Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সমুদ্রের বর্জ্য পরিষ্কারক ফোরওশান

আচ্ছা, কোনো জেলে মাছ ধরলে তাকে আপনি জেলে বলবেন। তবে মাছ না ধরে কোনো জেলে নদ-নদী ও সমুদ্র থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজটি শুরু করলে তাকে কী বলবেন? অবশ্য যে হারে পানি দূষণ ঘটছে, তাতে করে জালে মাছের সমান আবর্জনা, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য উঠে আসে ও ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। জেলেরা মাছ ধরার জন্য টাকা পায়, আবর্জনার জন্য নয়। তাই জালে এসব ময়লা উঠে আসলেও এগুলো আবার সমুদ্র ও নদীতেই ফেলে দেওয়া হয়। এ ধরনের দূষণের কারণে মাছ ও বাকি সামুদ্রিক জীব বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

কথা হলো জেলেরা কেন বিনামূল্যে এসব বর্জ্য পরিষ্কার করতে যাবে, যখন তাদের পক্ষে টাকার অভাবে খাবার সংগ্রহ করাই সম্ভব হচ্ছে না? কিন্তু টাকা দিলে জেলেরা এই কাজ ভালোমতোই করতে পারবে। এই কাজ করা যে আসলেই সম্ভব এবং এ থেকে লাভ করাও সম্ভব, এর বাস্তব উদাহরণও রয়েছে।

বলছি, ফোরওশান (4Ocean)-এর কথা। ফ্লোরিডার শহর বোকা র‍্যাটনে অবস্থিত এই কোম্পানি। আর এর প্রতিষ্ঠার পেছনে কৃতিত্ব রয়েছে অ্যালেক্স শালজ এবং অ্যান্ড্রু কুপারের। ২০১৫ সালে তারা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে একটি কলেজ ট্রিপে যান। সেখানে গিয়েই তারা প্রথম এই মাল্টিমিলিয়ন ডলার কোম্পানি শুরুর ধারণা পান, যা সমুদ্র পরিষ্কার করার পাশাপাশি তাদেরকে অর্থোপার্জনেও সহায়তা করছে। 

অ্যালেক্স ও অ্যান্ড্রু; Image source: cnbc.com

অ্যালেক্স ও অ্যান্ড্রু দুজনেই ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। তারা বিজনেস ডিপার্টমেন্ট থেকে পড়াশোনা শেষ করে পরের বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে তিন সপ্তাহের সার্ফিং ট্রিপে যান। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়াকে স্পোর্টসের মক্কা বলা হয়।

পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে পরিবেশ দূষণের দিক থেকে দ্বিতীয়। তারাও বালিতে আসার পর এই ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ লক্ষ্য করেন। কুপার বলেন,

“আমরা এখানে (বালি) আসার পর সর্বপ্রথম যে বিষয়টি খেয়াল করি, তা হলো এখানকার অস্বাভাবিক প্লাস্টিকের বর্জ্য, যা আসে খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য জিনিসের বোতল, ব্যাগ, প্যাকেট থেকে।”

তারা সমুদ্রসৈকতে থাকা এক দেহরক্ষীর সাথে কথা বলে জানতে চান, এত বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্য সরকার কিংবা বাসিন্দারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন। সেই দেহরক্ষী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সকালবেলা এসব ময়লা পরিষ্কার করা হয়। তবে কিছুক্ষণ পরেই স্রোতের সাথে আবার একগাদা প্লাস্টিক সমুদ্রের তীরে এসে জমা হয়। অর্থাৎ সমুদ্রের মধ্যে এত পরিমাণ প্লাস্টিক যে তা প্রতিনিয়ত বের হয়েই যাচ্ছে।

আর এই ট্রিপ থেকেই তারা ফোরওশান প্রতিষ্ঠা করার বুদ্ধি পান। এই ব্যবসায় তারা সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো রিসাইকেল করে মূলত ব্রেসলেট তৈরি করেন। প্রতিটি ফোরওশান ব্রেসলেটের মূল্য ২০ ডলার। একটি ব্রেসলেট বিক্রি করার মানে এই উপার্জিত অর্থ থেকে একজন জেলেকে সমুদ্র থেকে এক পাউন্ড প্লাস্টিক বর্জ্য উঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য বেতন দেওয়া হবে। ফোরওশান ব্রেসলেট ১০০% রিসাইকেল করা উপাদানগুলো দিয়ে বানানো। ব্রেসলেটের কর্ডটি তৈরি করা হয় আরপিইটি (RPET) দিয়ে।

ফোরওশান ব্রেসলেট; Image source: breakwaterblue.com

অর্থাৎ রিসাইকেলড পলিইথিলিন টেরেফথালেট, যা পানির বোতল তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। কর্ডগুলো সমুদ্রের গাঢ় নীল রঙের, লাল রঙের কিংবা সবুজ রঙের হয়। আর পুঁতিগুলো বানাতে ব্যবহার করা হয় রিসাইকেল করা গ্লাসের বোতল। ব্রেসলেটগুলোতে একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘ফোরওশান চার্ম’, যা স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয়। তাছাড়া ফোরওশান রিসাইকেল করা বোতলও বিক্রি করে।

ফোরওশানের কর্মীরা সমুদ্রের বর্জ্য সংগ্রহ করছে; Image source: engineeringforchange.org

২০১৮ সালের জুলাইয়ে তারা ঘোষণা দেয়, এই কোম্পানি এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে, তথা ২০১৭ সাল থেকে এখন (জুলাই, ২০১৮) পর্যন্ত, প্রায় ১ মিলিয়ন প্লাস্টিক, গ্লাস ও অন্যান্য বর্জ্য সমুদ্র থেকে পরিষ্কার করেছে।

এক মিলিয়ন প্লাস্টিক পরিষ্কার করা শেষ; Image source: cnbc.com

কুপার এবং শালজ জানান, তারা ৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রিসাইকেলড ব্রেসলেট বিক্রি করতে সক্ষম হন, যা দিয়ে তারা তাদের কোম্পানি চালায়। তবে যে হারে সমুদ্র দূষিত হয়েছে এবং হচ্ছে, তাতে করে এই ফোরওশানকে আরও অনেক কাজ করতে হবে। 

প্রতি বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে ফেলা হয়। কুপার ও শালজ যে ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ধারণা পান, সেই ইন্দোনেশিয়াই এই প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ১০% এর মূল কারণ। ইন্দোনেশিয়ায় এতটাই খারাপ অবস্থা যে, ২০১৮ সালের শুরুতে সেই দেশের সরকার ‘গার্বেজ ইমারজেন্সি’ তথা আবর্জনার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। চার মিলিয়ন অধিবাসীর দ্বীপরাষ্ট্রে সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিক প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন বর্জ্য পরিষ্কার করার পরও কোনোভাবেই এই সমস্যা সমাধান করতে পারছে না।

দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ দূষণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রে এসব প্লাস্টিক ও অন্যান্য অনবায়নযোগ্য উপাদানও বেড়ে যাচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, বিশ্বের ৯১% প্লাস্টিক বর্জ্যই রিসাইকেল করা হয় না। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে শিল্পায়ন ও নগরায়ন হচ্ছে, সেখানে এসব কিছুর কারণে যে দূষণ হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। 

একটি যুগান্তকারী উত্তর

ইন্দোনেশিয়ার বালির সমুদ্র সৈকত; Image source: straitstimes.com

ইন্দোনেশিয়ার বালির সমুদ্র সৈকত এত দূষিত থাকার পরও সেখানে সার্ফাররা ভিড় জমায়। কুপার এবং শালজও বালিতে যাওয়ার আগে এর অবস্থা সম্পর্কে জানতেন। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে কুপার একজন জেলেকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা প্লাস্টিকগুলো তুলে নিয়ে রিসাইকেল করেন না কেন? এগুলো আবার সমুদ্রে ফেলে দেন কেন? এগুলোর আসল স্থানও তো এই সমুদ্র নয়।” এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারণ প্লাস্টিক তুলে আনলে সেটার জন্য আমরা টাকা পাবো না। শুধুমাত্র মাছের জন্যই আমাদেরকে টাকা দেওয়া হয়।

এই উত্তর দুই আমেরিকান সার্ফারেরই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিলো। সমুদ্রের এই দূষণ কমানোর জন্য প্রচলিত সকল পদ্ধতির বিপরীতে নতুন এক চিন্তা তাদের মাথায় আসলো। কুপার বলেন,

“ব্যাপারটা হলো, এখানে সামুদ্রিক মাছের চাহিদা রয়েছে, প্লাস্টিকের নয়। তাই তার যুক্তি শুনে রাগার কোনো কারণ নেই। আর এখান থেকে আমাদের অভিনব চিন্তার শুরু হয়। চাহিদার বিষয়টা সামুদ্রিক মাছ থেকে প্লাস্টিকের দিকে সরিয়ে আনলে কেমন হয়?”

অবশ্যই এজন্য আপনাকে মাছের জায়গায় প্লাস্টিক খেতে বলা হবে না। প্লাস্টিক, গ্লাস কিংবা অন্যান্য উপাদানের তৈরি বস্তু একদম নতুন করে বানানোর চেয়ে রিসাইকেল করতে কম অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই রিসাইকেল করার কোম্পানিগুলোকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে দিতে পারলে দু’পক্ষেরই লাভ হবে। আর এটাই ছিল ফোরওশানের মূল লক্ষ্য। ২০১৬ সালে তারা এসব বিষয়ে গবেষণা করেন এবং একটি আঞ্চলিক কারখানার সাথে যোগাযোগও করেন, যেখানে শ্রমিকরা রিসাইকেলড বস্তু দিয়ে ব্রেসলেট তৈরি করে দিতে পারবেন। তারা একটি লোগোও ডিজাইন করে নিজেদের কোম্পানির জন্য। বিশ্বজুড়ে তাদের এই নতুন ধারণা ছড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটেও এর প্রচারণা চালান।

ফোরওশানের যাত্রা 

ফোরওশানের সদস্যরা; Image source: hurleyburley.com

এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তারা ফোরওশান শুরু করার জন্য নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাট কাজও করতে থাকেন। নিজেদের উপার্জিত অর্থ জমিয়ে কোম্পানি শুরু করার পরপরই ব্রেসলেটের অর্ডার কিংবা ওয়েবসাইটে বেশি ভিজিটর না পেলেও খুব অল্প সময়েই তারা খ্যাতির পাশাপাশি কাস্টমারও পাওয়া শুরু করে। তারা মনে করেছিলেন, কোনোভাবে একদিনে ২০টা ব্রেসলেটও যদি বিক্রি করা যায়, তাহলে সেটাই তাদের জন্য হবে এক বিশাল অর্জন। কেননা, এর মানে একদিনে সমুদ্র থেকে ২০ পাউন্ড আবর্জনা তোলা হবে। অনলাইনে ব্রেসলেট বিক্রি শুরু করার একদিনের মাথায় যে তারা ২০টা বিক্রি করতে পারবেন তা ছিল কল্পনার বাইরে। 

ফোরওশান যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে, তার ৪০% ব্যবহৃত হয় সমুদ্রের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য। কোম্পানির দুই প্রতিষ্ঠাতা কুপার ও শালজ প্রত্যেকে বছরে ৫০,০০০ ডলার বেতন হিসেবে নেন। আর বাকি অর্থ কোম্পানির কাজেই ব্যবহৃত হয়। এক মিলিয়নের পর তারা এখন সমুদ্র থেকে ১০ মিলিয়ন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারের লক্ষ্য হাতে নিয়েছেন। 

This article is in Bangla language. It's about 4Ocean, a company that works to clean the oceans. Sources have been hyperlinked inside the article. 

Featured image: thetravelpocketguide.com

Related Articles