবার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র দরকার আছে?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক বোমা চায় না। কিন্তু নিঃসন্দেহে, যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানায়, তবে আমরাও শীঘ্রই একই কাজ করব।

নোরা: হোয়াইট হাউজ সৌদি আরবকে বেছে নেয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য। আপনি তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। আর সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক তো ঐতিহাসিক, প্রায় ৮০ বছরের পুরনো। সত্যি বলতে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব হলো আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো মিত্র।

ট্রাম্প ও প্রিন্স মুহাম্মাদ; Source: Al Jazeera

নোরা: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথা বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে। তিনি জামাতা জ্যারেড কুশনারকে এ কাজে নিয়োগ করেছেন। তার সাথে আপনার দেখা হয়েছে, এ বিষয়ে কি আপনারা কথা বলেছেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: ঠিক। জ্যারেড এ কাজে নিয়োগ পেয়েছেন। সৌদি হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আমাদের সকল মিত্র ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায়ে রাখা।

নোরা: তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনবার পক্ষে না বিপক্ষে কাজ করবে?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: আমরা এমন কাজের ওপর মনোযোগ দেই যাতে সবার শান্তি আসে। এমন কিছুর ওপর আমরা মনোযোগ দেই না যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমি সবসময় পজিটিভ থাকতে পছন্দ করি, এটাই আমার স্বভাব। তাই আমি ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে যা যাবে তার পক্ষে, এবং সকলের শান্তির পক্ষে।

[সৌদি পাগড়ি পরিধান করে বেশিরভাগ সন্ধ্যা আর রাতই তিনি রিয়াদের ইরগাহ প্রাসাদের অফিসে কাটান তিনি।]

মিটিং পরিচালনা করছেন প্রিন্স মুহাম্মাদ; Source: CBS News

নোরা: আচ্ছা, আপনি এখানেই রাত কাটান নাকি?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: (ইংরেজিতে) বেশিরভাগ সময়ই। কাজপাগল মন্ত্রীদের সবাই এসব অফিসেই রাত কাটাতো। আমি দুঃখিত, যদি অফিসটাকে বিশ্রী লাগে দেখতে।

নোরা: কী যে বলছেন, এটা মোটেও বিশ্রী দেখতে অফিস না! আপনি এখানে সকাল কয়টার দিকে আসেন, কয়টা পর্যন্ত থাকেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: (ইংরেজিতে) দুপুরের দিকে এসে শেষ রাত পর্যন্ত থাকি এখানে।

[প্রিন্স মুহাম্মাদের মতে, মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো চরমপন্থিরা সৌদি সমাজ এমনকি স্কুলেও প্রভাব খাটাচ্ছে।]

নোরা: সৌদি আরবের স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থা ঘাটিয়ে দেখছেন আপনি?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: মুসলিম ব্রাদারহুড কর্তৃক বড়ভাবেই প্রভাবান্বিত হচ্ছে সৌদি স্কুলগুলো। একটু সময় লাগবে তাদের তাড়াতে।

নোরা: মানে, আপনি বলছেন আপনি এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মৌলবাদ দূর করবেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: অবশ্যই। বিশ্বের কোনো দেশই চাইবে না যে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন চরমপন্থি গ্রুপের দ্বারা প্রভাবিত থাকুক।

নোরা: এখানে এসে যত তরুণীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, সবাই স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে। তারা আমাকেও অ্যাড করতে চাচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিবর্তন করে দিচ্ছে এ সমাজটাকে।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: এ ব্যাপারে সফলতা আমি দাবি করতে পারি না। সৌদি নাগরিকেরা সবসময়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির বিষয়ে এগিয়ে।

সৌদি তরুণীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ অ্যাক্টিভ; Source: CBS News

[বর্তমানে সৌদি আরবে মাত্র ২২% নারী কাজ করে। সালমান চান এর পরিবর্তন করতে।]

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: আমরা একটা প্রস্তাব আনছি, শীঘ্রই নারী ও পুরুষের বেতন সমান হবে।

নোরা: আপনি সমান বেতনের কথা বলছেন? এখানে নারীরা ড্রাইভ পর্যন্ত করতে পারেন না! পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে নারীর অধিকার নেই গাড়ি চালাবার।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: এটা এখন আর ইস্যু না। কয়েক মাসের মাঝে নারীরা গাড়ি চালাবেন সৌদি আরবে। জায়গায় জায়গায় ড্রাইভিং স্কুল বানানো হচ্ছে, শীঘ্রই খুলে যাবে। আমরা এমন একটা দুঃখজনক পর্যায়কালের ইতি টানছি যার বিষয়ে সাফাই গাইবার মুখ আমাদের নেই।

নোরা: সত্য। এটা নিয়ে বেশিরভাগই শুনেছে, যে, জুন থেকে মেয়েরা এখানে গাড়ি চালাতে পারবে। কিন্তু মেয়েদের বাইরে যেতে হলে একজন পুরুষ অভিভাবক লাগবে- এরকম আইনও তো আছে! এটাও একটা পশ্চাৎপদতা।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের নারীরা পূর্ণ অধিকার পায়নি। ইসলামে অনেক অধিকারের কথা আছে নারীদের, যেগুলো তাদের এখনও নেই। আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি, আর এটুকু পথ বাকি।

সৌদি তরুণেরা; Source: CBS News

[এটা সকলের জানা যে, প্রিন্স মুহাম্মাদ তার বাবার পাশে থেকে বেড়ে উঠেছেন।]

নোরা: আপনি আপনার বাবার কাছ থেকে কী কী শিখেছেন?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: অনেক অনেক কিছু। উনি ইতিহাস অনেক ভালোবাসেন। অনেক পড়েন ইতিহাসের বই। প্রতি সপ্তাহে উনি আমাদের প্রত্যেককে একটা করে বই শেষ করতে দিতেন। সপ্তাহান্তে, উনি আমাদেরকে ডেকে প্রশ্ন ধরতেন সে বই থেকে। রাজা সবসময় বলেন, “তুমি যদি এক হাজার বছরের ইতিহাস পড়ে ফেলো, তবে তোমার ঝুলিতে থাকবে হাজার বছরের অভিজ্ঞতা।”

নোরা: আপনার বয়স মাত্র ৩২; আপনি তো চাইলে আরও ৫০ বছর দেশটা শাসন করতে পারেন।

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: একমাত্র আল্লাহ্‌ জানেন কে কত দিন বাঁচবে, কেউ ৫০ বছর বাঁচবে কি বাঁচবে না। যদি সব স্বাভাবিক থাকে তবে আপনি যা বললেন সেটাই প্রত্যাশিত।

নোরা: কিছু কি আপনাকে থামাতে পারবে?

প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান: কেবল মৃত্যু।

প্রিন্স মুহাম্মাদ; Source: Saudi Gazette

সিবিএস এর প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ছিল এটুকুই। প্রিন্স মুহাম্মাদের ক্ষমতায় আরোহণ ও সৌদি আরবের ইতিহাস পুরোটা জানবার জন্য পড়তে পারেন রোর বাংলায় আমাদের আর্টিকেল- সৌদ পরিবারের আদ্যোপান্ত: যাদের নামে আজ ‘সৌদি’ আরবের নাম

ফিচার ইমেজ: Council on Foreign Relations

Related Articles