Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হোয়াইট হাউজকে ঘিরে ভূতুড়ে যত কাহিনী

ভূত এবং ভবিষ্যৎ দুটোরই অনিশ্চিত ব্যাখ্যা খুব অভিজ্ঞদের কাছ থেকেও শুনে সন্দিহান হতে হয় যে আসল ব্যাখ্যাটা কী হতে পারে। কারণ কেউ নিশ্চিত করে কিছুই বলার জো নেই এ দুই বিষয়ে। মাথা গোলানো ভবিষ্যৎ আর শত অবিশ্বাস সত্ত্বেও ভূতের ভয় কিন্তু একটু আধটু সকলেরই গলার স্বরের ভগ্নতা এনে দিতে বাধ্য করে। শত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বৈজ্ঞানিক যুক্তি-তর্ক ভেদ করে কেউ এক মনে বলতে পারবেন না যে, অলৌকিক কিছুর উপস্থিতিতে তার ভয় করবে না।

অনেকেই বলে ভূত বলে কিছু নেই, কিন্তু যে ভূত বিশ্বাস করে না সে-ও যে ভূতের ভয় পায় না, তা সে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই কম বেশি আমরা সকলেই বট গাছ, কবরস্থান, শ্মশান, পুরনো বাড়ির গল্প ইত্যাদি গা ছমছমে জায়গাতে ভূতের উপস্থিতির গল্প শুনে এসেছি।

গল্প উপন্যাসে পড়া গা ছমছমে ভূতুড়ে পরিবেশ

ছোটবেলা থেকে ভূতের গল্প পড়তে পড়তে অনেকেই কোনো গা ছমছমে জায়গার কথা শুনলে বেশিমাত্রায় আগ্রহ প্রকাশ করেন। আবার অনেকে গোটাটাই দুর্বল মনের ভ্রান্ত ধারণা বলে উড়িয়ে দেন। এ তো গেল বাড়ির আশপাশের কথা। কিন্তু জেনে নিতে ক্ষতি নেই, পৃথিবীর উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশগুলোতেও কি একইভাবে ভূতের উৎপাত আছে কিনা।

তথ্য প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, আধুনিকতা সবদিক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রথমেই চলে আসে। এত উন্নত দেশেও ভূতের উৎপাত, তাও আবার দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের আবাসস্থলে! এ ও কি সম্ভব?

কিন্তু হ্যাঁ। ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে যে জায়গাটির নাম সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছে তা হলো মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের আবাসস্থল হোয়াইট হাউজ। ভবনটির ভূত নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত। অবশ্য হোয়াইট হাউজে ভূতদের আনাগোনা যখন ছিল, সে সময় নাকি বাড়িটি এত সুরক্ষিত ছিল না।

ইস্ট রুম

হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম

১৭৯৭-১৮০১ সালের ঘটনা। মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে হোয়াইট হাউজে বসবাস করেছিলেন জন অ্যাডামস ও সে সময়ের ফার্স্ট লেডি অ্যাবেগেইল অ্যাডামস। তখন ওয়াশিংটন ডিসি ছিল জলাবদ্ধ এক ছোট্ট শহর। হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম ছিল জামা কাপড় শুকানোর জন্যে উপযুক্ত উষ্ণতম জায়গা। তাই অ্যাবেগেইল অ্যাডামস জামাকাপড় ধোওয়ার পর ইস্ট রুমে এসে সেগুলোকে শুকোতেন।

অ্যাবেগেইল অ্যাডামস

কিন্তু ফার্স্ট লেডির মৃত্যুর পর এখন অবধি অনেকেই তাকে ঐভাবে কাপড় শুকোতে দিতে ছুটোছুটি করে ইস্ট রুমের দিকে ভেজা কাপড়ের বালতি হাতে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মাঝে মাঝে ভেজা কাপড়ের গন্ধ এবং সাবানের সুবাস ভেসে আসে বলে ওখানকার পরিচারিকাদের অভিমত। হোয়াইট হাউসের বহু ভূতের মধ্যে অ্যাবেগেইল অ্যাডামসের ভূতই নাকি সবচেয়ে পুরনো বলে মনে করা হয়। সর্বপ্রথম এই ভূতের দেখা পান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ট্যাফট। ২০০২ সালে কতিপয় ট্যুরিস্ট একইভাবে ইস্ট রুমের বেলকনিতে অ্যাবেগেইল ভূতের দেখা পান বলে জানিয়েছিলেন।

লিংকন বেডরুম

হোয়াইট হাউজে আব্রাহাম লিংকনের বেডরুম

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এ বাড়ির জনপ্রিয়তম ভূত নাকি রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের ভূত। হোয়াইট হাউজের অনেক পরিচারকই রাতে ঘরের মধ্যে লিংকনের উপস্থিতি অনুভব করেছে। সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি গ্রেস কুলিজও একবার ওভাল অফিসের জানালায় নাকি লিংকনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন! তাছাড়া উইনসটন চার্চিল তাকে ফায়ার প্লেসের পাশেই দেখেছিলেন বলেই লিংকনের বেডরুমে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরও অন্যান্য প্রেসিডেন্ট যেমন টেডি রুজভেল্ট, হারভার্ট হুভার, ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার প্রমুখ এবং ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে জেকুই কেনেডি, লেডিবার্ড জনসন, এমনকি প্রেসিডেন্টদের সন্তানদের মাঝে সুশান ফোর্ড ও মউরিন রিগ্যান প্রমুখ লিংকনের ভূতকে ফায়ার প্লেসের পাশে একই ভাবেই দেখেছেন যেমনটি দেখেছিলেন চার্চিল।

আবার অনেকে এ কথাও বলেছেন যে, লিংকনের বেডরুমের বাতিগুলো মাঝে মাঝে হঠাৎ জ্বলে উঠত, কখনোবা দেখা যেত রুমটির তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। লিংকন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনই হোয়াইট হাউসে তার ছেলে উইলি মারা যান। উইলির আত্মাকেও নাকি মাঝেমধ্যে দেখতে পাওয়া যায় বাড়িতে। সে কারণেই হয়ত প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান তার স্ত্রীকে একবার বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীর এক জঘন্য জায়গায় থাকি”

রোজ রুম

হোয়াইট হাউজের রোজ রুম

‘রোজ রুম’ ছিল আরেক সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রিয় ঘর। এই রোজ রুমেই নাকি তার অট্টহাসি আর শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ অনুভব হয়, এমনটাই বলেছিলেন হোয়াইট হাউসের পরিচারকের মাঝেই কেউ কেউ।

দ্য ইয়েলো ওভাল রুম

হোয়াইট হাউজের দ্য ইয়েলো ওভাল রুম

রুমটি প্রেসিডেন্ট লিংকনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। এটি তার বেশ পছন্দের ছিল। কথিত আছে, রুমটির জানালায় প্রায়ই লিংকন দাঁড়িয়ে থাকেন। ফার্স্ট লেডি গ্রেস ক্লোজিও একই দাবি করেছিলেন।

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের উত্তরদ্বার

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের উত্তরদ্বার

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের উত্তরদ্বারে মাঝে মাঝে পাহারারত অবস্থায় এমন সব দারোয়ানদের দেখা যায় যারা নাকি বেঁচে নেই। এমন সব দারোয়ানের মাঝে একজন হলো অ্যানি স্যুরাট, যাকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার দেখা গিয়েছে। ১৮৬৫ সালে লিংকনের গুপ্তহত্যার সময় অ্যানি স্যুরাটের মা মারা যায়। তাই স্যুরাটের ভূতকে উত্তরদ্বারে দেখা যায় তার মায়ের মুক্তি প্রার্থনারত অবস্থায়।

হোয়াইট হাউজের চিলেকোঠা

হোয়াইট হাউজের চিলেকোঠা

উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্পতম সময়ের প্রেসিডেন্ট, কারণ তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিউমোনিয়াতে ভুগে মারা যান। কথিত আছে যে, এখন পর্যন্ত হ্যারিসনের ভূতের অস্তিত্ব মেলে ওভাল হাউসের উপরের চিলেকোঠায়। পরবর্তী সময়ে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে তারা মাঝে মাঝেই চিলেকোঠা থেকেই অদ্ভুত রকমের শব্দ শুনতে পেতেন।

উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন

শুধুমাত্র হ্যারিসনের ভূতই চিলেকোঠায় একা নয়, ট্রুম্যান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এক সিকিউরিটি গার্ড বলেছিলেন যে তিনি চিলেকোঠা থেকে কাউকে যেন বলতে শুনেছেন, ‘আমিই বার্নস’, ‘আমিই বার্নস’ এমনটা। কে বা কারা এরকম শব্দ করত আজও রহস্য। তবে শোনা যায়, হোয়াইট হাউসের জমির মালিক ছিলেন এই ডেভিড বার্ন। কথিত আছে, ১৭৯০ সালে ডেভিড বার্নস নামে এক ভদ্রলোকের জমিতে জোরপূর্বক তৈরি হয়েছিল হোয়াইট হাউজ। এখনও নাকি বাড়ির কয়েকটি ঘরে শোনা যায় সেই অশরীরীর গলার স্বর। ‘আমিই বার্নস’, বলতে বলতে নাকি এ ঘর, সে ঘর ঘুরে বেড়ায় সেই আওয়াজ।

রোজ গার্ডেন 

ফার্স্ট লেডি ডলি মেডিসনের তৈরি রোজ গার্ডেন

প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স হচ্ছে এই রোজ গার্ডেন দেখেছেন। এখান থেকেই যাবতীয় প্রেস কনফারেন্স হয় যা টিভিতে আমরা নিয়মিত দেখে থাকি। ১৮ শতকের ফার্স্ট লেডি ডলি মেডিসন নাকি রোজ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক শতক পর ফার্স্ট লেডি ইলেন উইলসন গার্ডেনটি উৎখাতের নির্দেশ দেন। কর্মীরা রিপোর্ট করেন, ডলির আত্মা নাকি গার্ডেনে ঘুরে বেড়ায়।

হোয়াইট হাউসকে নিয়ে এসব ভুতুড়ে উপখ্যান বেশ প্রচলিত। প্রেসিডেন্ট  টেডি রুজভেল্ট, হার্বাট হোভার এবং ডিউড আইজেনহোয়ার থেকে শুরু করে সাবেক ফার্স্ট লেডি জ্যাকুই কেনেডি ও লিডবার্ড জনসন এবং সুসান ফোর্ড, ম্যারুইন রিগ্যানের মতো প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের সন্তানরাও এই তিক্ত ভৌতিক অভিজ্ঞতার শিকার হন।

হোয়াইট হাউসের ভৌতিক পরিবেশ!

তবে এ বিষয়ে ওবামার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিকে ওবামাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোনো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা? ওবামা বলেছিলেন, “হ্যাঁ, আমি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের সাথে দেখা করেছি”। তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয়, কোনো মৃত প্রেডিডেন্ট তাকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা? তখন ওবাবা হেসে বলেন, “না, তাদের কারো সাথে আমার এ পর্যন্ত দেখা হয়নি”

অনেকেই মনে করে, এসবই হ্যালুসিনেশনের প্রভাব। তবে এসব গল্প বিশ্বাস করতে দোষ কোথায়। কথায় আছে না, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!

তথ্যসূত্র

১) listverse.com/2012/08/22/top-10-haunted-areas-of-the-whitehouse/

২) listverse.com/2012/08/22/top-10-haunted-areas-of-the-whitehouse/

৩) whitehousehistory.org/press-room/press-fact-sheets/white-house-ghost-stories

৪) realparanormalexperiences.com/elvis-presley-ghost-sightings

Related Articles