Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্লিনের অসমাপ্ত এয়ারপোর্ট

ব্র্যান্ডেনবার্গ উইলি ব্র্যান্ডেট এয়ারপোর্ট’ বাইরে থেকে দেখলে ইউরোপের কোনো আধুনিক এবং নামীদামী বলে এয়ারপোর্ট মনে করাই স্বাভাবিক। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই এয়ারপোর্ট নির্মাণের কাজ প্রায় ৭ বছর আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত এর উদ্বোধন করা হয়নি! সব কাজ শেষ হয়ে গেছে, এখন শুধু অপেক্ষা যাত্রীদের আগমনের। তবে বারবার কোনো না কোনো কারণে থেমে যাচ্ছে এর যাত্রা।

চমৎকার প্রকৌশলবিদ্যা এবং সময়ানুবর্তিতার জন্য জার্মানরা সবসময়ই সকলের নিকট প্রশংসিত। তবে বার্লিনের এই ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট (বিইআর) এই সুখ্যাতিকে কলঙ্কিত করে গোটা বার্লিন শহরকে হাসির পাত্রে পরিণত করছে। কারণে-অকারণে উদ্বোধনের তারিখ পরিবর্তন হওয়া, বিভিন্ন কাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়া, প্রাথমিক বাজেটের তুলনায় অধিক ব্যয় হওয়ার মতো আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিত্যনতুন এত ঝামেলার জন্য এই এয়ারপোর্ট বার্লিনের অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কীভাবে শুরু হলো এর যাত্রা?

১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল ভেঙে ফেলা হলে ‘৯০ দশকের শেষের দিকে এসে অবিভক্ত বার্লিনবাসী একটি সুগঠিত ও আধুনিক এয়ারপোর্টের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যার ধারণ ক্ষমতা পশ্চিম বার্লিনের টিগেল এবং পূর্ব বার্লিনের স্কোনিফিল্ডের চেয়েও বেশি হওয়া দরকার ছিল। এই দুটি এয়ারপোর্টকে একত্রে স্নায়ুযুদ্ধকালীন এয়ারপোর্ট বলে।

নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০০৬ সালে এবং এর সাথে এটাও ঠিক করা হয় যে, নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণের কাজ শেষ হলে বাকি দুটি এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্কোনিফিল্ড এয়ারপোর্ট কম মূল্যে প্লেনের মাধ্যমে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য উপযোগী ছিল এবং টিগেল পরিচিত ছিল আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট হিসেবে। তবে এগুলো অবিভক্ত বার্লিনের এত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো। ফলে তারা আরেকটি এয়ারপোর্ট তৈরির কাজ হাতে নেয় এবং এই নির্মাণকাজ ঠিক স্কোনিফিল্ডের কাছেই একটি বিস্তীর্ণ খালি জায়গায় শুরু করা হয়। উল্লেখ্য, বার্লিনের সবচেয়ে পুরনো এয়ারপোর্ট হলো টেম্পেলহফ, যা ১৯২৩ সালে নির্মিত হয়। ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও অসাধারণ স্থাপত্যশিল্প থাকা সত্ত্বেও ২০০৮ সালে এটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন নতুন এয়ারপোর্টের প্রয়োজনীয়তা সকলের কাছে আরও একবার পরিষ্কার হয়ে যায়।

টেম্পেলহফ এয়ারপোর্ট; Image source: uk.businessinsider.com

কী সমস্যা ছিল?

প্রথম সমস্যার শুরু হয় ২০১০ সালের গ্রীষ্মে, যখন ফ্লাঘাহেন বার্লিন-ব্র্যান্ডেনবার্গ কর্পোরেশন এয়ারপোর্টটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের জুনে পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে তারা নির্মাণকাজে কিছু ত্রুটির কথা উল্লেখ করে। ২০১২ সালের প্রথমদিক থেকে সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হচ্ছিলো। জুনে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০,০০০ অতিথি এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলেরও আশা কথা ছিল। তবে সমস্যা বাধে ঠিক মে মাসেই। এয়ারপোর্ট পরিদর্শনে আাসা অফিসাররা এর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় ত্রুটি পায় এবং এজন্য এর জটিল ও অত্যন্ত অস্পষ্ট নকশাকেই দায়ী করা হয়। কোথাও আগুন লাগলে স্বভাবতই ধোঁয়া উপরের দিকে যায়, তবে সিস্টেমের অদ্ভুত ত্রুটির কারণে এয়ারপোর্টটিতে ধোঁয়া নিচ দিয়ে টার্মিনালের দিকে চলে যাবে বলে জানান অফিসারেরা।

শুধু এটাই না। একে একে আরও সমস্যা বের হওয়া শুরু করে। প্রায় ৯০ মিটারের বেশি ক্যাবল ভুলভাবে স্থাপন করা হয়। ৪,০০০ গেটের নাম্বার উল্টাপাল্টা হয়ে যায়, এস্ক্যালেটরও অনেক ছোট বানানো হয়, যা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায়ও ত্রুটি ছিল। এমনকি এয়ারপোর্টের ছাদেও সমস্যা পাওয়া যায়। এই বছরের শুরুতে যেসকল মনিটর ফ্লাইটের সকল তথ্য প্রদান করে, সেগুলো পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় এবং এগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য দরকার পড়ে প্রায় ৫ লাখ ইউরোর। এখানেই সমস্যা শেষ হয় না। এই এয়ারপোর্ট নির্মাণের প্রধান পরিকল্পনাকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। তবে তা কখনও প্রমাণিত হয়নি। 

ম্যাপে ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট; Image source: weather-forecast.com

তাছাড়া এই কাজের সাথে জড়িত কিছু কনট্রাক্টর এবং ইঞ্জিনিয়ার দুর্নীতি করেন বলে ধারণা করা হয়। সেই সময়ে এই ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট নিয়ে এতটাই ঝামেলা হয় যে, প্রাক্তন বার্লিন মেয়র ক্লস ওয়াওরিয়েটকে পদত্যাগ করতে হয়। এয়ারপোর্টের কার্যক্রম শুরু হচ্ছিলো না বলে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, ট্যাক্সি ফার্ম ও বেশ কয়েকটি দোকান দেউলিয়া হতে শুরু করে। একটি রিপোর্ট মতে, করদাতাদের একদিনে অতিরিক্ত এক মিলিয়ন ইউরোর ভার বহন করতে হচ্ছে। ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট নির্মাণে দুই বিলিয়ন ইউরো লাগবে বলে ধারণা করা হয়। তবে এ বছরের শুরুতে হিসাব করে দেখা যায়, এর পেছনে আজ পর্যন্ত ৭.৩ বিলিয়নেরও বেশি খরচ হয়েছে। তবুও এর কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হলো না। আর প্রতিমাসে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও বিবিধ খরচ তো আছেই, যা এর খরচের তালিকা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে।

ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট; Image source: cnn.com

দুর্নীতি, পরিকল্পনা ও নকশার ত্রুটি ছাড়াও আরেকটি প্রতিবন্ধকও ছিল এই প্রজেক্টে। রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা! জার্মান অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির বিশ্লেষক ও লেখক অ্যান্ড্রিজ স্পেথ বলেন, “সেখানে কখনও কোনো নির্দিষ্ট ও কেন্দ্রীয় কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি, যা সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রজেক্টটি দেখাশোনা করবে এবং সকল কাজ ও খরচের হিসাব রাখবে। এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, কেউ জানে না আসল পরিস্থিতি কী।” দুই বার্লিন এক হয়ে গেলেও রাজনৈতিক কিছু অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়, যার দরুণ এয়ারপোর্ট নির্মাণের কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

টার্মিনালের সাইন ভুল দিকে দেওয়া; Image source: telegraph.co.uk

অন্যান্য সমস্যা

জার্মান কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট সার্ভিস দেওয়ার উপযুক্ত হলে টিগেল এয়ারপোর্ট বন্ধ করার কথা ছিল, যা এখনও সার্ভিস চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, ব্র্যান্ডেনবার্গ এখনও এই দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্য হয়নি। এয়ারপোর্ট এত বছরেও শুরু করতে না পারায় এবং এর দরুণ বিভিন্ন ব্যবসায় অনবরত ক্ষতি হওয়ার কারণে বার্লিনের জনসাধারণ টিগেল এয়ারপোর্ট খোলা রাখার পক্ষে ভোট প্রদান করে। তবে ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট খোলার পরও তা সকলের কাছে সমাদৃত হবে নাকি তা নিয়েও এখন অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছে। যেসকল ত্রুটি ঠিক করা হচ্ছে সেগুলো অনেক দিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে কি না তা নিয়েও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বিইআর এর পার্কিং স্পেস; Image source: apcoa.de

বিইআর কীভাবে পর্যটন স্থান হয়ে গেল?

অনেকবার চেষ্টা করেও ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্ট চালু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে একে ঘিরে এত ত্রুটি, ঝামেলা ও রহস্যের কারণে এই অসমাপ্ত এয়ারপোর্ট বেশ খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছে। এর আসল কাজ, তথা জনসাধারণকে বিমানযাত্রায় সাহায্য করতে না পারলেও সকলের মনে নিজের সম্পর্কে কৌতূহল জাগাতে পেরেছে। পর্যটকেরা এখন উড়োজাহাজে চড়ার জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র রহস্যজনক এই এয়ারপোর্ট ঘুরে দেখার জন্য অর্থ খরচ করছে। একজন পর্যটক বাইকে করে ঘুরে দেখতে পারেন গোটা এয়ারপোর্ট। বাইকে করেই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং, এক গেট থেকে অন্য গেটে।

ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্টে বাইক ট্যুর; Image source: berlin-airport.de

কিন্তু আজব বিষয় হলো, এয়ারপোর্ট এ সকল বাইক ট্যুরের আয়োজন করলেও একজন ব্যক্তিকে নিজ দায়িত্বে হেলমেট ও বাইক নিয়ে আসতে হবে। তবে তারা আপনাকে কমপক্ষে এই দুই ঘণ্টার ট্যুরে ১৫ ইউরোর বদলে দুপুরের খাবার সরবরাহ করবে। দল বেঁধে সেখানে যেতেও পারবেন। বিইআর এক্সপেরিয়েন্সে যাওয়ার জন্য আটজনের একটি দলের খরচ পড়বে ২০০ ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ১৯,০০০ টাকা।

কারণে-অকারণে নানা ঝামেলায় বারবার থেমে গেছে ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্টের শুরু হওয়ার যাত্রা। সর্বশেষ ঘোষণা অনুসারে, ২০২০ সালের অক্টোবরে খোলা হতে পারে এই এয়ারপোর্ট। তবে তা আসলেই বাস্তবায়িত হবে নাকি তা ভাববার বিষয়।

This article is in Bangla language. It describes about Berlin's unfinished airport. Sources have been hyperlinked inside this article.

Featured image: telegraph.co.uk

Related Articles