Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানবদেহের বিভিন্ন অংশের অদ্ভুত যত ব্যবহার

‘সৃজনশীলতা’ এমন একটি বিষয় যা আসলে কখনোই সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। সমাজের আর আট-দশজন মানুষ একটি সাধারণ জিনিসকে যতটা সাধারণ হিসেবে দেখে, একজন সৃজনশীল মানুষ সেই সাধারণের ভেতর থেকেও বের করে আনতে পারেন অসাধারণ কোনোকিছু। আর ঠিক এ জায়গাটিতেই তাদের সাথে আমজনতার বিস্তর ফারাক তৈরি হয়ে যায়।

এই যেমন মানবদেহের দাঁত, নখ কিংবা মলমূত্রের কথাই চিন্তা করা যাক। এগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা হলো- “দাঁত দিয়ে খাবার চিবাবো, নখ কেটে ফেলে দিবো, মলমূত্র ত্যাগের পর টয়লেট ঠিকমতো পরিষ্কার করবো।” কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা ঠিক এভাবে চিন্তা করতে চান নি। ‘Think outside the box’ কথাটির মতোই আমাদের মানবদেহের পরিচিত নানা অংশের এমন সব উদ্ভট ব্যবহার তারা নিয়ে এসেছিলেন, যা দেখলে আসলেই অবাক হতে হয়।

আমাদের অত্যন্ত পরিচিত কিছু জিনিসের তেমনি কিছু ব্যতিক্রম ব্যবহারের কথা জানাতেই আজকের এ লেখার অবতারণা।

নখ

আচ্ছা, হাত-পায়ের নখগুলো বড় হয়ে গেলে কী করেন আপনি? নেইল কাটার কিংবা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেন, তাই না? কাটার পর কী করেন? সুন্দর করে ময়লার ঝুড়িতে সেগুলোকে স্থানান্তর করে দেন, তাই তো?

রাচেলের নখশিল্প

কিন্তু কিছু মানুষ এই ফেলে দেয়া নখের মাঝেও খুঁজে পেয়েছে অমিত সম্ভাবনা, অর্থোপার্জনের সম্ভাবনা! উদাহরণস্বরুপ বেথেলহেমের ৩১ বছর বয়সী রাচেল বেটি কেসের কথা ধরা যায়। সবাইকে নখ কেটে ফেলে দিতে দেখে তার মনে হলো, “আরে, এগুলো দিয়েও তো কিছু একটা করা যায়!” যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। আর এই কাজের ফসল হিসেবে পাওয়া গেলো নখ দিয়ে তৈরি চমৎকার বিভিন্ন পোকামাকড় আর জীবজন্তুর সন্ধান। কেউ কি এমনটা ভাবতে পেরেছে কখনো?

মাইকের পেপারওয়েট

রাচেলের কথা বললে মাইক ড্রেক নামক সাতচল্লিশ বছর বয়সী আরেক নখশিল্পীর কথাও বলতে হবে। প্রায় এক যুগ ধরে নিজের হাতের নখ ব্যবহার করে অসাধারণ পেপারওয়েট বানিয়ে চলেছেন তিনি। আর সেসব পেপারওয়েটও অনেক দামী। দাম কত শুনবেন? প্রতিটির দাম ৩০০ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার! অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় চব্বিশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার টাকা প্রায়! সামনের বার নখ কাটার পর ময়লার ঝুড়িতে ফেলার আগে একটু ভেবে নিবেন কি?

দাঁত

দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদভ্যাস অনেকেরই আছে। শুরুতে যেহেতু নখ নিয়ে কথা হলো, এবার তাই নজরটা দাঁতের দিকেই ফেরানো যাক।

যেকোনো খাদ্যদ্রব্য চিবানোর অপরিহার্য এ অঙ্গটি কিন্তু অলঙ্কার হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এমনকি দাঁত দিয়ে তৈরি অলঙ্কার বিক্রি করে অনেকে তাদের জীবিকা নির্বাহও করে থাকে। বিভিন্ন রকম অলঙ্কারেই দাঁতের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় বাচ্চাদের দাঁতের কথা। যেসব মায়েরা তাদের বাচ্চাদের শৈশবের স্মৃতি ধরে রাখতে চান, তাদের মাঝেই কেউ কেউ এমন অদ্ভুত পন্থাটি বেছে নেন। অনেকে আবার দাঁত দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছে কানের দুল, নেকলেসের মতো গয়নাও!

লুকাসের দেয়া এঙ্গেজমেন্ট রিং

কনের হাতে শোভা পাচ্ছে বিচিত্র সেই আংটি

২০১৫ সালে কানাডার লুকাস আঙ্গার তো করে বসেন সবচেয়ে অদ্ভুত কাজটিই। তিনি তার বাগদত্তা কার্লি লীফকেসকে যে এঙ্গেজমেন্ট রিংটি উপহার দিয়েছিলেন, সেটা আসলে তারই আক্কেল দাঁত দিয়ে বানানো ছিলো। এজন্য প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও তাদের কম সহ্য করতে হয় নি।

হাড়

মৃত্যুর দীর্ঘদিন পরেও মানবদেহের যে অংশটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তা হলো হাড়। তাই এটা যে বিচিত্র কাজে ব্যবহৃত হবে, তাতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে?

কাংলিং

মানব ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ই বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের হাড়। তিব্বতে বৌদ্ধদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ‘কাংলিং’ নামে এক ধরনের বাঁশি ব্যবহার করা হয় যা বানানো হয় মানুষের ফিমার থেকে।

মধ্য আফ্রিকায় এক প্রকারের বীণার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যা বানানো হয়েছিলো মানুষের খুলি দিয়ে। এছাড়া অ্যাজটেক সভ্যতায় ‘omichicahuatztli’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হতো যা প্রস্তুতিতেও মানবদেহের হাড়ই ছিলো ভরসা।

মূত্র

প্রকৃতির ছোট ডাকে বিসর্জনের মাঝে যে কী সুখ আছে, তা যে যখন এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে থাকে, সে তখন খুব ভালো করেই অনুভব করতে পারে। কাজটা সারার পর টয়লেট থেকে বের হয়েই দায়িত্ব শেষ আমাদের। কিন্তু সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা ভেবেছেন একটু বাড়তি কিছু।

এখন যে ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি তা অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা। ২০১৭ সালে এক ড্যানিশ মদ চোলাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা তাদের ‘পিসনার’ নামক নতুন ধরনের বিয়ারটি তৈরি করতে ব্যবহার করে মানবমূত্র! তবে পিসনারে সরাসরি মূত্র ঢেলে দেয়া হয় না। বিয়ারটি তৈরিতে যে বার্লি ব্যবহার করা হয়, সেটিরই প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি ধাপে মূত্রকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে।

বিয়ার তৈরির আগে প্রথম কাজটি হলো বার্লির মন্ড তৈরি করা। এজন্য এটিকে পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রথমে নরম করা হয়। তবে পিসনারে এ ধাপে ব্যবহার করা হয় মানবমূত্র। এটি বার্লিতে থাকা স্টার্চকে স্যুগারে পরিণত হতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে এ মন্ডকে পানির সাথে মিশিয়ে আরো উত্তপ্ত করার ফলে যে মিশ্রণ পাওয়া যায়, তাকে বলে ওয়ার্ট। এ ধাপে স্টার্চের স্যুগারে সংশ্লেষণ আরো বৃদ্ধি পায়।

এরপর এই মিশ্রণকে আরো উত্তপ্ত করে এর সাথে এক ধরনের ফল মেশানো হয় যা বিয়ারটিতে তিক্ত স্বাদ এনে দেয়। এবার মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করে গাজনের জন্য সপ্তাহখানেক রেখে দেয়া হয়। সব শেষে মিশ্রণটিকে পরিষ্কার করে বোতলজাতকরণের মাধ্যমেই গ্রাহকের হাতে চলে যায় পিসনার বিয়ার।

মানববিষ্ঠা

প্রকৃতির ছোট ডাকের কথা যদি বলি, তাহলে বড় ডাকের কথাই বা বাদ যাবে কেন? কারণ ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ কথাটির মর্ম তো এ ডাকে সাড়া দিয়ে খালাস হওয়ার মাধ্যমেই সবচেয়ে ভালভাবে পাওয়া সম্ভব!

দুনিয়াতে কিছু মানুষ আছে, যারা মনে হয় তাদের আশেপাশে পাওয়া সবকিছুকেই কাজে লাগাতে চায়। এ আকাংখা থেকে বাদ যায় নি মানববিষ্ঠাও। ২০১১ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, জাপানের একদল বিজ্ঞানী এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে মানববিষ্ঠাকে সংশ্লেষণ করে তৈরি করা সম্ভব মাংস!

অদ্ভুত কথাই বটে। কিন্তু যেখানে সরাসরি আমাদের মাংস দেয়ার জন্য গরু, ছাগল, হাস, মুরগির মতো প্রাণী আছে, সেখানে হঠাৎ করে বিষ্ঠার মতো জিনিসের দ্বারস্থ হতে হলো কেন? এর পেছনে নাকি দুটি কারণ ছিলো। প্রথমত, টোকিও নগরীর জনসংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় তা সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছিলো। নর্দমাগুলো নাকি এককথায় ভরে উঠেছিলো মানববিষ্ঠায়! এজন্য সেগুলোকে অপসারণের একটি কার্যকর উপায় ছিলো এটি। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত এ জনসংখ্যার জন্য অন্ন সংস্থানও ছিলো বেশ ঝামেলার একটি ব্যাপার। স্টীক সস, সয়া ও মানববিষ্ঠার সমন্বয়ে তৈরি সেই কৃত্রিম মাংস অন্নের ঝামেলাও মেটাবে বলে বিশ্বাস করেছিলেন গবেষকেরা!

অবশ্য এ রিপোর্টটি কতখানি সত্য এবং সত্য হলেও আসলেই কি মানববিষ্ঠা থেকে এমন কৃত্রিম মাংস প্রস্তুত করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করেছিলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। নিচের ইউটিউব ভিডিও থেকেই এ খবরটি ছড়িয়ে পড়েছিলো সবদিকে।

বীর্য

এতক্ষণ মানবদেহের যতগুলো অঙ্গ কিংবা মানবদেহ থেকে প্রাপ্ত যতগুলো পদার্থের কথা বললাম, সেগুলোর মধ্যে এটি নিয়ে কাহিনীই সম্ভবত সবচেয়ে ঘিনঘিনে লাগবে সবার কাছে। কারণ অতি উৎসাহী কিছু মানুষ বেডরুমের একান্ত সময়ের এ পদার্থটিকেই নিয়ে এসেছে রান্নাঘরে!

ইন্টারনেট ঘাটালে বীর্য দিয়ে খাবার প্রস্তুতির বিভিন্ন রেসিপিরই সন্ধান মিলবে। সেসব রেসিপিতে জিনিসটিকে পুষ্টিকর (!), সস্তা (!!), সহজপ্রাপ্য (!!!) ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ Natural Harvest: A Collection of Semen-Based Recipes বইটির কথা উল্লেখ করা যায়।

অ্যামাজনে বইটি সম্পর্কে লেখা আছে, “Semen is not only nutritious, but it also has a wonderful texture and amazing cooking properties. Like fine wine and cheeses, the taste of semen is complex and dynamic. Semen is inexpensive to produce and is commonly available in many… Once you overcome any initial hesitation, you will be surprised to learn how wonderful semen is in the kitchen. Semen is an exciting ingredient that can give every dish you make an interesting twist. If you are a passionate cook and are not afraid to experiment with new ingredients – you will love this cookbook!

তথ্যসূত্র

১) lehighvalleylive.com/entertainment-general/index.ssf/2010/07/meet_the_artist_rachel_betty_c.html

২) odditycentral.com/art/man-turns-decade-worth-of-fingernail-clippings-into-what-he-calls-art.html#more-49780

৩) abcnews.go.com/Lifestyle/canada-man-proposes-girlfriend-engagement-ring-made-wisdom/story?id=349

৪) metmuseum.org/blogs/of-note/2014/skull-lyre

৫) forbes.com/sites/nadiaarumugam/2011/07/08/meat-made-from-human-feces-hoax-or-japans-best-new-invention/#62cf2d1c6d9e

৬) amazon.com/Natural-Harvest-collection-semen-based-recipes/dp/1481227041

৭) listverse.com/2017/05/12/10-bizarre-ways-the-human-body-is-used/

 

Related Articles