Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভারতে কেন দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নেই?

সাধারণত, কৌশলগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়, জাতীয় স্বার্থের প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে যোগ্য থেকে যোগ্যতর কূটনীতিবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ভারত; আধিপত্য, অভিবাসন আর প্রযুক্তি ব্যবসা মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আছে নয়াদিল্লীতে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে। নয়াদিল্লীর কূটনৈতিক সম্পর্ক মস্কোর সাথে অধিক হৃদ্যতাপূর্ণ হওয়ার পরেও কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো ছেদ ঘটায়নি ওয়াশিংটন।

Image Source: Catch News

নয়াদিল্লীতে নেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত

২০২১ সালের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি ছাড়েন। তার কাছাকাছি সময়েই দায়িত্ব ছাড়েন ট্রাম্পের মনোনীত ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টার। জাস্টারের পর গত বিশ মাস ধরে খালি আছে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পদটি। এর মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন ছয়জন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। বিশ মাস ধরে রাষ্ট্রদূতের পদ খালি থাকা ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথম। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালেও এমন স্থবিরতা দেখা যায়নি রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে।

দায়িত্বে এসে ২০২১ সালের জুনে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনোনীত করেন লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়র এরিক গারচেট্টিকে। গারচেট্টি মেয়র হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ আর ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরের দায়িত্ব পালন করেছেন, আছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগও। ফলে নয়াদিল্লীতে তার মনোনয়নকে দেখা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের কৌশলগত গুরুত্বের প্রতীক হিসেবে।

বাইডেন ও গারচেট্টি; Image Source: NBC News

কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিলেই তিনি দায়িত্ব নিতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো মন্ত্রী, সিভিল অফিসার, রাষ্ট্রদূত এবং বিচারক মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সিনেটের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য। সিনেটের বিভিন্ন কমিটি এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট এবং সিনেটের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে। কমিটিগুলো মনোনীত ব্যক্তিকে জনসম্মুখে জেরা করেন, সার্ভিস রেকর্ড যাচাই-বাছাই শেষে সিনেটে ভোটাভুটির জন্য পাঠায়, সঙ্গে থাকে মনোনীত করা বা না করার ব্যাপারে কমিটির পরামর্শ। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে মনোনয়ন অনুমোদিত বা অনুনোমদিত হয়, অনুমোদিত হলে মনোনীত ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।

রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে কাজ করে সিনেটের কমিটি অন ফরেন রিলেশনস। এই কমিটিই মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে। এরিক গারচেট্টিকে বাইডেন ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সিনেটে এখনও যে ২০ জন রাষ্ট্রদূতের মনোনয়ন ঝুলে আছে, এরিকের মনোনয়ন সেসবের মধ্যে একটি। তথ্যসূত্র দেখাচ্ছে, বর্তমান সিনেট প্রতিটি মনোনয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে তিন মাসের মতো সময় নিচ্ছে, যেটি জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়ে ছিল গড়ে দেড় মাসের মতো। গারচেট্টির নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস এখনও মনোনয়নটি ভোটাভুটিতে তোলেনি, অপেক্ষমান তালিকায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আছেন তিনিই।

এরিক গারচেট্টি; Image Source: Outlook India.

কেন ঝুলে আছে নিয়োগ?

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মনোযোগের কেন্দ্রে আছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হচ্ছে ভারত। ফলে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের জন্যও। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় সব দেশই হয় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র, নতুবা চীনের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আছে। কোনোপক্ষেই না থাকা দেশগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র ভারতই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে শক্তিসাম্য তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের এই গুরুত্ব থাকার পরও, নজিরবিহীনভাবে দুই বছর ধরে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত না থাকার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।

প্রথমত, প্রেসিডেন্ট বাইডেন মনোনীত ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রার্থী এরিক গারচেট্টির বিরুদ্ধে বাইপার্টিজান অভিযোগ আছে। লস অ্যাঞ্জেলসের সাবেক এই মেয়র তার অধীনে কাজ করা এক সিনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেননি। দুজন রিপাবলিকান সিনেটর এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটরদের মধ্যেও এ নিয়ে অস্বস্তি আছে। ফলে, সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস এই মনোনয়ন ভোটাভুটিতে পাঠায়নি।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে সিনেটরদের মধ্যে দলীয় বিভাজন বাড়ছে, বাড়ছে গুরুত্বপূর্ণ মনোনয়নগুলো আটকে দিয়ে প্রশাসনের দক্ষতাকে কমিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। ফলে, যেকোনো মনোনয়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রেই আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। গারচেট্টি এই প্রবণতারই শিকার।

এরিক গারচেট্টি; Image Source: CNN.

তৃতীয়ত, সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির মেজরিটি রয়েছে, সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস থেকে এরিক গারচেট্টির মনোনয়ন ভোটাভুটিতে পাঠালে সেটি পাশ হয়ে আসার কথা। এমন প্রেক্ষাপতে দুই বছর ধরে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের মনোনয়ন আটকে থাকার অর্থ হলো ডেমোক্রেটিক পার্টিতেও ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন আছে, আছে বিভিন্ন গ্রুপের স্বার্থের সংঘাত।

চতুর্থত, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে রাশিয়ার আর ইউক্রেনের যুদ্ধ। যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে মুখ্য ভূমিকা নিতে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। নীতিনির্ধারণী জায়গা হিসেবে এরপর থেকেই সিনেটে অনেক অনিয়মিত বিষয় কার্যতালিকায় ঢুকেছে, যেটি মনোনয়ন সংক্রান্ত কাজগুলোকে আরো ধীর করে তুলেছে।

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রয়োজন

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নেই, রাষ্ট্রদূতের মনোনয়ন সময়ে দীর্ঘ সময় ধরেও আটকে আছে ভারতের ক্ষেত্রেই। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ২০২২ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রদূত পেয়েছে পাকিস্তান, ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা, এবং অক্টোবরে নেপাল। এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রদূত পেয়েছে বাংলাদেশ।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নেই; Image Source: Indiablooms.

ভারতের ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূতের অনুপস্থিতিতে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে দিয়েই দায়িত্ব চালিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে দিয়েও নয়াদিল্লীর সাথে কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখছে ওয়াশিংটন। কিন্তু, ভারত কি এই ব্যবস্থায় খুশি? আপাতদৃষ্টিতে ভারতীয় ভাষ্যকারদের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, তারা খুশি নন। তাদের ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রয়োজন।

This article is written in Bangla about the delay in appointing US ambassador to India. All the necessary links are hyperlinked inside.
Feature Image Source: Outlook India

Related Articles