Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ: একটি ফন্ট পতন ঘটালো প্রধানমন্ত্রীর

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করেছেন। গত ২৮ জুলাই, শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পানামা পেপার্স দুর্নীতি মামলায় নওয়াজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করার পরপরই তিনি পদত্যাগ করেন। বিশ্বের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে আদালতের রায়ে অযোগ্য প্রমাণিত করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার দৃষ্টান্ত বিরল। চলুন জানা যাক, কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হলো, কেনই-বা নওয়াজ শরিফকে পদত্যাগ করতে হলো? আর কী হতে পারে তার এই পদত্যাগের ফলাফল?

কী এই পানামা পেপার্স?

২০১৬ সালের এপ্রিলের ৩ তারিখে ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (ICIJ), জার্মান এক পত্রিকার কাছ থেকে পাওয়া পানামা ভিত্তিক আইনী প্রতিষ্ঠান ‘Mossack Fonseca’-এর প্রায় সাড়ে এগারো মিলিয়ন গোপন ডকুমেন্ট ফাঁস করে দেয়, যা মিডিয়াতে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি বা ‘পানামাগেট’ নামে পরিচিত হয়। এই ডকুমন্টগুলো থেকে দেখা যায়, কীভাবে বিশ্বের অনেক দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিখ্যাত খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং শিল্পপতিরা রাষ্ট্রের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ক্রয় করে আসছিলেন।

পানামা পেপার্সে নাম আসা কতিপয় ব্যক্তি; source: panamapapers.icij.org

পানামা পেপার্স সেসময় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। অন্য অনেকের মধ্যে এতে নাম আসে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের আত্মীয়-স্বজন, ইরাক, কাতার, জর্ডানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রায় সহ আরও অনেক নামীদামী তারকাবৃন্দের। এ তালিকায় প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশীর নামও উঠে আসে।

কিছু কিছু দেশে পানামা পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সাজাপ্রাপ্তের সংখ্যা খুবই কম। রাজনীতিবিদদের মধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গত বছরের এপ্রিলেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সম্প্রতি নওয়াজ শরিফের নাম সেই তালিকায় দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুক্ত হলো।

পানামা পেপার্সে নওয়াজ শরিফের নাম

পানামা পেপার্সে নাম আসা ১২ জন বিশ্বনেতার মধ্যে নওয়াজ শরিফ একজন। নওয়াজ শরিফের নাম সরাসরি না এলেও তার পরিবার, বিশেষ করে তার মেয়ে মরিয়ম এবং দুই ছেলে হাসান ও হোসেনের বিরুদ্ধে মোট আটটি অফশোর কোম্পানির মালিকানার অভিযোগ পাওয়া যায়।

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট অনুযায়ী, নওয়াজ শরিফের ছেলে-মেয়েরা বেনামে এসব কোম্পানি এবং এগুলোর মাধ্যমে লন্ডনের কেন্দ্রে কিছু বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেছিলেন, যেন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া যায়। এছাড়াও পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে যে, নওয়াজ শরিফ নিজেও তার ছেলের নামে থাকা এরকম একটি দুবাই ভিত্তিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে সকল সম্পত্তির তালিকা দেওয়ার যে বিধান আছে, নওয়াজ শরিফ সেখানে এসব সম্পত্তির কথা গোপন করে যান।

নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগের ইনফোগ্রাফ; source: Al Jazeera

নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর দুর্নীতির অভিযোগে মেয়াদ পূর্ণ না করেই ১৯৯৩ সালে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালে পারভেজ মোশাররফ তার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান করার পর নতুন করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়। ঐ মামলায় তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয়, যদিও পরে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপে তিনি নির্বাসনে গিয়ে কারাবাস থেকে রক্ষা পান।

মামলা এবং বিচারিক কার্যক্রম

পানামা পেপার্সে শরিফ পরিবারের নাম আসার পরপরই পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে সক্রিয় হয়। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান, যিনি আগে থেকেই নওয়াজ শরিফের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তিনি অবিলম্বে এই অভিযোগের তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন। নিশ্চুপ থাকলে বা গোপন করার চেষ্টা করলে আন্দোলন আরও বেগবান হতে পারে- এমন আশঙ্কায় নওয়াজ শরিফ টেলিভিশনে ভাষণ দেন এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য জুডিশিয়াল কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন। যদিও তিনি এই অভিযোগের ব্যাপারে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছ হাজিরা দেওয়ার পর নওয়াজ শরিফ; source: EPA

জুডিশিয়াল কমিটি গঠিত হলেও বিচারিক প্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগোতে থাকায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান জামাতে ইসলামী, ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সুপ্রীম কোর্টে পিটিশন দাখিল করলে কোর্ট তা আমলে নেয় এবং বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত এগোতে থাকে।

এই বছরের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। ২ জন বিচারক নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেন, কিন্তু বাকি ৩ জন যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণ দেখিয়ে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম (JIT) গঠন করে অধিকতর তদন্ত করার ব্যাপারে মতামত দেন। পরবর্তীতে ছয় সদস্য বিশিষ্ট এই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

পিটিআই প্রধান ইমরান খান এবং জামাতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হক; source: Dawn

তদন্ত শেষে জেআইটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, তারা নওয়াজ শরিফের কাছে তার সম্পত্তি এবং সম্পত্তি ক্রয়ের অর্থের উৎস সংক্রান্ত যে ১৩টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল, সেগুলোর সন্তোষজনক উত্তর পায়নি। তাদের ভাষায়, অর্থের বৈধ উৎসের বাইরেও নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে, যেগুলোর ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।

জেআইটির রিপোর্টের ভিত্তিতে গত ২৮ জুলাই, শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে সমন্বিত রায় প্রদান করে। রায়ে বলা হয়, নওয়াজ শরিফ পার্লামেন্ট এবং বিচার বিভাগের কাছে ‘অবিশ্বস্ত’ এবং ‘অসৎ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ‘সৎ’ এবং ‘বিশ্বস্ত’ হতে হয়।

রায়ের পর হতাশ নওয়াজ শরিফের সমর্থকরা; source: Reuters

জেআইটি গঠনের সময়ই নওয়াজ শরিফ বলেছিলেন, যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। কোর্টের রায়ের পরপরই তাই প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে শুধু তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তাকে আপাতত জেলেও যেতে হবে না অথবা তার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে না। তবে কোর্ট তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন তথা ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।

নওয়াজের পতনের পেছনে মাইক্রোসফটের ফন্টের ভূমিকা

নওয়াজ শরিফের পতনের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে মাইক্রোসফট কোম্পানির জনপ্রিয় ফন্ট ‘Calibri‘। দুর্নীতির তদন্ত চলাকালে নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম শরিফ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য কোর্টে একটি ডকুমেন্ট দাখিল করেন। সে ডকুমেন্টটি দিয়ে তার প্রমাণ করার উদ্দেশ্য ছিল, যে অফশোর কোম্পানিটি লন্ডনের ঐ বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টগুলো ক্রয় করেছিল, মরিয়ম তার মালিক নন, শুধু ট্রাস্ট বোর্ডের একজন সদস্য মাত্র। ডকুমেন্টটি সত্য প্রমাণিত হলে হয়তো ফলাফল ভিন্ন হতো, কিন্তু সমস্যা বাধায় একটি ফন্ট।

মাইক্রোসফটের ‘ক্যালিব্রি’ ফন্ট; source: Blythwood

তদন্ত কর্মকর্তারা ডকুমেন্টটি জাল কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য লন্ডনের র‌্যাডলি ফরেনসিক ডকুমেন্ট ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করেন। ল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডকুমেন্টের তারিখ এবং সিগনেচার অনুযায়ী এটি ২০০৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ডকুমেন্টটিতে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানীর বিখ্যাত ফন্ট ক্যালিব্রি, যেটি ২০০৭ সালের আগে মুক্তিই পায়নি! কাজেই ল্যাব সিদ্ধান্ত দেয় যে, ডকুমেন্টটি জাল। ফলে শরিফ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সেই সাথে কোর্টে মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগ আরও পাকাপোক্ত হয়।

নিজেকে সম্পত্তির ট্রাস্টি দাবি করে মরিয়ম নওয়াজের টুইট; source: Maryam Nawaz

ফন্ট বিতর্কের কারণে ডকুমেন্টটি জাল প্রমাণিত হওয়ায় শরিফ পরিবার অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর সাথে নিজেদের দূরত্ব প্রমাণ করতে এবং কোম্পানিগুলো ক্রয়ে ব্যবহৃত অর্থের উৎস জানাতে ব্যর্থ হয়। জেআইটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, নওয়াজের পরিবার তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হিসেব প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে। কোর্ট একই সাথে অর্থমন্ত্রী ইসহাক ধরকেও অযোগ্য ঘোষণা করে, যিনি মরিয়মের পক্ষে এই জাল ডকুমেন্টটি কোর্টে দাখিল করেছিলেন।

মরিয়ম নওয়াজ; source: AP

মরিয়ম এবং তার আইনজীবিরা অবশ্য দাবি করেছেন, ডকুমেন্টটি জাল নয়। তাদের দাবি, ক্যালিব্রি ২০০৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য মুক্তি দেওয়া হলেও পরীক্ষামূলক সংস্করণটি আগেই সীমিতভাবে পাওয়া যাচ্ছিল এবং তারা সেটিই ব্যবহার করেছেন। তবে ফন্টটির ডিজাইনার জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের আগে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই ফন্ট ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না।

ডকুমেন্ট জাল প্রমাণিত হওয়ার পর এক সাংবাদিকের টুইট; source: Bastian Obermayer

ক্যালিব্রি ফন্ট দিয়ে ডকুমেন্ট জাল করার সংবাদ প্রকাশের পরপরই বিপুল সংখ্যক মানুষ ফন্টটির উইকিপিডিয়া পেজটি সম্পাদনা করে এর মুক্তির তারিখ পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে উইকিপিডিয়া সাময়িকভাবে পেজটি মুছে দেয়।

পদত্যাগের প্রভাব: অনিশ্চিত ভবিষ্যত

পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তাদেরকে হয় সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে, অথবা নওয়াজ শরিফের মতো দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছে। নওয়াজ শরিফের এবারের পদত্যাগটি এমন এক সময় হলো, যখন সবাই আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তাই এই পদত্যাগের ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নওয়াজ অযোগ্য ঘোষিত হয়ে পদত্যাগ করলেও তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (PML-N) কিন্তু এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। তাই আপাতত তারা অন্য একজনকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করবে। বিরোধী দলগুলো থেকেও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ ৩৪২ আসনের সংসদে এখনও ২০৯ আসনেই নওয়াজের পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।

পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীদের ইনফোগ্রাফ; source: Aljazeera

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নওয়াজ তার মেয়েকে তৈরি করছিলেন পরবর্তী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগের কারণে সে সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেছে। অনেকেই ধারণা করছেন, হয়তো নওয়াজের ভাই শাহবাজই হবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় না থাকলেও দল এবং সরকারের উপর নওয়াজের প্রভাব ঠিকই বর্তমান থাকবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও নওয়াজ শরিফ এখনও পার্টির প্রধান হিসেবে বহাল আছেন।

নওয়াজের পদত্যাগে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এবং তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (PTI)। নওয়াজের পদত্যাগ মূলত তার বিরুদ্ধে ইমরান খানে দীর্ঘদিনের সংগ্রামেরই ফসল, যিনি গত চার বছর ধরেই নওয়াজের পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন

নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের পর সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান; source: Dawn

তবে ইমরান খানের নিজের বিরুদ্ধেরও সুপ্রিম কোর্টে অযোগ্যতার মামলা চলমান রয়েছে। এমনকি আগামী নির্বাচনের আগে তার ভাগ্যও হয়তো নওয়াজের মতো একই হতে পারে। সেটা যদি না-ও হয়, তবুও ইমরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অনুগত হওয়ার অভিযোগ আছে, যেই অভিযোগ তার বিরোধীরা তো বটেই, তার নিজের দলের সাবেক প্রধানও করেছেন। কাজেই নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সৎ সাহস এবং ন্যায় বিচারের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এর ফলাফল দেশটির জন্য শুভ হবে, নাকি এই টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবারও সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।

ফিচার ইমেজ- republic-prod.azureedge.net

Related Articles