Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেনারেল আসিম মুনির: পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান

স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোতে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীর প্রধানই পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সাংগঠনিক কাঠামো, সুস্পষ্ট চেইন অব কমান্ডের পাশাপাশি জনসমর্থন পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করেছে। পৃথিবীর খুব বেশি দেশে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয় না। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে মাসব্যাপী আলোচনা চলছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান নিয়োগের উপর নজর রেখেছে এশিয়া-প্যাসিফিকে ক্ষমতা বিস্তারে আগ্রহী দেশগুলোও।

পাকিস্তানের সাধারণত মাসখানেক আগেই শীর্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের তালিকা সেনা সদর থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, সেখান থেকে সম্ভাব্য সেনাপ্রধানদের নাম পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট আর সেনাপ্রধানের পরামর্শক্রমে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দেন। এবার পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে, ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর অবসরে যাওয়া জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়েছে একেবারে শেষ সপ্তাহে।

বিতর্কিত হয়েই দায়িত্ব ছেড়েছেন জেনারেল বাজওয়া; Image Source: The Dawn.

জেনারেল আসিম মুনীর

সেনাপ্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় সেনা সদর থেকে শীর্ষ ছয়জন লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের তালিকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানোর মধ্যে দিয়ে। তারা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহীর সামশাদ মির্জা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযহার আব্বাস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল নোমান মাহমুদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আমির।

শীর্ষ ছয় লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরকে। কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে আসিম মুনিরই ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র। যদিও তার ২৭ নভেম্বরে অবসরে যাওয়ার তারিখ এবং ২৯ নভেম্বর নিয়োগের তারিখের মধ্যে দু’দিনের পার্থক্য সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি করেছিল, তবে তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের ১৭ তম সেনাপ্রধান হিসেবে।

সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকা শীর্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেলরা; Image Source: Edules.

জেনারেল আসিম মুনির পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনড হন ১৯৮৬ সালে, অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে। সোর্ড অব অনার পাওয়া জেনারেল আসিম মুনির কমিশনড হন ২৩ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টে। কর্মজীবনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং পেয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির। জেনারেল বাজওয়ার অধীনে দুই বছর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির, পরবর্তীতে নেতৃত্ব দিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-কেও। ডিজি এমআই এবং ডিজি আইএসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রথম অফিসার জেনারেল আসিম মুনির।

তিনি আইএসআই-এর সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী ডিজি, দায়িত্বে ছিলেন মাত্র নয় মাস। সেখান থেকে তাকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদকে, যিনি আইএসআই এর দায়িত্বের শেষদিকে ছিলেন তুমুল আলোচনা-সমালোচনায়। প্রচার আছে- প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরার ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সতর্ক করেছিলেন জেনারেল মুনির, যার ফলেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় ডিজি আইএসআই-এর পদ থেকে।

জেনারেল আসিম মুনির; Image Source: The Financial Express.

ডিজি আইএসআই-এর দায়িত্ব থেকে জেনারেল আসিম মুনিরের পোস্টিং করা হয় ৩০ কোরের কমান্ডার হিসেবে, সেখান থেকে তাকে পোস্টিং করা হয় সেনাসদরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে। সর্বশেষ, ২৯ নভেম্বর ২০২২ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন জেনারেল আসিম মুনির, অবসরে যান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।

জেনারেল মুনির আসলে কার লোক?

জেনারেল মুনিরকে এবার যখন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিনিয়রিটি মেনে সেনাপ্রধান নিয়োগের যুক্তি তুলে ধরা হয়। কিন্তু, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সিনিয়রিটির প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করেই যে কেবল সেনাপ্রধান নিয়োগ হয় না, সেটি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাত্রই জানেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের দল মুসলিম লীগ এর আগে পাঁচবার সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে, কখনোই সিনিয়রিটির প্রিন্সিপাল মানেনি।

ফলে, জেনারেল মুনিরের নিয়োগ কেবল মাত্র সিনিয়রিটির উপর ভিত্তি করে হয়নি। পাকিস্তানের সেনা অন্দরে জেনারেল মুনির পরিচিত মুসলিম লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে, ডিজি আইএসআই হিসেবে ইমরান খানের বিরাগভাজন হওয়ার ঘটনা জেনারেল মুনিরকে আরো মুসলিম লীগ ঘনিষ্ঠ করেছে। ফলে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সিনিয়রিটির কথা বললেও তিনি আসলে নিজের পছন্দের প্রার্থীকেই সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জেনারেল মুনিরের ব্যাপারে সম্মতি ছিল মুসলিম লীগ নেতা নেওয়াজ শরীফেরও।

আবার, দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়া তুলে ধরেছেন জেনারেল মুনিরের সাথে তার দুই যুগের সম্পর্কের কথা। জেনারেল বাজওয়ার অধীনে ডিজি এমআই এবং ডিজি আইএসআই হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, জেনারেল বাজওয়ার আস্থাভাজন সৈনিক ছিলেন জেনারেল মুনির।

জেনারেল বাজওয়ার আস্থাভাজন সৈনিক জেনারেল মুনির; Image Source: Twitter.

সব মিলিয়ে, জেনারেল মুনিরকে নিয়ে বিদ্যমান পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যমত্য লক্ষ্য করা গেছে, যার ফলে সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে বিদায়ী সেনাপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোন টানাপোড়ন লক্ষ্য করা যায়নি।

জেনারেল মুনিরের সামনে চ্যালেঞ্জ

জেনারেল বাজওয়া তার দুই মেয়াদে ছয় বছরের দায়িত্ব পালন শেষে এক বিভাজিত সামরিক বাহিনীকে রেখে যাচ্ছেন, সেনাবাহিনী গত সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম জনসমর্থন উপভোগ করছে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গ্রহণযোগ্যতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জেনারেল আসিম মুনিরের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, বিভাজিত সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করা, সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতাকে ফিরিয়ে আনা। কোরআনে হাফেজ জেনারেল মুনিরকে দেখা হয় এক অন্তর্ভূক্তিমূলক চরিত্র হিসেবে, যিনি বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে দক্ষতার সাথে সমতা বিধান করতে পারেন।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আসবে ইমরান খানের দিক থেকে; Image Source: Wall Street Journal

পাকিস্তানের রাজনীতি এখন একটি অস্থিতিশীল সময় পার করছে, রয়েছে অর্থনৈতিক সংকটেও। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইমরান খান ক্রমাগত দাবি তুলছেন আগাম নির্বাচনের। সেনাবাহিনীকে রাজনীতির বাইরে রাখাও চ্যালেঞ্জ হবে জেনারেল আসিম মুনিরের জন্য। আবার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখে সেনাবাহিনী। ইন্দো-প্যাসিফিকে নতুন রাজনৈতিক আবর্তন পাকিস্তানকে নতুন ভারসাম্যের দিকে ঝুঁকতে হবে, সেই ভারসাম্য তৈরি করতে হবে সেনাপ্রধানকেই।

সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকা জেনারেলদের মধ্যে আগাম অবসর নিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযহার আব্বাস। অনেক শীর্ষ জেনারেল আগামী এক বছরের মধ্যেই অবসরে যাবেন। ফলে, জেনারেল মুনিরের হাতে সুযোগ আসবে সেনা অবকাঠামো নতুন করে সাজানোর, নিজেকে সফল সেনাপ্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার।

This article is written in Bangla about the newly appointed COAS of Pakistan Army, General Asim Munir. All the necessary links are hyperlinked inside.
Feature Image: TRT World

Related Articles