Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউক্রেনে যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনীতিতে কতটা বিপর্যয় ডেকে আনবে?

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাশিয়া ছিল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সত্তর-আশির দশকে দেশটি হয়ে ওঠে বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদক, যা স্নায়ুযুদ্ধকালীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দানকারী দেশটির অর্থনীতিকে করে চাঙ্গা। কিন্তু ১৯৮০ সালে প্রতি ব্যারেল তেল ১২০ ডলার থেকে ১৯৮৪ সালে এসে পৌঁছায় মাত্র ২৪ ডলারে, ধস নামে রাশিয়ার অর্থনীতির। গর্বাচেভের পেরেস্তিকা নীতি উন্নতির চেয়ে অবনতি ঘটায়। এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় পতন ডেকে আনে সোভিয়েত ইউনিয়নের।

তেলের মূল্য পতনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় পতন ডেকে আনে সোভিয়েত ইউনিয়নের; Image source: Synergia Foundation

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুতিন সামরিক অভিযান চালান পাশ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনে, যা একসময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত। ইতোমধ্যে যুদ্ধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, রাশিয়ার অর্থনীতিতেও পড়ছে প্রভাব। দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করবে রাশিয়ার অর্থনীতিকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধ। স্বল্পকালীন যুদ্ধের জন্য জার্মানি শক্তিশালী থাকলেও লম্বা সময়ের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনত। দীর্ঘকালীন প্রভাব না ভেবে যুদ্ধে জড়ানোর ফল ছিল দেশটির জন্য ভয়াবহ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তেমনই স্বল্পকালীন প্রভাবের চেয়ে দীর্ঘকালীন প্রভাব রাশিয়ার জন্য বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে কি?

রাশিয়া বর্তমান বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি। দেশটির অর্থনীতির পঞ্চাশ শতাংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল রপ্তানির আয় থেকে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস হচ্ছে প্রাথমিক রপ্তানি পণ্য, যার সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপ। ২০২১ সালে রাশিয়ার ৮৩ শতাংশ গ্যাসের ক্রেতা ছিল ইউরোপ। ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের উপর ৪৬ ভাগ নির্ভরশীল। ইউক্রেন আক্রমণের পর সেজন্য পুতিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস দেয়া বন্ধ করে দেন, যাতে ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে পারে।

রাশিয়ার গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপ; Image source: Sratfor

রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়ায় পুতিন ভেবেছিলেন, ইউরোপ হয়তো শীতে তেল, গ্যাসের অভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করবে বা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেয়া বন্ধ করেবে। কিন্তু ইউরোপ রাশিয়ার বিকল্প বের করে নিলেও রাশিয়া হারিয়েছে তার বিশাল বাজার। রাশিয়ান গ্যাসের পরিবর্তে ইউরোপ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি (LNG) আমদানী করছে, যা রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

পুতিন হয়তো ভেবেছেন, তিনি ইউরোপের তেল, গ্যাসের বাজারের একক হর্তাকর্তা। তিনি ইউরোপকে চাপে রাখতে পারবেন। ইউরোপ তুলনামূলকভাবে ২০২২-২৩ সালে কম গ্যাসের আমদানী করবে, কারণ মজুদের ঘাটতি রয়েছে কম। ২০২৪ সাল নাগাদ ইউরোপ পুরোপুরিভাবে রাশিয়ার বিকল্প তৈরি করে নিতে পারবে। কিন্তু পুতিন পড়বেন বিপদে। কারণ রাশিয়াকে তার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করতে হবে। ইউরোপে পাইপলাইন দিয়ে ১৫০ বিলয়ন কিউবিক মিটার তেল বর্তমানে অন্যত্র বিক্রি করতে হবে, যা দুরূহ। ইউক্রেন যুদ্ধের পর পুতিন রাশিয়ার গ্যাস বিক্রি করছেন চীন, তুরস্ক, ভারতের কাছে। তাতে তাকে দিতে হচ্ছে পর্যাপ্ত মূল্যছাড়, যা বেশিরভাগ সময়ে ৫০ শতাংশের বেশি। সুতরাং রাশিয়ার আয় কমছে। তাছাড়াও শোনা যায়, রাশিয়ার গ্যাস ভারত হয়ে ইউরোপে যাচ্ছে। তাতেও রাশিয়া কম মূল্য পাচ্ছে।

ফিনল্যান্ডভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার -এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের সমুদ্রপথে আমদানির উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার প্রথম মাসে এবং জি-সেভেনের মূল্যের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ, যা ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর আরোপ করা হয়, মস্কোকে আনুমানিকভাবে প্রতিদিন ১৬০ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতিতে ফেলে দিয়েছে। তেলের মূল্যপতন ঘটেছে যুদ্ধের পর। সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য পতন ডেকে এনেছিল এই তেলের মূল্যপতন। ঠিক একইভাবে ইউরোপ এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও রাশিয়ার অর্থনীতিতে যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব থাকবে।

রাশিয়ার অর্থনীতিতে যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়বে ভবিষ্যতে; Image source: CFPR

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর পর রাশিয়ার বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিশ্বে রাশিয়া নেতৃত্বদানকারী সুপারপাওয়ার হলেও তার অর্থনীতি ততটা উন্নত ছিল না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে রাশিয়ানরা তাদের আধুনিক অর্থনীতিকে বাস্তব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে দেখছে আবার। ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের একটি পর্যালোচনা অনুসারে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর ১,০০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা রাশিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে। ফলে দেশের মূল রেল এবং অটো উত্পাদন খাতগুলোতে অর্ধেকের মতো উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক সেক্টরসহ প্রযুক্তি খাতে বেশিরভাগ আমদানি করা হয় পশ্বিমা বিশ্ব থেকে। যুদ্ধের ফলে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাশিয়া তুরস্ক বা অন্যদিকে বাজার খুঁজছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, রাশিয়ার জিডিপি এই বছর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করেছে যে রাশিয়ার অর্থনীতি এই বছর ৩.৪% পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে।

Image source: Business Today

রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে যুদ্ধে হারা তাদের জন্য লজ্জাজনক। তাই সামরিক দিক থেকে তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে রাশিয়া পরাজিত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রাশিয়ান অর্থনীতি আবার গড়ে তোলার প্রয়োজন হবে।

This article is written in Bangla about long time economic impacts on Russia due to war in Ukraine.
Necessary links are hyperlinked inside.
Feature Image: Lloyd's List - Informa

Related Articles