Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

গত দু’শো বছরের ইতিহাসে ব্রিটিশ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন ঋষি সুনাক। একইসাথে তিনি ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম এশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীও বটে। তার ব্যক্তিপরিচয় আক্ষরিক অর্থেই অনেকগুলো রেকর্ড সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে।

পেছনে তাকালে দেখা যায়, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে সেই দেশের রাজনীতিতে খুব অল্প সময়েই তার উত্থান ঘটেছে। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নর্থ ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রীসভায় স্থান পান। এই বছরের জুলাই মাসে তিনি জনসনের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন, যেটি তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় বাঁকগুলোর একটি৷

বরিস জনসনের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে দুঃখজনকভাবে হেরে গেলেও লিজ ট্রাসের ব্যর্থতায় আবারও মাত্র ছয় সপ্তাহ পরই ক্ষমতায় আসীন হতে যাচ্ছেন এই ধনকুবের।

Image Source: The Independent

ব্রিটেনের নাগরিকরা গত দুই মাসে তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখলেন। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে কী টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে। করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ব্রিটিশ অর্থনীতির অবস্থা আরও নাজুক বানিয়ে ছেড়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ জনগণ অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্য বার বার ক্ষমতায় রদবদল এনেছেন, কিন্তু কেউই এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সফলতা এনে দিতে পারেননি। উল্টো সদ্য সাবেক হওয়া লিজ ট্রাসের বিভিন্ন ভুল নীতির কারণে ব্রিটেনের ডুবন্ত অর্থনীতির নৌকায় আরও নতুন ফুটো হয়েছে। নাটকীয়ভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলেও ঋষি সুনাকের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, যেগুলো উতরে গেলে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হবে। আর যদি না পারেন, তবে হয়তো পূর্বসূরিদের ভাগ্যই বরণ করে নিতে হতে পারে তাকে।

ঋষি সুনাকের পূর্বসূরি লিজ ট্রাস চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটেনের চলমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে ব্রিটিশ জনগণকে উদ্ধার করতে। মুদ্রাস্ফীতিতে ব্রিটিশ জনগণের নাভিশ্বাস দশা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য বিদ্যুতের উপর আরও বেশি করারোপ করা হয়েছে, যেটি পরিস্থিতিকে করেছে আরও জটিল।

খাবারের মতো মৌলিক চাহিদার দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্রমেই জন-অসন্তোষ বেড়ে যাচ্ছে, প্রকৃত আয়ের গ্রাফ নিম্নগামী। করমুক্তির যে নীতি লিজ ট্রাস গ্রহণ করেছিলেন, সেটি ব্রিটেনের বাজার স্থিতিশীল করার পরিবর্তে আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।

Image Source: PTI

ঋষি সুনাককে একইসাথে মুদ্রাস্ফীতির সাথে লড়াই করতে তো হবেই, পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা যেন না হয়, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় তাকে  করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ৩১ অক্টোবর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উপর একটি ভাষণ দেবেন ঋষি সুনাক, এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

নিজের রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতা ফিরিয়ে আনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ সুনাকের জন্য৷ ব্রিটেন যেমন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তেমনই দেশটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কনজার্ভেটিভ পার্টির ভেতরেও চলছে সংকটময় পরিস্থিতি।

ইতোপূর্বে তিনি বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য অর্থনীতির এই গভীর সংকটের সময় ব্রিটেন ও তার দল কনজার্ভেটিভ পার্টি– দুই জায়গাতেই একতা ফিরিয়ে আনা। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে কনজার্ভেটিভ পার্টির মধ্যে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে– এটি খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে। এরকম সময়ে দলে একতা ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঋষি সুনাক সেটি ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন, সেটি তার বক্তব্যের মাধ্যমে প্রায়ই বোঝা যাচ্ছে।

ব্রিটেনে বর্তমানে অন্যতম প্রধান একটি ইস্যু হচ্ছে অভিবাসন নীতি। ঋষি সুনাক আগে থেকেই অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে শক্ত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছেন। তিনি এর আগে অঙ্গীকার করেছিলেন- ক্ষমতায় আসলে ব্রিটেনে অভিবাসনের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা হাতে নেবেন। এছাড়াও অভিবাসীদের বাৎসরিক হিসেব রাখা এবং দেশে আশ্রয় পাওয়ার শর্তগুলো আরও কঠিন করা হবে বলেও জানানো হয় তার পরিকল্পনায়।

Image Source: AP

তার পূর্ববর্তী সরকার অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দেয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, তাতেও তিনি সমর্থন প্রদান করেন। যদিও এতে অনেক আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়। ঋষি সুনাকের আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের উপর নজরদারি চালানো, গ্রেফতার ও বন্দী করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আরও বেশি ক্ষমতা অর্পণ করা। এখন থেকে ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি যে কট্টর হয়ে যাবে, তা ইতোমধ্যেই আঁচ করা যাচ্ছে।

ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সামনের দিনগুলোতে যে ধর্মঘটগুলো হবে, সেগুলো নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বেতন কাঠামোকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে একটি রেল ইউনিয়ন এক সপ্তাহ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সত্তর হাজার পেশাজীবি বড় দিনের আগে ধর্মঘটে যাবেন, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইনি সহায়তা তহবিল, বেতন এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের উন্নয়নের দাবিতে ব্রিটেন এবং ওয়েলসের প্রসিকিউটররা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে চলেছেন। এছাড়াও আরও অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেই কর্মীরা ধর্মঘটের পরিকল্পনা করছেন। ব্রিটেনের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তারা বর্তমান বেতন কাঠামোর সংস্কার দাবি করছেন। অসন্তুষ্ট কর্মীদের সাথে সমঝোতায় এসে কীভাবে তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে নিতে পারেন ঋষি সুনাক, এটাই এখন দেখার বিষয়।

Image Source: Tolga Akmen/Pool via REUTERS

“যদি আমি প্রধানমন্ত্রী হই, তবে বরিস জনসন যতটুকু করেছেন, ইউক্রেনের প্রতি আমাদের প্রচেষ্টা ও পুরোপুরি সমর্থনের নীতিকে আমি তার তুলনায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবো।”

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে এভাবেই নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন ঋষি সুনাক। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বছর ইউক্রেইনকে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রদান করেছে ব্রিটেন, অভ্যন্তরীণভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে টালমাটাল পরিস্থিতিতে থাকার পরও। ঋষি সুনাক যে সাহায্য প্রদান করার নীতি থেকে সরে আসবেন না, সেটি স্পষ্ট। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে যদি প্রত্যাশিত ফলাফল না আসে, তবে এই বিশাল অংকের সাহায্য প্রদান নিয়েও অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। যেখানে ব্রিটেনের সাধারণ নাগরিকরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেরকম পরিস্থিতিতে এভাবে বিশাল অংকের সাহায্য দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত– এরকম প্রশ্ব হয়তো খুব শীঘ্রই দেখা যাবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্পষ্ট নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য ঋষি সুনাকের সুনাম রয়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন- এটাই দেখার বিষয়। এবারের সংকটগুলো আরও গভীর এবং এর সমাধানও যে করা খুব একটা সহজ হবে না, সেটি বলাই বাহুল্য।

Language: Bangla

Topic: Challenges to be faced by Rishi Sunak

References:

১) 5 daunting challenges Rishi Sunak faces as he becomes Britain's new PM - India Today

২) Rishi Sunak will face difficult economic tests immediately - The New York Times

৩) What are Rishi Sunak’s biggest challenges? - The Economist

৪) Rishi Sunak, UK's next PM, faces major economic problems - 1 News

Feature Image: Reuters

Related Articles