Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুই জেনারেলের সশস্ত্র সংঘাত: আরেকটি গৃহযুদ্ধের দিকে সুদান?

গত সপ্তাহে সুদানের রাজধানী খার্তুমে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের অনুগত সেনাবাহিনী ও জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর অনুগত আরএসএফ। জেনারেল আল-বুরহান ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, একইসাথে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়কও। অন্যদিকে জেনারেল হামদান দেশটির উপ-নেতা, আবার র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের কমান্ডারও। দুই পক্ষের লড়াইয়ে কয়েকশো হতাহত হয়েছে, রাজধানী খার্তুম ছেড়ে পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেনাবাহিনী আর আরএসএফ, দুই পক্ষের হাতেই রয়েছে অস্ত্রের মজুত, দুই পক্ষের যোদ্ধারাই নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে।

সুদানে সংঘাত; Image Source: AP Photo/Marwan Ali

সুদানের সংঘাতপ্রবণ রাজনীতি

সুদানে হাজার বছর ধরে রাষ্ট্রের উপস্থিতি রয়েছে, রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিও। সুদান উপনিবেশ শাসনের অধীনে যায় উনবিংশ শতাব্দীতে, ব্রিটিশদের উপনিবেশ শাসনের অধীনে ছিল ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত। স্বাধীনতা আন্দোলন আর ধর্মীয় পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে তখন থেকেই সুদানের উত্তর আর দক্ষিণ প্রান্তের মানুষের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়, যার উপর ভিত্তি করে ২০১১ সালে জন্ম নেয় দক্ষিণ সুদান নামক আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বেই অবশ্য সুদানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, দেড়যুগের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারায় পাঁচ লাখ সুদানিজ। গৃহযুদ্ধেও উত্তর আর দক্ষিণের পরিচয় একইভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল, উত্তরের সরকারের অনুগত বাহিনীগুলোর সাথে লড়াই হয় দক্ষিণের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর।

সংঘাতপ্রবণ কোনো দেশেই গণতন্ত্র স্থায়ী হয় না, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটে না। একই রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখা যায় সুদানের ক্ষেত্রেও, স্বাধীনতার পর পর গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৫৮ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে গণতান্ত্রিক সরকারের, ক্ষমতা গ্রহণ করেন জেনারেল ইব্রাহিম আবুদ।

সুদানে সংঘাত; Image Source: NDTV

কর্তৃত্ববাদী সরকারেরা নাগরিকদের কাছে বৈধতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডানপন্থী উদ্যোগ নেন, ব্যবহার করেন ধর্মীয় বিষয়গুলোকে। সুদানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা, ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট জাফার নেইমারি সুদানকে ঘোষণা করেন ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে, সুদানে প্রবর্তিত হয় শরীয়াহ আইন। এই উদ্যোগ উত্তর আর দক্ষিণের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরো বৃদ্ধি করে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ

স্বাধীনতার পর থেকেই সুদানের উত্তর আর দক্ষিণ অংশের মধ্যে সংঘাত চলছিল, আফ্রিকার অন্যতম বড় একটি দেশে সহিংসতার ঘটনা ছিল নিয়মিত। রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়ে ২০১১ সালে শান্তির সন্ধানে দক্ষিণ অংশে প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন রাষ্ট্র। কিন্তু, বিভাজিত রাষ্ট্র দুটিতেও কাঙ্ক্ষিত শান্তি আসেনি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর সংঘাত ছিলো নিয়মিত ঘটনা। ২০১৯ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটে সুদানের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক ওমর-আল-বশিরের, প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ট্রানজিশনাল গভর্মেন্টও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেনি, সামরিক বাহিনী এক সফল অভ্যুত্থান ঘটায় ২০২১ সালে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ও জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। দুই জেনারেলই এরপর থেকে যুগপৎ নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদানকে।

কেন সংঘাতের চক্রে সুদান?

সুদানের চলমান সংঘাত শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিলে, ইতোমধ্যেই রাজধানী খার্তুম ছাড়াও ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনী, আরএসএফের পক্ষে আছে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি আর রাশিয়ান ওয়াগনার গ্রুপ। সংঘাতের তীব্রতায় অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে, অনেক দেশ বাধ্য হয়েছে দূতাবাস বন্ধ করে দিতে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে এখনো সুদানের অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও, ইতোমধ্যেই র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স নামের মিলিশিয়া বাহিনী রাজধানী খার্তুমের অংশবিশেষ সহ নায়ালা, এড ডাইনা আর জেনেইনার মতো অঞ্চলগুলোর। অনেকগুলো কারণ চলমান সংঘাতে ভূমিকা রাখছে।

দুই বাহিনীর অস্তিত্বের লড়াই

দুই জেনারেলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রয়েছে, ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে সামরিক বাহিনী আর আরএসএফকে। একসময় জেনারেল আল-বুরহান আর জেনারেল দাগালো ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, দুজনে একসাথে মিলেই উৎখাত করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে। ক্ষমতা দখলের পরে দেশ পরিচালনার জন্য জেনারেলদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের নেতৃত্বও ছিল তাদের হাতে, ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও। কিন্তু, সম্প্রতি বিভিন্ন উদ্যোগে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে দুই জেনারেলের মধ্যে, তৈরি হয়েছে দূরত্বও। সম্প্রতি জেনারেল আল-বুরহান একটি উদ্যোগ নিয়েছেন আরএসএফকে সামরিক বাহিনীর সাথে একীভূত করে ফেলার। একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার বিস্তারিত প্রকাশিত না হলেও, চলমান সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে একেই।

সুদানের সামরিক বাহিনী; Image Source: Anadolu Agency

একীভূতকরণ প্রক্রিয়াতে বড় প্রশ্ন ছিল- নতুন বাহিনীর প্রধান কে হবেন? নতুন প্রধান নির্ধারণের প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে সংঘাতকে। একদিকে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান চাচ্ছেন নিজের ক্ষমতাকে তর্কাতীত করতে, অন্যদিকে জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো চাচ্ছেন ক্ষমতার কাঠামোতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে। আবার, চলমান লড়াইকে সুদানের সামরিক বাহিনী দেখছে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে, আবার জেনারেল দাগালো ঘোষণা দিয়েছে সর্বশেষ সামরিক ঘাঁটি দখল না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। এই মনোভাব চলমান সংঘাতকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

গণতান্ত্রিক শাসনের ভয়

আরব বসন্তের ফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো আসে তিউনিসিয়াতে, আরব বসন্তের সাফল্যের মুকুটও হয়ে আছে তিউনিসিয়ার গণতান্ত্রিক বিবর্তন। তিউনিসিয়ার বাইরে আরব দেশগুলোর মধ্যে কেবল সুদানই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে যাত্রা করছিল ২০১৯ সালে, সে বছর সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেয় সুদানের বেসামরিক সরকার। সেই গণতান্ত্রিক ক্যাবিনেটের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক, তার দায়িত্ব ছিল সামরিক বাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থীদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। সামরিক বাহিনী ২০২১ অভ্যুত্থান ঘটালে সেই প্রক্রিয়া আটকে যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী হামদক।

সাম্প্রতিক সময়ে আবারো শুরু হয়েছে গণতন্ত্রায়নের আলোচনা, সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের। কিন্তু, গণতন্ত্রায়ন সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা ইতিবাচকভাবে নেন না, ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতার শীর্ষ বলয়ে থাকা এলিটরাও। ফলে, সুদানের সংঘাত বড় হচ্ছে, বাড়ছে গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দেওয়ার পক্ষে যুক্তির সংখ্যাও। চলমান লড়াইয়ে এই পক্ষগুলো বিভিন্নভাবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইবে, যা বাড়াবে সংঘাতের সম্ভাবনা।

গণহত্যার অভিযোগে বিচারের সম্ভাবনা

সুদানের সাবেক সামরিক শাসক ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর রাজনৈতিক ভিন্নমতের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ আছে। ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে দাফুরের সংঘাতকে কেন্দ্র করে, ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই সংঘাতে সামরিক বাহিনী আর মিলিশিয়ারা সংঘাত তৈরি করে, সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন আর নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে দাফুরের যে গণহত্যার অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বর্তমানে ক্ষমতার শীর্ষে থাক দুই জেনারেলেরই। ক্ষমতা ছাড়লেও তাদের বিরুদ্ধেও একইরকম বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, এই ভয়ের জায়গা থেকেও দুই জেনারেল সংঘাতকে উস্কে দিতে পারেন।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ও জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো; Image Source: BBC

জেনারেল দাগালোর নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনী আরএসএফের গড়ে ওঠা আবার ওমর আল-বশিরের হাত ধরে, ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময়েই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে সংস্থাটি। ২০১৯ সালে যখন ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরু হয়, তখন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ন্যূনতম ১২০ জনকে হত্যার অভিযোগ আছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। নেতৃত্বের জায়গা থেকে জেনারেল দাগালো এই হত্যাগুলোর দায় এড়াতে পারবেন না।

ফলে, চলমান সংঘাত থেকে নিজেদের ক্ষমতাবলয়ে থাকার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত জেনারেলরা হাল ছাড়বেন না, দীর্ঘ করবেন সংঘাতকে। এই প্রবণতাও চলমান সংঘাতকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির রণক্ষেত্র

সুদান ভূরাজনৈতিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, অর্থনৈতিকভাবেও রয়েছে সুদানের গুরুত্ব। ফলে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের উপস্থিতি রয়েছে সুদানে, একইভাবে রয়েছে কূটনৈতিক স্বার্থও। সুদানে সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই বন্দী হয় মিশরীয় সামরিক বাহিনীর ২৭ সেনাসদস্য, আরএসএফ তাদের অভিযুক্ত করে সুদানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আল-বুরহানকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে। মিশরের দিক থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও, তাদের সুদানে উপস্থিতির কোন যৌক্তিক কারণ মিশর হাজির করতে পারেনি। মিশরের পক্ষ থেকে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সেনাদের পাঠানোর কথা বললেও, প্রথা অনুযায়ী সংঘাত শুরুর আগে সুদানে মিশরীয় সেনাদের উপস্থিতির কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

মিশরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আস-সিসি বিভিন্ন সময়ে প্রকাশেই জেনারেল আল-বুরহানের প্রতি নিজের সমর্থনের ব্যাপারটি পরিষ্কার করেছেন। জেনারেল সিসি কখনোই জেনারেল দাগালোর মতো মিলিশিয়া প্রধানকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চাননি, প্রথাগত সৈনিক হওয়ায় আরএসএফের মিলিশিয়াদের ব্যাপারেও তার ইতিবাচক মনোভাব ছিলো না। আবার, জেনারেল সিসি আর জেনারেল আল-বুরহান একই সামরিক কলেজে পড়াশোনা করেছেন, নিজেদের সামরিক দর্শনে তাই মিল থাকাটাই প্রাসঙ্গিক। জেনারেল সিসি তাই যেকোনোভাবে জেনারেল আল-বুরহানকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে চাইবেন, যেটি বাড়াবে সংঘাতের সম্ভাবনা।

জেনারেল সিসি যেকোনোভাবে জেনারেল আল-বুরহানকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে চাইবেন; Image Source: Ahram Online

সংঘাত শুরুর পর পরই আরএসএফের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার গুঞ্জন উঠে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ব্যাপারে। সে গুঞ্জন দুপক্ষের কেউই স্বীকার করেনি, হাজির করা যায়নি প্রমাণও। তবে, আরএসএফের পক্ষ নেওয়ার গুঞ্জন পাওয়া গেছে ওয়াগনার গ্রুপের ব্যাপারেও। এখন পর্যন্ত ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের সরাসরি মাঠে যুদ্ধ করার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও, অস্ত্র সরবারহের ব্যাপারে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আমেরিকান কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জেনারেল দাগালোর বাহিনীকে সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো শক্তিশালী অস্ত্র প্রস্তাবও দিয়েছেন। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ওয়াগনার গ্রুপের মজুত থেকে আসবে এসব অস্ত্র। ওয়াগনার গ্রুপের মাধ্যমে রাশিয়া আসলে লোহিত সাগরের তীরবর্তী পোর্ট সুদানে নিজেদের একটি রুশ নৌঘাঁটি স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। সংঘাত বাড়লে ওয়াগনার গ্রুপের ব্যবসা বাড়বে, বাড়বে সুদানের সোনার খনিগুলোতে প্রবেশাধিকার। রাশিয়াও সহজে বাস্তবায়ন করতে পারবে নৌঘাঁটির স্বপ্ন। এটি সংঘাতকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো পাশ্চাত্যের দেশগুলো চায় সুদানে গণতন্ত্র আসুক, সুদানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও বিকশিত হোক। কিন্তু, তাঁরা সুদানের গণতন্ত্রায়নের বিনিময়ে সুদানকে চীনের বা রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে পৌঁছে দিতে রাজি নয়। সুদানের খনিগুলোতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোরও বিনিয়োগ আছে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ তাদের রাষ্ট্র দেখবেই। চলমান সংঘাতে সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকলে, তারাও সংঘাত সমাপ্তির বিপরীত দিকে অবস্থান নিতে পারে।

সুদানে মধ্যস্ততার ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী; Image Source: Sudan Tribune

সুদানে সবচেয়ে শক্তিশালী বিদেশী খেলোয়াড়গুলোর একটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, হর্ন অব আফ্রিকাতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে কয়েক দশক ধরেই সুদানে কাজ করছে দেশটি। সুদানের কৃষিতে সম্ভাবনা আছে, আমিরাতের প্রয়োজনের খাদ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবারহ। ওমর আল-বশিরের পতনের পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত আর সৌদি আরব ৩ বিলিয়ন ডলারের অনুদানও দিয়েছিল সুদানকে, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। আমিরাত এখন পর্যন্ত যুদ্ধে কোনো পক্ষ না নিলেও, আমিরাতের সাথে জেনারেল দাগালোর দীর্ঘ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে সামরিক সম্পর্কও। জেনারেল দাগালো ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসলে সুদানে আমিরাতের প্রভাব বিস্তার আরো সহজ হবে, আমিরাতের স্বর্ণের দোকানগুলোতে স্বর্ণের চালান নিরঙ্কুশভাবে যাবে সুদানের সোনার খনিগুলো থেকে। চলমান সংঘাত থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে আমিরাতের, সুযোগ আছে সংঘাত দীর্ঘায়ত হলে নিজেদের স্বার্থ আদায়েরও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর সকল যুদ্ধেই সরাসরি যুক্ত ছিলেন স্বৈরশাসকেরা, দুই-তৃতীয়াংশ গৃহযুদ্ধ হয়েছে স্বৈরশাসকের দেশে। সুদান নিজে স্বৈরশাসকদের পূণ্যভূমি, সুদানে ক্রিয়াশীল দেশগুলোর অধিকাংশই স্বৈরশাসকের দেশ। চলমান সংঘাত তাই আশু সমাধানের চেয়ে গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

This article is written in Bangla about the ongoing conflict in Sudan. All the necessary links are hyperlinked inside.
Feature Image: CNN

Related Articles