Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চেরনোবিল বিপর্যয় এবং এর বর্তমান পরিস্থিতি

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে এর জাদুকরী প্রভাবে সভ্যতার মান উন্নয়ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীর মানুষ আজ খুবই শক্তি সচেতন। বর্তমান আধুনিক পৃথিবীর মানুষ তাদের একটি মুহূর্তও বিদ্যুৎ ছাড়া কল্পনা করতে পারে না। কিন্তু বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আবার অন্যান্য শক্তিও কাজে লাগাতে হয়। যেমন- কয়লা বা গ্যাস থেকে পাওয়া শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন। যেহেতু এসব শক্তির উৎস নবায়নযোগ্য নয়, কাজেই এসব শক্তির বিকল্প খুঁজে বের করা হয়ে পড়ে গবেষকদের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর সেখান থেকেই পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া উদ্ভাবিত হয়।

কিন্তু এই পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় যেসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ, সেগুলো মানুষ এবং পরিবেশের উপর সৃষ্টি করতে পারে ধ্বংসাত্মক প্রভাব। কাজেই এসবের সঠিক তত্ত্বাবধান একটি জরুরি বিষয়। নতুবা একটি বিস্ফোরণে হয়ে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। তেমনই একটি বিস্ফোরণের উদাহরণ চেরনোবিল বিপর্যয় বা চেরনোবিল বিস্ফোরণ। চেরনোবিল বিপর্যয় সম্বন্ধে আমরা অনেকেই কম-বেশি জানি ইতিমধ্যে।

২৬ এপ্রিল বিস্ফোরণের পর হেলিকপ্টারে করে চেরনোবিল প্লান্ট পরিদর্শন করা হচ্ছে; Image Source: britannica.com

সংক্ষেপে চেরনোবিল বিস্ফোরণ

১৯৮৬ সালের এপ্রিলের ২৫-২৬ তারিখের ঘটনা এটি। ঘটনার স্থান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র (এটি ভি. আই. লেনিন পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র নামেও পরিচিত)। এই শক্তিকেন্দ্রের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা নিউক্লিয় চুল্লী বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে ধরা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবথেকে বড় এবং ক্ষতিসম্পন্ন পারমাণবিক বিপর্যয়। এই শক্তিকেন্দ্রে ছিলো মোট চারটি নিউক্লিয় চুল্লী। প্রতিটি চুল্লী প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ছিলো।

বিস্ফোরণের পরে রিঅ্যাক্টর নং ৪ এর অবস্থা; Image Source: chernobylgallery.com

দুর্ঘটনাটি ঘটেছিলো মূলত একটি অপরিকল্পিত পারমাণবিক পরীক্ষা পরিচালনা করতে গিয়ে। সেই সাথে দায়ী করা হয় এই কাজে জড়িত পরিচালকদের, যারা দক্ষতার দিক থেকে ছিলো অনেকটাই আনাড়ি। চুল্লী নং ৪-এ করা হয়েছিলো এই পরীক্ষা। অপারেটররা এর পাওয়ার রেগুলেটিং সিস্টেমটি বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে এর জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থাটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। অপারেটররা কোরের সাথে সংযুক্ত কন্ট্রোল রডগুলোও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কিন্তু রিঅ্যাক্টরটি তখনো কাজ করছিলো মাত্র ৭ শতাংশ শক্তি নিয়ে। এতসব অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের কারণে চুল্লীর চেইন রিঅ্যাকশন এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। রাত প্রায় দেড়টার দিকে এই চুল্লী বিস্ফোরিত হয়।

বিস্ফোরণের পর পরিত্যক্ত শহর; Image Source: lolwot.com

দুজন কর্মী বিস্ফোরণের সময়েই মৃত্যুবরণ করে এবং বাকি ২৮ জন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায় (মতান্তরে প্রায় ৫০ জন)। তবে সবথেকে বড় ক্ষতিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এই যে, চুল্লীর ভেতরে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থ (বিশেষ করে সিজিয়াম-১৩৭) পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে যা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে। ২৭ এপ্রিলের মধ্যেই প্রায় ৩০,০০০ (মতান্তরে ১,০০,০০০) বসবাসকারীকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে ৫০ থেকে ১৮৫ মিলিয়ন কুরি রেডিওনিউক্লাইড পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এর তেজস্ক্রিয়তা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, সেটি হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার প্রায় কয়েকগুণ। একইসাথে এর বিস্তরণের পরিমাণ ছিলো হিরোশিমা-নাগাসাকির তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিস্তরণের ১০০ গুণ। কয়েকদিনের মধ্যেই এর তেজস্ক্রিয়তা আশপাশের দেশগুলোতে, যেমন- বেলারুশ, ইউক্রেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

চেরনোবিল এক্সক্লুসন জোন; Image Source: archinect.com

এই তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশ ও এর জীবজগতের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। গবাদি পশুগুলো বিকলাঙ্গতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে শুরু করে। মানুষের ভেতরেও তেজস্ক্রিয়তাজনিত রোগ এবং ক্যান্সার (বিশেষ করে থাইরয়েড ক্যান্সার) আক্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০০ সালের মধ্যে এই শক্তি কেন্দ্রের বাকি ৩টি চুল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বহুবছরই এখানে জনমানবের বসতি গড়ে ওঠেনি কিংবা যাতায়াত করেনি। আজ থেকে প্রায় ৩ যুগ আগে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পরে এই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন আছে? এই লেখায় সে সম্বন্ধেই আমরা জানবো।

কী পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা এখনো বিদ্যমান আছে

চেরনোবিল বিস্ফোরণের পরপরই এর তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন একে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক চুল্লীটিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্তাকৃতি এক্সক্লুশন জোন বা পরিত্যক্ত এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়। এর আয়তন ছিলো প্রায় ২,৬৩৪ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু তেজস্ক্রিয়তা আরো ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই আয়তনকে আরো বর্ধিত করে প্রায় ৪,১৪৩ বর্গ কিলোমিটার করা হয়। সাধারণত এই নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে কোনো জনমানুষকে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয় না বা কেউ থাকেও না। তবে বিজ্ঞানী বা গবেষকগণের জন্য বিশেষভাবে এবং স্বল্পসময়ের জন্য এখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

বিস্ফোরণের পরেও এই শক্তিকেন্দ্রে প্রায় ২০০ টনের মত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মজুদ থেকে গেছে। বর্তমান গবেষকদের হিসাবমতে এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ পুরোপুরি নিস্ক্রিয় হতে আরো প্রায় ১০০ থেকে ১০০০ বছর লেগে যাবে। এছাড়া বিস্ফোরণের পরপরই তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ প্রায় ৮০০টি স্থানে পুঁতে ফেলা হয়। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানিতে এর দূষণের ব্যাপক সম্ভাবনাও আছে।

চেরনোবিল বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় পদার্থ; Image Source: phys.org

চেরনোবিল বিপর্যয়ের প্রায় তিন যুগ পেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু চুল্লী নং ৪ এর বিস্ফোরণের এত বছর পরও এই এলাকার বসবাসের উপযুক্ততা এখনো বিতর্কিত। এই এলাকাটি জনমানবশূন্য হয়ে পড়লেও এটি হয়ে পড়ে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পশুপাখির আবাসস্থল। কিন্তু বন্য জীবনের এই নিরাপদ উপস্থিতি এবং বৈচিত্র্য যেমন একদিকে গঠনমূলক ঘটনা, ঠিক অন্যদিকে এখানকার পরিবেশের তেজস্ক্রিয় দূষণও ঠিক ততটাই ভয়ংকর। বিস্ফোরিত চুল্লী অর্থাৎ চুল্লী-৪ এ এখনো বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিদ্যমান আছে।

চুল্লী-৪ বিস্ফোরণের সময় প্রচন্ড আঘাতে এর উপরের দিকের স্টিলের ঢাকনাটি উড়ে চলে যায়। যে কারণে এই মুখ দিয়েই তেজস্ক্রিয় পদার্থ বেরিয়ে যেতে এবং পরিবেশকে দূষিত করতে শুরু করে। বিস্ফোরণের পরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এই রিঅ্যাক্টরটিকে ঘিরে কংক্রিটের সার্কোফ্যাগাস বা বিশেষ আবদ্ধ ঘর তৈরি করে, যেন ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লী থেকে বাকি তেজস্ক্রিয় পদার্থ বেরিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু এই সার্কোফ্যাগাস তৈরি করা হয়েছিলো মূলত ৩০ বছরের জন্য। যেহেতু এটি এখন আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে শুরু করেছে কাজেই এর পুনঃমেরামত জরুরি।

বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে, এখনো প্রায় ৯৭% তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবদ্ধ আছে এই সার্কোফ্যাগাস বেষ্টিত চুল্লীর মধ্যে। কাজেই সার্কোফ্যাগাসের ক্ষয়ের ফলে এই পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাইরে উন্মুক্ত হওয়া খুবই বাস্তব। সাধারণত এখানে অর্থাৎ এই এক্সক্লুসন জোনে বিজ্ঞানী কিংবা গবেষকগণকে এবং শ্রমিকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এটি এমন হতে পারে যে তিন সপ্তাহ এই এলাকার মধ্যে কাজ করতে পারবে, কিন্তু পরের তিন সপ্তাহ যাপন করতে হবে এই এলাকার বাইরে।

এক্সক্লুসন জোনের তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করা হচ্ছে; Image Source: chernobylgallery.com

এই এলাকার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা সঠিক করে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিদিনই বিভিন্ন কারণে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বদলে যেতে পারে, যেমন বাতাসের গতির কারণে। কাজেই আজকে তেজস্ক্রিয়তার যে মাত্রা পাওয়া গেলো, আগামীকালও যে সেই মাত্রা অব্যাহত থাকবে তেমনটি না-ও হতে পারে। উষ্ণতা-শীতলতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি কারণেও তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে এই এলাকায় ঢোকার আগে অবশ্যই মাত্রা পরিমাপ করে নেয়া জরুরি।

বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব

আজ থেকে প্রায় ৩২ বছর আগে ঘটে যাওয়া সবথেকে মারাত্মক পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরপরই এই এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া হয়। তবে বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে নেয়া গেলেও অন্যান্য যেসব বন্য জীব সম্প্রদায় ছিলো, তাদের সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। ফলে এখন এই চেরনোবিলের এক্সক্লুসন জোন বা পরিত্যক্ত এলাকাটি জীববিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। অনেক গবেষকই এখন এখানে আসেন তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবগ্রস্ত জীব সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করতে এবং সাধারণ জীব সম্প্রদায়ের সাথে এদের মিল-অমিল নির্ণয় করতে।

মজার ব্যাপার হলো ১৯৯৮ সালের দিকে এক বিশেষ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় ঘোড়া প্রজাতিকে এই অঞ্চলে মুক্ত করে দেয়া হয়। এই বিশেষ ঘোড়া প্রজাতিকে বলা হয় পেরজলস্কি ঘোড়া সম্প্রদায়। যেহেতু এখানে মানুষের বসবাস নেই, কাজেই এই বন্যপ্রজাতির ঘোড়ার বংশবৃদ্ধির প্রয়োজন হেতু এই ঘোড়াগুলিকে এই অঞ্চলে উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলাফলও বেশ সন্তোষজনক।

এক্সক্লুসন জোনে চরে বেড়ানো পেরজলস্কি ঘোড়া প্রজাতি; Image Source: nationalgeographic.com

যেহেতু বিস্ফোরণের পরে এখান থেকে মানুষের বসতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ফলে এলাকাটি পশুপাখিদের একপ্রকার ঝামেলাহীন আবাসেই পরিণত হতে থাকে। অনেকে এটাকে এই দুর্ঘটনার উজ্জ্বল দিক হিসেবেও বর্ণনা করে থাকেন। কারণ একদিকে জায়গাটি মানুষের বসবাসের অনুপযোগী, কিন্তু অন্যদিকে পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে এটি এক মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে এখানে এদের বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায় গবেষকদের করা গবেষণায়।

২০১৬ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক প্রতিবেদনে এই এলাকার বন্যপ্রাণীদের উপর একটি গবেষণা প্রকাশ করে। জীববিজ্ঞানীগণ প্রায় ৫ সপ্তাহব্যাপী একটি পর্যবেক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন এই অঞ্চলে। তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে কিছু বন্যপ্রাণীর ছবি। যার মধ্য আছে ১টি বাইসন, ২১টি বন্য শূকর, ৯টি ব্যাজার, ২৬টি ধূসর নেকড়ে, ১০টি শেয়াল সহ বিভিন্ন ধরনের পাখি প্রজাতি, ঘোড়া ইত্যাদি। কিন্তু এতসব প্রাণীবৈচিত্রের মাঝে প্রশ্ন থেকেই যায়, তেজস্ক্রিয়তা এই প্রাণীদের উপর কতটা প্রভাব ফেলেছে।

চেরনোবিল এক্সক্লুসন জোন থেকে তোলা শিয়ালের ছবি; Image Source: curiosity.com

জীববিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণায় দেখা যায়, চেরনোবিলের বন্যপ্রাণীদের উপর তেজস্ক্রিয়তা প্রভাব খুব সুখকর অবশ্যই নয়। এই এলাকায় কিছু পরিমাণ প্রজাপতি, ভোমরা, ফড়িং, ঘাসফড়িং এবং মাকড়সা বর্তমান আছে। কিন্তু তেজস্ক্রিয়তার ফলে এসব প্রজাতিতে মিউটশনের প্রভাব দেখা গিয়েছে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। তবে গবেষণায় এটিও দেখা যায় যে, চেরনোবিল বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা ঠিক ততটা শক্তিশালী না যে কারণে বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া পরিবেশে উন্মুক্ত হওয়া এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ এখানকার গাছপালার উপরও ফেলেছে মারাত্মক প্রভাব।

তেজস্ক্রিয়তার কারণে ঘটিত মিউটশনের প্রভাব; Image Source: chernobylguide.com

পৃথিবীর ইতিহাসে চেরনোবিল বিস্ফোরণ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ নিউক্লিয় বিস্ফোরণের ঘটনা। এতটাই ভয়াবহ যে, এর প্রভাব এখনো থেকে গেছে এই আবদ্ধ এলাকায় এবং এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে অবিরত। সার্কোফাগাসের ক্ষয় এবং ভেতরে মজুদকৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থের মুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি মানুষকে আবার ভাবিয়ে তুলছে তেজস্কতিয়তার ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে। এখন চেরনোবিলের এই শহরটি ভূতের শহর নামে খুবই পরিচিত। সেটাই স্বাভাবিক। জনমানুষহীন এই শহরে কেবল কংক্রিটের বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু বাড়ির বাসিন্দারা ৩২ বছর আগেই চলে গেছে।

কিন্তু চেরনোবিলে যে একেবারে জনমানুষ নেই এমন কিন্তু না। বিস্ফোরণের পরপরই যারা চলে গিয়েছিলো অন্যত্র তাদের অনেকেই বেশ কয়েক বছর পর ফিরে এসেছিলো এই শহরে। কেউ কেউ এখানেই থাকার পরিকল্পনা করে। এদের মধ্যে বৃদ্ধরাই বেশি। তাদের বক্তব্য মতে এটি তাদের আবাসস্থল, কাজেই বাকি কয়েকটি দিন তারা এখানেই কাটিয়ে যেতে চান। এই স্বল্প সংখ্যক মানুষ ছাড়া আর যারা এখানে আসেন, তারা হয় গবেষণার কাজে আসেন, নাহয় আসেন শ্রমিক হিসেবে। অনেকেই আসেন পর্যটক হিসেবে। কিন্তু এত সবকিছু ছাপিয়ে যায় শুধুমাত্র চেরনোবিলের বিস্ফোরণের ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই শহরটি।

ফিচার ইমেজ: youtube.com

Related Articles