Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোনো দেশকে বিদেশি কোনো সংবাদমাধ্যমে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়?

প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ঘটনা ঘটে। কিন্তু সব ঘটনাই গণমাধ্যমের সংবাদ হতে পারে না। সংবাদ হতে হলে অবশ্যই ঘটনাটির সংবাদ-মূল্য থাকতে হয়। সাধারণভাবে সংবাদ-মূল্য হিসেবে যেসব বিষয় (অপরাধ, অর্থ, বাণিজ্য, সুনাম, দুর্ঘটনা, বিনোদন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি) বিবেচনা করা হয়, বিদেশি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও কি একই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়?

মূল বিষয় আলোচনার আগে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার। প্রতিদিন রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকার কল্যাণে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানতে পারছি। ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এসব তথ্য এখন অতি সহজলভ্য। আর এসব তথ্য ঐ দেশ সম্পর্কে আমাদের মনে ইমেজ বা ধারণা তৈরি করছে। যেহেতু আমরা ঐসব দেশ সশরীরে গিয়ে দেখে আসিনি, এমনকি তার সুযোগও কম, তাই ঐসব দেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে আমরা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যই ব্যবহার করি। শুধু তা-ই নয়, একটি দেশ অন্য একটি দেশের প্রতি কী ধরনের বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করবে, তা-ও অনেকটা গণমাধ্যম দ্বারা ঐ দেশ সম্পর্কে সৃষ্ট ধারণা বা ইমেজ দ্বারা প্রভাবিত হয়। জোহান গ্যালটুং ও মারি হোমবো রিউগ (১৯৬৫) বলেছেন,

International action will be based on the image of international reality. This image is not shaped by the news media alone; personal impressions and contacts, professional relations abroad, diplomatic dispatches etc.. count too.

এ বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা এটাও বুঝতে সক্ষম হই যে, ধারণা বা ইমেজ তৈরিতে শুধু গণমাধ্যমই একমাত্র নয়, বিভিন্ন দেশে  কূটনৈতিক মিশন, ব্যক্তিগত বা পেশাগত যোগাযোগও ভূমিকা পালন করে। 

আবার কোনো সাংবাদিক যখন তথ্য সংগ্রহ করে, তখন ঘটনার সব অংশ তার দৃষ্টিতে ধরা না-ও পড়তে পারে বা সংবাদ-মূল্য আছে এমন অংশই সংগ্রহ করতে পারে। আবার প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রকাশের আগে সম্পাদক সম্পাদনার সময় কোনো কোনো অংশ বাদ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ঐ পত্রিকার সম্পাদনা নীতি বা পলিসি ভূমিকা রাখে। এভাবে নির্বাচিত অংশ সংবাদ হিসেবে প্রকাশের ফলে মূল ঘটনার বিকৃতি ঘটে। আবার মিডিয়া কোনো সংবাদে যে ইঙ্গিত দিতে চায়, পাঠক সেটা ভিন্নভাবেও উপলব্ধি করতে পারে। আবার পাঠক তার পছন্দের অংশ বা তার নির্বাচিত অংশই পড়তে পারে। ফলে শেষমেষ এটুকুই পাঠকের ইমেজ বা ধারণা তৈরি করে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য জোহান গ্যালটুং ও মারি হোমবো রিউগ (১৯৬৫) একটি যোগাযোগ শৃঙ্খল বা কমিউনিকেশন চেইন ব্যবহার করেছেন। সেটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

সংবাদ যোগাযোগের শৃঙ্খল; Image Source: Reuters

এ চেইন বা শৃঙ্খলটি যত বড় হবে, সংবাদ বিকৃতির সম্ভাব্যতা তত বাড়বে। বিদেশি গণমাধ্যমে কোনো দেশকে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়, বিষয়টিকে বেশ কয়েকটি মাত্রায় বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যথা:

  • উপস্থাপনের ধরন
  • উপস্থাপনের বিষয়
  • উপস্থাপনের পরিমাণ
  • তথ্যসূত্রের ব্যবহার

উপস্থাপনের ধরন

বিদেশি গণমাধ্যমে উপস্থাপিত সংবাদটি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে সকল সংবাদ কোনো দেশের মর্যাদা বাড়ায়, সে সকল সংবাদকে ইতিবাচক সংবাদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন- সুষ্ঠু নির্বাচন, আর্থ-সামাজিক উন্নতি ইত্যাদি। আবার যে সকল সংবাদ কোনো দেশের মর্যাদা নাশ করে, সেগুলোই নেতিবাচক সংবাদ। যেমন- আগুন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ; Image Source: Reuters

বিদেশি গণমাধ্যমে কোনো দেশকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ধরন কেমন হবে, সে বিষয়টি ব্যাখ্যার জন্য জোহান গ্যালটুং ও মারি হোমবো রিউগ (১৯৬৫)-এর গবেষণালব্ধ ফলাফল নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

১. যে জাতি যত দূরবর্তী, সে জাতির কোনো ঘটনার সংবাদ হওয়ার ক্ষেত্রে তত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ঘটনাটি সংঘটনের হার।

এক্ষেত্রে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বড় কোনো দুর্ঘটনা বা সরকার পরিবর্তনকে বিবেচনা করতে পারি। কারণ এ সকল ঘটনা সংঘটনের হার কম। এগুলো হঠাৎই সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি এগুলোর প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। আবার সংঘটিত ঘটনার প্রভাব যদি খুবই সীমিত হয়, তবে তা-ও বিদেশি গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে আবির্ভূত হয় না। হঠাৎ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটলে তার প্রভাব খুব বেশি। তাই তা সংবাদ হবে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান পরবর্তীতে সামরিক রসদ সরবরাহে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা; Image Source: Reuters

আবার যেসব ঘটনা প্রতিনিয়তই সংঘটিত হয়, অর্থাৎ সংঘটনের হার খুব বেশি, সেসকল ঘটনা সংবাদ হয় না।

২. কোনো ঘটনা যত দূরবর্তী স্থানে সংঘটিত হবে, ঘটনাটি তত কম দ্ব্যর্থবোধক হতে হবে।

অর্থাৎ আমরা বলতে পারি, ঘটনাটি হতে হবে দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট। ঘটনাটি বোঝার জন্য যথেষ্ট সাধারণ হতে হবে, যাতে অন্য ভাষাভাষী বা সংস্কৃতির মানুষের বোধগম্য হয়। কিন্তু সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে একই বা কাছাকাছি হলে জটিল ঘটনাগুলোও সংবাদ হিসেবে গুরুত্ব পেতে পারে। শুধু সাধারণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হলে, ঐ জাতি সম্পর্কে একপেশে ধারণা তৈরি হতে পারে। এভাবে ঐ জাতিটি সাধারণ বা আদিম সমাজ হিসেবে পাঠক সমাজে একটি ইমেজ বা ধারণা তৈরি হতে পারে।

৩. যে জাতি যত দূরবর্তী হবে, সে জাতি সম্পর্কিত ঘটনাটি তত বেশি প্রত্যাশিত হতে হবে।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার কথা মনে হলেই আমাদের মানসপটে চলে আসে ফুটবল খেলার কথা। আমাদের মনে ভেসে ওঠে নেইমার বা মেসির চেহারা।

আর্জেন্টিনা মানে ফুটবলের মেসি; Image Source: Sky Sports

এসব দেশ সম্পর্কে মানুষ হয়তো ফুটবল খেলার সংবাদটি প্রত্যাশা করে থাকে। তাই বিদেশি গণমাধ্যমগুলো এ দেশগুলো নিয়ে সংবাদ করার ক্ষেত্রে ফুটবল খেলাকেই গুরুত্ব দেবে।

৪. বিশ্বে কোনো জাতির মর্যাদা যত কম, সে জাতি সম্পর্কে কোনো ঘটনা তত বেশি প্রত্যাশিত হতে হবে।

অনুন্নত বা তৃতীয় বিশ্বের দেশ বা জাতি সম্পর্কে উন্নত বিশ্বের মানুষ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। যেমন- অনুন্নত বিশ্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা, গুম-হত্যা ইত্যাদি কারণে রাষ্ট্র চালানোয় অদক্ষ। উন্নত বিশ্বের মানুষ এমন ধারণা পোষণ করতে পারে। ফলে এসকল জাতি সম্পর্কে সংবাদ মানুষের ধারণার অনুকূলে প্রকাশিত হয়।

৫. কোনো ব্যক্তির মর্যাদা যত কম, সে ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ হতে হলে, সংবাদটি তত বেশি অপ্রত্যাশিত হতে হবে।

কোনো ব্যক্তির এমন কোনো কাজ করবে বা ঘটনা ঘটাবে যা ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে কেউ কখনও প্রত্যাশা করে না। যেমন- কোনো ব্যক্তি যদি হঠাৎ অনেক বেশি ধনসম্পত্তির মালিক হয়, যা কেউ কখনও কল্পনাও করেনি, তবে সে বিষয়টি গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

দিনমজুরের ১২ কোটি টাকার লটারি জেতার ঘটনা ‘খবর’; Image Source: Deccan Herald

৬. যে জাতির মর্যাদা যত কম, সে জাতি সম্পর্কে সংবাদ হতে হলে কোনো ব্যক্তিকে তত বেশি মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা। কারণ কথিত আছে, তিনি একসময় চায়ের দোকানদার ছিলেন।

৭. যে জাতির মর্যাদা যত কম, সে জাতি সম্পর্কে তত বেশি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হবে।

উন্নত জাতি সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদ ইতিবাচক হবে এবং অনুন্নত জাতি সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদ নেতিবাচক হবে। এক্ষেত্রে অনুন্নত দেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি নেতিবাচক সংবাদ প্রাধান্য পায়।

৮. যে ব্যক্তির মর্যাদা যত কম, সে ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ হতে তার কার্যকলাপ তত বেশি নেতিবাচক হতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে কোনো ব্যক্তির কুখ্যাত অপরাধী হয়ে ওঠাকে উল্লেখ করা যেতে পারে।

৯. কোনো ঘটনা যত কম ব্যক্তিকেন্দ্রিক হবে, সে ঘটনাকে সংবাদ হতে হলে তত বেশি নেতিবাচক হতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদির কথা বলা যায়।

উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও বোঝা যায়, কোনো দেশ সম্পর্কে বিদেশি গণমাধ্যমে কোন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হবে।

উপস্থাপনের বিষয়

যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী ক্ষমতায়ন ইত্যাদি যেমন উপস্থাপনের বিষয় হতে পারে, তেমনি হতে পারে পরিবেশগত বিপর্যয়, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। যে বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হোক না কেন, সেগুলো কেন সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়, সেটিও ভাবার বিষয়। মেল বান্স (Mel Bunce) ২০১৬ সালে একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, এএফপি, এপি এবং রয়টার্স আফ্রিকার আটটি দেশকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে কোন কোন বিষয় উঠে এসেছে। দেশগুলোর মধ্যে ছিল— নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, জায়ারে, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, ঘানা এবং মোজাম্বিক। আর বিষয়গুলো হলো— শরণার্থী সমস্যা, গণহত্যা, দুর্ভিক্ষ, খরা, মহামারী, বন্যা ইত্যাদি। এছাড়া ধীরে ধীরে ব্যবসা, অর্থনীতি, ও খেলাধুলা বিষয়ক সংবাদ স্থান পেলেও, তার পরিমাণ খুবই কম। দেখা যাচ্ছে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের হার খুবই বেশি। কেন নেতিবাচক সংবাদই বেশি? এর উত্তর উপরে উল্লেখিত জোহান গ্যালটুং ও মারি হোমবো রিউগের আলোচনা থেকেই পাওয়া যায়।

উপস্থাপনের পরিমাণ

বিদেশি গণমাধ্যমে কোন দেশকে নিয়ে যে ধরনের সংবাদ পরিবেশিত হয়, সে সকল সংবাদ কি পরিমাণে প্রকাশ করা হয়, সেটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাও জোহান গ্যালটুং ও মারি হোমবো রিউগের আলোচনা থেকেই বোঝা সম্ভব। উন্নত বা টপডগ জাতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংবাদ বেশি প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে অনুন্নত বা আন্ডারডগ জাতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক সংবাদ বেশি প্রকাশিত হয়।

তথ্যসূত্রের ব্যবহার

বর্তমানে শুধু জাতীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ ইত্যাদির মুখপাত্র বা বিজ্ঞজনের মতামত সংবাদের তথ্যসূত্র বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বব্যাংক, অ্যাকশন অ্যাগেইন্সট হাঙ্গার ইত্যাদি।

Language: Bangla

Topic: This article is on the view of perspective of news creation.

References: 

1. Bunce, M. (2016). The International News Coverage of Africa: Beyond the 'Single Story'. In: M. Bunce, S. Franks & C. Patersion (Eds.), Africa’s Media Image in the 21st Century: From the ‘Heart of Darkness’ to ‘Africa Rising’. (pp. 17-29). UK: Routledge. ISBN 9781138962316

2. Galtung, J., & Ruge, M. H. (1965). The Structure of Foreign News. Journal of Peace Research, 02, 64-91 retrieved from http://www.jstor.org/stable/423011

Featured Image: Wallpaper Access

Related Articles