Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এলিমিনেট দ্য নিউ জার: ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার যত প্রচেষ্টা

কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের (ব্রিটেন, ভারত ও অন্যান্য) প্রচারমাধ্যমে এই মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, সম্প্রতি রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে খুন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ‘জেনারেল এসভিআর’ নামক একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে সর্বপ্রথম এই দাবিটি প্রকাশিত হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রচারমাধ্যম সেখান থেকে উক্ত সংবাদটি সংগ্রহ করে প্রচার করতে শুরু করে। অবশ্য রুশ রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এই সংবাদ অস্বীকার করেছেন এবং এর সত্যতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধরে নেয়া চলে যে, উক্ত সংবাদটি ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আবার রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুদের মুখোমুখি হয়েছেন: অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে চেচেন মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো, রুশ ধনকুবেররা ও বিভিন্ন রুশ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বৈদেশিক ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব, ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়াকেন্দ্রিক বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপ পুতিনের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সুতরাং পুতিনের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা সংঘটিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

১৮৬৫ সালে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন ওয়াশিংটনের একটি থিয়েটারে গুপ্তঘাতক জন বুথের হাতে নিহত হন; Source: Adam Cuerden/Wikimedia Commons

বিশ্বের বহু খ্যাতনামা রাষ্ট্রনায়ক গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন, এবং তাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন ও জন কেনেডি, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হক এবং সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ইবন আব্দুল আজিজ। অনুরূপভাবে, বিশ্বের বহু খ্যাতনামা রাষ্ট্রনায়কের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট ও ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, তুর্কি রাষ্ট্রপতি রেজেপ এরদোয়ান এবং কিউবান রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো।

রাশিয়ার ইতিহাসেও শীর্ষ রাষ্ট্রনায়কদের গুপ্তহত্যা বা গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার শিকার হওয়ার বেশ কিছু নজির রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রুশ সম্রাট তৃতীয় পিওতর, প্রথম পাভেল, দ্বিতীয় আলেক্সান্দর এবং দ্বিতীয় নিকোলাই গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির লেনিন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব ইয়োসেব স্তালিন ও লিওনিদ ব্রেঝনেভের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, অতীতে রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

সেইন্ট পিটার্সবার্গ (ফেব্রুয়ারি ২০০০)

২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গে রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন শহরটির প্রাক্তন মেয়র আনাতোলি সোবচাকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সোবচাক ছিলেন সেইন্ট পিটার্সবার্গের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মেয়র এবং ১৯৯০–এর দশকে পুতিনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। সোবচাকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সময় পুতিনকে খুন করার একটি প্রচেষ্টা চালানো হয়। উল্লেখ্য, এ সময় দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ (১৯৯৯–২০০৯) চলছিল।

রুশ নিরাপত্তা সংস্থা ‘ফেডারেল প্রোটেক্টিভ সার্ভিসে’র (এফএসও) তদানীন্তন পরিচালক ইউরি ক্রাপিভিনের ভাষ্য অনুসারে, এ সময় চেচেন মিলিট্যান্টরা পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা করেছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা দুজন স্নাইপারকে ভাড়া করে এবং সোবচাকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সময় তাদের পুতিনের ওপর গুলি চালানোর কথা ছিল। কিন্তু রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এই পরিকল্পনাটি সম্পর্কে জেনে যায় এবং পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে একটি ‘বিশেষ অভিযান’ চালিয়ে উক্ত স্নাইপারদের গ্রেপ্তার করে। এর ফলে পুতিনকে খুন করার উক্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে আর কোনো তথ্য জানা যায়নি।

আনাতোলি সোবচাকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের ডানে সোবচাকের স্ত্রী ও রুশ সিনেটর লুদমিলা নারুসোভা এবং পুতিনের বামে সোবচাকের মেয়ে ও রুশ বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ সেনিয়া সোবচাক; Source: Alamy via BBC

ইয়ালতা (আগস্ট ২০০০)

২০০০ সালের ১৮–১৯ আগস্ট ইউক্রেনের ক্রিমিয়া স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের ইয়ালতা শহরে ‘কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস’ভুক্ত (সিআইএস) রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন উক্ত সামিটে অংশগ্রহণ করেন। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিকিউরিটি সার্ভিস অফ ইউক্রেনে’র (এসবিইউ) তদানীন্তন পরিচালক লিওনিদ দেরকাচের ভাষ্যমতে, এ সময় চেচেন ও বিদেশি মিলিট্যান্টরা পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা করেছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে, সামিটের প্রবেশমুখে পুতিনকে বহনকারী গাড়িটি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়া হবে।

কিন্তু এসবিইউ উক্ত পরিকল্পনাটি সম্পর্কে জানতে পারে এবং একটি অভিযান চালিয়ে পরিকল্পনাটির সঙ্গে যুক্ত ছয়জন মিলিট্যান্টকে গ্রেপ্তার করে। উক্ত মিলিট্যান্টদের মধ্যে চারজন ছিল জাতিগত চেচেন এবং বাকি দুজন ছিল মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসী। রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ইয়ালতা সামিটের সময় চেচেন ও বিদেশি মিলিট্যান্টরা পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। গ্রেপ্তারকৃত মিলিট্যান্টদের পরিণতি সম্পর্কে আর কোনো তথ্য জানা যায়নি।

ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসবিইউ’–এর তদানীন্তন পরিচালক লিওনিদ দেরকাচ; Source: World Today News

বাকু (জানুয়ারি ২০০১)

২০০১ সালের ৯–১০ জানুয়ারি রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন আজারবাইজানের রাজধানী বাকু সফর করেন। তদানীন্তন আজারবাইজানি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী জেনারেল নামিক আব্বাসভের ভাষ্যমতে, পুতিনের আজারবাইজান সফরের কয়েক সপ্তাহ আগে আজারবাইজানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পারে যে, পুতিনকে খুন করার পরিকল্পনা চলছে। কিয়ানান রোস্তাম নামক একজন ইরাকি মিলিট্যান্ট, যে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল এবং চেচেন মিলিট্যান্টদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, এই উদ্দেশ্যে বিস্ফোরকসহ আজারবাইজানে অনুপ্রবেশ করে।

কিন্তু পুতিনের আজারবাইজান সফরের ১০ দিন আগেই আজারবাইজানি গোয়েন্দারা রোস্তামকে গ্রেপ্তার করে এবং পুতিনের বাকু সফর নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে আজারবাইজানি সরকার রোস্তামকে তার অপরাধের জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। রোস্তামের পরবর্তী জীবন সম্পর্কে আর কোনো তথ্য জানা যায়নি।

লন্ডন (অক্টোবর ২০০৩)

২০০৩ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য সানডে টাইমসে’ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দাবি করা হয় যে, ব্রিটিশ পুলিস সংস্থা ‘মেট্রোপলিটান পুলিস সার্ভিস’ (এমপিএস; ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড’ নামে সমধিক পরিচিত) রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, লন্ডনে বসবাসরত রুশ ধনকুবের ও পুতিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বোরিস বেরেজোভস্কি এই পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। তাদের ভাষ্য অনুসারে, ২০০৩ সালের অক্টোবরে রুশ অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসে’র (এফএসবি) দুই কর্মকর্তা আন্দ্রেই পোনকিন ও আলেক্সেই আলেখিন লন্ডন সফর করেন এবং এফএসবির প্রাক্তন কর্মকর্তা আলেক্সান্দর লিৎভিনেঙ্কোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উল্লেখ্য, লিৎভিনেঙ্কো ছিলেন বেরেজোভস্কির সহযোগী এবং ২০০০ সালের অক্টোবরে তিনি রাশিয়া থেকে ব্রিটেনে পালিয়ে এসেছিলেন। অর্থাৎ, এফএসবির দৃষ্টিতে, লিৎভিনেঙ্কো ছিলেন একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’।

রুশ অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘এফএসবি’র প্রাক্তন কর্মকর্তা ও রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক শত্রু আলেক্সান্দর লিৎভিনেঙ্কো; Source: Alistair Fuller/AP via NPR

‘দ্য সানডে টাইমসে’র বক্তব্য অনুসারে, উক্ত রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা লিৎভিনেঙ্কোর সঙ্গে মিলে পুতিনকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে, পুতিনের পরবর্তী বিদেশ সফরের সময় চেচেন মিলিট্যান্টদেরকে ব্যবহার করে পুতিনকে খুন করা হবে। লিৎভিনেঙ্কোর ভাষ্যমতে, এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য বেরেজোভস্কির অর্থায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু এমপিএস কর্মকর্তা পল ক্লার্কের ভাষ্যমতে, ১২ অক্টোবর এমপিএস সদস্যরা দুই রুশ নাগরিককে (সম্ভবত পোনকিন ও আলেখিন) গ্রেপ্তার করে। তারা ব্রিটিশ সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন লঙ্ঘন করেছে বলে এমপিএস সন্দেহ করছিল, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি এবং ১৭ অক্টোবর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এর ফলে পুতিনকে খুন করার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।

রুশ সাংবাদিকরা রাশিয়ায় পোনকিন ও আলেখিনকে খুঁজে বের করে তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পোনকিন সম্পূর্ণ ব্যাপার অস্বীকার করেন। আলেখিন ব্রিটেন সফর ও লিৎভিনেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারটি স্বীকার করেন, কিন্তু কোনো ধরনের চক্রান্তে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বেরেজোভস্কিও সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পোনকিন ও আলেখিনের শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানা যায়নি। কিন্তু ২০০৬ সালের নভেম্বরে লিৎভিনেঙ্কোকে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে খুন করা হয় (যেটির সঙ্গে এফএসবি জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হয়) এবং ২০১৩ সালের মার্চে বেরেজোভস্কি আত্মহত্যা করেন।

তেহরান (অক্টোবর ২০০৭)

২০০৭ সালের ১৬ অক্টোবর ইরানের রাজধানী তেহরানে কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন উক্ত সামিটে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সামিটের আগে রুশ বার্তা সংস্থা ‘ইন্টারফ্যাক্স’ দাবি করে যে, তেহরানে পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা উন্মোচিত হয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছিল যে, তেহরানে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে পুতিনকে খুন করার ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুসারে, উক্ত সংবাদটি গুজব হয়ে থাকতে পারে, আবার সত্যি সত্যিই চেচেন/বিদেশি মিলিট্যান্টরা পুতিনকে খুন করার পরিকল্পনাও করে থাকতে পারে।

ইন্টারফ্যাক্সের বক্তব্য অনুসারে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পুতিনকে উক্ত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেছিল, কিন্তু পুতিন তেহরান সফর বাতিল করেননি। উল্লেখ্য, ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, সংবাদটি ছিল ভিত্তিহীন এবং তাদের মতে, রুশ–ইরানি সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে ইরানের শত্রুরা এই গুজব ছড়িয়েছিল। বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত পুতিন ইরান সফর করেন এবং এ সময় তাকে খুন করার কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়নি।

মস্কো (মার্চ ২০০৮)

২০০৮ সালের ২ মার্চ রাশিয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তদানীন্তন রুশ প্রথম উপ–প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ উক্ত নির্বাচনে বিজয়ী হন। সেদিন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়্যারে তদানীন্তন রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন ও সদ্য নির্বাচিত মেদভেদেভের ভাষণ প্রদানের কথা ছিল। এ সময় মিলিট্যান্টরা পুতিন ও মেদভেদেভ উভয়কে খুন করার পরিকল্পনা করে এবং এই উদ্দেশ্যে সেখানে একজন স্নাইপার অবস্থান গ্রহণ করে। কিন্তু এফএসবি উক্ত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে পারে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে উক্ত স্নাইপারকে গ্রেপ্তার করে।

রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন (ডানে) এবং প্রাক্তন রুশ রাষ্ট্রপতি ও রুশ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান উপ–সভাপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ (বামে); Source: government.ru via Wikimedia Commons

শাহভেলাদ ওসমানভ নামক ২৪ বছর বয়সী উক্ত স্নাইপার ছিল তাজিকিস্তানের নাগরিক। তার কাছ থেকে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়, যেগুলোর মধ্যে ছিল একটি স্নাইপার রাইফেল এবং একটি কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেল। ওসমানভের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করার অভিযোগ আনয়ন করা হয়, কিন্তু এটি ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। পরবর্তীতে ওসমানভ বা তার সহযোগীদের বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ওদেসা (ফেব্রুয়ারি ২০১২)

২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রুশ রাষ্ট্র–নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ানে’ দাবি করা হয় যে, রুশ ও ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যৌথভাবে রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনকে খুন করার একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছে। তাদের ভাষ্য অনুসারে, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়াভিত্তিক মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ইমারাত কাভকাজে’র আমির দোকু উমারভ পুতিনকে খুন করার উদ্দেশ্যে কতিপয় মিলিট্যান্টকে ইউক্রেনের ওদেসায় প্রেরণ করেন। কিন্তু উক্ত মিলিট্যান্টরা যে বাসায় অবস্থান করছিল, সেখানে একটি বিস্ফোরণ ঘটার ফলে তাদের একজন নিহত হয় এবং ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা ইলিয়া পিয়ানজিন ও আদাম ওসমায়েভ নামক অপর দুই মিলিট্যান্টকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত মিলিট্যান্টদের ভাষ্যমতে, তাদেরকে ওদেসা থেকে রাশিয়ায় প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর আক্রমণ চালাতে বলা হয়েছিল এবং এরপর পুতিনকে খুন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

চেচেন মিলিট্যান্ট আদাম ওসমায়েভ এবং তার স্ত্রী আমিনা ওকুয়েভা; Source: AFP/Getty Images via BBC

পিয়ানজিন ও ওসমায়েভের গ্রেপ্তারের ফলে এই পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ইউক্রেনীয় সরকার ওসমায়েভকে আড়াই বছর কারারুদ্ধ করে রাখে, কিন্তু রাশিয়ার বার বার দাবি করা সত্ত্বেও তারা ওসমায়েভকে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করেনি। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে সংঘটিত ইউরোমাইদান বিপ্লব/অভ্যুত্থানের পর ওসমায়েভকে মুক্তি দেয়া হয় এবং সে দনবাস যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ইউক্রেনের কিয়েভে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা ওসমায়েভ ও তার স্ত্রী আমিনা ওকুয়েভার ওপর আক্রমণ চালায়। বন্দুকধারীদের গুলিতে ওকুয়েভা নিহত হয়, কিন্তু ওসমায়েভ প্রাণে বেঁচে যায়।

পরিশিষ্ট

সামগ্রিকভাবে, রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনকে খুন করার অন্তত ৭টি প্রচেষ্টা সম্পর্কিত তথ্য প্রচারমাধ্যমে এসেছে। প্রতিটি ঘটনাই ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, আবার প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে তথ্য–প্রমাণের স্বল্পতার কারণে নানা ধরনের সমালোচনা ও ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’রও সৃষ্টি হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনাগুলোর বাইরেও পুতিনকে খুন করার আরো কতিপয় প্রচেষ্টার উল্লেখ প্রচারমাধ্যমে পাওয়া যায়, কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে সেগুলাকে এই নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অবশ্য সবশেষে বলা যেতে পারে যে, পুতিনকে খুন করার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাটি সম্পর্কিত গুজব কতটুকু সত্যি বা মিথ্যা, সেটি এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত হলেও এটি নিশ্চিত যে, অতীতে বেশ কয়েকবার সত্যি সত্যিই পুতিনকে খুন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

Related Articles