Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হিকিকোমোরি: জাপানের আধুনিক সন্ন্যাসী কিংবা একটি মানসিক ব্যাধি

আগেকার দিনে কেউ সংসারধর্ম ত্যাগ করে, চেনা পরিচিত সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দূরে কোথাও চলে গেলে বা গা ঢাকা দিলে, সমাজের বাকিরা বলত সে সন্ন্যাস নিয়েছে। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কেবল সংসার ত্যাগ করে ঈশ্বরের চিন্তায় মগ্ন হওয়াদেরকেই সন্ন্যাসী বলা হলেও, প্রচলিত অর্থে সমাজ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন যে কাউকেই সন্ন্যাসী বলে অভিহিত করা হতো।

কিন্তু আজকের দিনে এরকম সন্ন্যাসী বিরল হয়ে উঠেছে। কেননা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে কেউ চাইলেই নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে না। শারীরিকভাবে কেউ হয়তো লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়, তবে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম, যেমন- মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতির কল্যাণে সীমিত পরিসরে হলেও সমাজের অন্যদের সাথে তার যোগাযোগ রক্ষা হয়ই।

তবে তাই বলে কেউ যেন মনে করবেন না বর্তমান যুগে সন্ন্যাসীরা একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা এখনও বহাল তবিয়তেই আছে, স্রেফ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভোল পাল্টেছে আর কI। শুধু জাপানেই পাঁচ লক্ষাধিক এমন আধুনিক সন্ন্যাসী রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় হিকিকোমোরি। তারা যাবতীয় সামাজিক যোগাযোগ থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে, মাসের পর মাস ঘরের মাঝেই নিজেদেরকে আবদ্ধ রাখে। এমনকি অনেক সময় এমনও হয় যে পুরো এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে তারা ঘরের বাইরে পা রাখেনি।

জাপানে বৃদ্ধি পাচ্ছে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন মানুষের সংখ্যা; Image Source: Business Insider

২০১৬ সালে জাপানি সরকারের চালানো এক জরিপ অনুযায়ী, দেশটিতে হিকিকোমোরির সংখ্যা ৫,৪১,০০। অর্থাৎ দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.৫৭%-ই এমন। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিকিকোমোরির প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। তাছাড়া শুধু বয়ঃসন্ধিকালীন বা তরুণ প্রজন্মই নয়, হিকিকোমোরি হওয়ার প্রবণতা সমানভাবে লক্ষণীয় দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক, এমনকি মধ্যবয়স্কদের মাঝেও।

হিকিকোমোরি কী?

যে কাউকেই কি হিকিকোমোরি বলে অভিহিত করা যায়? না, তা যায় না। জাপানি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দুইটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে, যার যেকোনো একটি পূরণ হলে একজন মানুষকে হিকিকোমোরি বলা যেতে পারে। একজন ব্যক্তিকে তখনই হিকিকোমোরি বলা যাবে, যখন সে কোনো শারীরিক অক্ষমতা বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতেই ছয় মাস বা ততোধিক সময়কাল ধরে ঘরের বাইরে যায়নি, কিংবা সমাজের অন্য কারও সাথে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ তৈরি করেনি।

হিকিকোমোরি এখন একটি বিশেষ ধরনের মানসিক অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার ফলে একজন মানুষ ঘরের মাঝে, সমাজের সাথে যোগাযোগহীন অবস্থায় নিজেকে বন্দি রাখে। জাপানি সরকারের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে দেশটির আরো ১৫ লক্ষাধিক মানুষ হিকিকোমোরিতে পরিণত হবে। তাই এটিকে এখন জাপানের ‘মূলধারার সমস্যাগুলোর’ একটি।

হিকিকোমোরি হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় মাঝবয়সীদের মাঝেও; Image Source: Getty Images

প্রাথমিকভাবে আরো মনে করা হয়েছিল যে, এই সমস্যাটি বুঝি কেবল জাপানেরই নিজস্ব। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পার্শ্ববর্তী আরো অনেক দেশের মানুষের মাঝেই এই সমস্যাটি ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি গবেষণা চালিয়ে আন্দাজ করা হয়েছিল যে, দেশটিতে বয়ঃসন্ধিকালীন পর্যায়ে নিজেদেরকে সামাজিকতা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া মানুষের সংখ্যা ৩৩,০০০, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ০.৩%। অপরদিকে ২০১৪ সালে হংকংয়েও অনুরূপ একটি জরিপ চালিয়ে বের করা হয়েছিল যে, দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.৯% মানুষ সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন।

ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এতক্ষণ যারা ভাবছেন এই সমস্যাটি কেবল এশীয়দের মাঝেই সীমাবদ্ধ, তারা সম্পূর্ণ ভুল। ইদানিং এমন মানুষের দেখা মিলছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতেও। অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যাটি হয়তো গোটা পৃথিবীতেই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে।

কেন এমন অবস্থা হিকিকোমোরিদের?

একজন মানুষ কেন সাধারণ থেকে হিকিকোমোরিতে পরিণত হয়, তার পেছনের সুস্পষ্ট কোনো কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এক্ষেত্রে মানসিক চাপকে একটি বড় প্রভাবক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জাপানও অনেক এগিয়ে গেছে, এবং সেখানে প্রতিযোগিতার বাজারও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিন্তু এমন একটি অবস্থার সাথে সবাই মানিয়ে নিতে পারে না। এমন অনেকে আছে যারা হয়তো সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও বেঁধে দেয়া নিয়ম-শৃঙ্খলার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, তার কাছ থেকে সমাজের যে আশা তা পূরণের আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সেসব মানুষজন সমাজের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করে। এছাড়া প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে ব্যর্থ হওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মস্থলে ভালো পারফর্মেন্স করতে না পারা বা অন্যদের কাছে অপদস্থ হওয়া প্রভৃতি কারণেও অনেকে সমাজ থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়।

এছাড়া হিকিকোমোরিদের মাঝে একটি সাধারণ সাদৃশ্য দেখা গেছে যে তারা অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপারে অনেক বিজ্ঞ ও ওয়াকিবহাল। ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস প্রভৃতিতে অনেক হিকিকোমোরিই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পারদর্শী থাকে, এবং বাস্তব জীবনে সামাজিকতা রক্ষার চেয়ে প্রযুক্তিগত কার্যকলাপে ব্যস্ত থাকাকেই তারা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাছাড়া আজকাল সশরীরে বাইরের দুনিয়ায় বের না হয়েও প্রযুক্তির কল্যাণে অপরের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে, কেনাকাটা করা যাচ্ছে, বিনোদনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ খুঁজে নেয়া যাচ্ছে, যে কারণে ঘরের বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে মেশাও যে জরুরি এই চিন্তাটাই অনেকের মাথা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

ঘরের বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে মেশার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করে না অনেক হিকিকোমোরি; Image Credit: Maika Elan

তবে সর্বাগ্রে এটি একটি মানসিক সমস্যা, এবং এই মানসিক সমস্যাটির উপসর্গ একেকজনের কাছে একেক রকমের হয়ে থাকতে পারে। যেমন- অনলাইন ওয়েবসাইট কোয়ার্টজে নিজের আচরণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একজন হিকিকোমোরি লিখেছেন, তিনি অনেক অলস। কোনো কাজ করার ক্ষেত্রেই তিনি উদ্যম বা মানসিক স্পৃহা খুঁজে পান না। এমনকি সোফা থেকে উঠে টয়লেট যাওয়ার জন্যও দীর্ঘ সময় ধরে তাকে নিজের মনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।

অন্য আরেকজন হিকিকোমোরি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তার নাকি মাত্রাতিরিক্ত শুচিবায় রয়েছে। দিনের ভিতর বেশ কয়েকবার তিনি ঘন্টার উপর সময় লাগিয়ে নিজে গোসল করেন, এবং এরপর আবার বাথরুমের টাইলস ঘষে পরিষ্কার করেন। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির মধ্যে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) চরম আকার ধারণ করেছে। অন্য আরেক হিকিকোমোরি বলেন, তিনি সারাদিন ধরেই নাকি ভিডিও গেমস খেলে যেতে পারেন, কারণ ভিডিও গেমস খেলা নাকি তার মনকে ধীর-স্থির ও শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

হিকিকোমোরিদের প্রতি জাপানী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

অন্য অনেক দিক থেকে জাপান পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এগিয়ে গেলেও, মানসিক সমস্যার প্রতি সচেতনতার ক্ষেত্রে তারা একদমই প্রগতিশীল নয়। মানসিক সমস্যাকে এখনও বেশিরভাগ জাপানীই লজ্জাজনক বলে মনে করে, আর তাই মানসিক সমস্যার বিষয় নিয়ে সেখানে কেউ খোলাখুলি আলাপও করতে চায় না। জাপানের বেশিরভাগ মানুষ এখনও ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন কিংবা স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো অতি পরিচিত মানসিক সমস্যাগুলোকেই মেনে নিতে পারেনি, তাই হিকিকোমোরিদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে, তা আন্দাজ করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

জাপানে হিকিকোমোরিদের সামাজিক অবস্থান খুবই করুণ। অনেক হিকিকোমোরিই তাদের পরিবারের সাথে বাস করে, এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের সমস্যার ব্যাপারে একদমই সংবেদনশীল নয়। অনেক সময়ই তারা বিভিন্ন সাপোর্ট অর্গানাইজেশনে ফোন দিয়ে লোকদের খবর দেয়, যেন সেই লোকরা ধরে-বেঁধে হিকিকোমোরিদের ঘরের বাইরে নিয়ে আসে।

হিকিকোমোরিদের প্রতি সাধারণ জাপানিদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই নেতিবাচক; Image Credit: Maika Elan

জাপানে হিকিকোমোরি নিউজ নামে হিকিকোমোরিদের জন্য একটি সংবাদপত্র রয়েছে, যেটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হলেন নাওহিরো কিমুরা। তার কথা থেকেও স্পষ্ট হয় জাপানী সমাজে হিকিকোমোরিদের অবস্থান।

“জাপানের মানুষ হিকিকোমোরিদের একটি বিপদজনক গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে, যেন তারা সম্ভাব্য অপরাধী, সমাজের বোঝা কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু এমন চিন্তাধারা সঠিক নয়। হিকিকোমোরি মানে হলো স্রেফ যারা সমাজ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে।”

জাপানের অর্থনীতিতে হিকিকোমোরিদের প্রভাব

জাপানী সরকার ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে একটি মস্ত বড় চিন্তার কারণ হলো হিকিকোমোরিরা। যেহেতু তারা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নেয় না, তাই তারা কোনো অর্থকরী কাজেও অংশ নেয় না, যার ফলে ভুগতে হয় জাপানের অর্থনীতিকে।

হিকিকোমোরিদের কারণে অর্থনীতির মূলত দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, হিকিকোমোরিরা যেহেতু অর্থ উপার্জন করে না, তাই তারা পরিবারের অন্যদের উপরই নির্ভরশীল থাকে। কিন্তু যখন পরিবারের প্রধান আয় করা মানুষটি মারা যায় বা অন্য কোনো অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তখন বিপাকে পড়ে জাপানি সরকার। কেননা তখন হিকিকোমোরিদেরকে ভাতা প্রদান করতে হয় সরকারকে। দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো, জাপানে কর্মজীবী শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশটিতে ইতিমধ্যেই বৃদ্ধ ও কাজ করার উপযোগী নয় এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রচন্ড রকমের বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে হিকিকোমোরিরা কোনো কাজ না করায়, জাপানে চাকরির বাজারে এখন আগ্রহী মানুষের ভীষণ সংকট। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে যেখানে ভ্যাকেন্সির তুলনায় আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে জাপানে প্রতিটি আগ্রহী ব্যক্তির বিপরীতে দেড়খানা করে চাকরির ভ্যাকেন্সি রয়েছে।

২০১৬ সালে তাই জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাই ঘোষণা দেন একটি বিশেষ পরিকল্পনা: জাপানের প্রতিটি শহরে গড়ে তোলা হবে কাউন্সেলিং সেন্টার, এবং সেখানকার সাপোর্টিং স্টাফরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হিকিকোমোরিদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করবে যেন তারা বাড়ির বাইরে এসে কাজ করতে শুরু করে।

সমাধান কী?

হিকিকোমোরিদের কারণে জাপানে যে একটি বিশাল সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এখন প্রশ্ন হলো, এই সমস্যার সমাধান কী? অর্থাৎ কীভাবে হিকিকোমোরিদেরকে আবারও সমাজে ফিরিয়ে আনা যায়?

কিয়োকো হলেন এমন একজন প্রাক্তন হিকিকোমোরি। বয়স বিশের কোঠায় থাকতে তিনি হিকিকোমোরিতে পরিণত হয়েছিলেন, কিন্তু প্রায় এক দশক বাদে তিনি আবার স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে ফিরে এসেছেন। হিকিকোমোরি থাকাকালীন তিনি একবার আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, এবং প্রায় মরতেই বসেছিলেন। কিন্তু তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন, এবং পরবর্তীতে একজন মানসিক চিকিৎসকের সহায়তায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এখন তার বয়স ৪০ হতে চলেছে। তিনি অন্য হিকিকোমোরিদের সাথে কথা বলছেন, তাদের জন্য ইয়োকোহামায় সেলফ-হেল্প গ্রুপ গড়ে তুলছেন। এসবের পেছনে লক্ষ্য একটিই, যেন হিকিকোমোরিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

এছাড়াও জাপানে বহু স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপের জন্ম হয়েছে, যারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিকিকোমোরিদের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়া এবং তাদের সামাজিকীকরণ সম্পন্ন করা। এছাড়া আবার কিছু কিছু গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হিকিকোমোরিদের সাথে আলাপ চালাচ্ছে, এবং চেষ্টা করছে কোনোভাবে তাদেরকে নিজের ঘরের বাইরে বের করে আনা যায় কি না।

হিকিকোমোরিরা প্রচন্ড রকমের অগোছালো হয়; Image Credit: Maika Elan

জাপানে হিকিকোমোরিদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু সংবাদপত্রও প্রকাশিত হচ্ছে, যারা একই সাথে দুটি লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রথমত, তারা হিকিকোমোরিদেরকে বাইরের দুনিয়ার সাথে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে, এবং দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষকে হিকিকোমোরিদের ব্যাপারে সঠিক ধারণা প্রদান করছে। এভাবে বাইরের দুনিয়ার সাথে হিকিকোমোরিদের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে, যাতে করে হিকিকোমোরিরা বাইরের দুনিয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে, আর বাইরের দুনিয়াও হিকিমোরিদের ব্যাপারে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে।

এভাবে জাপানে সরকারিভাবে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে হিকিকোমোরিদের মানসিক সমস্যা দূর করে, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত খুব উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্যের দেখা মেলেনি।

শেষ কথা

এমনিতেই জাপান পৃথিবীর সর্বনিম্ন জন্মহারের দেশগুলোর একটি। তার উপর আবার সেখানে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হিকিকোমোরিদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশটির অবস্থা এই মুহুর্তে খুবই সংকটাপন্ন। শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রযুক্তিসহ যাবতীয় জীবনযাত্রার মানে দেশটি বিশ্বের অন্যতম সেরা হওয়া সত্ত্বেও, দেশটি দক্ষ জনশক্তির অভাবে ধুঁকছে। ২০৩০ সালের মধ্যে যদি হিকিকোমোরি সমস্যার কোনো সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো না যায়, বরং হিকিকোমোরিদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনের মতোই থাকে, সেক্ষেত্রে জাপানের অর্থনীতি ধসে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।

তাছাড়া দেশটিতে এখন যারা হিকিকোমোরি, ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের অনেকেরই বয়স ষাটের উপর হয়ে যাবে। তখন তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আর যদিও বা এরপর কখনো তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরেও, তারা তো তখন আর দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল করতে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। তাই জাপান সরকারের কাছে হিকিকোমোরি সমস্যাটির অপর নাম হলো ‘২০৩০ প্রবলেম’, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তাদেরকে এই সমস্যাটির সমাধান করতেই হবে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about Hikikomori, people in Japan who are shutting themselves off from society. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © National Geographic

Related Articles