Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উত্তর কোরিয়া আরও পারমাণবিক জ্বালানি তৈরি করছে বলে সন্দেহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিক গোপন স্থানে জ্বালানি উৎপাদন বাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত আলোচনায় নিরস্ত্রীকরণের শর্তের কারণে এগুলো লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে পারে বলে এনবিসি নিউজের বরাত দিয়ে প্রকাশ করেছে রয়টার্স

গত শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দাদের যে বিশ্লেষণের কথা বলা হয়েছে, তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবেগী বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গত ১২ জুন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে সম্মেলনের পরে ট্রাম্প টুইটারে টুইট করেন, “উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আর কোনো পারমাণবিক হুমকি নেই।

সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন; Image Source: Jonathan Ernst | Reuters

এনবিসি পাঁচজন অজ্ঞাত মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত কূটনৈতিক আলোচনায় সাথে জড়িত থাকার পরেও এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

নেটওয়ার্কটি মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানায়, গোয়েন্দারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ইয়ংবিয়নে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনের রিয়্যাক্টর ছাড়াও এর বাইরে একাধিক গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। এনবিসি এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি তুলে ধরে যাতে বলা হয়, “তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে এমন একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

সিআইএ এনবিসির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, তারা ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারেনি এবং গোয়েন্দা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। হোয়াইট হাউসও এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের প্রতি কোনো সাড়া দেয়নি।

ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ অবলোকন করছেন কিম; Image Source: Financial Tribune

এনবিসির প্রতিবেদনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকি স্বরূপ অস্ত্র বর্জনের ব্যাপারে গুরুতর আলোচনায় অংশগ্রহণে উত্তর কোরিয়ার প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যদিও সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্প খুব আশাবাদী ছিলেন। এনবিসি এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলে, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত উত্তর কোরিয়ার সিদ্ধান্তটি অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে উভয় পক্ষের আলোচনায় বসা আসলেই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। তিনি আরও জানান, “কাজের সংখ্যা দিয়ে স্থানের, অস্ত্রের ও ক্ষেপণাস্ত্র সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রতারণা করা হবে। … আমরা কাছে থেকে অবলোকন করছি। 

ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ইস্ট এশিয়া ননপ্রলিফারেশন প্রোগ্রামের পরিচালক জেফরি লুইস বলেন, এনবিসি রিপোর্টে দুটি আকর্ষণীয় দিক আছে। তিনি জানান,দীর্ঘদিন ধরেই বোঝা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ায় ইয়ংবিয়ন ছাড়াও পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধ করার জন্য কমপক্ষে আরও একটি পারমাণবিক রিয়্যাক্টর রয়েছে।

কিম ইয়ং চোল ও মাইক পম্পেও; Image Source: REUTERS/Mike Segar

এই মূল্যায়নের পর বোঝা যাচ্ছে, সেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য একাধিক গোপন সাইট রয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সেখানে কম করে হলেও অন্তত তিনটি সাইট আছে। লুইস বলেন, এই প্রতিবেদনটি আরও ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে যে উত্তর কোরিয়া এক বা একাধিক সমৃদ্ধ সাইটের ব্যাপারটি প্রকাশ করতে চায়নি। তিনি বলেন, “এই দুটি ব্যাপার একসাথে নির্দেশ করে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে কিছু সাইট প্রকাশ করেছে এবং বাকিগুলো বজায় রেখেছে।

সিঙ্গাপুর সম্মেলনে উত্তর কোরিয়া কোরীয় উপদ্বীপের সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হয়েছে। তবে কিম জং উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরকৃত এক যৌথ বিবৃতিতে পিয়ংইয়ং তার পারমাণবিক অস্ত্র কীভাবে বা কখন আত্মসমর্পণ করতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। সম্মেলনের আগে উত্তর কোরিয়া একতরফাভাবে অস্ত্র ত্যাগ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কেননা তাদের কাছে এটি মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি অপরিহার্য প্রতিরোধ।

উত্তর কোরিয়ার সামরিকবাহিনী প্রদর্শনে কিম; Image Source: KCNA via REuters

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত সপ্তাহে বলেছেন, তিনি ট্রাম্প-কিম সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেক বিলম্ব হওয়ার আগেই উত্তর কোরিয়া ফিরে গিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবেন। গত বৃহস্পতিবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পম্পেও আগামী সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে কোরিয়া সংক্রান্ত সিআইএর সাবেক বিশেষজ্ঞ ব্রুস ক্লিগনার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উত্তর কোরিয়া আর কোনো পারমাণবিক হুমকি বহন করে না, এনবিসি কর্তৃক ট্রাম্পের এই বিবৃতি ব্যবহার উদ্ভট ছিল এবং তথ্যগুলো যাচাইকরণের ব্যাপারে বিস্তারিত কাজের প্রয়োজন রয়েছে।

এই সপ্তাহে ওয়াশিংটন ভিত্তিক উত্তর কোরিয়া পর্যবেক্ষণ প্রকল্প ৩৮ এর মতে, সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রাবলী অনুযায়ী ৬ মে তারিখের পর থেকে ইয়ংবিয়নে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সংক্রান্ত বিষয়গুলো খুব দ্রুত উন্নত করছে। তবে ১২ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্মেলনের পরে এ কাজ অব্যাহত ছিল কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না এটি।

সিঙ্গাপুর সম্মেলনের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করছেন কিম-ট্রাম্প; Image Source: Jonathan Ernst/Reuters

যদিও উত্তর কোরিয়ার পূর্ববর্তী নেতারা পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি বেশ কয়েকবার ভঙ্গ করেছে, তবুও এনবিসির প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট কিছু প্রমাণের অভাব দেখা যায়। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার কোনো নাম প্রকাশ না করায় হয়তো এ সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিস্তারিত প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে না পারলেও তথ্যগুলো পুরোপুরি ফেলে দেওয়ার মতো না।

উত্তর কোরিয়ার দেওয়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি তারা কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই নিরস্ত্রীকরণের অর্থ দু’দেশের কাছে দু’রকম হতে পারে। একতরফাভাবে সকল অস্ত্র বর্জন করার ব্যাপারটি আসলে কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনার জন্য কোনো উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে সম্মেলন করেছেন। তবে বিশ্বশান্তির কথা মাথায় রেখে দুই নেতার কাছে পরিণত পদক্ষেপ আশা করে বিশ্ববাসী।

Featured Image Source: KCNA/via Reuters

Related Articles