আপনা কি বাংলাদেশি উদ্যোক্তা? বিশ্ববাসীর কাছে আপনার অসাধারণ আইডিয়া উপস্থাপন করে তা বাস্তবে রূপান্তর করতে চান? তবে এই প্রতিযোগিতাটি আপনার জন্য। বিজয়ী উদ্যোক্তারা পাবেন প্রত্যেকে ১০ লাখ টাকা করে, কাজ করতে পারবেন শ্রীলংকার প্রথম সারির এক কোম্পানীর সাথে! তবে দেরি কেন? আজই আবেদন করুন।
টানা দ্বিতীয় বারের মতো অদম্য স্টার্টাপের খোঁজে শুরু হয়েছে জন কেইলস এক্স ওপেন ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ। ২০১৬ সালে সফল সূচনার পর এই বছরেও দারুণ সাড়া ফেলেছে প্রোগ্রামটি। জন কেইলস হোল্ডিংস দ্বারা পরিচালিত এই প্রতিযোগিতায় সাতজন বিজয়ীকে প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক সুবিধা দান করাই এই চ্যালেঞ্জের লক্ষ্য।
উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য এটি শ্রীলংকান অর্থনীতিকে অনেক প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর এই চ্যালেঞ্জের প্রথম সংস্করণটি জনসাধারণের কাছে বেশ ইতিবাচকভাবেই সমাদৃত হয়েছে। এবার এটি একটি পরিপূর্ণ এক্সেলারেটর প্রোগ্রামে পরিণত হয়েছে যা পুরো ৬ মাস ধরে প্রতিযোগীদের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ প্রদান করবে।
আবেদনের নিয়মাবলী
প্রতিযোগীরা তাদের টিমের পরিচিতি এবং যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেন তার ভিডিওসহ দ্রুত আবেদন পাঠাতে পারেন। ব্যবসায়িক ধারণাগুলো অবশ্যই জন কেইলস হোল্ডিংস এর অসংখ্য উদ্যোগক্ষেত্র; যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাশ, পরিবহণ, ভোগ্যপণ্য, সম্পদ, আর্থিক সেবা এবং বনায়নের মধ্যে যেকোনো একটির সাথে যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। যেকোনোভাবে এই শিল্পের সাথে সংযুক্ত বা পরিপূরক ধারণাগুলিকেও স্বাগত জানানো হবে।
এই প্রতিযোগিতার জন্য জন কেইলস এক্স এর ওয়েবসাইট থেকে ২ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনের প্রক্রিয়া একদম সহজ, এ জন্য ব্যবসার পুরো পরিকল্পনার বিবরণের প্রয়োজন নেই। আবেদনপত্র এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করে বাছাই করা হয়। তবে বাছাই করার ক্ষেত্রে দলের সদস্য, তাদের দক্ষতা এবং মোটিভেশনের মতো বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি দলে দুই থেকে তিনজন প্রতিষ্ঠাতা এবং এক থেকে তিনজন সদস্য থাকতে পারে। একটি দল পৃথক পৃথক ফর্মে অনেকগুলো আবেদন করতে পারবে।
প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া
সকল আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ৩০টি টিমকে চ্যালেঞ্জের জন্য বাছাই করা হবে। পুরোপুরিভাবে প্রতিযোগিতায় প্রবেশের পূর্বে সকল দল মার্টিন ট্রাস্ট সেন্টার ফর এমআইটি ইন্টারপ্রিনিউরশিপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিল ওয়ালেট এর একটি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাবে। এ থেকে দলগুলো শিখবে কীভাবে একজন উদ্যোক্তার মানসিকতা তৈরি করতে হবে এবং কীভাবে শ্রেষ্ঠ ধারণাগুলো তাদের উদ্যোগে প্রয়োগ করতে হবে।
জন কেইলসের সবচেয়ে প্রতিভাধর ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে প্রতি দলে একজন করে মেন্টর নিযুক্ত করা হয়। প্রতি মঙ্গলবার দলগুলো তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং কাজের প্রতিক্রিয়া পেতে সংশ্লিষ্ট মেন্টর এবং উপদেষ্টাদের সাথে দেখা করে থাকে।
ডেমো ডে
পর্যায়ক্রমে বাছাইকৃত প্রার্থীরা ডেমো ডে-তে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন। এখানে তারা অনেক অভিজ্ঞ বিচারক প্যানেলের সামনে তাদের ধারণাগুলো প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। এ বছর এই প্যানেলে আছেন –
১) অজিত গুণবর্ধন (ডেপুটি চেয়ারম্যান – জে কে এইচ),
২) রনি পেরিস (গ্রুপ ফিন্যান্স ডিরেক্টর – জে কে এইচ),
৩) কৃষ্ণ বলেন্দ্র (প্রেসিডেন্ট, লেইজার সেক্টর / ডিরেক্টর – জে কে এইচ) ,
৪) গিহান কুরে (প্রেসিডেন্ট, রিটেইল সেক্টর / ডিরেক্টর – জে কে এইচ) ,
৫) ডক্টর হ্যান্স জয়সুরিয়া (রিজিওনাল সিইও – আক্সিয়টা গ্রুপ সাউথ এশিয়া / নন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর – জে কে এইচ) ,
৬) জনাথন এলিস (ম্যানেজিং ডিরেক্টর / সিইও – হ্যাটন ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি) এবং
৭) রামেশ শানমুগানাথান (এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিফ ইনফরমেশন অফিসার – জে কে এইচ)
এই ৩০ টি টিমের মধ্য থেকে ৭টি টীমের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা মূলধনের জন্য নির্বাচিত করা হবে। বিনিময়ে কোম্পানীগুলো তাদের শেয়ারের ৫% প্রদান করবে। এই ৭টি স্টার্টাপ বাছাইয়ে তাদের ব্যবসার আইডিয়া, প্রাথমিক প্রোডাক্টের কোয়ালিটি এবং জেএইচকে কোম্পানীর সাথে সামঞ্জস্যতা ইত্যাদি বিষয় প্রাদান্যতা পেয়ে থাকে।
পুরষ্কার
অন্যান্য প্রতিযোগিতার মতো এই প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র পুরস্কার মূল্য দিয়েই থেমে থাকে না। শেয়ারের বিনিময়ে প্রাথমিক বিনিয়োগের অর্থ হচ্ছে জন কেইলস হোল্ডিংস এসব কোম্পানীর জন্য বিনিয়োগ করছে। বিজয়ী দলগুলি জন কেইলসের অফিস স্পেস, কিংবা বর্তমান চ্যানেল বা কাস্টমার বেজ ব্যবহার করে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবিকভাবে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পায়, যা এক জন নতুন উদ্যোক্তার জন্য এক অমূল্য সুযোগ।
এছাড়াও দলগুলো নিয়মিত কোম্পানির প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ পায়। একটি গ্রোথ হ্যাকিং একাডেমী, গ্রোথ ট্রাইবের বিশেষজ্ঞরা সুদূর নেদারল্যান্ড থেকে আসবে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। নিলান পেইরিসের প্রশিক্ষকদের সাথেও তারা যোগদান করবেন। নিলান একটি সফল যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভিপি গ্রোথের উদ্যোক্তা।
ডেমো ডে-তে দেখানো প্রদর্শনী অনুযায়ী, দলগুলো পরবর্তী ছয় মাস এমভিপি বিকাশের জন্য তাদের প্রাপ্ত প্রশিক্ষণকে কাজে লাগায়। এক্সিলারেশন সময়কালের প্রধান ফোকাস হচ্ছে তাদের ব্যবসার উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করা। প্রতি সপ্তাহেই দলগুলোকে অন্ততপক্ষে শতকরা ৫ ভাগ উন্নয়ন দেখাতে হবে। দলগুলোকে দেখাতে হবে যে দিনে দিনে তাদের পণ্য বা সেবা গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে তারা তাদের পণ্য বা সেবার উন্নয়ন করছেন। এ ব্যাপারে ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চলাকালীন দলগুলোকে সহায়তা করার জন্য জন কেইলস হোল্ডিংস তাদের জেকেএইচ লিগ্যাল, ফিন্যান্স এবং সেক্রেটারিয়াল বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ প্রদান করে থাকে। ছয় মাস শেষে দলগুলো তাদের কোম্পানিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেকেএইচ বোর্ডের কাছে তাদের পণ্য প্রেরণ করেন এবং কোম্পানির ২৫% শেয়ারের বিনিময়ে তাদের অর্থের পরিমাণ আরো ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা অর্জনের সুযোগ থাকে।
প্রাপ্ত সুযোগ
২০১৬ সালের জন কেইলস এক্স এর বিজয়ী
কোনো দল ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারুক আর না পারুক, ওপেন ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের জন্যই এটি একটি অসাধারণ শেখার অভিজ্ঞতা। নির্বাচিত ৩০টি দলের প্রত্যেকেই নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে অতি উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকবেন এবং এই দ্রুত বেড়ে ওঠা বাণিজ্যিক বিশ্বে তারা সঠিক মানসিকতা নিয়েই পদার্পণ করবেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে দলগুলো খুব সহজেই প্রাথমিক বিনিয়োগের ব্যাবস্থা করে ফেলে খুব সহজেই, যা সাধারণত একজন সাধারণ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে খুব সহজ হয় না।
একজন নতুন উদ্যোক্তা যত দ্রুত অর্থের ব্যবস্থা করতে পারবেন, তত দ্রুতই তিনি তার পণ্যের ব্যাপারে মনোনিবেশ করতে পারবেন। যারা এই প্রতিযোগিতায় আরো বাড়তি ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকেন, তাদের জন্য উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হয়। তাদের বিনিয়োগের পেছনে সময় নষ্ট করতে হয় না। বরং তারা এই ৬ মাসের প্রশিক্ষণে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন তাদের পণ্যের উন্নয়ন নিয়ে, যা সাধারণত অধিকাংশ উদ্যোক্তারাই পান না।
উদ্যোক্তারা এখানে যে যোগাযোগগুলো তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন, তা তাদের জন্য এক অমূল্য সুযোগ। এখানে দলগুলো জেকেএইচের সমগ্র রিসোর্স, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পথপ্রদর্শক, ব্যবসায়িক মাধ্যম এবং গ্রাহক- সকলের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এখানকার প্রত্যেকটি রিসোর্স থেকে দলগুলো অসামান্য সহায়তা পেয়ে থাকেন যা তাদের ব্যবসার জন্য ব্যাপকভাবে সহায়ক। এই রিসোর্সগুলো সমন্বিতভাবে দলগুলোর নতুন ব্যবসাকে ত্বরান্বিত করে থাকে।
জেকেএইচ গ্রুপের সাথে ৬ মাস নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারা একটি অতুলনীয় সুযোগ। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের শুরুতে অনেক আত্মবিশ্বাস থাকবে যে, তার একটি আদর্শ ব্যবসার দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং অনেক সময় ধরে একটি কংগ্লোমারেটের সাথে কাজ করেছেন। আর এভাবেই জেকেএইচ ওপেন ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ নতুন উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতাদের নতুন ব্যবসা এবং কোম্পানী গঠনের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। একটি দল জিতুক বা হারুক, তাদের এই অর্জিত অভিজ্ঞতা অমূল্যই বলা চলে।
এখানে আবেদন করুন
তথ্যসূত্রঃ roar.tech/events/john-keells-x-2-0-finding-the-next-big-startup