Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জম্বি ড্রাগ ফ্লাক্কার ভয়াবহ আদ্যোপান্ত

বিগত বছরগুলোতে সিনথেটিক যেসব ড্রাগ বেশ বড় আকারে খবরের শিরোনামে এসেছে, ফ্লাক্কা তার মাঝে শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এমন সব রোগীর দেখা মিলতে শুরু করে, যাদের মাঝে উদ্ভট আচরণ, ক্রোধোন্মত্ততা, মানসিক বৈকল্য এবং অস্বাভাবিক শারীরিক শক্তির বিষয়গুলো দেখা যেতে থাকে। পরবর্তী অনুসন্ধানে জানা যায়, এ সবই আসলে ফ্লাক্কা নামক এক সিনথেটিক ড্রাগের প্রতিক্রিয়া।

Source: archive.tcpalm.com

অনেকের মতে হিরোইন ও মেটাঅ্যাম্ফিটামিন একত্র করে বানানো হয় ফ্লাক্কা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আসলে বাথ সল্টেরই নতুন এক সংস্করণ। এখন তাহলে প্রশ্ন আসে- বাথ সল্ট কী? বাথ সল্টও কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে বানানো চিত্তে প্রভাব সৃষ্টিকারী একধরনের ড্রাগ। এই সব ড্রাগই ক্যাথিনোন নামক রাসায়নিক যৌগ গ্রুপের অন্তর্গত। যখনই বাথ সল্টের কোনো সংস্করণকে অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে, তখনই এর কেমিক্যাল ফর্মুলাকে সামান্য পাল্টিয়ে নতুন কোনো সংস্করণের জন্ম দেয়া হচ্ছে। এভাবেই জন্ম নেয়া ফ্লাক্কার রাসায়নিক নাম ‘alpha-pyrrolidinopentiophenone বা alpha-PVP’।

মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনা, সহিংস মনোভাব, মাংসপেশীর অনিয়ন্ত্রিত সঞ্চালন সহ বিকারগ্রস্ত চিন্তাভাবনা একজন ফ্লাক্কা সেবনকারীকে বেশ ভয়াবহ এক সত্ত্বায় রুপান্তরিত করে দেয়। মাত্র ০.১ গ্রামের বেশি নিলেই ড্রাগটির ওভারডোজ হয়ে যায়। তখন যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা কল্পনা করাও দুষ্কর। ড্রাগটির যথেচ্ছা ব্যবহারে একজন ব্যবহারকারীর মানসিকতার আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়, মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনা দেখা দেয় তার মাঝে। কখনো কখনো তারা মেডিকেল ইমার্জেন্সি ‘এক্সাইটেড ডেলিরিয়াম’ পর্যায়ে চলে যায়। তখন তারা কোনোভাবেই এর প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে না, জান্তব চিৎকার শুরু করে দেয়, সহিংস আচরণ করতে থাকে, এমনকি বন্ধ হয়ে যায় তাদের হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হয়ে যায় হাইপারথার্মিয়া।

দেহের অত্যাধিক তাপমাত্রার পাশাপাশি পেশীগুলোর অত্যাধিক সঞ্চালন বিপাকক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি করে। পেশীকলাগুলো নষ্ট হয়ে প্রোটিন ও অন্যান্য কোষীয় পদার্থ রক্তস্রোতে মিশে যেতে আরম্ভ করে, যে প্রক্রিয়াকে বলে র‍্যাবডোমায়োলাইসিস। এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশনের সমস্যাও। র‍্যাবডোমায়োলাইসিস এবং ডিহাইড্রেশন একত্রে কিডনীর ক্ষতি করতে শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে মূত্রাশয়ের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

এখন ফ্লাক্কা ব্যবহারকারীদের কিছু ঘটনা শোনা যাক। এ ঘটনাগুলো ড্রাগটি সেবনকারীদের পরিণতি কতটা নির্মম হতে পারে, সেই সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা দিতে সক্ষম।

১) জম্বি ড্রাগ

অনেকেই ফ্লাক্কাকে বলে থাকেন ‘জম্বি ড্রাগ’। ইংলিশ হরর সিনেমাগুলো যারা দেখেন, তারা জম্বি নামক কাল্পনিক এই ভূতুড়ে সত্ত্বার সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। অদ্ভুত থাকে তাদের হাঁটাচলার ভঙ্গি। ফ্লাক্কা গ্রহণকারীদের অবস্থাও ঠিক তেমন। তাদের হাত-পা এতটাই অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে থাকে যে, দেখে মনে মানুষ নয়, বরং কাল্পনিক জম্বিরাই আমাদের সামনে চলে এসেছে।

কোনো মাদক সেবনকারী যখন অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্লাক্কা সেবন করে ফেলে, তখন তাদের পেশীতন্তুগুলো ঠিকমতো কাজই করতে পারে না। কখনো কখনো তাদের মাথা অস্বাভাবিকভাবে নড়তে থাকে। কখনো হাত-পাগুলো শক্ত হয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ পর্যায়েও চলে যায়। কারণ ফ্লাক্কা গ্রহণকারীরা হয়ে ওঠে মারাত্মক রকমের হিংস্র

একবার এক লোক মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ফ্লাক্কা নেয়ার পর আর কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলো না। সে প্রথমে তার ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর শুরু করে। এতেও শান্তি না পেলে এরপর সে কামড়াতে শুরু করে নিজেকে, ছিড়ে নিতে শুরু করে খোদ নিজেরই মাংস! পুলিশ এসে অনেক কষ্টে তাকে নিবৃত্ত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ততক্ষণে তার প্রাণপাখীটি উড়াল দিয়েছে পরপারের উদ্দেশ্যে।

২) খুনীতে রুপান্তর

ড্রাগটি নেয়ার পর মানুষ যেন আর মানুষ থাকে না, হয়ে ওঠে অমানুষের চেয়েও নিম্নস্তরের কিছু! মানুষকে অবলীলায় খুনীতে পাল্টে দিতে পারে এই ফ্লাক্কা।

লেরয় স্ট্রথার্স নামক এক ব্যক্তি ফ্লাক্কা নেয়ার পর বন্দুক হাতে সোজা চলে যায় বাড়ির ছাদে। এরপর কাপড়চোপড় খুলে শুরু করে দেয় প্রতিবেশীদের উপর গুলিবর্ষণ! পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সে ড্রাগটি নেয়ার কথা স্বীকার করেন এবং জানায়, তার মনে হচ্ছিলো হাইতির কোনো গ্যাং তাকে ধাওয়া করছে!

ডেরেন মরিসন; Source: palmbeachpost.com

ওদিকে আরেকবার ডেরেন মরিসন নামক এক লোক ফ্লাক্কা নেয়ার পর থেকে মনে করতে শুরু করলো, তার পরিচিত ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা আসলে রক্তচোষা এক শয়তান, যে কিনা তাকে হত্যা করতে চাচ্ছে! শুধুমাত্র ড্রাগের প্রভাবে এ ধারণার বশবর্তী হয়ে ডেরেন সেই মহিলার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তাকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। তিন মাস হাসপাতালে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে অবশেষে সেই বৃদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৩) কোকেনের চেয়েও ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ

দামে তুলনামূলক সস্তা এবং অত্যাধিক শক্তিশালী হওয়ায় এ ড্রাগের ভয়াবহতা যে কাউকে শঙ্কিত করে তুলবে। কোকেনের চেয়ে এর ক্ষমতা প্রায় ১০ গুণ বেশি। ১ গ্রামের ১০ ভাগের ১ ভাগ হলো এর সেফ ডোজ। এর চেয়ে বেশি খেলেই দেখা দেবে ওভারডোজের প্রভাব।

Source: drugabuse.com

অনেকেই ফ্লাক্কাকে বলে থাকে ‘$5 Insanity’। ৮০ ডলারের কোকেন দিয়ে যে পরিমাণ মানসিক প্রভাব ফেলা সম্ভব, তার সমপরিমাণ প্রভাব ফেলা যাবে মাত্র ৫ ডলারের ফ্লাক্কার সাহায্যেই। অন্য যেকোনো ড্রাগের মতো শুরুতে এটা সেবনেও যে কারোরই ভালো লাগে। কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত নেশার বলয় ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে না কেউই। ফলে অল্প সময়ের মাঝেই মানুষটি এতে ভয়াবহ রকমের আসক্ত হয়ে পড়ে।

যদি কেউ ০.১ গ্রামের সামান্য বেশি ফ্লাক্কাও নেয়, তাহলে অল্প সময়ের মাঝেই তার দেহের তাপমাত্রা উঠে যায় ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ঘরে। মাংশপেশী মারাত্মক রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার। পেশীতে খিঁচুনি, পেশী সংকোচন সহ শ্বাস-প্রশ্বাসে বেশ অসুবিধা হয়। ড্রাগটি বাজারে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ডজনকে ডজন মৃত্যুর খবর এসেছে, যেগুলোর প্রধান কারণ ওভারডোজ।

৪) ব্যথার অনুভূতি নাশ

ব্যথা এমন একটি অনুভূতি, যা আমরা কেউই পেতে চাই না। তবে এটাও সত্য যে এ অনুভূতি না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকাটাও দুঃসাধ্য হয়ে যেত। কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি কেউ ব্যথা পায়, তাহলে সাথে সাথেই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় অথবা অবস্থা বেশি খারাপ হলে মানুষটিকে পাঠানো হয় ডাক্তারের কাছে। এখন যদি তার ব্যথার অনুভূতি না-ই থাকতো, তাহলে কাজ করতে করতেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো!

ঠিক এমন ঘটনাই ঘটে ফ্লাক্কা গ্রহণকারীদের সাথে। একবার ব্রাজিলের এক লোকের দেখা মিলেছিলো যে কিনা ফ্লাক্কা গ্রহণ করেছিলো বেশ উচ্চমাত্রায়। তার মুখে বুলেটের আঘাত থাকলেও তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলো না। বরঞ্চ সে এমনভাবে কোমর বাঁকিয়ে কথা বলে চলেছিলো, যেন তার মাঝে কোনো ব্যথার অনুভূতিই নেই।

এমন ঘটনা আরো ঘটেছিলো। ২০১৫ সালে ফ্লোরিডার পুলিশ ১৭ বছর বয়সী রক্তাক্ত এক কিশোরীকে গ্রেফতার করেছিলো, যে রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার করছিলো এই বলে যে, “আমি ঈশ্বর! আমি শয়তান!” পরবর্তীতে জানা যায়, ফ্লাক্কাতে আসক্ত এই কিশোরী অপরিচিত এক বাসায় ঢুকে তাদের সম্পদের নানা ক্ষয়ক্ষতি করে পরে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলো।

৫) অচেনা ফ্লোরিডা

ফ্লোরিডায় যখন ফ্লাক্কার প্রকোপ তুঙ্গে, তখন সেখানকার পত্রপত্রিকাগুলোতে নিয়মিত উদ্ভ্রান্তভাবে ছোটাছুটি করা নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের কথা আসতো, যাদের গায়ে লজ্জা নিবারণের জন্য থাকতো না কোনো জামা-কাপড়।

একবার এক লোককে ধরতে গিয়েছিলো ফ্লোরিডার পুলিশ যে কিনা সবার সামনে গাছের সাথে সঙ্গম করতে চেষ্টা করছিলো। যখন তাকে কোনোভাবেই পুলিশ নিবৃত্ত করতে পারছিলো না, তখন তারা টেজার গান ব্যবহারে উদ্যত হয়। লোকটি তাতেও থেমে না গিয়ে নিজেকে বজ্রদেবতা থর বলে দাবি করতে থাকে এবং পুলিশকে আক্রমণ করে বসে।

Source: Gawker

আরেক ঘটনায় ৩৪ বছর বয়সী ম্যাথু কেনী ব্যস্ত সড়ক ধরে উলঙ্গ অবস্থায় দৌড়াতে শুরু করে। পুলিশ যখন থাকে ধরতে সক্ষম হয়, তখন সে জানায় শয়তানের অনুসারীরা তার জামা-কাপড় কেড়ে নিয়েছে আর এখন তাকে মারার জন্য খুঁজছে! নিজের মানসপটে ফ্লাক্কা গ্রহণের ফলে সে অদ্ভুত নানা প্রাণীর দেখা পাচ্ছিলো যারা তাকে খুন করতে চায়। এদের হাতে মরার চেয়ে গাড়ি চাপা পড়ে মরে যাওয়াকেই সে অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে করেছিলো।

৬) ভয়শূন্যতা যখন বিপদ ডেকে আনে

ভয় এমন একটি অনুভূতি যা আমাদেরকে অনাগত অনেক বিপদ থেকেই রক্ষা করে। সমাজের অনেককিছু ঠিকঠাকমতো চলার পেছনেও এই অনুভূতির শক্তিশালী ভূমিকা আছে। সাধারণ অবস্থায় কোনো মানুষই পুলিশের সাথে ঝামেলায় জড়াতে চাইবে না, তার গায়ে হাত তোলা তো আরো দূরের কথা। কিন্তু ফ্লাক্কা এর ব্যবহারকারীর মনে ভয় নামক অনুভূতিটিকে ভোঁতা করে দেয়। এজন্য তখন সে পুলিশের মতো ব্যক্তির উপর আক্রমণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

কোকোনাট ক্রিকে এক ব্যক্তি একবার পুলিশকে গাড়িচাপা দিতে চেয়েছিলো। সেই পুলিশ কোনোমতে গাড়ি সাইড করে প্রাণে বাঁচেন। তারপরও সেই লোকটি পুলিশের গাড়িতে আবার ধাক্কা দেয়। এরপর ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালিয়ে পালাতে চেষ্টা করে সে। শেষপর্যন্ত যখন সে ধরা পড়ে, তখন তার সহজ-সরল স্বীকারোক্তি ছিলো, “ফ্লাক্কা আমাকে দিয়ে এমনটা করিয়েছে!

আরেকবার এক লোক জেলের ১০ ফুট উঁচু কাঁটাতার ঘেরা প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলো। অবশ্য সেখান থেকে পড়ে গিয়ে পরবর্তীতে পশ্চাদ্দেশে ভালোই আঘাত পায় সে। পরবর্তীতে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, বাইরে অপরাধীরা তাকে খুনের চেষ্টা করছে বিধায় জেলখানাকেই নিজের জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায় মনে করেছিলো সে।

৭) সাময়িক অতিপ্রাকৃত শক্তি প্রদানকারী

অন্যসব ড্রাগের মতো ফ্লাক্কা গ্রহণকারীরাও ডুবে যায় এক কল্পনার রাজ্যে। তারা নিজেদের অতিপ্রাকৃত শক্তির অধিকারী মনে করতে শুরু করে। সত্যিকার অর্থে, ড্রাগের প্রভাবে সাময়িকভাবে তাদের শরীরে শক্তি আসলেই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর পরবর্তী ক্ষতির মাত্রাও যে অত্যাধিক তা তো আগেই বলা হয়েছে।

জেমস ওয়েস্ট নামক এক লোক একবার ফোর্ট লডারডেল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হামলার চেষ্টা চালিয়েছিলো। ফ্লাক্কা গ্রহণের পর সে ভাবতে শুরু করে ২৫টি গাড়ি তাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তাড়া করছে। তাদের হাত থেকে বাঁচতে সে পুলিশের কাছে কাকুতিমিনতি শুরু করে এবং হেডকোয়ার্টারের সামনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। বলা বাহুল্য, তার সেই চিন্তার পুরোটাই ছিলো ফ্লাক্কা গ্রহণের ফলাফল।

তবে ড্রাগটির প্রভাবে তার শারীরিক শক্তি ভালো রকমেই বেড়ে গিয়েছিলো। হ্যারিকেন-প্রুফ দরজাটিতে সে ক্রমাগত লাথি মারতে থাকে, পাথর ছুঁড়ে কাচ ভাংবার চেষ্টা করে এবং সর্বোপরি অমানুষের মতো হাতল ধরে এমনভাবে টানাটানি করতে থাকে যেন দরজাটি খুলেই আসবে।

৮) আত্মহত্যায় প্ররোচনা

ব্যথার অনুভূতি হ্রাস ও ভয়শূন্যতার পাশাপাশি আরেকটি মারাত্মক প্রভাব আছে ফ্লাক্কার, সেটি বিষণ্ণতা। ভয়াবহ এ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ড্রাগটির সেবনকারীরা অনেক সময়ই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ফ্লাক্কা গ্রহণকারীদের শুরুর দিককার মৃত্যুর পেছনে আত্মহত্যাও ছিলো উল্লেখযোগ্য কারণ।

জন হামেল জুনিয়র নামক ব্যক্তি ড্রাগটি সেবনের পরপরই অপ্রকৃতিস্থ আচরণ শুরু করে দেয়। তার মাকে সে পাগলের মতো ফোন করে জানাতে থাকে উদ্ভট সব কথাবার্তা, জানায় তাকে নাকি হেলিকপ্টার নিয়ে পুলিশ ধরতে এসেছে। পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে হামেল।

Source: Business Insider

এত ভয়াবহ যেই ফ্লাক্কা, সেই ড্রাগের সহজপ্রাপ্যতা সামনের দিনগুলোর জন্য বড় একটা অশনিসঙ্কেতের জানান দিচ্ছে। অনলাইনে এর বিক্রির সাথে জড়িত আছে দেড়শ’র মতো চীনা কোম্পানি। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড়টি হলো কাইকাই টেকনোলজি কোম্পানি, যার নিয়ন্ত্রণে আছেন চীনা ড্রাগলর্ড বো পেং। ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড্রাগটির ব্যবহারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১৫ সাল থেকে চীন নিষিদ্ধ এই ড্রাগটি। কিন্তু আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ড্রাগের তৈরি কিংবা ব্যবহার এরপরেও থামে নি। বরং দিন দিন এটি চারদিকে ছড়াচ্ছে। ব্রাজিল, স্কটল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মাল্টা, তুরস্ক, সৌদি আরব সহ বিশ্বের আরো অনেক দেশেই মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় এবং অপরাধীদের শরীরে মিলছে এর সন্ধান।

ফিচার ইমেজ- Rolling Stone

Related Articles