Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে গোপনীয় ও সুরক্ষিত আটটি ভল্ট

ধন-সম্পদ আর মূল্যবান তথ্য যাতে কোনোভাবেই হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যাঙ্কে টাকা রেখে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ব্রিফকেসে বন্দী করে আমরা নির্ভার থাকলেও বৃহত্তর পর্যায়ে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তখনই চলে আসে বৃহৎ পরিসরে সেসব অর্থ আর তথ্যাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। এ সুরক্ষা দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রকমের ভল্ট, যেগুলোর নিরাপত্তার নানা স্তরের কথা শুনলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। তেমনি আটটি ভল্টের বর্ণনা দিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এ লেখা।

১) ফোর্ট নক্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট নক্স আর্মি পোস্টে রয়েছে দেশটির স্বর্ণের বিশাল বড় মজুত। স্থানের নামের সাথে মিলিয়ে এই ভল্টটিও ফোর্ট নক্স নামেই সুপরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুত রয়েছে এই যুক্তরাষ্ট্রেই (৮,১৩৩ মেট্রিক টন)। এর মাঝে অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে এই ফোর্ট নক্স ভল্টেই (৪,৫৮২ মেট্রিক টন)। ধারণা করা হয়, মানবজাতির ইতিহাসে আজপর্যন্ত যত স্বর্ণ পরিশোধিত হয়েছে, তার ২.৩% রয়েছে ফোর্ট নক্সে। এত বিপুল পরিমাণ সোনা মজুত রয়েছে যে ভল্টে, সেখানে যে নিরাপত্তার মাত্রাও হবে কল্পনাতীত, সেটা বোধহয় না বললেও চলে।

Source: Wikimedia Commons

বেশ কয়েক ধাপের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা এ ভল্টের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে দেশটির মিন্ট পুলিশ বাহিনী, যাদের কাজই হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও টাঁকশাল পাহারা দেয়া। বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফোর্ট নক্সের ভল্টের কাছেই রয়েছে সেনাবাহিনীর অবস্থান, যাতে করে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণের শিকার হলেও দরকারি সাপোর্ট দেয়া যায়। এর চারদিকের নিরাপত্তার বলয়ের কথা জানলে বিস্ময়ে মুখ হাঁ হয়ে যেতে বাধ্য। কাঁটাতারের বেড়া, এলার্ম, ভিডিও ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, মাইন ফিল্ড, বিদ্যুতায়িত বেড়া এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত প্রহরীরা সর্বদাই রয়েছে এর চারদিকে।

Source: diepresse.com

ভুলেও গ্রানাইটের দেয়াল উড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবতে যাবেন না যেন, কারণ চার ফুট পুরু দেয়ালগুলোর শক্তি বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে ৭৫০ টন ইস্পাত! যদি ভেতরে থাকা অজস্র ভিডিও ক্যামেরা আর সৈন্যদের নজর এড়িয়ে আপনি ভল্টের মূল দরজার কাছে একবার যেতেও পারেন, তাহলে এরপর কী করবেন সেটাও হবে বেশ চিন্তার বিষয়। কারণ তখন আপনার সামনে থাকবে ভল্টের দরজা, যার ভর প্রায় ২০ টন এবং পুরুত্ব ২১ ইঞ্চি! দরজা খুলতে চান? তাহলে লাগবে লক কম্বিনেশন। মজার বিষয় হলো, অতিরিক্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লক কম্বিনেশনের পুরোটা জানানো হয় নি কাউকেই। বেশ কয়েকজন কর্মী আলাদা আলাদাভাবে কম্বিনেশনের বিভিন্ন অংশ জানে। তাদের একসাথে আনা সম্ভব হলেই কেবল এই ভল্টের দরজা খোলা যাবে।

দরজা খুললেই কিন্তু শেষ না। এরপর আরো সুরক্ষা দিতে ভেতরে রাখা হয়েছে আরো ছোট ছোট ভল্ট! ধরা যাক, সব বাধা ডিঙিয়ে আপনি ঠিকই সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টনের এ স্বর্ণ ভাণ্ডার থেকে কিছু নিয়ে যেতে সক্ষম হলেন। কিন্তু এরপর বেরোবেন কীভাবে? কারণ ততক্ষণে যে সেনা ছাউনী থেকে বেরিয়ে আসবে প্রায় হাজার ত্রিশেক সেনা, গোলাবারুদ, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক এবং এমনই আরো অনেক কিছু। প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বুকে ধারণ করা এই ভল্টে হামলা করার আগে কেউ অগণিতবার ভাববে বৈকি!

২) ভালবার্দ গ্লোবাল সীড ভল্ট

Source: croptrust.org

ফোর্ট নক্সের মতো ভালবার্দে নেই কোনো স্বর্ণের মজুত। বরং এখানে রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকে আনা বীজের নমুনা। নরওয়ের স্পিটসবার্গেন দ্বীপটি আর্কটিক ভালবার্দ দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত। উত্তর মেরু থেকে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ দ্বীপেই রয়েছে ভালবার্দ সীড ভল্ট। প্রায় ৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যায়ে নির্মিত এ ভল্ট নির্মাণের পুরো খরচ বহন করেছে নরওয়ের সরকার। ব্যবহারকারীরা (মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গবেষকগণ) চাইলে এখানে তাদের নমুনা বীজ সংরক্ষণের জন্য পাঠাতে পারেন, সংরক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করবে নরওয়ের সরকার এবং ক্রপ ট্রাস্ট নামক একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা। ক্রপ ট্রাস্ট চালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আসে বিভিন্ন ফাউন্ডেশন থেকে, যেগুলোর মাঝে রয়েছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও এটি চালানোর জন্য অর্থ দিয়ে থাকে।

Source: resilience.org

কেন এত বিশাল অর্থ খরচ করে এমন একটি সীড ভল্ট বানানো হলো? ভয়াবহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে যদি হুমকির মুখে পড়ে যায় বিশ্বের গাছপালা ও দরকারি খাদ্যশস্যের অস্তিত্ব, তাহলে নতুন করে সেই গাছ বা ফসলের বংশবিস্তার করতে যাতে খুব একটা বেগ পেতে না হয়, সেজন্যই গড়ে তোলা হয়েছে এ ভল্টটি। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২,৬৮,০০০ নমুনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ ভল্ট। পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বীজ ধারণ ক্ষমতার এ ভল্টে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী মোট ৯,৩০,৮২১টি বীজ রয়েছে। আজকের লেখার বিষয় যেহেতু সুরক্ষিত ভল্ট নিয়ে, এবার তাই এ ভল্টের নিরাপত্তার মাত্রা সম্পর্কে জানা যাক।

Source: Glamox

স্পিটসবার্গেন দ্বীপের একটি পাহাড়ের ৩৯০ ফুট অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে এই ভল্ট। বীজগুলোকে রাখা হয় বিশেষভাবে বানানো তিন স্তরের প্যাকেটের ভেতর। সেখানে তাপমাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন আর্দ্রতা কোনোভাবে বীজের ক্ষতি করতে না পারে। এ দ্বীপ বেছে নেয়ার অন্যতম বড় কারণ হলো এখানে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কম। শুধু তা-ই না, আশেপাশে হিমায়িত অঞ্চল থাকায় বীজগুলোর সংরক্ষণের জন্যও তা মারাত্মক রকমের সহায়ক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভল্টটি ৪৩০ ফুট উঁচুতে বানানো হয়েছে, যেন বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও কোনো দুশ্চিন্তা না থাকে। এর ভেতরের তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি কোনো কারণে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি নষ্টও হয়ে যায়, তারপরও তাপমাত্রা -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছুতে সময় লাগবে কয়েক সপ্তাহ, যা আসলে ভল্টটির আশেপাশের বরফের তাপমাত্রার সমান। তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে লেগে যাবে প্রায় দু’শতক!

৩) মর্মন ভল্ট

চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ লেটার ডে সেইন্টস হলো গ্রানাইট মাউন্টেন রেকর্ডস ভল্ট নামে পরিচিত মর্মন ভল্টের মালিক। লিটল কটনউড ক্যানিয়নে পাথরের ৬০০ ফুট গভীরে বানানো এ ভল্টে ডিনামাইট ফুটিয়েও ভেতরে ঢোকার চিন্তা করা যাবে না। কারণ এটা এমনভাবে বানানো হয়েছে যেন পারমাণবিক বোমার আঘাতেও এর কিছুই না হয়। ভেতরে থাকা জিনিসপত্রের সুরক্ষার জন্য অত্যাধুনিক ও অতি-সুরক্ষিত আলাদা আলাদা ভল্ট তো আছেই। প্রশাসনিক কাজকারবার পরিচালনার জন্য কিছু অফিস আছে ভেতরে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চার্চের সদস্যরা পর্যন্ত এর ভেতরে ঢোকার অনুমতি পায় না!

Source: Mormon Newsroom

মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কী এমন আছে মর্মন ভল্টের ভেতরে যার জন্য একেবারে এত বিশাল মাপের সিকিউরিটি? ভল্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আসলে বংশতালিকা এবং চার্চের কিছু কাগজপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু এমন কিছু কাগজের জন্য এত বড় নিরাপত্তার আয়োজন! এটা অনেকেই মানতে নারাজ। সন্দেহবাদীদের মতে, সেখানে এমন কিছু জিনিস আছে যা হয়তো চার্চের সম্মান ক্ষুণ্ন করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে পুরো ধর্মটিকেই!

৪) পিওনেন বাঙ্কার

এ বাঙ্কারে বিভিন্ন রিটেইল কাস্টমারের কাছে নিরাপদ জায়গা ও ব্যান্ডউইডথ ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। পিওনেনের নাম আমাদের অনেকেরই জানার কথা না, তবে এর এক খদ্দের কিন্তু পুরো বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছে। কে সেই খদ্দের? জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস!

Source: atlasobscura.com

Source: atlasobscura.com

Source: atlasobscura.com

Source: atlasobscura.com

Source: atlasobscura.com

স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার এক নিউক্লিয়ার বাঙ্কারকে রুপান্তর করে বানানো হয়েছে পিওনেন বাঙ্কার। এ বাঙ্কারটি সুইডেনের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বাহ্‌নহফের মালিকানাধীন। অতিরিক্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখানে ৪০ সেন্টিমিটার পুরু ইস্পাতের দরজা ব্যবহার করা হয়েছে। যাওয়া-আসার জন্য এতে রয়েছে একটিমাত্র টানেল। হাইড্রোজেন বোমার আঘাতও যেন সহ্য করতে পারে, এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কারটি।

৫) ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভ

সপ্তদশ শতকে পোপ পঞ্চম পলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভ। ১৮৮১ সালে পোপ ত্রয়োদশ লিওর হাত ধরে গবেষকদের প্রবেশাধিকার মেলে এ আর্কাইভে। তবে তারাও সেখানে সবকিছু দেখার অনুমতি পান না, সেই সাথে মানতে হয় নানা নিয়মকানুন।

শিক্ষার্থী, সাংবাদিক কিংবা শখের বশে ইতিহাস চর্চাকারীদের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। কেবলমাত্র গবেষকরাই হতে পারবেন সেই সৌভাগ্যের অধিকারী। সেটাও আজীবনের জন্য নয়, ছয় মাস পর পর সেই প্রবেশাধিকার নবায়ন করতে হবে। আর এই প্রবেশাধিকার পেতে আগে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে যে, আপনার যা জানা দরকার, তা এই আর্কাইভে সংরক্ষিত বিষয়াদির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। একবার ঢুকতে পারলেই যে সব ডকুমেন্ট ঘাটানোর স্বাধীনতা পেয়ে গেলেন আপনি, সেটা কিন্তু না। একদিনে সর্বোচ্চ তিনটি ডকুমেন্ট দেখার অনুমতি মিলবে।

Source: Ancient Origins

কিছুক্ষণ ধরে ঘাটাঘাটির পরও একজন গবেষক যদি তার দরকারি জিনিসটির নাম সেখানে খুঁজে না পান, তাহলে তাকে ফিরে যেতে হয়। কারণ তার পরে সিরিয়ালে আরো অনেকেই অপেক্ষা করছে। ভেতরে কম্পিউটারের ব্যবস্থা থাকলেও নেই ছবি তোলার অনুমতি। তাই ভেতরে গেলে দেখা যাবে গবেষকেরা নিবিষ্ট চিত্তে দরকারি নোট টাইপ করে চলেছেন। সাধারণত ৭৫ বছর পরপর ভ্যাটিকানের এ গোপন সংগ্রহশালার বিভিন্ন ডকুমেন্ট জনসাধারণের দেখবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মানব ইতিহাসের অত্যন্ত গোপনীয় স্থানগুলোর মাঝে একটি হওয়ায় এটি সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। সেসব প্রশ্নের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • ৮৫ কিলোমিটার লম্বা তাকগুলো জুড়ে আসলে কী কী ডকুমেন্ট রাখা আছে? ওগুলো কি আসলেই এতটা গোপনীয় কোনো জিনিস?
  • ক্যাটালগই বা কেন ৩৫,০০০ ভলিউম জুড়ে বিস্তৃত থাকবে? কী এমন আছে সেই আর্কাইভে যে এত বড় ক্যাটালগের প্রয়োজন পড়লো?
  • ১৯৩৯ সালের পর থেকে আর কোনো ডকুমেন্টই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না! কেন? এরপর কী এমন ঘটনা ঘটেছিলো যার জন্য এত গোপনীয়তা?
  • ১৯২২ সালের পর থেকে কার্ডিনালদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কিত একটি পুরো অংশে প্রবেশাধিকার নেই কারো। কেন? কী এমন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সেসব কার্ডিনালরা যে এভাবে সবকিছু আড়ালে রেখে দিতে হবে?

৬) কেএফসি ভল্ট

কেএফসির লোগো; Source: Wikimedia Commons

আমেরিকান ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট চেইন কেএফসির খ্যাতি জগতজোড়া। তবে এটি যেহেতু একটি রেস্টুরেন্ট, তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ভল্টে কোনো ধন-সম্পদ কিংবা ধর্মীয় গোপন কোনো নথি থাকবে না। বরং এখানে রয়েছে কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্সের মূল রেসিপি, যা ব্যবহার করে তিনি ফ্রাইড চিকেন তৈরি করতেন। ২০০৯ সালে রেসিপিটি কেন্টাকিতে কেএফসির হেডকোয়ার্টারে আরো সুরক্ষিত এক ভল্টে স্থানান্তরিত করা হয়। যতদিন ভল্টটি বানানো হচ্ছিলো, ততদিন সেই রেসিপি এক অজানা জায়গায় লুকিয়ে রাখা ছিলো। এমনকি এটা যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া হতো, তখন একজন গার্ডের হাতে সুটকেসটা হাতকড়া পরিয়ে আটকে রাখা হতো, যেন সহজে কেড়েও নেয়া না যায়!

কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স; Source: Wikimedia Commons

বর্তমানে এই রেসিপিটি বেশ সুরক্ষিত অবস্থাতেই রয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা ক্যামেরা, মোশন ডিটেক্টর আর নিরাপত্তা প্রহরীদের নজরে থাকে এটি। পুরু কনক্রিটের স্লাব দিয়ে ভল্টটি ঘিরে রাখা। পুরো সিকিউরিটি সিস্টেমটির সাথে সংযোগ আছে ব্যাকআপ জেনারেটরের, যেন বিদ্যুৎ গেলেও নিরাপত্তার কোনো ত্রুটি দেখা না দেয়।

কোম্পানির কোনো কর্মকর্তাকে হাত করে রেসিপিটি হাতাবেন? সেই সুযোগও নেই। কারণ খোদ কোম্পানির প্রেসিডেন্টেরও হাত দেয়ার অধিকার নেই সেই রেসিপিতে। জানা যায়, শুধুমাত্র দুজন ব্যক্তিই আছেন, যারা কিনা এই রেসিপি দেখার অধিকার রাখেন। কিন্তু সেই দুজনের প্রকৃত পরিচয় জানে না কেউই! আর সরবরাহকারীরা যাতে খাবারে ব্যবহৃত উপাদান সম্পর্কে কখনোই পুরোপুরি জানতে না পারে, সেজন্য উপাদানগুলো বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অর্ডার করা হয়।

এখানেই রাখা আছে সেই রেসিপি; Source: sploid.gizmodo.com

অনেকেই ভাবতে পারে, কেবলমাত্র প্রচারণার কৌশল হিসেবে নিজেদের রেসিপি সম্পর্কে এত রহস্যজনক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে কেএফসি। তবে এটা যে ঠিক নয় তার প্রমাণ মেলে ২০০১ সালে। সেই বছর এক দম্পতি দাবি করেছিলো যে, কর্নেল স্যান্ডার্সের পুরনো এক বাড়ি থেকে তারা তার বিখ্যাত সেই রেসিপির একটি কপি খুঁজে পেয়েছেন। এটা জানার পরপরই তাদের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে নামে কেএফসি!

৭) চার্চ অফ সায়েন্টোলজি ভল্ট

সায়েন্টোলজি হলো এক ধরনের ধর্মীয় বিশ্বাস, ১৯৫৪ সালে আমেরিকান লেখক এল. রন হুবার্ডের হাত ধরে শুরু হয় এর যাত্রা।

সায়েন্টোলজি বিশ্বাসীদের চার্চের এ ভল্টটি বেশ শক্তিশালী। এর অবস্থান নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে। হাইড্রোজেন বোমের আঘাতেও এর কিছুই হবে না। এর ভেতরে টাইটেনিয়াম নির্মিত বাক্সের ভেতর ইস্পাতের পাত ও স্বর্ণের চাকতিতে খোঁদাই করা অবস্থায় আছে সায়েন্টোলজির মূলনীতি। এগুলো সব আবার রাখা আছে ৫,০০০ পাউণ্ডের তিনটি সুরক্ষিত দরজার ভেতরে। ভল্টটির ভূমির উপরের অংশে রয়েছে ক্রপ সার্কেল। কেবলমাত্র আকাশপথেই সেগুলোকে ঠিকমতো বুঝতে পারা যায়।

Source: livescience.com

অনেকেই মনে করেন, এ ক্রপ সার্কেলগুলো ভিনগ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের জন্য বানানো। সায়েন্টোলজির শুরুর দিককার বিশ্বাসীরাও একই মত ব্যক্ত করেন। তবে অনেকে আবার এই তত্ত্বে বিশ্বাসী না। তাদের মতে, পুনরুত্থানের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত ধর্মের কেন্দ্রে ফিরে আসতে হুবার্ডকে সাহায্য করবে এ ক্রপ সার্কেলগুলো।

সায়েন্টোলজির শীর্ষস্থানীয় কেউ না হলে সেই ভল্টে প্রবেশাধিকার মিলবে না কারোরই। এর নিরাপত্তার জন্য রয়েছে প্রহরী, ক্যামেরা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

৮) আয়রন মাউন্টেন ভল্ট

নিউ ইয়র্কের জার্মানটাউনে অবস্থিত আয়রন মাউন্টেন ভল্ট একটি লাভজনক ভূগর্ভস্থ তথ্য সংরক্ষণাগার। বিশ্বের নানা দেশে রয়েছে এর খদ্দের। বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভূগর্ভস্থ এ তথ্য সংরক্ষণাগারটির জায়গায় আগে ছিলো একটি মাশরুম ফার্ম। কালক্রমে সেখানেই গড়ে উঠেছে আয়রন মাউন্টেন ভল্টটি। এর যাত্রা শুরুটাও হয়েছিলো এক চাতুর্যের মধ্য দিয়ে। গত শতকে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পারমাণবিক হামলায় কর্পোরেট হাউজগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ১৯৫১ সালে যাত্রা শুরু করে এ ভল্ট।

আয়রন মাউন্টেনে ব্যবহৃত একটি ট্রাক; Source: Wikimedia Commons

পুরো ফ্যাসিলিটি জুড়েই রয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইডি কার্ড এবং স্পেশাল ক্লিয়ারেন্স ফর্ম ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। ২৮ টন ভরের ট্রিপল-টাইম লক্‌ড একটি দরজা রয়েছে ৯৫ একরের এ বাঙ্কারের প্রবেশপথে। সেই বাঙ্কারও আবার রয়েছে মাটির নিচে, একটি পাহাড়ের প্রায় সোয়া মাইল ভেতরে।

ফিচার ইমেজ- fault.wikia.com

Related Articles