Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা জারি এবং পুনরায় বৈধকরণ!

ইন্টারনেটের পর ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে আরেকটি প্রযুক্তি বিপ্লবের শুরু যেটা গত দশ বছর ধরে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে লেনদেনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া সেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিকে তাদের লেনদেনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার শুরু হয়নি, কিছু দেশ আছে যারা এটাকে তাদের দেশে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশেও এখন পর্যন্ত বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ করা হয়নি। গত এপ্রিল মাসে এই তালিকায় যুক্ত হয় ইরানও। অথচ ইরানে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে একটি বড় উদ্যোগ আরো আগেই শুরু হয়েছিল। 

ইরান আবার ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকছে; Image Source: Finance Tribune

ইরানের যেসব ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কাজ শুরু করেছিল সেগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল মানি লন্ডারিং। মানি লন্ডারিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বেআইনিভাবে যেমন ড্রাগ ট্রাফিকিং, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, কিংবা অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ- ইত্যাদি থেকে উপার্জন করা অর্থকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং তাকে বৈধ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রাব্যবস্থা হচ্ছে ইরানিয়ান রিয়াল। অনেক দিন ধরে রিয়ালের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মার্কিন ডলারের তুলনায় রিয়ালের মূল্য অনেকখানি কমে গেছে। প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যায়। ইরানের মুদ্রাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সেখানকার অনেকেই কালোবাজারের মাধ্যমে ডলার ক্রয় করা শুরু করেছিল এবং কিছুদিন পরই এই ক্রয়ের হার অনেকাংশে বেড়ে যায়।

নতুন প্রযুক্তি বিপ্লব শুরু করতে নিজেরাই ক্রিপ্টোকারেন্সি বানাচ্ছে ইরান; Image Source: loaris.com

গত বছর ইরানের মুদ্রাব্যবস্থায় এক ডলারের দাম ছিল প্রায় ৬০ হাজার ইরানিয়ান রিয়ালের সমান। কিন্তু এরপর থেকে ইরান সরকার তাদের মুদ্রাব্যবস্থা রক্ষা করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া শুরু করলে এর দাম ডলারের দামের তুলনায় কমতে থাকে। কমতে কমতে এখন এই মুদ্রা বিনিময় হার ৪২ হাজারে গিয়ে নেমেছে। অর্থাৎ গত এক বছরের কম সময়ে ইরানিয়ান রিয়ালের দাম ত্রিশ শতাংশ কমেছে। পরিসংখ্যানটি গত এপ্রিলের।

ইরানের মুদ্রাব্যবস্থার পুরোটাই খুব কড়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই মুদ্রাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এখন তারা পুলিশের সহায়তায় যেসব জায়গায় মুদ্রাবিনিময় করা হয়ে থাকে সেসব জায়গায় কোনো প্রকারের বেআইনি কাজ হচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখেছিল, আর হলেও সেগুলো নির্মূলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নিষেধাজ্ঞাটি ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উপরও প্রয়োগ করা হয়েছিল।

ডলারের বিপরীতে ইরানের রিয়ালের দাম কমে যাওয়ার কারণে ইরান সরকারের অগ্রীম উপলব্ধি হয় যে, হয়তো ভার্চুয়াল কারেন্সির মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন অনেক সহজেই করা যাবে। আর যেহেতু বিটকয়েনের মতো মুদ্রাব্যবস্থার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই এবং যেকোনো লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের আওতায় আনতে পারে না, তাই ইরান থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কোনো লেনদেন করা যাবে না এমন একটি ঘোষণা সরকার দেয়।

ক্রিপ্টো একবার অবৈধ ঘোষণা করে আবার বৈধ করলো ইরান; Image Source: Finance Magnates

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টও কোনো বক্তব্য দেননি। প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি ২০১৭ সালের দিকে নির্বাচিত হলে প্রতিশ্রুতি দেন যে, তার আমলে চাকরির বাজারের দিকে তিনি বিশেষভাবে নজর দেবেন এবং চেষ্টা করবেন যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ চাকরির সুযোগ ইরানে তৈরি হয়। এছাড়াও ইরানের অর্থনীতির পড়তির দিকটাও তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু দুই দিক দিয়েই তেমন কোনো উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়নি। এর ফলে এই বছরের শুরুর দিকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন হয় ইরানে। প্রায় পুরো ইরান জুড়েই এই বিক্ষোভ হয়। ইরান সরকার বিক্ষোভ দমন করতে গেলে শত শত মানুষ সেখানে আহত হয় এবং প্রায় ২৫ জন নিহত হয় বলে প্রতিবেদনে আসে।        

এখন পর্যন্ত ইরান সরকার বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো প্রকার নিয়মনীতি তৈরি করেনি। এই বিষয়ে তাদের অবস্থান ছিল ভাসা ভাসা। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরান তাদের মতামত প্রকাশ করেছিল। যদিও ক্রিপ্টোমিডিয়া অর্থাৎ যারা বিটকয়েনের মতো আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা বিষয়ে প্রচার করে তাদের প্রতিবেদন হচ্ছে- ইরানে বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। কারণ ইরান থেকে বিভিন্ন দেশে যে পরিমাণ বাণিজ্য হয়ে থাকে সেগুলো যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে হয়ে থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক বিটকয়েন বা অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সির যেসব বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন তাদের মারফত লেনদেনের মাধ্যমে ইরানের বৈদেশিক মুদ্রাব্যবস্থা বিনিময় নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

মিলিয়ন ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় করছে ইরান; Image Source: Cryptoniam

কিন্তু কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বাণিজ্য হুমকি পাওয়ার পর ইরান আবার ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকেছে। ইরান এবং রাশিয়া-দু’টো দেশই মার্কিন ডলারের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে ক্রিপ্টো ব্যবহারের দিকে জোর দিচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইরানকে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা এবং কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে তাদের মুদ্রাব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়ার পাশাপাশি তাদের অর্থনীতির ভিত্তিও কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ডিজিটাল কারেন্সিকে ব্যবহার করলে মার্কিন মুলুকের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইরানের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি স্থিতাবস্থায় থাকতে পারে।

তাই ইরান আবার ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকছে। ইতোমধ্যে ইরান এই বিষয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা তেল রপ্তানিতে ডলারের উপর নির্ভর করতে চাচ্ছে না। ক্রিপ্টোকারেন্সি মারফত তেল রপ্তানি হবে এমনটাই ঘোষণা এসেছে ইরানের কাছ থেকে। উল্লেখ্য যে, তাদের দেশের অনেক হোটেলে ক্রিপ্টোর মাধ্যমে বুকিং করা যাচ্ছে।

ইরান কি পারবে সাধারণ মানুষের কাছে ক্রিপ্টো পৌঁছাতে; Image Source: CNBC.com

তবে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের নিষেধাজ্ঞার সূত্রে কিছু বিষয় এখনও নিজেদের হাতে রাখছে। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার শুরু করছে এবং জাতীয় পর্যায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার কীভাবে করা যাবে সেটা নিয়ে তারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। ইরানের ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের মূলনীতি হচ্ছে – তারা এখনই এই সমস্ত ডিজিটাল কয়েনের ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য বৈধ করছে না। যেহেতু ক্রিপ্টো নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ আছে, তাই আগে শুধুমাত্র ব্যাংকগুলোর মাঝে সরাসরি লেনদেনের জন্য ক্রিপ্টো ব্যবহার করা হবে। এই লেনদেনের পুরোটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেই হবে।

এভাবে ব্যবহার করার পর যখন ধীরে ধীরে ডিজিটাল কয়েনের ব্যবহার নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা হবে, তখন কাজ করা হবে কীভাবে এই কারেন্সি সাধারণ মানুষ বৈধ উপায়ে ব্যবহার করতে পারে। আশা করা যাচ্ছে যে, ইরানের লেনদেনের জগতে নতুন এই সংযোজন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করবে। ইরান থেকে এমনও ঘোষণা এসেছে, তারা নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ভাগ্য ইরানে কেমন হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।   

ফিচার ইমেজ – 123RF.com             

Related Articles