Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বৃহৎ শক্তির দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত তাইওয়ানের অর্থনীতি?

গ্রেট পাওয়ার অ্যালায়েন্স, গ্রেট পাওয়ার কার্টেসি অর্থাৎ সুপারপাওয়ারের সাথে সখ্যতা বা মিত্রতা বজায় রাখা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অন্যতম একটি কৌশল। কিন্তু বৃহৎ শক্তির সাথে মিত্রতা বা বৃহৎ শক্তির ছায়াতলে থাকা বয়ে নিয়ে আসতে পারে বড় বড় বিপদ। বিপদ আসতে পারে সামরিক, অর্থনৈতিক কিংবা ভিন্ন কোনো দিক থেকে। যেমনটা এক সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার বলেছিলেন, "আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু আমেরিকার বন্ধু হওয়া মারাত্মক।" 
যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত তাইওয়ানের অর্থনীতি; Image source: Liputan6.com

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষায় ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বলা হলেও অর্থনৈতিকভাবে দেশটি বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর যেমন পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ আমদানি পণ্য, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব বাণিজ্যমোড়ল ও আঞ্চলিক পরাশক্তি চীনের কাছেও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত নিয়ে জন্ম নেয়া তাইওয়ানের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর, ছিল না অর্থনীতির বিশেষ খাত, কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য। অর্থনীতিবিদরা যে দেশ নিয়ে ছড়িয়েছিলেন হতাশার বাণী, সেই তাইওয়ান কয়েক দশকে হয়ে ওঠে বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ প্রভাবশালী দেশ। বর্তমানে অর্থনীতিতে ব্যাপক অগ্রগতির জন্য তাইওয়ান হয়ে উঠেছে এশিয়ান টাইগারসের অন্যতম। পৃথিবীর মোট সেমিকন্ডাক্টটরের ৬৫ শতাংশ উৎপাদন করে তাইওয়ান, এবং উন্নত চিপের প্রায় ৯০ শতাংশ উৎপাদনও রয়েছে দেশটির দখলে।

তাইওয়ানের জিডিপির ৩৬ শতাংশ আসে শিল্প খাত থেকে, যার মূল অবদান সেমিকন্ডাক্টরের। তেলের জন্য বিশ্ব যেমন একসময় মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরশীল ছিল বা এখনও আছে, তেমনি সেমিকন্ডাক্টরের জন্য তাইওয়ানের উপর নির্ভরশীল। এই তালিকায় নাম রয়েছে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের। তাছাড়া তাইওয়ানকে ঘিরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শিক স্বার্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাত তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্টির উপর নির্ভরশীল।
Image: KCRW

অন্যদিকে, চীনের কাছেও তাইওয়ান গুরুত্বপূর্ণ। ‘এক চীন নীতি’ ও শি-র চায়না ড্রিমের অংশ হিসেবে তাইওয়ান পুনঃএকত্রীকরণ চীনা জাতীয়তাবাদের অংশ। তাইওয়ানের মোট রপ্তানির ৪০ ভাগ যায় চীনের কাছে, আবার দেশটির আমদানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ আসে চীন থেকে। এখানে চীন-তাইওয়ান উভয়ের নির্ভরশীল সম্পর্ক বিদ্যমান।

তাইওয়ানকে ঘিরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়ের কারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী চীনের উত্থান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই অগ্রসরতাকে হুমকি হিসেবে দেখছে। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ভাটা পুরুদমে শুরু হয়েছে নিক্সন প্রশাসনের সময় থেকেই। তাছাড়া, প্রযুক্তি খাতে চীন হয়ে উঠেছে বিশ্বের বড় শক্তি। বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের সাথে। শি-র তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়ন যুক্তরাষ্ট্রের মনে জাগিয়েছে আরও শঙ্কা। পূর্বপ্রস্তুতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের প্রতি বানিয়েছে আরও কঠোর। তাছাড়া, ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখানে বড় একটি প্রভাবক, যা বাইডেন প্রশাসনকে চীন বিরোধিতায় ঠেলে দেবে।

২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের চীন নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে; Image source: BBC
গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র চীনে মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণের নাটকীয় ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণানুযায়ী, যেকোনো আমেরিকান কোম্পানির জন্য চীনা কোম্পানির সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ বাণিজ্য করা 'অবৈধ' বলা হয়ছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাইওয়ানের উপরও। সেক্ষেত্রে তাইওয়ানের চীনে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির বাজারে ধস নামবে। এ বছরের ২৭ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস এবং জাপানকে চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাজি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান কেউ আগের মতো চীনে সেমিকন্ডাক্টর বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারবে না, যার মূল উদ্দেশ্য চীনের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা কমিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে তার প্রভাব কমিয়ে আনা। 
কিন্তু গত গ্রীষ্মে, চীনের ASML ও Nikon কোম্পানির সরঞ্জাম ব্যবহার করে চীন ৭ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হতবাক করে দেয়। কথা হচ্ছে, তাইওয়ানের রপ্তানির বড় উৎস চীনের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সংকোচন দেশটির অর্থনীতিকে কতটা বাজে অবস্থায় ফেলেছে?
চীনের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সংকোচন দেশটির অর্থনীতিকে বিপাকে ফেলবে; Image source: The New York Times
নিষেধাজ্ঞার ফলে তুলনামূলক অনেক কম চিপ রপ্তানি হচ্ছে তাইওয়ানের, যা ২০০৯ সালের পর দেশটির অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ঘাটতি বয়ে নিয়ে আসছে। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে অর্থনীতি ০.৮৬% সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তাইওয়ানের মন্ত্রণালয় থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই মাসে রপ্তানি ৬.৯%-১০.৮% কম হবে। চলতি বছরে তাইওয়ানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত ছিল ২.১২%, যা উল্টো কমেছে। নভেম্বর ২০২২ অনুযায়ী তাইওয়ানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে ০.৬২%। নিক্কেই এশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, চলতি বছরে বরং রপ্তানি হ্রাস পাবে ৫.৮৪%, যা আগের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমাবে। নিক্কেই এশিয়ার মতে, ২০২৩ ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) ১.৮৬%-২.১৬% বৃদ্ধি পাবে। 
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চীনের প্রযুক্তি খাতের বড় বড় কোম্পানিকে যাতে হুয়াওয়ের মতো অবস্থায় ফেলা যায় সেটাই চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু যে তাইওয়ানের রপ্তানি কমেছে তা নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের রপ্তানির বড় উৎস হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর চিপ, যার কারণে দেশটির রপ্তানি আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। 
এরূপ নিষেধাজ্ঞা তাইওয়ানের পাশাপাশি এশিয়ার জন্য বিরূপ প্রভাব নিয়ে আসবে; Image source: China.org
তাইওয়ানের বেশিরভাগ বিনিয়োগ হচ্ছে চীনের। চীনেও রয়েছে তাইওয়ানের বিনিয়োগ। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে এরূপ নিষেধাজ্ঞা তাইওয়ানের বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে, যা মূলত তাইওয়ানের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে। 
সর্বোপরি, এর ফলাফল পুরো এশিয়ার অর্থনীতির উপর পড়বে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে, তাতে আরও ঘি ঢালবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ। বিশ্বব্যাপী কমবে প্রবৃদ্ধির হার।

This article is written in Bangla. And it's about the negative impact of US-China conflict on Taiwan's economy.
All the necessary links are hyperlinked inside the text.
Feature Image: DW

Related Articles