২০২০ সাল তখন শুরু হবে হবে করছে। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খেয়াল করলেন ইদানীং রোগীরা এমন লক্ষণ নিয়ে আসছে, যার সাথে ২০০২ সালের মহামারী সার্স করোনাভাইরাসের মিল পাওয়া যায়। তিনি এটা নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনা মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটে তার সহকর্মীদের সাথে গ্রুপচ্যাটে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি আসলে কোথায় থাকেন।
গ্রুপচ্যাটে সম্ভাব্য নতুন ভাইরাস নিয়ে আলোচনার ‘অপরাধে’ তাকে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ উভয়ের কাছেই জেরার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি মুচলেকা দিতে বাধ্য হন যে, এটা ছিল তার ছড়ানো ভিত্তিহীন ‘গুজব’। কিন্তু জেল থেকে বাঁচতে পারলেও প্রাণে বাঁচতে পারলেন না। জানুয়ারি মাসে তিনি নিজেই সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যান। ভাইরাসের সাথে লড়াই করে ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে তিনিও পরাজয় বরণ করেন। কোভিড-১৯ এ যে বিশ্বব্যাপী প্রাণহানী হচ্ছে, তাতে শুরুর দিকে নাম লেখান ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং।
দেশবাসীর কাছে তিনি মারা যাওয়ার আগেই সাহসী কার্যক্রমের জন্য বীরের সম্মান পেয়েছিলেন। মারা যাওয়ায় তার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। মোমবাতি প্রজ্বলন আর ফুল দিয়ে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানো হয় সেই চিকিৎসককে। জনগণ ফুঁসে উঠতে থাকল দেশটির একমাত্র রাজনৈতিক দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি তাতে বিচলিত হলো না। তারা কঠোরভাবে এই প্রতিক্রিয়া দমন করল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মূল ধারার মিডিয়াতে তার মৃত্যুর খবর প্রচারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো।
চীনে অনলাইন বা অফলাইন সেন্সরশিপ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, গুগল, ইউটিউব- বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে নিষিদ্ধ। এগুলোর বিকল্প চীনা সংস্করণ আছে, যা চীনের জনগণ ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি যে চীনা অ্যাপ টিকটক তুমুল জনপ্রিয়, সেটা শুধুমাত্র চীনের বাইরের মানুষরাই ব্যবহার করতে পারেন। ডউয়িন নামে এর চীনা আরেকটি সংস্করণ আছে, যাতে ব্যবহারকারীদের শুধুমাত্র সেন্সর করা কন্টেন্ট দেখানো হয়।
কমিউনিস্ট পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন যেকোনো তথ্য অনলাইনে সেন্সর করে থাকে চীন সরকার। চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না অনলাইনে ব্যবহারকারীদের সামনে কী ধরনের তথ্য প্রদর্শিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কোভিড-১৯ এর শুরুর দিকে যখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছিল বিশ্বব্যাপী, তখন চীনের জন্য এটা একটা চাপ ছিল।
ভাইরাসের সংক্রমণ প্যানডেমিকে রূপ নিলেও চীন কোভিড সম্পর্কিত সব তথ্য সেন্সর করে থাকে। ডাক্তার লি মারা যাওয়ার আগে জানুয়ারি থেকেই তারা কার্যক্রম শুরু করে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূলধারার মিডিয়াগুলোকে সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় কী ধরনের খবর কীভাবে প্রচার করতে হবে।
সম্প্রতি ‘সিসিপি আনমাস্কড’ নামের একটি হ্যাকার দল নিউ ইয়র্ক টাইমস ও অনুসন্ধানী সংবাদিকতা বিষয়ক সাইট প্রোপাবলিকার কাছে কিছু নথি প্রদান করে, যাতে কোভিডের শুরুতে চীনের সেন্সরশিপের বিভিন্ন পদ্ধতির কথা উঠে এসেছে। এখানে সিসিপি বলতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে বোঝানো হয়েছে। এতে সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ৩,২০০ এরও বেশি নির্দেশনা ও অন্যান্য নথিপত্র রয়েছে। এছাড়া উরুন বিগ ডেটা সার্ভিস নামের এক চীনা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নথি ও কম্পিউটার কোডও রয়েছে। এই কোম্পানির সফটওয়্যার দিয়ে স্থানীয় সরকাররা অনলাইনে ব্যবহারকারীদের আলোচনা পর্যবেক্ষণ করে। অনলাইনে বেতনভুক্ত কিছু ব্যবহারকারীও থাকে সরকার তথা পার্টির গুণগান করার জন্য। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও প্রোপাবলিকা আলাদাভাবে যাচাই করে তথ্যগুলোর সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে।
আমেরিকাসহ বহির্বিশ্বের দেশগুলো কোভিডের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার জন্য শুরুর দিকে চীনের অতি গোপনীয়তাকে দায়ী করে। এটা হয়তো কখনোই নিশ্চিত হওয়া যাবে না চীন শুরুতে বহির্বিশ্বের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করলে বিশ্বব্যাপী ঘটা স্বাস্থ্যখাতের বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যেত কিনা। তবে চীন এক্ষেত্রে শুধু গুজব বলে সব উড়িয়েই দিত না, তারা ঘটনা বর্ণনার আবহটাও পরিবর্তন করে দিত। এতে বিপুল পরিমাণ লোকবল, বিশেষ প্রযুক্তি, ডিজিটাল মিডিয়ার ওপর নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং অবশ্যই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়।
ঘটনা বর্ণনার আবহ নিয়ন্ত্রণ
চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং ২০১৪ সালে সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না বা সিএসি প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট সেন্সরশিপ, প্রোপাগান্ডা ও অন্যান্য ডিজিটাল নীতিমালা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এ এজেন্সি তাদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন দিয়ে থাকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। এতেই বোঝা যায় এজেন্সির গুরুত্ব কতখানি।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সিএসি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু করে। সিএসি থেকে নিউজ ওয়েবসাইটগুলোর কাছে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে বলা হয় শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য সাইটে দিতে। ডাক্তার লির মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তখন নতুন করোনাভাইরাসের সাথে ২০০২ সালের সার্স করোনাভাইরাসের সাদৃশ্যের কথা বলছিল। কিন্তু সিএসির নির্দেশনায় বলা হয় সার্সের সাথে কোনো সাদৃশ্যের কথা যেন সংবাদে প্রকাশ করা না হয়।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে শি জিনপিং উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সাথে এক বৈঠকে ডিজিটাল মিডিয়া আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। এতে সিএসি দেশব্যাপী কার্যক্রম আরো জোরদার করে। তারা শুধু চীনের অভ্যন্তরীণ বার্তাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। তারা আন্তর্জাতিক মতামতগুলোও সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
এজেন্সি কর্মীদের কাছে ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্যের লিংক সরবরাহ করা হয়। এই লিংকগুলোতে যে তথ্য দেওয়া হতো, সেগুলোই শুধুমাত্র নিউজ এগ্রিগেটর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার অনুমতি পেত। শুধু তা-ই নয়, কোন নিউজগুলো সাইটের হোম পেজে থাকতে পারবে, কত সময় অনলাইনে থাকবে, এমনকি বোল্ড হরফে কী শিরোনাম দিতে হবে সেটাও বলে দেওয়া হতো।
যে উহান শহরে প্রথম ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যক্রমকে অনলাইন রিপোর্টে বীরত্বপূর্ণভাবে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হতো। একইসাথে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের অবদানগুলোকেও প্রচার করতে বলা হতো।
খবরের শিরোনামে “দুরারোগ্য”, “প্রাণঘাতী” শব্দগুলো এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাড়ির বাইরে চলাফেরা ও ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের সময় “লকডাউন” শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। এছাড়া ভাইরাস সম্পর্কিত “নেতিবাচক” কোনো তথ্য প্রচার করতে নিষেধ করা হয়।
ঝেজিয়াংয়ের এক কারাগার অফিসার তার ভ্রমণ সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কারাবন্দীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। তখন সিএসি স্থানীয় কর্মীদের নির্দেশ দেয় ওই ঘটনার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে। কারণ এটা আন্তর্জাতিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
গণমাধ্যমকে নির্দেশ দেওয়া হয় বিদেশি অনুদান ও বিদেশ থেকে স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয় করার সংবাদ প্রচার না করতে। এর কারণ হিসাবে দেখানো হয় চীনের জরুরি সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও বাধার সৃষ্টি হতে পারে। মহামারি দমনে চীনের বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এমন ধারণা যেন প্রকাশ না পায় সেরকম নির্দেশই দেওয়া হয়।
সিএসি কর্মীরা অনলাইনে ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিও সরিয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে ছিল জনসম্মুখে মৃতদেহ রাখার ভিডিও। এছাড়া হাসপাতালে কিছু লোকের রাগান্বিত চিৎকারের ভিডিও, কয়েকজন শ্রমিক এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাশ বের করে আনার ভিডিও এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা এক শিশুর মায়ের জন্য কান্না করার ভিডিও। সব ভিডিও অবশ্য কোভিড পরিস্থিতির সময়ের ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিএসির কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়িতে বিনোদনমূলক বিভিন্ন ভিডিওর ধারণা ছড়িয়ে দিতে।
লি ওয়েনলিয়ারের মৃত্যু পরবর্তী সেন্সরশিপ
সিএসি কোভিড সম্পর্কিত তথ্য ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে উহানে ডাক্তার লি ওয়েনলিয়ারের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিস্থিতি কিছুটা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যখন ডাক্তার লিকে দেওয়া মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ টুইটারের মতো চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে ফাঁস হয়ে যায়। লিয়ের ওয়েইবো একাউন্টে তখন হাজার হাজার কমেন্ট আসতে থাকে। জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কমিউনিস্ট পার্টির এরকম প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়া ছিল খুবই বিরল ঘটনা।
সিএসির তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের শোক প্রকাশ করতে না দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তবে তা ছিল সাময়িক। যদি কেউ এই ঘটনা প্রচার করে অনলাইনে ট্রাফিক বাড়াতে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
লিয়ের মৃত্যুর পরের দিন তার মায়ের একটি ভিডিও ইন্টারভিউ প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি ছেলের স্মৃতিচারণ করেন। সিএসি তখন মনে করে লিয়ের মৃত্যুর ঘটনা জনগণের মধ্যে সরকার বিরোধী মনোভাব দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিতে পারে। সিএসির স্থানীয় কার্যালয়গুলোতে নির্দেশ দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোমবাতি প্রজ্বলনের ছবি, মাস্ক পরা ছবি, কালো রঙ দিয়ে শোক প্রকাশের ছবিগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে।
বিপুল সংখ্যক অনলাইন স্মারক মুছে ফেলা হয়। কেউ কেউ সিক্রেট গ্রুপ খুলে মুছে ফেলা পোস্টগুলো আর্কাইভ করে রাখে। পুলিশ তাদের আটক করে। গোপন নথিতে বিভিন্ন জেলার রিপোর্ট থেকে জানা যায় সিএসির স্থানীয় কর্মীরা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে ইতিবাচক মন্তব্য করে সাধারণ মানুষদের কাছে ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক বোঝাতে পেরেছে। এক জেলার কর্মীরা বলেছে, তাদের মন্তব্যগুলো ৪০ হাজারেরও বেশি বার পড়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা জনগণের আতঙ্ক দূর করতে পেরেছে। আরেক জেলায় ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে, যার ১৪ জনকে সতর্ক করে দেওয়া হয় আর বাকি ২ জনকে আটক করা হয়। আরেকটি জেলার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাদের ১,৫০০ “সাইবার সেনা” উইচ্যাটের ক্লোজড চ্যাট গ্রুপের কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করেছে।
গবেষকরা আগে থেকেই ধারণা করে আসছেন চীনে হাজার হাজার লোক অনলাইনে পার্ট টাইম চাকরি হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য ও কন্টেন্ট শেয়ার করে থাকেন। এগুলোর বিষয়বস্তু থাকে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এদের বেশিরভাগই সরকার ও পার্টির বিভিন্ন সংস্থার নিম্নস্তরের কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ছাত্র ও শিক্ষক নিযুক্ত করে এমন কাজের জন্য। স্থানীয় সরকাররা তাদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে।
তথ্যের নকশা তৈরি করা
চীনের সরকারি বিভাগগুলো বিভিন্ন ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা জনগণ অনলাইনে কী দেখবে তা নকশা করে দেয়। এমন সফটওয়্যার নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান উরুন, যা ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্তত দুই ডজন চুক্তি করেছে। উরুনের কম্পিউটার কোড ও নথিগুলো বিশ্লেষণ করে জানা যায়, তারা অনলাইনে চলমান আলোচনায় থাকা ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে, সেন্সরশিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করা হয়।
উরুন সফটওয়্যার সিস্টেম সরকারি কর্মচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস দিয়ে থাকে, যার ফলে তারা পোস্টে সহজে লাইক দিতে পারে। সফটওয়্যার ব্যবহারকারীরা মন্তব্যকারীদের নির্দিষ্ট করণীয় কাজ দিতে পারেন। মন্তব্যকারীরা কয়টি করণীয় কার্যক্রম শেষ করেছেন এবং তাদের কী পরিমাণ অর্থ বেতন দিতে হবে, তা-ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে বের করা যায়।
সফটওয়্যারের নথি থেকে জানা যায়- গুয়াংজু শহরের দক্ষিণাঞ্চলে ৪০০ শব্দের উপরে লেখা মৌলিক পোস্টগুলোর জন্য ২৫ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। নেতিবাচক মন্তব্যগুলো ফ্ল্যাগ বা মুছে দেওয়ার রিপোর্ট করার জন্য ৪০ সেন্ট দেওয়া হয়। রিপোস্ট বা পুনরায় পোস্ট দেওয়ার জন্য ১ সেন্ট দেওয়া হয়।
এই কোম্পানি ভিডিও গেমের মতো সফটওয়্যারও তৈরি করে যার মাধ্যমে মন্তব্যকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের লাল ও নীল দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। তখন একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নামানো হয় কে কত বেশি জনপ্রিয় পোস্ট করতে পারে দেখার জন্য।
অন্যান্য উরুন কোডগুলো ডিজাইন করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের “ক্ষতিকারক তথ্য” পর্যবেক্ষণ করার জন্য। সরকারি কর্মীরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে কিওয়ার্ড সার্চ দিয়ে স্পর্শকাতর তথ্য খুঁজে বের করতে পারে। কোম্পানির ডেটা থেকে জানা যায় কোভিডের সময় তারা “ভাইরাস”, “নিউমোনিয়া” শব্দের সাথে বিভিন্ন স্থানের নাম যোগ করে তথ্য স্ক্যান করত।
সিএসি স্থানীয় ওয়েবসাইটগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর স্কোরকার্ড প্রদান করে। এগুলো দেওয়া হয় ওয়েবসাইটগুলো কতটা দক্ষতার সাথে তাদের কন্টেন্টগুলো পরিচালনা করতে পারে। সরকারবিরোধী কিছু পাওয়া গেলে তাদের স্কোর কমে যায়। ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে স্থানীয় ওয়েবসাইটগুলোর স্কোর ১০ পয়েন্ট করে কমে যায়। কারণ তারা “মহামারি সম্পর্কিত অবৈধ তথ্য” প্রকাশ করেছিল। একটি নিউজ পোর্টালকে অতিরিক্ত দুই পয়েন্ট দেওয়া হয় মহামারির সময় মতামত অংশে লেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ, এই মহামারির সময় চীনের সেন্সরশিপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা শুধু প্রকৃত তথ্য লুকিয়েই রাখে না, জনগণকে একটা বুদবুদের মধ্যে আটকে রাখে।
This is a Bengali article written about China's online censorship during the COVID-19 pandemic. It is translated from the New York Times.
Reference:
Featured Image: Sarah Grillo/Axios