Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আবু ওমর আল–শিশানী (পর্ব – ১): জর্জীয় স্পেশাল ফোর্সের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ থেকে আইএসের যুদ্ধমন্ত্রী

২০১৩–১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বহুপাক্ষিক গৃহযুদ্ধের মধ‍্যে একটি অত‍্যন্ত নিষ্ঠুর এবং কার্যকরী মিলিট‍্যান্ট গ্রুপ অসাধারণ সামরিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করে মার্কিন–প্রশিক্ষিত ইরাকি সরকারি বাহিনী ও অভিজ্ঞ সিরীয় সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে, এবং ইরাক ও সিরিয়ার বৃহৎ একটি অংশ দখল করে নেয়। দখলকৃত অঞ্চলে গ্রুপটি একটি ‘খিলাফত’ ঘোষণা করে এবং গ্রুপটির নামকরণ করা হয় ‘আদ-দাওলাহ আল-ইসলামিয়াহ’ বা ‘দায়েশ’ (Islamic State or IS)।

কীভাবে দায়েশ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইরাকি ও সিরীয় সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করল? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়, কারণ যুদ্ধে কোনো পক্ষের জয় বা পরাজয়ের বহু কারণ থাকতে পারে এবং এক্ষেত্রেও তার ব‍্যতিক্রম হয়নি। তবে আইএস বা দায়েশের এই বিস্ময়কর সাফল‍্যের অন‍্যতম একটি কারণ ছিল এই যে, দায়েশের যোদ্ধারা পরিচালিত হয়েছিল অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা। প্রাক্তন ইরাকি একনায়ক সাদ্দাম হুসেইনের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে সুদূর তাজিকিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের প্রধান– বহু সুদক্ষ সামরিক কর্মকর্তাই আদর্শগত বা ব‍্যক্তিগত কারণে দায়েশে যোগ দেন। এই নিবন্ধে এরকমই একজনকে নিয়ে আলোচনা করা হবে, যিনি জর্জীয় সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডো থেকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন দায়েশের যুদ্ধমন্ত্রীতে।

দায়েশের যুদ্ধমন্ত্রী তারখান বাতিরাশভিলি ওরফে আবু ওমর আল–শিশানী; Source: Associated Press

তারখান তাইমুরাজোভিচ বাতিরাশভিলি ১৯৮৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জর্জিয়া প্রজাতন্ত্রের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পানকিসি উপত‍্যকার বিরকিয়ানি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তেইমুরাজ বাতিরাশভিলি ছিলেন জাতিগতভাবে জর্জীয় এবং ধর্মগতভাবে অর্থোডক্স খ্রিস্টান, অন‍্যদিকে তার মা ছিলেন জাতিগতভাবে কিস্ত এবং ধর্মগতভাবে মুসলিম। উল্লেখ‍্য, ‘কিস্ত’রা নৃতাত্ত্বিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বর্তমান রুশ ফেডারেশনের চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের চেচেন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাতিরাশভিলির মায়ের পূর্বপুরুষেরা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে চেচনিয়া থেকে জর্জিয়ার এই অঞ্চলে এসেছিলেন।

পানকিসি উপত‍্যকা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ‍্যে পরিপূর্ণ একটি অঞ্চল, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে জর্জিয়ার দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর একটি। বাতিরাশভিলিরা ছিলেন তিন ভাই এবং যেহেতু তাদের বাবাকে অধিকাংশ সময় কাজের খোঁজে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে হত, তাই তারা মায়ের কাছেই বড় হন এবং পরবর্তী জীবনে মায়ের ধর্মবিশ্বাসকেই গ্রহণ করেন।

বাতিরাশভিলি যখন কিশোর, তখন তিনি পানকিসি উপত‍্যকার পাহাড়গুলোতে রাখালের কাজ করতেন। এসময় দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ চলছিল এবং রুশ কেন্দ্রীয় সরকার রুশপন্থী চেচেনদের সহযোগিতায় চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করে চেচনিয়ার ওপর রুশ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিল। পানকিসি উপত‍্যকা চেচনিয়া ও জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় অঞ্চলটি হয়ে উঠেছিল চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ট্রানজিট পয়েন্ট। এসময় বাতিরাশভিলি চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংস্পর্শে আসেন এবং সীমান্ত অতিক্রম করে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। এসময় থেকেই রুশদের প্রতি তার তীব্র ঘৃণা জন্মে।

হাই স্কুল থেকে পাশ করার পর বাতিরাশভিলি ২০০৬ সালে জর্জীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তার প্রাক্তন সহকর্মীদের ভাষায়, বাতিরাশভিলি ছিলেন একজন ‘জন্মগত’ যোদ্ধা। তার প্রাক্তন কমান্ডার মালখাজ তোপুরিয়ার ভাষ‍্যমতে, বাতিরাশভিলি ছিলেন একজন আদর্শ সৈনিক এবং বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রের ব‍্যবহার ও মানচিত্র সংক্রান্ত বিষয়াবলিতে অত‍্যন্ত দক্ষ। তোপুরিয়া বাতিরাশভিলিকে জর্জীয় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিটে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বাতিরাশভিলির ইউনিটকে জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসির নিকটবর্তী ক্রৎসানিসি জাতীয় প্রশিক্ষণকেন্দ্রে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়। সেখানে তারা মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের সদস‍্যদের কাছ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেখানে বাতিরাশভিলি ছিলেন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ‍্যে ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’। মার্কিন প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি কাউন্টার–টেররিজম ও কাউন্টার–ইনসার্জেন্সির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

সিরিয়ায় কাতিবাত আল–মুহাজিরিন মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে তাদের কমান্ডার ওমর আল–শিশানী; Source: Getty Images

বাতিরাশভিলির প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাকে জর্জীয় সেনাবাহিনীর একটি নবগঠিত গোয়েন্দা ইউনিটে সার্জেন্ট পদে নিযুক্ত করা হয়। মার্কিন প্রশিক্ষকরা তাকে ইরাকে পাঠানোর জন্য জর্জীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। উল্লেখ‍্য, ইরাক যুদ্ধ চলাকালে জর্জিয়া ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ ছিল এবং প্রায় ২,৩০০ সৈন‍্য ইরাকে মোতায়েন করেছিল। কিন্তু সেসময় রুশ জর্জীয় যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ায় জর্জীয় সেনাবাহিনীর নিজেদেরই বাতিরাশভিলির মতো সুদক্ষ যোদ্ধার প্রয়োজন ছিল, তাই তারা তাকে ইরাকে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়।

২০০৮ সালে জর্জীয় সরকার কর্তৃক বিচ্ছিন্নতাবাদী দক্ষিণ ওসেটিয়া প্রদেশ আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রুশ–জর্জীয় যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে বাতিরাশভিলি অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং তার ইউনিট রুশ বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। তস্কিনভালির যুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ ট‍্যাঙ্কবহরের গতিবিধির ওপর নজরদারি করেন এবং তাদের সঠিক অবস্থান জর্জীয় গোলন্দাজ বাহিনীকে জানিয়ে দেন। এছাড়া, তার ইউনিট রুশ ৫৮ তম আর্মির একটি কলামের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৫৮ তম আর্মির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনাতোলি খ্রুলিয়ভকে আহত করে। কিন্তু মাত্র ৫ দিনব‍্যাপী এই যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হয় এবং দক্ষিণ ওসেটিয়া ও আবখাজিয়া জর্জিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রুশ–জর্জীয় যুদ্ধে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য বাতিরাশভিলিকে জর্জীয় সরকার কোনো পুরস্কার দেয়নি, তবে তাকে পদোন্নতি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে বাতিরাশভিলির যক্ষ্মা ধরা পড়ে এবং বেশ কয়েক মাস একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে স্বাস্থ‍্যগত কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করা হয়। সুস্থ হয়ে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে যোগদান করার চেষ্টা করে ব‍্যর্থ হন। এরপর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখান থেকেও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এসময় তার মা-ও ক‍্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পেশাগত ব‍্যর্থতা, আর্থিক দুরবস্থা এবং পারিবারিক দুর্যোগ– সব মিলিয়ে বাতিরাশভিলি মানসিকভাবে বির্পযস্ত হয়ে পড়েন।

সিরিয়ায় একটি খণ্ডযুদ্ধ চলাকালে মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে আবু ওমর আল–শিশানী; Source: Associated Press

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জীয় কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে অস্ত্র মজুদ করার অভিযোগে বাতিরাশভিলিকে গ্রেপ্তার করে এবং ৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। বাতিরাশভিলির বাবার মতে, এটি ছিল একটি বানোয়াট অভিযোগ। তার কাছে একটি লাইসেন্স করা রিভলবার ছাড়া আর কিছু ছিল না। তার ধারণা, তার ছেলে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটে কাজ করার সময় হয়তো কোনো রাষ্ট্রীয় গোপন তথ‍্য জেনে ফেলেছিল, তাই তাকে সরানো জর্জীয় কর্তৃপক্ষের জন‍্য জরুরি হয়ে গিয়েছিল। জর্জীয় পুলিশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব‍্যাপারে কোনো তথ‍্য দিতে রাজি হয়নি।

কারাগারে থাকা অবস্থায় বাতিরাশভিলি একজন সৌদি মিলিট‍্যান্টের সংস্পর্শে আসেন এবং চরমপন্থী ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে এক মিলিট‍্যান্ট ওয়েবসাইটে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাতিরাশভিলি বলেন, কারাগার তাকে অন‍্য এক মানুষে পরিণত করে। তার ভাষায়, “আমি আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে যদি আমি জীবন্ত অবস্থায় কারাগার থেকে বের হই, তাহলে আমি আল্লাহর জন্য জিহাদ করবো।

১৬ মাস কারাগারে থাকার পর জর্জীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় ২০১২ সালের প্রথমদিকে বাতিরাশভিলি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই তিনি দেশ ত‍্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। দেশ ছাড়ার আগে বাবাকে তিনি বলেন, “এই দেশে আমাকে কারো প্রয়োজন নেই।”

জর্জিয়া থেকে বাতিরাশভিলি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যান এবং সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী চেচেনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, তুরস্কে প্রায় ১ লক্ষ চেচেন বসবাস করে, যাদের অনেকেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল–আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরোধী এবং যাদের একাংশ সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সিরিয়ায় গিয়েছে। তারা বাতিরাশভিলিকে সিরিয়ায় চেচেনদের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নিযুক্ত করে। যদিও প্রথমে বাতিরাশভিলি সিরিয়ায় যাওয়ার ব‍্যাপারে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি ইয়েমেনে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন এবং অল্প কিছুদিন মিসরে অবস্থান করেন। অবশেষে ২০১২ সালের মার্চে তিনি মনঃস্থির করেন এবং সিরিয়ায় চলে যান।

মিলিট‍্যান্টদের পক্ষে একটি প্রোপাগান্ডা ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় আল–শিশানী; Source: War on the Rocks

সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বাতিরাশভিলি ‘আবু ওমর আল–শিশানী’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই নামেই পরিচিতি লাভ করেন। উল্লেখ‍্য, আরবি ভাষায় ‘আল–শিশানী’ শব্দের অর্থ ‘চেচেন/চেচনিয়ার অধিবাসী’।

সিরিয়ায় আল–শিশানী প্রথমে ‘কাতিবাত আল–মুহাজিরিন’ (Battalion of the Emigrants) মিলিট‍্যান্ট গ্রুপের কমান্ডার নিযুক্ত হন। এই গ্রুপের সদস‍্যদের বড় একটি অংশ ছিল চেচনিয়া ও রুশ ককেশাসের অন‍্যান‍্য অঞ্চল এবং দক্ষিণ রাশিয়া থেকে আসা যোদ্ধারা। এছাড়া কিছু সিরীয়, সৌদি, লিবীয় ও মধ‍্য এশীয় যোদ্ধাও এই বাহিনীর অংশ ছিল। এই বাহিনীটি প্রধানত আলেপ্পো, লাতাকিয়া ও ইদলিবে সক্রিয় ছিল। প্রলম্বিত আলেপ্পোর যুদ্ধে এই বাহিনীটি অংশ নেয়। উল্লেখ‍্য, আলেপ্পোর যুদ্ধ ২০১২ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরীয় সরকারি বাহিনী রুশ সামরিক সহায়তায় আলেপ্পো পুনর্দখল করে নেয়।

কাতিবাত আল–মুহাজিরিন প্রথম থেকে আল–কায়েদার সিরীয় শাখা ‘জাবহাত আল–নুসরা’ (বর্তমান নাম ‘জাবহাত ফাতাহ আল–শাম’) এবং অন‍্যান‍্য উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোর সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করে আসছিল। কিন্তু তাদের আনুষ্ঠানিক আনুগত‍্য ছিল ‘ইমারাত কাভকাজ’ (Caucasus Emirate) এবং এর নেতা দোকু উমারভের প্রতি। উল্লেখ্য, ‘ইমারাত কাভকাজ’ রুশ ফেডারেশনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রজাতন্ত্রগুলতে সক্রিয় একটি মিলিট‍্যান্ট গ্রুপ, যাদের মূল লক্ষ্য উত্তর ককেশাসে রুশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে একটি ইসলামি ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা।

জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার গ্রুপের মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে আবু ওমর আল–শিশানী; Source: BBC World

২০১২ সালের অক্টোবরে কাতিবাত আল– জাবহাত আল-নুসরার সঙ্গে মিলিতভাবে আলেপ্পোয় অবস্থিত সিরীয় সেনাবাহিনীর একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ও স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় এবং সিরীয় বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের মধ‍্যেই ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। মিলিট‍্যান্টরা ঘাঁটিতে থাকা সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ও রসদপত্র লুট করে নেয়, ঘাঁটিটির সমস্ত তাঁবু, জিনিসপত্র, সাঁজোয়া যান ও রাডারগুলো পুড়িয়ে দেয় এবং মূল রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে বুবি–ট্র‍্যাপ বসিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে কাতিবাত আল–মুহাজিরিন জাবহাত আল-নুসরার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে পশ্চিম আলেপ্পোয় অবস্থিত সিরীয় সেনাবাহিনীর শেখ সুলেইমান ঘাঁটি (ঘাঁটি ১০১) আক্রমণ করে দখল করে নেয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা ‘লিওয়া আল–তাওহিদ’ আর ‘জাবহাত আল–নুসরার সঙ্গে একজোট হয়ে আলেপ্পো শহরের মূল বিমানবন্দরের নিকটে অবস্থিত সিরীয় সেনাবাহিনীর ৮০ তম রেজিমেন্টের ঘাঁটি দখল করে নেয়। প্রতিটি আক্রমণে আল–শিশানীর গ্রুপের যোদ্ধারা মুখ‍্য ভূমিকা পালন করে। এভাবে বাতিরাশভিলি ওরফে আবু ওমর আল–শিশানী সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে একজন অন‍্যতম রণনিপুণ মিলিট‍্যান্ট কমান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

২০১৩ সালের মার্চে কাতিবাত আল–মুহাজিরিন দুটি সিরীয় মিলিট‍্যান্ট গ্রুপ ‘জইশ মুহাম্মদ’ এবং ‘কাতাইব খাত্তাবে’র সঙ্গে একত্রিত হয়ে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করে, যার নামকরণ করা হয় ‘জইশ আল–মুহাজিরিন ওয়াল আনসার’ (Army of the Emigrants and Helpers)। আল–শিশানী এই সম্মিলিত গ্রুপের কমান্ডার নিযুক্ত হন।

Related Articles