Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আধুনিক দাসপ্রথা এবং দুঃস্বপ্নের দুবাই

ফসফরাস মেশানো হালকা নীলাভ ঢেউ পায়ে স্পর্শ করতে শিউরে উঠলেন শেখ মোহাম্মাদ। ফিরে তাকালেন দুবাই শহরের দিকে, পারস্য উপসাগরের তীর ঘেঁষে এই বিশাল শহর গড়ে তুলতে তার কম কষ্ট করতে হয়নি। অবশ্য তার আবার কি কষ্ট? মানুষের তৈরি সর্বোচ্চ চূড়া আকাশছোঁয়া স্কাইস্ক্র্যাপার “বুর্জ খলিফা”-র স্টিল বীমগুলো তো তিনি আর নিজ হাতে বাঁকাননি। সিদ্ধান্ত নিলেন দুবাই শহর একটু ঘুরে দেখবেন।

বুর্জ খলিফা (আরবি – برج خليفة‎‎, বুরুজ খলিফা )

সাগরের উপরে কৃত্তিম মাটি-বালুর উপর গড়ে তোলা পাম আইল্যান্ড আর দ্য ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড দেখলেন, একইভাবে সাগরের উপরেই বানানো পেট বাঁকানো সেভেনস্টার হোটেল “বুর্জ আল আরব”-টাও চোখে পড়ার মতো জায়গায় রয়েছে। দুবাই মেরিনা আর শেখ জায়েদ রোডের স্কাইস্ক্র্যাপারগুলো তো যেকোনো মানুষের কাছেই স্বপ্ন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল নিজেরই হাসিমুখের ছবি, তবে সেগুলোও চাপা পড়েছে রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড আর কর্নেল স্যান্ডার্সের ম্যাকডোনাল্ডস আর কেএফসির বিশাল বিশাল সাইনবোর্ডের নিচে। পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে বিকিয়ে দেওয়া পুরো দুবাই শহর জ্বলজ্বল করছে আরব্য রজনীর সহস্র এক বাতির আলোকছটায়।

বুর্জ আল আরব

তবে ধীরে ধীরে দুবাইয়ের আমিরের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। কারণ আর কিছুই নয়, এত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন দিরহাম খরচ করেও গ্লোবাল সিটির কাতারে দুবাইকে নিয়ে আসতে পারছেন না। জাঁকজমকপূর্ণ এই বিশাল নকল শহর তো সবার জন্য নয়, পশ্চিমা বিশ্বের ধনকুবেরদের হাসির আড়ালে কত কান্না চাপা পড়ে আছে তা সবার কাছে একটু একটু করে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। তো সেই কান্নাভেজা মুখগুলোর গল্পগুলোই শোনা যাক।

ওহহো, শুরু করার আগে একটু দুবাইয়ের ইতিহাস শুনে আসি। আজ থেকে ৪০ বছর আগেও ক্যাকটাস আর কাঁকড়াবিছেদের সম্পত্তি থাকা দুবাইয়ের সূচনা হয়েছিল আঠারো শতকের শুরুর দিকে। ভারত, পারস্য আর ধুলো উড়ানো আরব অঞ্চল থেকে লোকজন এসেছিল নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর আশায়, যদি উপসাগরের তলা কুড়িয়ে দু-তিনটে দুষ্প্রাপ্য মুক্তার হদিস পাওয়া যায়। স্থানীয় পঙ্গপাল “দাবা”-র নাম থেকে থেকে লোকজনের মুখে ঘুরতে ঘুরতে দুবাইয়ে পরিণত হওয়া জেলেদের আস্তানার আয়ু ফুরিয়ে যায় ১৯৩০ এর দশকেই, জাপানে ততদিনে কৃত্তিম মুক্তা বানানোর ধুম পড়ে গেছে। ব্রিটিশরা তেলের গন্ধ পেলেও ভান্ডারে টান পড়ে যাওয়ায় ১৯৭১ সালে জলদস্যুদের হাত থেকে দুবাইয়ের জেলেদের সুরক্ষা দেওয়ার নামে থেকে যাওয়া সৈন্যদের সরিয়ে নেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় দুবাইয়ের আধুনিকায়ন, তেলের খনি আবিষ্কার হওয়ার দুই বছরের মাথায় জনসংখ্যা বেড়ে যায় চার গুণ। এদের বেশিরভাগই হলো তেলের খনিতে কাজ করে টাকার সমুদ্রে ভেসে যাওয়ার আকাশ-পাতাল স্বপ্নে বিভোর ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন।

১৯৬৩ সালের দুবাই বন্দর

দুবাইয়ের অশিক্ষিত শেখ যারা সারা জীবন উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি চষে বেড়িয়েছে তাদের হাতে যদি হঠাৎ করে আলাদীনের প্রদীপ ধরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা কী করতে পারে? মরুভূমির মধ্যে ফুলের চাষ করার স্বপ্ন এখন আর অসম্ভব কিছু নয়, তাই শেখ মাখতুমও চাষ শুরু করলেন। তবে তা ফুলের নয়, বড় বড় স্কাইস্ক্র্যাপারের যা দিয়ে দুবাইকে বানানো হবে আরব্য রজনীর আলো ঝলমলে প্রাসাদে, একই সাথে বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু এবং ধনকুবের ব্যবসায়ীদের ছুটি কাটানোর জায়গা। এই মুহূর্তেও মরুভূমির বালু উঠিয়ে বানানো বিখ্যাত “ক্যানাল অব দুবাই”-এ নৌকাভ্রমণে যাওয়ার সময় পশ্চিমা টুরিস্টদের কানে বাজছে গাইডের গলা ফাটানো চিৎকার, “এই বিশাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বানিয়েছেন আমাদের আমির…”। ডাহা মিথ্যা কথা, এই বিশাল শহরের একটি ইটও আমির বানায়নি, বানিয়েছে আমিরের অধীনে থাকা হাজার হাজার দাসেরা। তাদের একজনের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক আরব্য রজনীর প্রথম দুঃস্বপ্নের রাত।

মৎস্যশিকারিদের প্রাচীন দুবাই

আধুনিক দাসপ্রথা

দুবাইয়ের ঝলসে যাওয়া রোদের দিকে চোখ তুলে তাকানোই নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমান। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তীব্র গরমে হোটেলের সুইমিং পুল বা এসির নিচে বসে থাকার পরামর্শ আর কারও কাছে না হোক অন্তত স্থানীয় আমিরাতের লোকজনের কাছেই পাবেন। তাই ৫ মিনিটের মধ্যেই হিট স্ট্রোক হওয়ার ভয়ে বেশিরভাগ টুরিস্টরাই সন্ধ্যার পর হোটেল ছেড়ে বের হন। সন্ধ্যার দিকে “এই শহর আমির বানিয়েছেন…” চিৎকারের চোটে আপনার মনে যদি সন্দেহও জাগে আপনি আশেপাশে তাকিয়েও ভারতীয় চেহারার কোনো শ্রমিককে দেখতে পাবেন না। তবে সূর্য লাল হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও যদি আপনি দুবাইয়ের উত্তর দিকের ধুলোওড়া রাস্তার দিকে তাকান, ছোটছোট ধাতুর তৈরি চকচকে বাসগুলো চোখেও পড়তে পারে। বাসগুলো যাচ্ছে সোনাপুরের লেবার ক্যাম্পে, তিন লক্ষ শ্রমিকের আবাসস্থলে। দুবাইয়ের কাঁচ ঝলমলে অট্টালিকাগুলো থেকে বেশ খানিকটা দূরে এই সোনার শহর!

কাজ শেষ করে “সোনাপুর লেবার ক্যাম্প”-এ ফিরছেন শ্রমিকরা

শাহিন আল মনির, বাংলাদেশের ২৪ বছর বয়সী এক ভবন শ্রমিক। চার বছর আগে তার কাছে এক দালাল গিয়েছিলেন দুবাইয়ে আসার প্রস্তাব নিয়ে, “প্রতিমাসে চল্লিশ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ করে দিচ্ছি আপনাকে, মাত্র সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। ভালো খাবার, ভালো থাকার জায়গা আর ভালো সুযোগ-সুবিধাও, একেবারে স্বপ্নের শহর। আপনাকে আপাতত মাত্র দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিলেই চলবে, ওয়ার্ক ভিসা তৈরির জন্য এই টাকাটা লাগবে। মাত্র ছয় মাসেই টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন।” শাহিন আল মনির প্রস্তাবে রাজিও হয়ে গেলেন। নিজের জায়গা-জমি বিক্রি করে, মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পাড়ি জমালেন স্বর্গের শহরের উদ্দেশ্যে।

দুবাইয়ের লম্বা এয়ারপোর্টে পা রাখতেই স্বর্গের আসল চেহারা প্রকাশ পেল, কেড়ে নেওয়া হলো মনিরের সবুজ পাসপোর্ট। টাকার অঙ্কটা ৪০ হাজার থেকে নেমে হয়ে গেল ৯ হাজার, আর কাজের সময়ের ঘন্টা বেড়ে ১৪ ঘন্টা। আবার শোনা যাক, মাত্র ৯ হাজার টাকা ১৪ ঘন্টা কাজের জন্য! তাও ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, সাথে ধূলিঝড় হাবুবের বাদামী আতঙ্ক তো রয়েছেই। “পছন্দ হয়নি? ফিরে যাও।” কিন্তু মনিরের মতো দুবাইয়ের ৭.৫% বাংলাদেশী ফিরে যাবেই বা কীভাবে? পাসপোর্ট তো পড়ে রয়েছে কোম্পানির লকার রুমের কোন কোণায়। আর ৯ হাজার টাকা দিয়ে “ফ্লাই এমিরেটস”-এর ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেনাও আকাশে বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখার মতো।

মনিরের আর কিই বা করার আছে? তার পরিবারের লোকেরা ভাবছে বিদেশের কোন স্বর্গে তার ছেলে রয়েছে, আর এদিকে মনির দুই বছর বেগার খেটে মরছে তার খরচ পরিশোধের জন্য। তাও টাকার অঙ্কটা বাংলাদেশে সে যা আয় করত তার চেয়েও কম।

সোনাপুরের লেবার ক্যাম্পের দিকে এবার একটু চোখ ফেরানো যাক। অন্ধকার, ছোট্ট এক গুহার মতো রুমে চারটি ট্রিপল-ডেকার বাঙ্কারে মনিরের সহযোগী আরও ১১ জন শ্রমিক। তীব্র গরমে অজ্ঞান হয়ে যদি এসির সুখস্বপ্ন দেখা যায় তবুও ভাল, কারণ ফিলিপ ডিয়েলের আবিষ্কার করা ইলেকট্রিক ফ্যানের গরম বাতাসও মনিরের মতো লাখো শ্রমিকের জন্য পরম আরাধনার বস্তু! এমনকি ভেন্টিলেটরের মৃদু বাতাসও যেন গায়ে না লাগে সেজন্য ভেন্টিলেটরও বানানো হয়নি! প্রাচীনকালের রোমান-গ্রিকরাও বোধহয় এরচেয়েও হাজার গুণ ভাল ছিল।

শ্রমিকদের থাকার জায়গা

গরমে পানির তেষ্টায় মরে যাচ্ছেন? বিশাল বিশাল সাদা রঙের কন্টেইনার একেবারে চোখের সামনেই রয়েছে। ট্যাপ খুলে আঁজলা ভরে পানি মুখে নিতেই বিতৃষ্ণায় মুখ থেকে পানি ফেলে দিতে হবে, পারস্য উপসাগরের টলটলে নীল পানিতে লবণের মাত্রাটা খুব একটা কমেনি যে! কিন্তু কি আর করার, বেঁচে থাকতে হলে সাগরের পানি খেয়েই জীবন বাঁচাতে হবে।

চোদ্দ ঘন্টা কাজের একটু বিবরণ দেওয়া যাক। শাহিন আল মনির বাস্তবেই আকাশে বাড়ি বানাচ্ছেন। হেঁটে বেড়াচ্ছেন ৬৭ তলা উপরে, কিন্তু কাজটা কী? প্রতি দফায় ৫০ কেজি করে ইট-সিমেন্ট আনা-নেওয়া, যা করতে হলে স্বয়ং হারকিউলিসও হাল ছেড়ে দিত!

দুবাই শহরের কারিগরেরা

কাজ করবেন না? রাগ দেখাবেন? অট্টালিকা থেকে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিবেন? কয়েকদিন আগেও কিছু শ্রমিক চার মাসের প্রাপ্য বেতন না দেওয়ায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। দুইদিন পরেই তাদের আবারও দেখা গেল আকাশে টাওয়ার বানাতে, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে ফেলে ওয়াটার ক্যাননের নিরবিচ্ছিন্ন জলপ্রবাহ আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়? পদ্মা-যমুনার ঠান্ডা পানি থেকে দুবাইয়ের ফুটন্ত কড়াইয়ে পা দেওয়া এসব শ্রমিক তাই বিল্ডিং-এর রেলিং থেকে আসফাল্ট দিয়ে মোড়ানো ধূসর রাস্তায় লাফ দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তারপর নামের পাশে লাল কালি দিয়ে লিখে রাখা হয়, “ডেথ বাই অ্যাকসিডেন্ট”! ২০০৫ সালে ভারতের এমব্যাসি এক বছরে ৯৭৮ জন আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ করার পর দুবাই কর্তৃপক্ষ তাদের গোণার আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেন, মানে গোণার সুযোগটুকুও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

লাফ দেওয়ার আগেও যদি জীবনের শেষ হাসিটা হেসে যান, তবে করুণা ছাড়া আর কিছুই দেখানোর বাকি নেই। বুর্জ খলিফার চূড়া ছাড়িয়ে আরও উপরে উঠে যাওয়া ব্যক্তিটির রেখে যাওয়া ঋণগুলো তখন চেপে বসবে হাজার মাইল দূরে থাকা তার বুড়ো বাবা-মা, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কিংবা স্ত্রীর ঘাড়ে! পরিশোধ না করলে শ্রীঘরের বাতাসটা তো রয়েছেই, তবে সেগুলোও দুবাইয়ের তুলনায় রীতিমত স্বর্গ।

গোধূলির সোনালী আলোয় দেখা যাবে শাহিন আল মনিরের মত শ্রমিকরা গলায় স্পিরিট ঢালছেন আর নিশ্চল অসাড় অবস্থায় শুয়ে শুয়ে দেখছেন নিজ হাতে গড়া জ্বলজ্বলে দুবাইয়ের আলো।

গৃহকর্মী নাকি কৃতদাসিনী?

আপনি যদি ঘরের কাজকর্মের জন্য একজন গৃহকর্মী নিয়োগ করতে চান, তবে খুঁজবেন সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দেওয়া ব্যক্তিকেই। আর দুবাইয়ের মতো “আন্তর্জাতিক শহর”-এ মানুষের মর্যাদা নির্ভর করবে তার গায়ের রঙ-এর উপরে। এখানে একজন ইউরোপিয়ানকে যে টাকা দেওয়া হয়, একজন ফিলিপিনোকে সেই একই কাজের জন্য দেওয়া হবে তার চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তবুও, ফিলিপিনোরা তাদের গায়ের চামড়ার কারণে গৃহকর্মী হিসেবে একটু বেশিই দামী। তবে? ভারতীয়দের চেয়েও গায়ের চামড়া কালো এরকম কাউকে খুঁজে বের করাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী, আর একারণে দুবাইবাসীর নতুন আকর্ষণ আফ্রিকান নারীরা।

“দ্য মেট্রোপোলিস অব দুবাই”-এর এক কোণায় চোখে পড়বে মহিলা হোস্টেল; মহিলা হোস্টেল বললে ভুল হবে, পালানো গৃহকর্মীদের থাকার জায়গা। সেখানেই চোখে পড়বে মেলা মাতারির মতো হাজারো আফ্রিকান-ভারতীয় নারী। মেলা মাতারি, ২৫ বছর বয়সী এই ইথিওপিয়ান নারীর গন্তব্য কীভাবে দুবাই হলো সেই গল্পটাই শোনা যাক। শুরু করা যাক আরব্য রজনীর দ্বিতীয় দুঃস্বপ্নের রাত।

লোহিত সাগরের ওপাশের বালির সমুদ্রের ভেতর গড়ে ওঠা স্বর্গের কথা শুনেছিলেন এক এজেন্সির কাছে, সেই এজেন্সিই দুবাইয়ে আসার সব ব্যবস্থা করে দেয়। চার বছরের মেয়েকে ছেড়ে উন্নত জীবনযাপনের আশায় দুবাইয়ে নামার পর বেতনের অঙ্ক নেমে আসে অর্ধেকে! মেলাকে চাকরি দেওয়া হয় এক অস্ট্রেলীয় পরিবারের কাছে। চার সন্তানের জননী সেই অস্ট্রেলীয় গৃহকর্ত্রী মেলাকে দিয়ে কাজ করাতে থাকেন ভোর ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত! সপ্তাহের ছুটি? সে তো স্বপ্ন। বিশ্রামের কথা বলতে গেলেই কপালে জুটত লাথি-ঘুষি। টাকা চাইতে গেলেই তো আরও অবস্থা খারাপ হয়ে যেত, ঘোষণা করলেন দুই বছর শেষে একবারে দেওয়া হবে। শেষমেশ মারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় নেমে পড়েন মেলা। টানা দুইদিন রাস্তায় হেঁটে ভাঙাভাঙা ইংরেজিতে প্রশ্ন করে খুঁজে বের করেন ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূতকে। কিন্তু তিনিই বা কি করবেন? পাসপোর্ট ছাড়া মেলাকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। বলাই বাহুল্য, গৃহকর্মী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পর তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করানো যায়! অন্তত দুবাইয়ে এটাই নিয়ম। পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে তাকে আটকে রেখে সারাজীবনের জন্য নরকজীবন ভোগ করানোর ইচ্ছা থাকলে সেটাও করানো অসম্ভব কিছু নয়। মেলার মতো হাজারো নারীদের মুখ থেকে তাই একটা কথাই বের হয়, “আমি আমার দেশকে হারিয়েছি, আমার মেয়েকে হারিয়েছি, হারিয়েছি সবকিছুই!”

অপরদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের ধনকুবেরদের জন্য দুবাই আসলেই একটি স্বর্গ। তাদের ভাষ্যমতে, “দুবাইয়ের সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো দাস ব্যবস্থা! নিজেকে কিছুই করতে হবে না, তারাই সবকিছু করবে!”

“আমি যদি ধরা পড়ি, তারা আমাকে ধরে নিয়ে জেলে পুরে দিবে” – পালিয়ে যাওয়া এক গৃহকর্মী

Related Articles