Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিম জং উনের তৃতীয় চীন সফর

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের ঐতিহাসিক সাক্ষাতের ইতিবাচক ফলাফল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অবিরাম বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার কারণে তার প্রশংসা করেন তিনি।

গত ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সাথে সম্মেলনের এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর তৃতীয়বারের মতো চীনে কিমের সফর শেষে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জানিয়েছেন, কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি প্রক্রিয়ার উন্নয়নে চীন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মতে, ট্রাম্পের সাথে কিমের সাক্ষাতের ‘ইতিবাচক’ ফলাফল এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য দেখে তিনি খুব খুশি।

করমর্দন করছেন কিম জং উন ও শি জিনপিং; Source: AP 

তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতির যেকোনো পরিবর্তনেও, চীনের দল এবং সরকার কখনোই চীন-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ককে উন্নত করার দৃঢ় অবস্থানের পরিবর্তন করবে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, উত্তর কোরীয় জনগণের জন্য চীনা জনগণের বন্ধুত্ব যেমন পরিবর্তন হবে না, তেমনি উত্তর কোরিয়ার জন্য চীনের সমর্থনও পরিবর্তন হবে না। এদিকে কিম চীন ও অন্যান্য দেশের সাথে শান্তি প্রক্রিয়া চালানোর জন্য চীনের সাথে কাজ করার আশা করছেন বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

কিম এর সর্বশেষ বেইজিং ভ্রমণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, তারা এটি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ার সরকারের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের সম্মেলনে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখবে কিনা সে ব্যাপারটিও লক্ষ্য করছেন তারা।

কিম জং উনকে স্বাগত জানাচ্ছেন শি জিনপিং; Source: KCNA via REUTERS

সিঙ্গাপুরের সম্মেলনটিই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং উত্তর কোরিয়ার নেতার মাঝে সংঘটিত হওয়া প্রথম বৈঠক। এ সম্মেলনে কিম জং উন কোরীয় উপদ্বীপের সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করার কথা জানিয়েছেন। অপরদিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর যৌথ অনুশীলন বন্ধ করবেন। যদিও ট্রাম্প সিঙ্গাপুরের শীর্ষ সম্মেলনকে সফল বলেছেন, সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি আদৌ নতুন কিছু অর্জন করেছেন কিনা। কেননা পিয়ংইয়ং আসলে একতরফা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নতুন কোনো নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির কথাও বলেনি।

উওভয় নেতার সাথে তাদের স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন; Source: Reuters

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষা পরিত্যাগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ট্রাম্প উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, চীন এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও পেন্টাগন ঘোষণা করেছে যে তারা আগস্টের জন্য নির্ধারিত বার্ষিক সামরিক অনুশীলনটি বন্ধ করবে। শীর্ষ সম্মেলন শেষে ট্রাম্প আরও জানান, উত্তর কোরিয়া ১৯৫০-৫৩ সালে কোরিয়ার যুদ্ধের পরে অবশিষ্ট মার্কিন সৈন্যদের দেশে পাঠানোর জন্য সম্মত হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানান, এই প্রক্রিয়াটি পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হতে পারে।

গ্লাস উঁচিয়ে উদযাপন করছেন দুই নেতা; Source: KCNA via REUTERS

আনুষ্ঠানিকভাবে একটি রাষ্ট্রীয় সফর হিসাবে বিল দেওয়া না হলেও, চীন কিম জং উনকে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ পিপলে প্রহরীসহ স্বাগত জানায়। শি জিনপিং তাকে অভিনন্দন জানা। উভয়ের সাথেই তাদের স্ত্রী ছিলেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উত্তর কোরিয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি দেখে তিনি খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। চীনের নিজস্ব অর্থনীতির সংস্কার এবং উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়াটি দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন চীনা জনগণের চোখও বিশ্বের নিকট উন্মুক্ত। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম কিমের সফর সন্ধ্যার আগে উল্লেখ করেনি।

ট্রাম্পের সাথে কিমের সম্মেলন সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য কিমের চীন সফর কূটনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানকারী। তবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় তারাও কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল।

আলোচনায় বসেছেন দু’দেশের কর্মকর্তাগণ; Source: KCNA via Reuters

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন উভয়েরই লক্ষ্য কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করা। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নোহ কিউ-ডেওক এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের সরকার আশা করছে এই সমস্যা সমাধানে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করি চেয়ারম্যান কিম জং উনের সাক্ষাত এক্ষেত্রে অবদান রাখবে।”

দক্ষিণ কোরিয়া সঙ্গে সামরিক অনুশীলন স্থগিত করার ট্রামের সিদ্ধান্তের কারণে চীন বিশেষভাবে খুশি হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করা এবং এর পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক অনুশীলন বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে অনেকদিন আগেই প্রস্তাব রেখেছিল দেশটি। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগস্টের নির্ধারিত ফ্রিডম গার্ডিয়ান সামরিক অনুশীলন সম্পর্কিত সব পরিকল্পনাকে স্থগিত করার জন্য সম্মত হয়েছে।” পেন্টাগনও ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে। এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রের সচিবগণ এবং সেই সাথে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবেন। উল্লেখ্য, গত বছর ১৭,৫০০ জন মার্কিন এবং ৫০ হাজারেরও বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্য এই ফ্রিডম গার্ডিয়ান ড্রিলস-এ যোগদান করেছিল।

Source: scmp.com

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ব্যায়াম বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি অনেক বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। কেননা সিঙ্গাপুরে কিমের সাথে সম্মেলন শেষ করে ঘোষণা দেওয়ার পরই কেবল তারা এ বিষয়ে জানতে পারেন। তবে জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইউশিহাইড সুগা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে যৌথ অনুশীলনের পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন হবে না, উভয়ই উত্তর নিয়মিত অনুশীলন করে যাবে।

Featured Image Sourse: KCNA via Reuters

Related Articles