Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একুয়েস্টিক কিটি: সিআইএ’র ব্যর্থ গোয়েন্দা বিড়াল প্রকল্প

কেমন লাগবে যদি হঠাৎ জানতে পারেন, আপনার আশেপাশে ঘোরাফেরা করা নিরীহ দর্শন আদুরে বিড়ালটি, শুধুই বিড়াল নয়! সে অন্যের হয়ে ফাঁস করছে আপনার ঘরের তথ্য! ঠিক এরকম একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’।

সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে পশুপাখির ব্যবহার যদিও নতুন কিছু নয়, তবে ‘একুয়েস্টিক কিটি’ নামের প্রকল্পটিতে বিড়ালের ব্যবহার ছিল একটু আলাদা। এই প্রকল্পে বিড়ালের শরীরে অস্ত্রোপচার করে, সেখানে তথ্য সম্প্রচার করার ইলেকট্রনিক্স বসিয়ে মোটামুটি ‘সাইবর্গ’ বানিয়ে, বিড়ালকে একটি সম্প্রচার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল ‘সিআইএ’।

এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত দূতাবাসগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি করা। ‘সিআইএ’র এই প্রকল্পটি যদিও ১৯৬৭ সালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে এ সম্পর্কে তথ্য জনসম্মুখে আসে ২০০১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের কিছু গোপন নথি প্রকাশ হওয়ার পর।

গোয়েন্দা বিড়াল

‘সিআইএ’ এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে, ১৯৬০ সালের দিকে। রাশিয়ান দূতাবাসগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও পরে তা রুপ নেয় ব্যর্থতায়। সাধারণত বিড়াল বা এজাতীয় প্রাণীগুলো নিরাপত্তারক্ষী কিংবা মানুষের সন্দেহ এড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করতে পারে। বিড়ালকে এই কার্যক্রমে যুক্ত করার পেছনে বড় কারণ ছিল এটি।

বিড়ালের শরীরে যেভাবে সংযুক্ত করা হয়েছিল ইলেকট্রনিক ডিভাইস; Image Source: dailymail.com
বিড়ালের শরীরে যেভাবে সংযুক্ত করা হয়েছিল ইলেকট্রনিক ডিভাইস; Image Source: dailymail.com

সিআইএর তৎকালীন পরিচালক রবার্ট ওয়ালেস বলেন,

আসলে এই প্রকল্পে আরো বেশ কিছু প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যেমন ইদুর, কাঁক ইত্যাদি। বিড়ালকে গুপ্তচর হিসেবে বেছে নেওয়ার পর বিড়ালের শারীরিক গঠন নিয়ে গবেষণা করা হয়। এরপর এদের উপযুক্ত অঙ্গে ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো স্থাপন করা হয়।

বিড়ালের শরীরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগানোর জন্য একজন পশু-চিকিৎসককে নিয়োগ করে ‘সিআইএ’। প্রাক্তন ‘সিআইএ’ কর্মকর্তা ভিক্টর মারকেট্টি তার একটি বইয়ে দাবী করেন,

বিড়ালের ঘাড়ের নিচের অংশে ক্ষুদ্রাকৃতির রেডিও ট্রান্সমিটার, বিড়ালের কানের অংশে ছোট মাইক্রোফোন যুক্ত ছিল যা অত্যন্তু সরু তারের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছিল। আর সেই সাথে ছিল অত্যন্ত ছোট আকারের ব্যাটারি ও অ্যান্টেনা। বিড়ালের কানের লতির মধ্যে মাইক্রোফোন লাগানোর আরেকটি বড় কারণ ছিল এদের কানের বৈশিষ্ট্য। এদের কান থেকে বেশ ভালো আউটপুট পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো স্থাপন করা হয়ে গেলে, সেটাকে পাঠানো হতো প্রশিক্ষণের জন্য।

বিড়ালকে গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ

বুদ্ধির দিক থেকে বিড়ালের অবস্থান যেহেতু মানুষের চাহিদার কাছাকাছি নয় কাজেই বিড়ালকে গোয়েন্দা বানানোর বিষয়টি নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। তবে সিআইএ’র ২০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে নিশ্চয়ই তারা প্রচেষ্টারও কমতি রাখেনি। প্রশিক্ষণে প্রাথমিক সাফল্যও আসে বলে জানা যায়। দেখা যায়,  বিড়ালগুলো ক্ষুধার্ত ও ঘুমিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শেখানো কাজে মনোযোগী থাকে।  

২০০১ সালে প্রকাশ করা নথিতে গোয়েন্দা বিড়াল প্রকল্প; Image Source: allthatsinteresting.com
২০০১ সালে প্রকাশ করা নথিতে গোয়েন্দা বিড়াল প্রকল্প; Image Source: allthatsinteresting.com

তবে বিড়ালকে যে পুরোপুরি শিক্ষিত করা যায়নি তা এই প্রকল্প বন্ধ হওয়ার অনেক পরে ‘সিআইএ’ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে জানা যায়। এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে এটিকেও উল্লেখ করেন তারা।

যেভাবে ব্যর্থ হয় প্রথম অভিযান

গোয়েন্দা বিড়ালের প্রথম অভিযান ছিল ওয়াশিংটনে সোভিয়েত দূতাবাসের পাশের একটি পার্কে। গোয়েন্দারা পাশেই একটি গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিড়ালটি ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তা পার হওয়ার সময়ই একটি গাড়ি চাপা দিলে বিড়ালটি রাস্তার মধ্যেই প্রাণ হারায়। সিআইএ’র ২০ মিলিয়ন বিনিয়োগ রাস্তায় লুটিয়ে যায় কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে।

২০০১ সালে জেফারি রিচেলসন একজন  প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা বলেন যদিও ট্যাক্সিচাপায় এটি মারা না যেত তারপরও অপরিকল্পিত কাটাকাটির জন্য সেটি এমনিতেই মারা যেতো।

 গোয়েন্দা বিড়ালের প্রথম লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটনের রাশিয়ান দূতাবাস; Image Source:
 গোয়েন্দা বিড়ালের প্রথম লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটনের রাশিয়ান দূতাবাস; Image Source: spyhomes.org

তবে সিআইএ’র পরিচালক ওয়ালেসের মতে,

এই লজ্জাজনক ব্যর্থতার জন্য এই প্রকল্প বন্ধ করা হয়নি। বরং তা বন্ধ করা হয়েছে মূলত এই উপলদ্ধি থেকে যে, তারা যা করতে চেয়েছে তা এক অর্থে অসম্ভব। কারণ এটি ছিল পশুকে মানুষ করার মতো একটি বিষয়। তাছাড়া সিআইএ উপলদ্ধি করেছিল, পরিবেশগত ও নিরাপত্তার স্বার্থে এবং বিদেশের পরিস্থিতিতে কৌশলটি ব্যবহার করা বাস্তবসম্মত নয়। তবে সম্ভবত এর চেয়েও ভাল কোনো পরিকল্পনা তাদের মাথায় আসায়, তারা এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

কেন এই প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছিল?

বিড়ালের অভ্যন্তরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস যুক্ত করার পরিকল্পনাটি যদিও একটি বুদ্ধিমান পরিকল্পনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। প্রকল্পটি ব্যর্থ হওয়ার পর গৃহপালিত একটি প্রাণীকে গোয়েন্দা বানানোর চেষ্টা করার জন্য, নানা সময় অনেকেই এই প্রকল্পকে উপহাস করেন।

বিড়ালকে এমন গোয়েন্দা কার্যক্রমে যুক্ত করায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতাগুলো ছিল। সেসময় বিড়ালের শরীরে যুক্ত করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর যেমন দীর্ঘমেয়াদি শক্তির উৎস যোগ করার প্রয়োজন ছিল, তেমনি বিড়ালের শরীরে বড় আকারের কোনো ব্যাটারি সংযুক্ত করাও প্রায় অসম্ভব ছিল না। আর সে সময়টাতে এখনকার মতো ছোট আকারের ব্যাটারির উদ্ভাবনও ঘটেনি। কাজেই ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর কার্যকারিতা খুব বেশি সময় ধরে রাখা সম্ভব ছিল না।

বিড়াল শুধু বিড়াল নাও হতে পারে! Image Source: interesly.com
বিড়াল শুধু বিড়াল নাও হতে পারে! Image Source: interesly.com

বিড়ালকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল আরো বেশি কষ্টসাধ্য বিষয়। আর যত ভালো প্রশিক্ষণই দেওয়া হোক না কেন, বিড়ালকে বুঝিয়ে কাজ আদায় করা কতটা নিখুঁত হবে তা নিয়েও সংশয় তো ছিলই। সেই সাথে বিড়ালকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার পর সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকা গলে অবস্থান করা কিংবা চাহিদামতো কোথাও প্রবেশ করানোটাও সহজ ছিল না। তারপর অাবার বিড়ালের ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটলে, বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো ছিলোই।

এ বিষয়ে সিআইএ’র সাবেক পরিচালক ওয়ালেসের বক্তব্য ছিল, আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর,

এই কার্যক্রমে বিড়াল যদিও তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। কিন্তু এটিও নিশ্চিত যে, এটি আসলে আমাদের বিশেষ প্রয়োজনে তেমন কাজে দেবে না।

তবে ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিড়ালটি মারা যাওয়া প্রসঙ্গে ২০১৩ সালে রবার্ট ওয়ালেস দাবী করেন যে, বিড়ালটি মারা পড়েনি বরং বিড়ালটির শরীর থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো খুলে নেওয়া হয়েছিল। এরপর বিড়ালটি দীর্ঘদিন স্বাভাবিকভাবেই জীবিত ছিল। আসলেও তা করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা থেকেই যায়।

তাই বলে আপনার বাসার বিড়ালটিকে সন্দেহ করবেন না যেন!
তাই বলে আপনার বাসার বিড়ালটিকে সন্দেহ করবেন না যেন!; Image Source: history.com

যা-ই হোক, এই ব্যর্থ প্রকল্পে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের নথিতে এই প্রকল্পটিকে ‘উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অর্জন’ বলে অভিহিত করা হয়। কাগজে কলমে ‘একুয়েস্টিক কিটি’ নামের প্রকল্পটি ১৯৬৭ সালে বন্ধ করা হলেও বাস্তবে সেই প্রকল্পকে অন্য কোথাও, অন্য কোনোভাবে কিংবা অন্য প্রাণীকে ব্যবহার করে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা সে তথ্য আপাতত জানার উপায় নেই। 

বিভিন্ন সময়েই সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে বেছে নেওয়া হয় নানা ধরনের পশুপাখি। কে জানে এখন কোন গোয়েন্দা সংস্থা কোন প্রাণীকে কার উপর গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দিয়েছে। তাই বলে আপনার বাসার বিড়ালটিকে গোয়েন্দা বলে সন্দেহ করবেন না যেন!

ফিচার ইমেজ – dailymail.co.uk

Related Articles