Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চলচ্চিত্রকে হার মানানো কিছু স্মৃতিভ্রমের ঘটনা

বিশ্বের অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের কাহিনীই গড়ে উঠেছে অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রমকে কেন্দ্র করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই চলচ্চিত্রের কাহিনীর মধ্যে নাটকীয়তা তৈরির উদ্দেশ্যে স্মৃতিভ্রমকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয় না। ক্লিনিকাল নিউরোসাইকোলজিস্ট স্যালি ব্যাক্সেনডেলের লেখা একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে প্রদর্শত অধিকাংশ স্মৃতিভ্রমের বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই।

বাস্তবে অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় মনে রাখতে পারে, তাদের সমস্যা হয় সাম্প্রতিক স্মৃতি স্মরণ করার ক্ষেত্রে। কিন্তু ‘বর্ন আইডেন্টিটি’র মতো জনপ্রিয় সিনেমাগুলো আমাদেরকে ঠিক এর বিপরীতটাই দেখায়। এসব চলচ্চিত্র অনুযায়ী, অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের পরিচয় ভুলে যায়, কিন্তু নতুন স্মৃতি তৈরি এবং স্মরণ করার ক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

‘ফিফটি ফার্স্ট ডেট’ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পর সকালে ওঠার সাথে সাথেই মূল চরিত্রটির স্মৃতি মুছে গিয়ে পুনঃস্থাপিত হয়ে যায়। আবার ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রগুলোতে প্রায়ই দেখানো হয়, নায়ক বা নায়িকা পূর্বের জীবনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখলে, যেমন ছোটবেলায় শোনা কোনো গান শুনলে হঠাৎ করেই তাদের হারানো স্মৃতি সম্পূর্ণ ফিরে আসে।

স্যালির মতে, এগুলোর একটিও বাস্তবসম্মত না। বাস্তবে মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করে না যে, নির্দিষ্ট সময় পরপর স্মৃতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে, অথবা গান গেয়ে স্মৃতি ফিরিয়ে আনা যাবে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ফ্রিবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান দিগেজ এবং জিন ম্যারি অ্যানোনি স্যালির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, বিরল হলেও বাস্তবে এমন কিছু স্মৃতি হারানোর ঘটনা সত্যি সত্যিই ঘটেছে।

চলুন জেনে নেই বাস্তবে ঘটা এমন কিছু স্মৃতিভ্রমণের কথা, যা চলচ্চিত্র জগতকেও হার মানায়।

অ্যানসেল বর্নের দ্বৈত জীবনের স্মৃতি

ম্যাট ডেমন অভিনীত বর্ন আইডেন্টিটি চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রের নাম ছিল জেসন বর্ন। চলচ্চিত্রটি বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত না হলেও বাস্তবে সত্যি সত্যিই অ্যানসেল বর্ন নামে এক ভদ্রলোক ছিলেন, যিনি জেসন বর্নের মতোই তার পূর্ব পরিচয় স্মরণ করতে পারতেন না। অ্যানসেল বর্ন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোড দ্বীপের একজন পাদ্রী। কিন্তু ১৮৮৭ সালের মার্চ মাসের এক সকালে তিনি হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করেন পেনসিলভানিয়ার একটি বাড়িতে। তিনি সেখানে কী করছিলেন, কীভাবেই বা সেখানে গিয়েছিলেন, সেসবের কিছুই তার মনে নেই। আর সেটা যে মার্চ মাস ছিল, সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন, সেটা জানুয়ারি মাস এবং তিনি রোড দ্বীপেই বসবাস করছেন।

জেসন বর্ন (বামে) এবং অ্যানসেল বর্ন (ডানে); Source: factinate.com

আতঙ্কিত অবস্থায় তিনি প্রতিবেশীদের কাছে ছুটে যান। তাদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, তিনি এ. জে. ব্রাউন নামে গত দুই মাস ধরে এই বাড়িতে বাস করছিলেন এবং সেখানে একটি দোকানে চাকরি করছিলেন। রোড দ্বীপে ফিরে যাওয়ার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর এবং সোসাইটি ফর সাইকিকাল রিসার্চের এক গবেষক তার সাথে দেখা করেন এবং তাকে সম্মোহিত করে তার সমস্যাটি বুঝতে চেষ্টা করেন। তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে, বর্নের মস্তিষ্কে দুটো ব্যক্তিসত্ত্বার স্মৃতি পৃথকভাবে বিদ্যমান এবং একজনের অস্তিত্ব এবং স্মৃতি সম্পর্কে অন্যজন অবগত না। মস্তিষ্কে কোনো রকম আঘাত পাওয়া ছাড়াই জীবনের কোনো সময়ের স্মৃতি সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়ার এবং পরবর্তীতে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আবার সেই স্মৃতি ফিরে পাওয়ার এটিই প্রথম নথিভুক্ত ঘটনা

WO এর নব্বই মিনিট স্মৃতি

২০০৫ সালের ১৪ মার্চ, জার্মানিতে কর্মরত উইলিয়াম নামে এক ব্রিটিশ সেনা সদস্যের দাঁতের ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। যথাসময়ে তিনি ডাক্তারের কাছে গেলেন, ডাক্তার তার দাঁত অবশ করে চিকিৎসা করল, তিনি ঘরে ফিরে এলেন। সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু পরদিন সকালে যখন তিনি ঘুম থেকে উঠলেন, তখন ডাক্তারের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কোনো কিছু তার স্মৃতিতে নেই! তার কাছে মনে হতে লাগল, এই দিনটিও ১৪ই মার্চ এবং বিকেল বেলা তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

সেই থেকে শুরু। গত এক যুগ ধরে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পরেই উইলিয়ামের কাছে মনে হয়, দিনটি ২০০৫ সালের ১৪ই মার্চ! তার মস্তিষ্ক নতুন কোনো স্মৃতিই সংরক্ষণ করতে পারে না। তার অবস্থা প্রায় ফিফটি ফার্স্ট ডেট চলচ্চিত্রের ড্রিউ ব্যারিমোরের চরিত্রটির মতো। সারা জীবন ধরে প্রতিদিন তিনি একই দিন অতিবাহিত করে চলেছেন।

চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের কাছে উইলিয়ামের স্মৃতিভ্রমের ঘটনাটি সম্পূর্ণ রহস্যে ঘেরা। তাদের কাছে WO নামে পরিচিত উইলিয়ামের মস্তিষ্কে তারা কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পাননি। দাঁত তোলার সময় বা অবশ করার সময় তার মস্তিষ্ক কোনো রকম আঘাত পেয়েছিল কি না, সে ব্যাপারেও তারা নিশ্চিত নন। এমনকি, উইলিয়াম সেসময় মানসিকভাবেও কোনোরকম আঘাত পাননি। অথচ তার মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে! ৯০ মিনিটের বেশি কোনো কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না।

উইলিয়ামের পরিবার তার স্মার্টফোনে সংক্ষেপে তার সমস্যাটি এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো লিখে রেখেছে। প্রতিদিন সেটি পড়েই তিনি বুঝতে পারেন যে, তার স্মৃতিতে সমস্যা আছে এবং দিনটি ২০০৫ সালে আটকে নেই।

ক্লাইভ ওয়্যারিংয়ের সঙ্গীতের স্মৃতি

পিয়ানোর সামনে ক্লাইভ; Source: the16types.info

কিছু অ্যামনেশিয়ার কারণে মানুষ অতীতের স্মৃতি ভুলে যায়, আবার কিছু অ্যামনেশিয়ার কারণে নতুন স্মৃতি তৈরি করার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু ১৯৮৫ সালে ব্রিটিশ সঙ্গীত শিল্পী এবং সুরকার ক্লাইভ ওয়্যারিং একইসাথে দুই ধরনের অ্যামনেশিয়াতে আক্রান্ত হন। হার্পিস এনসেফেলাইটিস নামে এক ধরনের ভাইরাস তার মস্তিষ্কে স্মৃতি সংরক্ষণ সংক্রান্ত স্থানগুলোতে আক্রমণ করে। ফলে তিনি বিরল ধরনের এই অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত হন।

তিনি অতীতের অধিকাংশ স্মৃতি ভুলে যান। তিনি জানেন যে, তিনি বিবাহিত এবং তার সন্তান-সন্ততি আছে, কিন্তু তাদের নাম তিনি মনে করতে পারেন না। তার মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস, যেটি ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিকে স্থায়ী স্মৃতিতে সঞ্চয় করার সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটিও আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কয়েক সেকেন্ডের বেশি নতুন কোনো তথ্যও মনে রাখতে পারেন না।

তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, তিনি যে একজন মিউজিশিয়ান, সেটি তার মনে না থাকলেও তার মস্তিষ্কের দক্ষতা সংক্রান্ত অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় তিনি প্রায় আগের মতোই নিখুঁতভাবে গান গাইতে এবং নতুন নতুন সুর তৈরি করতে পারেন।

 নাওমি জ্যাকবসের ১৭ বছরের হারানো স্মৃতি

নাওমি জ্যাকবস এবং তার লেখা বই; Source: chicagoliterati.files.wordpress.com

২০০৮ সালে এক রাতে ৩২ বছর বয়সী নাওমি জ্যাকবস দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। নিজেকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে তিনি বিড়বিড় করে উচ্চারণ করেন, “কিছুই হয়নি, এটা শুধুই দুঃস্বপ্ন।” কিন্তু নিজের গলার স্বর শুনে তিনি নিজেই চমকে ওঠেন। এই বয়স্ক মহিলার গলার আওয়াজ তার পরিচিত না।

ঘরের বাতি জালিয়ে তিনি পুরাই হতবাক হয়ে যান, আশেপাশের সবকিছুই তার অপরিচিত মনে হতে থাকে। কারণ ঘুমের মধ্যেই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন ১৭ বছরের স্মৃতি। তার নিজের কাছে তিনি তখন ১৫ বছর বয়সের কিশোরী। মাঝখানের সময়টা তার কাছে সম্পূর্ণ অজানা। তার নিজের সন্তানকেও তিনি চিনতে ব্যর্থ হন।

তিনি নতুন জীবনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য সবকিছু ডায়েরিতে লিখে রাখতে শুরু করেন। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে তার স্মৃতি ফিরে আসতে শুরু করে। দুই মাসের মধ্যে তিনি অধিকাংশ স্মৃতিই ফিরে পান।

মাইকেল বোটরাইটের সুইডিশ ভাষার স্মৃতি

স্ত্রীর সাথে মাইকেল বোটরাইট; Source: vice.com

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার এক হোটেল রুমে এক অবচেতন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। পুলিশ তাকে মাইকেল বোটরাইট হিসেবে সনাক্ত করে। কিন্তু চারদিন পরে যখন বোটরাইটের জ্ঞান ফিরে, তখন দেখা যায়, তিনি ইংরেজিই বলতে পারেন না। মাইকেলের কোনো স্মৃতিই তার মনে নেই। তিনি শুধু সুইডিশ ভাষা জানেন এবং তার নাম জোহান বলে জানান।

মাইকেল বোটরাইট সত্যি সত্যিই কিছুকাল সুইডেনে কাটিয়েছিলেন। তাই তার পক্ষে সুইডিশ ভাষা জানা খুব বেশি আশ্চর্যজনক ছিল না। দীর্ঘ পাঁচ মাস হাসপাতালে থাকার পরেও তার স্মৃতি ফিরে না আসায় কর্তৃপক্ষ তাকে সুইডেনে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তার স্মৃতি রহস্যের কোনো সমাধান হওয়ার আগেই সুইডেনে তিনি আত্মহত্যা করেন।

ফিচার ইমেজ- amcnetworks.com

Related Articles