Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশে দেশে পাশ মার্কের ভিন্নতা

পরীক্ষা নামক জিনিসটি সবার জন্যই খুব শঙ্কার। একাডেমিক পরীক্ষা নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তবে, পরীক্ষা নিয়ে আমাদের যতটা না ভয় কাজ করে, তারচেয়েও বেশি ভয় কাজ করে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। ভালো ফলাফল আসবে তো? উত্তীর্ণ হবো তো? এই দুশ্চিন্তায় কতজনের রাতের ঘুম যে হারাম হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। 

পরীক্ষায় পাশ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম নাম্বার পেতে হয়। প্রতিষ্ঠানভেদে বা দেশভেদে এ পাশ নম্বরেরও ভিন্নতা আছে। একেক দেশের একেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাশ মার্ক একেক রকম। দেশে দেশে পাশ মার্কের বৈচিত্র্য নিয়েই এখানের আয়োজন। 

পরীক্ষার ভয় সবারই থাকে; image source: icas.com

ভারতীয় উপমহাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাশ মার্ক ৩৩-এ ধরা হয় (১০০ এর মাঝে)। ৩৩ নাম্বারের পাশ মার্কের পেছনের ইতিহাসটি বেশ মজার। ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশদের অধীনে ছিল তখন ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো এ উপমহাদেশে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা হয়। কিন্তু, সে পরীক্ষায় পাশ মার্ক কত হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান ভারতে অবস্থানরত ব্রিটিশ প্রধান।

তৎকালীন ব্রিটেনে একটি কথা প্রচলিত ছিল, “The people of Indian subcontinent are half as intellectual and efficient as compared to the British”, অর্থাৎ, ব্রিটিশদের তুলনায় ভারতীয়দের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা ছিল অর্ধেক। তৎকালীন ব্রিটেনে পাশ মার্ক ছিল ৬৫। তাই এর অর্ধেক বিবেচনায় এ উপমহাদেশে নতুনভাবে পাশ মার্ক করা হয় ৩২.৫। পরবর্তীতে হিসেবের সুবিধার জন্য আরো অর্ধেক বাড়িয়ে একে ৩৩ করা হয়। সেই থেকে এখনো ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে প্রধানত পাশ নম্বর ৩৩ হিসেবে গণনা করা হয়ে থাকে।

ভারতীয় উপমহাদেশ; Image Source: ScoopWhoop

তবে সময়ের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানভেদে এ পাশ নাম্বারে দেখা যায় অনেক বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগুলোয় পাশ মার্ক ৩৩ হলেও, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাশ মার্ক ধরা হয় ৪০% নম্বরে। আর মেডিকেল কলেজগুলোতে ৬০% নম্বরে। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে একেক প্রতিষ্ঠানকে একেক ধরনের পাশ মার্ক ধরে নিতেও দেখা যায়।

আবারো যাই ব্রিটিশদের কাছে, অষ্টাদশ শতকে যেখানে ৬৫% নাম্বারে পাশ মার্ক ছিল তাদের, বর্তমান শিক্ষাক্রম অনুযায়ী তাদের পাশ মার্ক ৪০%। তবে পার্থক্য আছে কোর্স পরীক্ষার ক্ষেত্রে। সেখানে আলাদাভাবে কোনো গ্রেডিং চালু নেই। কোর্স পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী ৪৫% এর বেশি নাম্বার পেলে কৃতকার্য, না পেলে অকৃতকার্য। 

ইউরোপের অন্যান্য দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোথাও কোথাও গ্রেডিং, আবার কোথাও কোথাও মার্কিং পদ্ধতি চালু আছে। শতকরা নাম্বারের উপর কৃতকার্যতা নির্ধারণ করা দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, বসনিয়া, এস্তোনিয়া, মেসিডোনিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডে পাশ মার্ক হিসেবে ৫০% মার্ক নির্ধারিত আছে। কিছু দেশের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোনো নাম্বার নেই। সেখানে Strong, Moderate, Weak, Very weak ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের ছকে বাঁধা নিয়মে অকৃতকার্য তকমার বাইরে আনতে এটি দারুণ পদ্ধতি। 

ফেল করলে বন্ধুরাও অনেক সময় আড়চোখে দেখে; image source: davidsaxelaw.com

চীনে আছে আরো মজার পদ্ধতি। সাধারণভাবে চীনের গ্রেডিং সিস্টেমে পাশ করতে হলে ন্যূনতম ৬০% নাম্বার পেতে হয়। এত নাম্বার পেতে হবে ভেবে যেসকল শিক্ষার্থীদের ঘুম হারাম হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদের জন্য আছে কিছুটা নমনীয়তা। চীনের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ Mark Bank-এর ব্যবস্থা আছে। কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত পাশ মার্ক তুলতে ব্যর্থ হলে সে মার্ক ব্যাংক থেকে নাম্বার ধার করে প্রয়োজনীয় পাশ মার্ক তুলতে পারবে। তবে শর্ত আছে, পরবর্তী পরীক্ষায় বেশি মার্ক পেলে সেখান থেকে ধার করা নাম্বার কেটে নেওয়া হবে।

অস্ট্রেলিয়ায় আবার আছে বিভিন্ন ধরনের গ্রেডিং সিস্টেম। দক্ষিণ ওয়েলস, ফেডারেল ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ৫০% নাম্বার না পেলে শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় আবার আছে বিভিন্ন ধরনের অকৃতকার্যতা। ৩৯% এর নিচে নাম্বার পেলে তাকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির অকৃতকার্য আর ৪৯% এর নিচে পেলে সেটাকে প্রথম ক্যাটাগরির অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

চীনে আছে মার্ক ব্যাংক প্রথা, এর মাধ্যমে ধার করা যায় পাশ করার নাম্বার; Image: Video Blocks

ইরাক, ইরান, কাজাখস্তান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচের অধিকাংশ দেশের পাশ মার্ক মোট নাম্বারের ৫০% নাম্বার। ন্যূনতম ৫০% নাম্বার না পেলে পাশ হিসেবে গণ্য করা হয় না থাইল্যান্ড, সিংগাপুরের মতো এশিয়ার বেশ কিছু দেশেও। বলা যায় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই একাডেমিক পরীক্ষায় পাশ করতে হলে ন্যূনতম অর্ধেক নাম্বার পেতে হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে আমেরিকার দেশগুলো বেশ ভালো অবস্থানে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য বর্তমানে অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছে। আর সব দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রকানাডাতেও সিজিপিএ বা কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ নির্ণয় করে ০-৪ স্কেলে ফলাফল দেওয়া হয়।

সর্বোচ্চ গ্রেডের ক্রম হচ্ছে A (100%-90%), B (89%-80%), C (79%-70%) এবং D (69%-60%) নম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ, সাধারণভাবে কোনো পরীক্ষায় কেউ যদি মোট নাম্বারের ৬০% নাম্বার পেতে ব্যর্থ হয় তবে তাকে অকৃতকার্য বিবেচনা করা হয়। পাশ মার্কের দিক থেকে ইউরোপ বা এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাতে অনেক বেশি নাম্বার পেতে হয়।

তবে শতকরা ৬০ ভাগ নাম্বার পেয়ে কৃতকার্য হওয়ার এ বাধ্যবাধকতা এশিয়ার কিছু দেশেও চালু আছে। ইনস্টিটিউট ভিত্তিকভাবে বিভিন্ন একাডেমিক পরীক্ষায় বিভিন্ন পাশ মার্কের প্রচলন দেখা গেলেও সাধারণভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে (পোস্ট-সেকেন্ডারি লেভেল) আফগানিস্তান, জাপান, সৌদি আরবদক্ষিণ কোরিয়ায় মোট নাম্বারের ৬০% না পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

 যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ হলেও পিছিয়ে নেই আফগানিস্তান; image source- hizmetnews.com

যারা মোট নাম্বারের শতকরা ৬০ ভাগ নাম্বার পেয়ে পাশের কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলেন তাদের এবার তাহলে একটু ইন্দোনেশিয়ার পাশ মার্কের স্কেল জানানো দরকার। ইন্দোনেশিয়ার একটি সেক্টরে প্রচলিত দুইটি মার্কিং স্কেলের একটিতে ন্যূনতম পাশ মার্ক মোট নাম্বারের ৭৪% আর অন্য আরেকটি স্কেলে পাশ মার্ক ৮৮% নাম্বার!

লিখিত পরীক্ষার বাইরে প্রেজেন্টেশন, ফিল্ড ওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট বা মৌখিক সাক্ষাৎকারের উপরও অনেক সময় পাশ-ফেল নির্ধারণ করা হয়। বিশেষত মৌখিক পরীক্ষা বর্তমানে একাডেমিক ক্ষেত্র তো বটেই, পাশাপাশি কর্পোরেট সেক্টরেও বহুল প্রচলিত। চাকরিতে প্রবেশ করতে হলে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি কম-বেশি সবাইকেই হতে হয়। তবে সেসব পরীক্ষায় পাশ মার্ক বলতে আলাদা কোনো নাম্বার থাকে না। সন্তোষজনক বা অসন্তোষজনক সাক্ষাৎকারের বিচারে প্রার্থীদের উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ হিসেবে নিরূপণ করা হয়।

পাশ মার্ক যতই হোক না কেন, পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়মিত পড়াশুনার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত একাডেমিক পড়াশুনা চালিয়ে গেলে অন্তত পাশ মার্ক নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে তাই প্রয়োজন নিয়মিত পড়াশুনা, চর্চা ও অধ্যাবসায়। সহশিক্ষা-কার্যক্রমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পাঠ্যজ্ঞানের সংমিশ্রণ যদি সম্ভব হয় তবেই আসবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।

This is a Bangla article. This will help to know about various grading system and pass marks of different countries. 

References: Hyperlinked in the article.

Featured image source: therakyatpost.com

Related Articles