Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লেনিনগ্রাদ থেকে মস্কো: ভ্লাদিমির পুতিনের উত্থান

প্রযুক্তির ছোঁয়াতে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি পূর্বের অবস্থান থেকে অনেকটাই পাল্টে গেছে। আগে দেশে-দেশে চলতো পরস্পর সংঘর্ষ। তবে এখন আর পুরোদস্তুরভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয় না। কেননা বর্তমান পৃথিবী চলছে ক্ষমতা প্রদর্শনের বুনিয়াদে। পারমাণবিক শক্তি এবং কূটবুদ্ধির পরিপূর্ণ সম্মিলনের মারফত বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রদর্শন করছেন তাদের পরাক্রমের মহড়া। সেসব পরাক্রমশালী রাষ্ট্র নায়কদের উত্থান নিয়ে শুরু হচ্ছে আমাদের নতুন সিরিজ। এর প্রথম পর্বে বিশ্লেষিত হচ্ছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন।

ভ্লাদিমির লেনিনের মৃত্যুর পর সেইন্ট পিটার্সবার্গের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় লেনিনগ্রাদ। ১৯৫২ সালের অক্টোবরে এই লেনিনগ্রাদের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয় আরেক ভ্লাদিমির, যার হাতে সমগ্র  রাশিয়ান জনগণের ভাগ্য লিখিত হয় নতুন করে। সোভিয়েত পতনের পর যিনি রাশিয়াকে নিয়ে যান অনন্য এক উচ্চতায়। যার চোখ রাঙানিতে কেঁপে ওঠে সমগ্র বিশ্ব। নামটি কারোরই অজানা নয়। বলছিলাম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথা।

পিতা মাতার সাথে পুতিন, (ইনসেটে) পুতিনের পিতা-মাতা; ছবিসূত্রঃ পুতিনের ব্যক্তিগত আর্কাইভ

অগ্রগামী নয়, ছিলেন ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী

ষাটের দশকের শুরুতে নিজ গৃহের কাছে এক স্কুলে ভর্তি হলে শিক্ষা জীবনে হাতেখড়ি হয় পুতিনের। সেখানে তিনি পড়েন অষ্টম গ্রেড পর্যন্ত। স্কুলজীবনে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড অলস এবং দুরন্ত প্রকৃতির। এজন্যে ক্লাসের প্রায় ৪৫ জনের মধ্যে যে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ‘ইয়ং পায়োনীয়ার্স অর্গানাইজেশনের’ সদস্য হয়নি, তিনি ছিলেন তাদের একজন। এমনকি ষষ্ঠ গ্রেডে এই সংঘে যোগদান করার পর তিনি হয়ে ওঠেন সংঘের মধ্যবর্তী দুষ্টের শিরোমণি।

স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন পুতিন। তখন থেকেই সাম্বো এবং জুডো চর্চা শুরু করেন। খেলাধুলার পাশাপাশি ভাষা এবং সিনেমার প্রতিও আকৃষ্ট ছিলেন সে সময়। অষ্টম গ্রেড পাশ করে সেইন্ট পিটার্সবার্গে হাই স্কুলে ভর্তি হবার পর আয়ত্ত করেন জার্মান ভাষা।

স্কুলে শিক্ষার্থী-শিক্ষিকার সাথে পুতিন; ছবিঃ Laski Diffusion

নাবিক? পাইলট? বড় হয়ে কী হবেন পুতিন? এ নিয়ে তিনি বেশ দ্বিধান্বিতই ছিলেন। রাশিয়ান সিনেমা দেখে গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিও তার বেশ আকর্ষণ এসে যায়। তাই স্কুল শেষ করার আগেই গেলেন তৎকালীন বিশ্বখ্যাত সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’র দপ্তরে। সেখান থেকে জানতে পারলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হতে হলে সোভিয়েত আর্মিতে যোগদান করতে হবে, নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ডিগ্রী থাকতে হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হবার লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে আইন বিভাগে ভর্তি হলেন লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশুনা চলাকালীন সদস্য হন সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির। ১৯৭৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে যোগ দেন সে সময়কার অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’তে।

গোয়েন্দা পুতিন

মুভি দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলেন সিক্রেট সার্ভিসের প্রতি। আর শেষ পর্যন্ত সেটাকেই বানালেন কর্মক্ষেত্র। ১৯৭৫ এ পরিচালকের দপ্তর সচিব হিসেবে যোগ  দিলেন কেজিবিতে (তৎকালীন সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস)। তারপর গেলেন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সে। কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে অন্যান্য দেশের ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দাদের ওপর নজরদারি রাখা। সহজ বাংলায় বলা চলে গোয়েন্দার ওপর গোয়েন্দাগিরি!

বেশ কিছুদিন যাবার পর তিনি কেজিবির স্টেট সিকিউরিটির লেনিনগ্রাদ শাখায় কাজ করা শুরু করেন। রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লেনিনগ্রাদে বিভিন্ন ভিনদেশী ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারীদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে থাকেন তিনি এবং দিনকে দিন হতে থাকেন দক্ষ, প্রকাশ পেতে থাকে তার চৌকষ স্বভাব। এর আগে আশির দশকের শুরুতেই তিনি মস্কোর নিমন্ত্রণে সেখানকার অভিজাত গোয়েন্দা প্রশিক্ষণে অংশ নেন। বার কয়েক প্রশিক্ষণ নেবার পর কেজিবির কাজে যাত্রা করেন পূর্ব জার্মানি।

কেজিবি’তে কর্মরত অবস্থায় পুতিন; ছবিসূত্রঃ starshipearththebigpicture.com

৩২ বছর বয়সে তিনি পদার্পণ করেন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে। সেখানেও তিনি কাজ করতে থাকেন পূর্ণ দাপটে। তখন পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি ভাগ থাকলেও পশ্চিমা বিশ্বের সকল তথ্যই আদান-প্রদান হতো সেখানে। আর জার্মান ভাষা জানা থাকার দরুন কাজটা আরও সহজ হয়ে উঠলো পুতিনের কাছে।

সোভিয়েতের শেষ দিনগুলোতে তিনিই পূর্ব জার্মানিতে কেজিবি তথা সোভিয়েত কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য কাজ করছিলেন। আশির দশকের শেষ দিকে যখন বার্লিন ওয়ালের পতন হয় অর্থাৎ জার্মানি আবার একত্র হয় তখন তিনি ছিলেন বেশ ঝুঁকি এবং হুমকির মুখে। সে সময় বার্লিনের আন্দোলনকারীরা তার অফিস দখলের চেষ্টা করলে দৃশ্যত অসহায় হয়ে পড়েন পুতিন এবং তার সহকর্মীরা। তখন অত্যন্ত চাপের মুখে থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সেখানকার সকল নথি-পত্র এবং অন্যান্য তথ্যাদি পুড়িয়ে ফেলেন এই প্রত্যুত্‍পন্নমতি যাতে করে কোনো তথ্য এখান থেকে বের হয়ে না যায়। শান্ত এবং স্থির অবস্থায় বের হয়ে আসেন সেখান থেকে। তবে ফাইল পুড়িয়ে ফেললেও সব কিছু হারায় না, কারণ সব তথ্যই সংরক্ষিত আছে তার মস্তিষ্কে।

লেনিনগ্রাদ থেকে মস্কো

সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিসে থাকার ফলে অনেক অজানাই জানা ছিল পুতিনের, তবে কী অজানা তিনি জানতেন তা জানতো না অন্য কেউ। মূলত কেজিবিতে কাজ করার সময় থেকেই সোভিয়েতের পতন দেখেন তিনি। আর সেখান থেকেই প্রেরণা পান রাজনীতিতে অংশ নেবার। তাই গোয়েন্দাগিরি থেকে ইস্তফা দেন। মনোযোগ দেন রাজনীতিতে। তবে শুরুতেই মাঠে নামেননি। প্রথমে লেনিনগ্রাদ তথা বর্তমান সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকেই শুরু করেন। লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে কাজ করেন সিটি কাউন্সিলের মেয়রের উপদেষ্টা হিসেবে। পরবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে তিনি এগোতে থাকেন মস্কোর দিকে।

১৯৯৬ সালে পরিবারসহ মস্কোতে আসেন পুতিন। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। ১৯৯৮ এ রাশিয়ান সিক্রেট সার্ভিস ফেডেরাল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) পরিচালক হেসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৯ এ সিকিউরিটি কাউন্সিল অব রাশিয়ান ফেডারেশনের সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

এফএসবি’র পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালীন পুতিন; ছবিসূত্রঃ রয়টার্স

এতকিছুর পরেও জনমানুষের কাছে অবিদিত ছিলেন পুতিন। তবে সেটাও আর বেশি স্থায়ী হতে পারল না। তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বুরিস ইয়েলটিনের অনুরোধে ১৯৯৯ সালেই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেবারই প্রথম মানুষ জানতে শুরু করলো ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট বুরিস ইয়েলটিন পদত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর বিরোধী পক্ষ তার পদত্যাগ দাবি করলেও চেচেন যুদ্ধে তার অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী মনোভাব এবং ‘ল এন্ড রুল’ নীতি দ্বারা জনগণের কাছে বেশ প্রশংসিত হন। এরপর থেকেই নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথ চলা শুরু।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং রাশিয়া

২০০০ সালে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন পুতিন। এবং শুরুতেই গুরুত্ব দেন তৎকালীন রাশিয়ার দারিদ্র্য বিমোচনের দিকে। বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তিসহ যেকোনো উপায়ে রাশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, পেতে থাকেন সাফল্য।

প্রেসিডেন্ট হবার পর ভ্লাদিমির পুতিন; ছবিসূত্রঃ পুতিনের ব্যক্তিগত আর্কাইভ

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৪ সালে প্রায় ৭১% ভোট পেয়ে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন। ক্রমশ তার জনপ্রিয়তার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এবং বিশ্ব রাজনীতিতে হতে থাকেন অপ্রতিরোধ্য এক নেতা। ২০০৮ এ সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তবে ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনিই। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন এবং ৬৩% ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন। এবং এখনও পর্যন্ত রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল আছেন তিনি।

ক্ষমতা গ্রহণের পর পুতিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক আকারে স্থিতিশীলতা আনয়ন করেছেন। এর পাশাপাশি সোভিয়েত পতনের পরেও অঙ্গরাজ্যগুলোকে অবিভক্ত করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০০১ এ ধুঁকতে থাকা রাশিয়ান অর্থনীতিকে ২০০৭ এ তিনি গড়েছেন বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক বছরের মধ্যেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭০% ছাড়িয়েছেন; যা সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ৭৫% শিল্পোন্নতি হয় এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২৫% । বেকারত্ব হ্রাস পায় ৫০% এবং মাথাপিছু আয় ৮০ ডলার থেকে বৃদ্ধি পায় ৬৪০ ডলারে।

২০০০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রাশিয়ান জিডিপি প্রবৃদ্ধি; ছবিসূত্রঃ hyecci

অর্থনৈতিক উন্নয়ের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে তেল এবং গ্যাস রপ্তানিতে রাশিয়ার শীর্ষাবস্থান। ২০১৫ সালের আগে এসব খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থের প্রায় ১ ট্রিলিয়ন রেবেল (রাশিয়ান মুদ্রা) বরাদ্দ করা হয় নিউক্লিয়ার শিল্প স্থাপন এবং উন্নয়নের কাজে। এতে করে বিশ্ব শক্তিমত্তার দিক দিয়েও এগিয়ে যায় রাশিয়ান ফেডারেশন। সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান তৃতীয়।

অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি জোর দিয়েছেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও। পুতিন বিগত ১৭ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। এ কারণে রাশিয়ায় হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ অনেকটা কমে গেছে। এ সকল পদক্ষেপের কারণে গত ২০ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে প্রথম রাশিয়ায় মৃত্যুহারের তুলনায় জন্মহার অধিক হয়েছে।

জনপ্রিয়তার দিক থেকেও শীর্ষস্থানেই আছেন এই জাদুকরী রাষ্ট্রনেতা। ২০০৭ সালের এক জরিপে দেখা যায় তার জনগণের সমর্থন প্রায় ৮১%। ২০১৩ সালের দিকে তা কমে ৬২% হলেও পরে ২০১৪ সালেই তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫% যা কিনা যেকোনো প্রেসিডেন্টের জন্যই সর্বোচ্চ। দেশের অধিকাংশ মানুষই তাকে শক্তিশালী, দূরদর্শী, দৃঢ়চেতা রাজনৈতিক নেতা মনে করে থাকেন। তাই তার ওপরই তারা ভরসা করে আছেন নিশ্চিন্তে। কেননা এসব উন্নয়নের দেখা মেলে রাশিয়ার সাধারণ পথেঘাটেই।

২০১২ সালে মস্কোতে পুতিন; ছবিসূত্রঃ গেটি ইমেজ

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন পুতিন। সামরিক শক্তিসহ বিভিন্ন কারণে হয়েছেন মার্কিন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু। মার্কিন নির্বাচন থেকে শুরু করে বিশ্বের যেকোনো সামরিক মহড়া কিংবা বড় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মস্কোর মন্তব্য বিবেচিত হয় গুরুত্বের সাথেই।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিমিয়া নিয়ে বেশ উত্তেজিত ছিল পশ্চিম ইউরোপ তথা মার্কিন-রুশ সম্পর্ক। স্বেচ্ছায় ক্রিমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলেও পশ্চিমা মিডিয়া বরাবরই একে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছে। তবে এসব ব্যাপারে কান দেননি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এই নেতা।

সিরিয়া ইস্যুতেও রুশ-মার্কিন সম্পর্কের পতন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত এপ্রিলে সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে সম্পর্ক তিক্ততায় রুপ নেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় মস্কো এবং সিরিয়ার প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালি করার হুঁশিয়ারি জানায়। এতে করে আবারও শীতল যুদ্ধের আভাস পাওয়া যায়।

ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও বিশ্ব রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুতিনপ্রীতি এ সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে। আবার হিলারি-পুতিন দ্বন্দ্বের কথাও কারো অজানা নয়। তবে এসব ব্যাপারে একদম চুপচাপ আছেন বর্তমান এই রুশ প্রেসিডেন্ট।

মার্কিন-রুশ সম্পর্ক; ছবিঃ রয়টারস

অনেকে বলে থাকেন তিনি স্বৈরশাসক, আবার অনেকে বলে তিনি যোগ্য শাসক। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তিগত ব্যাপক সম্পত্তির মালিকানাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আছে বৈশ্বিক এই নেতার বিরুদ্ধে। তবে এসব কথার ধার ধারেন না সাবেক এই কেজিবি কর্মকর্তা।

দেশের গণ্ডি পেরিয়েছেন অনেক আগেই, বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি কোনায় কোনায় নিজের প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর এ নেতা। এতে করে নিজের ইচ্ছার সম্পূর্ণটাই অর্জন করতে পারছেন তিনি। সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে তার হস্তক্ষেপের বিষয়টি সমগ্র বিশ্বে বেশ জোরালোভাবেই বিশ্লেষায়িত হচ্ছে। যদি তার প্রভাব হোয়াইট হাউজের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে হয়তো সামনের দিনগুলোতে আরো লাগাম ছাড়া প্রভাবের অধিকারী হতে যাচ্ছেন লেনিনগ্রাদের এই সাবেক গোয়েন্দা।

মিডিয়ার সামনে কুল পুতিন; ছবিঃ SERGEI KARPUKHIN/REUTERS

ফিচার ইমেজ সোর্স- ক্রেমলিন

Related Articles