Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে কত খরচ হবে?

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সিঙ্গাপুরের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোরীয় উপদ্বীপের সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেন, “এটি একটি সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ হবে, যা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

যদি সত্যিই উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ হয়, তাহলে তা কেমন হবে এবং কী পরিমাণ অর্থ খরচ হবে?

সিঙ্গাপুর সম্মেলনে করমর্দনরত কিম জং উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প; Source: KCNA via REUTERS

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বলতে আসলে কী বোঝায়?

উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অর্থ ভিন্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে এর নির্দিষ্ট অর্থ এখানে স্পষ্ট নয়। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আসলে কেমন হবে, তা দু’দেশের আলোচনার উপর নির্ভর করবে। উত্তর কোরিয়া সম্ভাব্য বেসামরিক ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মতো কিছু পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে, যেমনটা ইরান ক্ষমতাশীল দেশগুলোর সাথে তার চুক্তি অনুযায়ী করতে সক্ষম।

তবে ওয়াশিংটনের মতে, এর অর্থ কমপক্ষে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র দ্বারা উত্থাপিত হুমকি নির্মূল করা। এর ফলে বিদ্যমান অস্ত্র অপসারণ বা ধ্বংস করা, কার্যক্রমগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং পিয়ংইয়ং এর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ও পারমাণবিক বোমার আরেকটি প্রধান উপাদান প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করার ক্ষমতাকে সীমিত করা বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কার্যক্রমগুলো সীমাবদ্ধ বা বন্ধ করার প্রয়োজনও হতে পারে।

সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করছেন দুই নেতা; Source: Jonathan Ernst

বিষয়টি আরো জটিল, কারণ, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড, এর অস্ত্র নির্মাণ এবং এর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা সম্বন্ধে অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। এটি উত্তর কোরিয়ার একটি অত্যন্ত গোপনীয় রাষ্ট্রীয় প্রকল্প। এগুলো সবচেয়ে গোপন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়, যা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অতো সহজে অনুসন্ধান করে বের করতে পারে না।

কিছু জানা-অজানা তথ্য

উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সাল থেকে ছয়টি শক্তিশালী পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। দ্রুততার সাথে প্রযুক্তির উন্নতি এবং পরিসীমা বৃদ্ধি করে বিদেশি সরকারগুলোকে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সাথে বিস্মিত করেছে তারা।

পিয়ংইয়ং গত ডিসেম্বরে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সীমার আওতায় চলে এসেছে। অনেকে মনে করেন, তারা এখনো ক্ষেপণাস্ত্রের যে অংশটি ফিরে আসে, সেটির বিকাশ করতে পারেনি। এর মাধ্যমে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া বোমাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে।

পারমাণবিক কর্মসূচি দেখছেন কিম জং উন; Source: YouTube

ঐতিহাসিকভাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রে রয়েছে ইয়ংবিয়ন। এতে দুটি রিয়্যাক্টর রয়েছে যার একটি পরীক্ষামূলক। স্যাটেলাইট চিত্রনাট্যগুলি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার কাছাকাছি। অপর রিয়্যাক্টরটি পুনরায় প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াজাত করার জন্য জ্বালানি তৈরি করে। এছাড়া ইয়ংবিয়ানে ব্যাপকভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ একটি প্ল্যান্টও রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ইয়ংবিয়নের বাইরেও ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ এক বা একাধিক বৃহত্তর প্ল্যান্টের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক বিশ্লেষক ডেভিড আলব্রাইট একটি অজ্ঞাতনামা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর প্রায় অর্ধেকই ইয়ংবিয়ান এবং যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে সেই সাইটটির বাইরে রয়েছে।

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করতে কত খরচ হবে?

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করতে ঠিক কত খরচ হবে, তা কোনো বিশ্লেষক নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ২০১০ সালে ইয়ংবিয়ন পরিদর্শন করা পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সিগফ্রেড হ্যাকার বলেছেন, “উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কমপ্লেক্সটি ভেঙে ফেলতে ও পরিস্কার করতে (ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিবেচনা না করে) কয়েকশ কোটি ডলার খরচ হবে এবং ১০ বছরেরও বেশি সময়ের প্রয়োজন হতে পারে বলে আমি মনে করি।

ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ দেখছেন কিম জং উন; Source: Financial Tribune

মার্কিন কংগ্রেশনাল বাজেট কার্যালয় (সিবিও) ২০০৮ সালে জানায়, বিয়ংইয়ন ও তার কাছাকাছি অবস্থিত প্ল্যান্টের দুটি রিয়্যাক্টর ভেঙে ফেলতে এবং এর জ্বালানী জাহাজে করে অন্যত্র পাঠিয়ে পুনয়ায় প্রক্রিয়াজাত করতে প্রায় ৫৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে চার বছর লাগবে বলেও জানায় এটি।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড এবং স্টকপাইল ২০০৮ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ইয়ংবিয়ানের কাছাকাছি দ্বিতীয় রিয়্যাক্টরটি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সিবিও তার অনুমানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি, অস্ত্রের সুবিধা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বা ইউরেনিয়াম খনির মতো সাইটগুলি অন্তর্ভুক্ত করেনি।

রয়টার্স কর্তৃক প্রাপ্ত একটি গোপনীয় আইএইএর রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএইএ’র ইরানের নিরাপত্তা কার্যক্রমের খরচ ১৫ কোটি ৮ লক্ষ ইউরো। পারমাণবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত ইরানের দেওয়া ঘোষণাগুলো সত্যি কিনা তা আইএইএ ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে। এদিকে উত্তর কোরিয়া থেকে পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করার কাজ একেবারে প্রাথমিকভাবে শুরু করা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে।

উত্তর কোরিয়ার পাঙ্গাই-রি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র; Source: Spot Image via AP

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মার্ক ফিৎজ প্যাট্রিক বলেন, “আপনি যদি আইএইএ যাচাইকরণ এবং ইরানের নিরীক্ষণের বার্ষিক খরচ প্রায় তিন বা তার চেয়েও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন, তাহলে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের চুক্তির পূর্বে উত্তর কোরিয়ার জন্য বার্ষিক খরচের একটি মোটামুটি অনুমান পেতে পারেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ইরানের চেয়ে আরও গোপনীয় এবং পারমাণবিক অস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নততর।”  

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য ওয়াশিংটনকে নিশ্চিত করতে হবে উত্তর কোরিয়া তার সমস্ত প্রাসঙ্গিক সাইট এবং কার্যক্রমগুলি ঘোষণা করেছে কিনা। এক্ষেত্রে যাচাইকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উত্তর কোরিয়া তার সমস্ত কার্যক্রম ঘোষণা করেছে কিনা তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে, ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের আগে ইরাকের কাছে আসলেই গণহত্যার অস্ত্র ছিল কিনা সেরকম বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তাই স্বচ্ছতা ও অনধিকার চর্চার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত দু’দেশেরই।

Featured Image Source: Financial Tribune

Related Articles