যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাদের অনেকেই জানেন যে, ইউরোপীয় রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডকে 'নিরপেক্ষ রাষ্ট্র' (neutral state) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত যেসব রাষ্ট্র বিশ্বে বিদ্যমান সামরিক–রাজনৈতিক জোটগুলোর কোনোটিতে যোগদান থেকে বিরত থাকে, তাদেরকে 'নিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হিসেবে অভিহিত করা হয়। এদিক থেকে সুইজারল্যান্ডকে পুরোপুরি নিরপেক্ষ বলা যায় কিনা, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ, কারণ সুইজারল্যান্ডের আনুষ্ঠানিক অবস্থান যেমনই হোক, কার্যত এটি ঘনিষ্ঠভাবে পশ্চিমা সামরিক–রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এবং বিশ্ব সম্প্রদায় আনুষ্ঠানিকভাবে সুইজারল্যান্ডকে 'নিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেনি।
কিন্তু বিশ্বে এমন একটি রাষ্ট্র রয়েছে, যেটির পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা' (permanent neutrality)। এই রাষ্ট্রটি কোনো সামরিক–রাজনৈতিক জোটে অংশগ্রহণ তো করেই না, তদুপরি বিশ্বের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুতে এই রাষ্ট্রটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। এমনকি নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রটিকে 'নিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, এবং এদিক থেকে এটি বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র আন্তর্জাতিক আইনগতভাবে স্বীকৃত 'নিরপেক্ষ রাষ্ট্র'। এই রাষ্ট্রটি হচ্ছে মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত বৃহত্তর তুর্কি জাতিভুক্ত মুসলিম–অধ্যুষিত রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তান।
মধ্য এশিয়ার দক্ষিণ–পশ্চিম কোণে অবস্থিত প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তান। ৪,৯১,২১০ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট রাষ্ট্রটির রাজধানী আশগাবাত। দেশটির প্রায় ৮০% অঞ্চলই কারাকুম মরুভূমিতে আচ্ছন্ন, ফলে এটি মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবিরল রাষ্ট্র এবং এর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ। রাষ্ট্রটির জনসংখ্যার সিংহভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং জাতিগতভাবে বৃহত্তর তুর্কি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তুর্কমেনিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত বক্তব্য অনুযায়ী, তুর্কমেনিস্তান একটি 'গণতান্ত্রিক, আইনভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ' রাষ্ট্র, যদিও বিশ্লেষকরা এটিকে একটি 'স্থিতিশীল ও অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী' রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন।
মধ্যযুগে তুর্কমেনরা প্রায়শই শত্রুভাবাপন্ন বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল, এবং তুর্কমেন ভূমি মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের ভূমি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর বলশেভিকরা সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে তুর্কমেন জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্র সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়, এবং ১৯২৫ সালে 'তুর্কমেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে'র সৃষ্টি হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রেক্ষাপটে তুর্কমেনিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তুর্কমেনিস্তানের সরকারের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ১৯৮৫ সাল থেকে তুর্কমেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব ছিলেন সাপারমুরাত নিয়াজভ, এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনিই তুর্কমেনিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। কমিউনিজম পরিত্যাগ করে তিনি তুর্কমেন জাতীয়তাবাদকে অনানুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন, এবং তুর্কমেনিস্তানে একটি কার্যত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। নিজেকে তিনি 'তুর্কমেনবাশি' (তুর্কমেনদের পিতা) ঘোষণা করেন, এবং তাকে ঘিরে সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রটিতে একটি 'কাল্ট অফ পার্সোনালিটি' (cult of personality) গড়ে ওঠে। বছরের মাসগুলোর নাম পরিবর্তন, রাজধানী আশগাবাতের বাইরের সকল হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা, স্বলিখিত বই 'রুহনামা'কে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিপুল ব্যয়ে নিজের একটি স্বর্ণনির্মিত ভাস্কর্য স্থাপন– এগুলো ছিল নিয়াজভের খামখেয়ালি শাসনব্যবস্থার কতিপয় নিদর্শন।
২০০৬ সালে নিয়াজভের মৃত্যুর পর প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুরবাঙ্গুলি বেরদিমুহামেদভ তুর্কমেনিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি হন, এবং এখন পর্যন্ত 'আর্কাদাগ' (সুরক্ষা প্রদানকারী) উপাধি ধারণকারী এই নেতাই দেশটির শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিয়াজভের খামখেয়ালিপনার অংশবিশেষকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কিন্তু অন্যদিকে আবার নিজেকে ঘিরে একটি 'কাল্ট অফ পার্সোনালিটি'র সৃষ্টি করেছেন। তার নিজস্ব খামখেয়ালিপনার কয়েকটি নিদর্শন হচ্ছে– তার অসন্তোষ উদ্রেককারী মন্ত্রীদের জনসম্মুখে অপদস্থ করে বরখাস্ত করা এবং কোভিড–১৯ মহামারীর অস্তিত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকার করা।
কিন্তু তুর্কমেনিস্তানের শাসনব্যবস্থা যেমনই হোক না কেন, রাষ্ট্রটিতে বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে এবং তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ১০টি রাষ্ট্রের মধ্যে এটি অন্যতম। বিশেষত বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারের উপস্থিতি রাষ্ট্রটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই রাষ্ট্রটিকে নিয়ে বৃহৎ শক্তিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ার কথা, এবং যেহেতু সামরিক দিক থেকে তুর্কমেনিস্তান খুবই দুর্বল, এজন্য রাষ্ট্রটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রটিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির ওপর নির্ভর করতে হয়।
তুরস্কে নিযুক্ত তুর্কমেনিস্তানি রাষ্ট্রদূত ইশানকুলি আমানলিয়েভের ভাষায়, তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা' (permanent neutrality)। কার্যত ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পরপরই তুর্কমেনিস্তান নিজেকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। তুর্কমেনিস্তানি সংবিধানের ২ নং ধারা অনুযায়ী, দেশটির জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হচ্ছে 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা', এবং সংবিধানের ৬৮ নং ধারা অনুযায়ী, দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি দেশটির নিরপেক্ষতা রক্ষা করার দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। অর্থাৎ, সাংবিধানিকভাবে তুর্কমেনিস্তান একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রীয় মূলমন্ত্র হচ্ছে 'স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা'। অনুরূপভাবে, তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের আনুষ্ঠানিক নাম 'স্বাধীন, নিরপেক্ষ তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত'।
১৯৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থানকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তখন থেকে দেশটি প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বরকে 'নিরপেক্ষতা দিবস' হিসেবে পালন করে থাকে। তুর্কমেনিস্তানি রাষ্ট্রপতি নিয়াজভ এমনকি ডিসেম্বর মাসের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন 'বিতারাপলিক' (Bitaraplyk), তুর্কমেন ভাষায় যার অর্থ নিরপেক্ষতা! পরবর্তীতে তুর্কমেনিস্তানি রাষ্ট্রপতি বেরদিমুহামেদভ এই নামটি পরিবর্তন করেছেন, কিন্তু তার শাসনামলেও দেশটিতে নিরপেক্ষতার প্রচারণা অব্যাহত থাকে।
২০১০ সালে রাজধানী আশগাবাতে দেশটির নিরপেক্ষ নীতির স্মারক হিসেবে 'আর্ক অফ নিউট্রালিটি' নামক একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। ২০১৫ সালকে তুর্কমেনিস্তানি সরকার 'নিরপেক্ষতা ও শান্তি বর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ তুর্কমেনিস্তানের অনুরোধে ১২ ডিসেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষতা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। সর্বশেষ তুর্কমেনিস্তানি সরকার 'তুর্কমেনিস্তান নিরপেক্ষতার জন্মভূমি' এটিকে ২০২০ সালের জন্য দেশটির মূলমন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তুর্কমেনিস্তান তাদের নিরপেক্ষতা নীতি অনুযায়ী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন 'ন্যাটো' বা রুশ–নেতৃত্বাধীন 'যৌথ সামরিক চুক্তি সংস্থা'র মতো সামরিক জোটে যোগদান থেকে বিরত থেকেছে। অনুরূপভাবে, তাদের নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে দেশটি বিরত থেকেছে, এমনকি ১৯৯০–এর দশকে নিকটবর্তী রাষ্ট্র তাজিকিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলাকালে সেখানেও জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করতে আশগাবাত সম্মত হয়নি। অবশ্য কোনো সামরিক জোট বা অভিযানে অংশগ্রহণ না করলেও তুর্কমেনিস্তান বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা গ্রহণ করে থাকে।
সামরিক জোটের মতো কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক জোটে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা থেকেও তুর্কমেনিস্তান বিরত থেকেছে। রুশ–নেতৃত্বাধীন 'ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন', কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের 'ইউরোপীয় প্রতিবেশী নীতি'তে তুর্কমেনিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়নি। রুশ–নেতৃত্বাধীন 'স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর কমনওয়েলথ' বা রুশ–চীনা যৌথ নেতৃত্বাধীন 'সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা'র কোনোটিতেই তুর্কমেনিস্তান পূর্ণ সদস্য নয়। প্রথমটির সঙ্গে দেশটি 'সহযোগী রাষ্ট্র' হিসেবে এবং দ্বিতীয়টির সঙ্গে 'অতিথি রাষ্ট্র' হিসেবে সংযুক্ত। এমনকি বৃহত্তর তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর অংশ হওয়া সত্ত্বেও তুর্কমেনিস্তান 'তুর্কিভাষী রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা পরিষদে'র সদস্য নয়।
বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তুর্কমেনিস্তান নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে। বিশেষত কোনো আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে কোনো এক পক্ষকে সমর্থন প্রদানের পরিবর্তে তুর্কমেনিস্তান উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপন বা মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব রাখে। এজন্য তুর্কমেনিস্তানি সরকারি ভাষ্যে তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষতা নীতিকে 'ইতিবাচক নিরপেক্ষতা' (positive neutrality) হিসেবে বর্ণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০–এর দশকে আফগান গৃহযুদ্ধ চলাকালে যেখানে রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান 'নর্দার্ন অ্যালায়েন্স'কে ক্ষমতাসীন তালিবানের বিরুদ্ধে সমর্থন করছিল, সেখানে তুর্কমেনিস্তান তালিবান ও নর্দার্ন অ্যালায়েন্স উভয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল। অনুরূপভাবে, তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রেও তুর্কমেনিস্তান মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টা চালায়। ২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখলের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বিষয়ে যে ভোটাভুটি হয়, সেটিতে অংশগ্রহণ করা থেকেও তুর্কমেনিস্তান বিরত ছিল।
মধ্য এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্র বিভিন্ন সামরিক–অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু মধ্য এশিয়ার অংশ হয়েও তুর্কমেনিস্তান কেন 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা'র নীতিকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এতটা একনিষ্ঠতার সঙ্গে সেটিকে পালন করছে? এর পেছনে বেশকিছু কারণ বিদ্যমান।
প্রথমত, তুর্কমেনিস্তান একটি জনবিরল রাষ্ট্র এবং এটির সামরিক সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে তুর্কমেনিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তুর্কমেনিস্তানের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে দক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের কোনো বৃহৎ শক্তির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক মিত্রতা স্থাপন থেকে বিরত থেকেছে, কারণ কোনো একটি বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হলে তাদেরকে অন্য বৃহৎ শক্তিগুলোর বিরাগভাজন হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রাক্তন সোভিয়েত অঞ্চলে যে ক্ষমতার শূণ্যতা সৃষ্টি হয়, সেটির সুযোগ গ্রহণের জন্য অন্যান্য শক্তিগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ তুর্কমেনিস্তানে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বিশেষত পশ্চিমা ও পূর্ব এশীয় কোম্পানিগুলো রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। অন্যদিকে, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস পাইপলাইন সোভিয়েত কেন্দ্রীয় পাইপলাইন ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গীভূত ছিল, এবং এর ফলে স্বাধীনতা লাভের পর প্রাথমিক পর্যায়ে তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস রপ্তানির ওপর রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ছিল। পরবর্তীতে এই নতুন 'গ্রেট গেমে' চীনও যোগদান করে এবং তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস সম্পদের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়।
এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই তুর্কমেনিস্তানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহৎ শক্তিগুলোর এই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে যতদূর সম্ভব দূরে রাখা এবং নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের যথাসম্ভব সদ্ব্যবহার করা। এই পরিস্থিতিতে তুর্কমেনিস্তান কোনো এক পক্ষের প্রতি সমর্থন প্রদান করলে তাদের জন্য সেটা লাভজনক হতো না। নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বনের মধ্য দিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যেকার এই প্রতিযোগিতাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক ছিল।
তৃতীয়ত, তুর্কমেনিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান তাদের জন্য একই সঙ্গে সুবিধাজনক এবং সমস্যাসঙ্কুল। বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে কারোর পক্ষে মধ্য এশিয়ার দূরবর্তী একটি প্রান্তে অবস্থিত তুর্কমেনিস্তানে আক্রমণ পরিচালনা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। দেশটির আশেপাশে কোনো খোলা সমুদ্র না থাকায় দেশটির বিরুদ্ধে 'গানবোট ডিপ্লোম্যাসি' পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দেশটির দূরবর্তী অবস্থানের ফলে '৮২তম এয়ারবোর্ন ডিপ্লোম্যাসি' (অর্থাৎ আকাশপথে আক্রমণ) পরিচালনাও কঠিন কাজ। এবং স্থলপথে দেশটিতে আক্রমণ পরিচালনা করতে হলে যে কোনো বৃহৎ শক্তিকে একাধিক সার্বভৌম রাষ্ট্র অতিক্রম করতে হবে।
অন্যদিকে, তুর্কমেনিস্তানের অবস্থান একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে। দেশটির উত্তর–পশ্চিমে কাজাখস্তান, উত্তরে ও পূর্বে উজবেকিস্তান, দক্ষিণ–পূর্বে আফগানিস্তান, দক্ষিণে ও দক্ষিণ–পশ্চিমে ইরান এবং পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর অবস্থিত। কাজাখস্তান তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, কিন্তু উজবেকিস্তান ও ইরান উভয়ই অস্থিতিশীল, এবং আফগানিস্তানে ১৯৭০–এর দশক থেকে যুদ্ধ চলছে। এই অস্থিতিশীলতার মূলে রয়েছে বিভিন্ন অরাষ্ট্রীয় কর্মক (non-state actors), রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি যাদের কোনো সমীহ নেই। এজন্য খুব সহজেই এই অঞ্চলগুলো থেকে তুর্কমেনিস্তানে অস্থিতিশীলতা বিস্তার লাভ করতে পারে। তদুপরি, মাদকদ্রব্য পাচার নিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে এবং যৌথ নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে উজবেকিস্তানের সঙ্গে তুর্কমেনিস্তানের বিরোধ রয়েছে, যদিও এই বিরোধের মাত্রা তীব্র নয়। কাস্পিয়ান সাগরের জলসীমা নিয়ে ইরান, আজারবাইজান ও কাজাখস্তানের সঙ্গেও দেশটির বিরোধ ছিল, কিন্তু সম্প্রতি এই বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটেছে।
এমতাবস্থায় আঞ্চলিক সঙ্কটগুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে তুর্কমেনিস্তান তাদের মধ্যে নিজেদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছে। এখন পর্যন্ত তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কোনোটির কোনো গুরুতর সংঘাত হয়নি, এবং এক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষ নীতি অংশত হলেও ভূমিকা পালন করেছে।
চতুর্থত, তুর্কমেনিস্তান বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রায় অপরিচিত একটি রাষ্ট্র। এর দূরবর্তী অবস্থান, কম জনসংখ্যা এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমে তুর্কমেনিস্তান সম্পর্কে প্রচারিত নেতিবাচক চিত্র– এগুলো সামগ্রিকভাবে তুর্কমেনিস্তানের জন্য বহুল প্রয়োজনীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এজন্য নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তুর্কমেনিস্তান বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজস্ব মর্যাদা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। অবশ্য এই প্রচেষ্টা তেমন সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে বলা চলে না, এবং ভাগ্যের পরিহাসে, তুর্কমেনিস্তানের 'নিরপেক্ষতা' এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো থেকে তাদের 'বিচ্ছিন্নতা' দেশটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
সর্বোপরি, তুর্কমেনিস্তানের নিয়াজভ এবং বেরদিমুহামেদভ সরকারদ্বয় নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষতার নীতিকে জোরদার করেছে। স্নায়ুযুদ্ধ–পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন–সমর্থিত লিবারেল ডেমোক্র্যাসির বিরোধিতাকারী এবং পশ্চিমা স্বার্থবিরোধী সরকারগুলোর পরিণতি ভালো হয়নি। সাদ্দাম হুসেইনের নেতৃত্বাধীন ইরাক এবং মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বাধীন লিবিয়ার সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট দেশ দুইটিতে আক্রমণ চালিয়েছে এবং বলপূর্বক সরকারের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অনুরূপভাবে, কিম পরিবারের কর্তৃত্বাধীন উত্তর কোরিয়া, আয়াতুল্লাহদের অধীনস্থ ইরান, আল–আসাদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত সিরিয়া বা নিকোলাস মাদুরোর ভেনেজুয়েলার ওপর পশ্চিমা বিশ্ব প্রচণ্ড চাপ অব্যাহত রেখেছে। কোনো ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আক্রান্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি বিশেষ সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে তুর্কমেনিস্তানের কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা নিজেদের পশ্চিমা বিশ্বের সুনজরে রাখার চেষ্টা করেছেন, এবং এই উদ্দেশ্যে মধ্য এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলোর মতো চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ না হয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে তুর্কমেনিস্তানের ঘোষিত 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা' নীতি তাদেরকে ইউরেশীয় শক্তিদ্বয়ের (চীন ও রাশিয়া) সঙ্গে ইউরো–আটলান্টিক বিশ্বের যেকোনো দ্বন্দ্বে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষতা নীতি তাদের জন্য বেশ ভালোভাবেই কাজ করেছে। কিন্তু তুর্কমেনিস্তানের 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা'র নীতি আদৌ চিরস্থায়ী হবে কিনা, সেটি নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
প্রথমত, রপ্তানিকৃত গ্যাসের মূল্য নিয়ে বিরোধের প্রেক্ষাপটে এবং রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে তুর্কমেনিস্তান রাশিয়ার মাধ্যমে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে। কিন্তু তাদের বিকল্প পন্থাগুলো নানাবিধ কারণে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির পরিকল্পনা তেমন কোনো সাফল্য অর্জন করেনি। সময়মতো মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ইরানি ব্যর্থতার কারণে তুর্কমেনিস্তানি সরকার ইরানের নিকট গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তুর্কমেনিস্তান থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ভারত পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল, আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধ এবং ভারতীয়–পাকিস্তানি দ্বন্দ্বের কারণে সেটিও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
এর ফলে চীন তুর্কমেনিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। তুর্কমেনিস্তানের মোট রপ্তানির ৭২% যায় চীনে, এবং চীন–নিয়ন্ত্রিত 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' প্রকল্পের অংশ হওয়ায় চীন তুর্কমেনিস্তান প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে তুর্কমেনিস্তানে চীনা অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য ২০১৯ সালে তুর্কমেনিস্তান রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস রপ্তানি বিষয়ক পাঁচ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি করেছে, কিন্তু এটি তুর্কমেনিস্তানের চীনা প্রভাব বিস্তার রোধে বিশেষ কার্যকর হবে কিনা, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। এমতাবস্থায় চীনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা তুর্কমেনিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে চীনা প্রভাব বলয়ে টেনে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তানের পক্ষে প্রকৃত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
এবং দ্বিতীয়ত, একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে অবস্থান করলেও তুর্কমেনিস্তান সাধারণভাবে স্থিতিশীল। গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স অনুযায়ী, তুর্কমেনিস্তানের সন্ত্রাসবাদের প্রভাব স্বল্প। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। ইরাক ও সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক মিলিট্যান্ট গ্রুপ 'ইসলামিক স্টেট'–এর (আইএস) উত্থানের পর প্রায় ৩০০ তুর্কমেনিস্তানি নাগরিক সংগঠনটিতে যোগ দিয়েছে। এটি তুর্কমেনিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের বিস্তারের প্রতি ইঙ্গিত করছে। অনুরূপভাবে, সম্প্রতি আফগানিস্তান–তুর্কমেনিস্তান সীমান্তে আইএস মিলিট্যান্টরা তুর্কমেনিস্তানি সীমান্তরক্ষীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, এবং এর ফলে অন্তত কয়েক ডজন তুর্কমেনিস্তানি সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছে।
এই হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে তুর্কমেনিস্তান রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে এবং রুশ–তুর্কমেনিস্তানি যৌথ সামরিক মহড়ার সংখ্যাও সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অসমর্থিত সূত্র অনুসারে, ২০২০ সালে তুর্কমেনিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আইএসের সঙ্গে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে দেশটিতে রাশিয়া সৈন্য মোতায়েন করেছে, যদিও এ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় তুর্কমেনিস্তানে রুশ সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি পেলে বা রাশিয়া ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তুর্কমেনিস্তান আর প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে না।
ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা তুলনামূলকভাবে কঠিন। একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে তুর্কমেনিস্তান 'চিরস্থায়ী নিরপেক্ষতা' নীতিকে নিজেদের রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, এবং এখন পর্যন্ত এই নীতি তাদেরকে নিরাশ করেনি। কিন্তু ক্রমশ পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশটির এই নীতি বজায় রাখা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠবে, এই সম্ভাবনা যথেষ্ট যৌক্তিক।
This is a Bengali article about 'permanent neutrality', the basis of Turkmenistani foreign policy.
Sources:
1. Charles J. Sullivan. "Neutrality in Perpetuity: Foreign Policy Continuity in Turkmenistan." Asian Affairs (October 2020): 779–794. https://doi.org/10.1080/03068374.2020.1826753
2. Godze Bayar. "Neutrality basis of Turkmenistan's foreign policy." Anadolu Agency, February 5, 2020. https://www.aa.com.tr/en/asia-pacific/-neutrality-basis-of-turkmenistan-s-foreign-policy-/1725403
3. Ryan Cook. "Turkmenistan: Geopolitics Explained." Political Holidays, November 10, 2019. https://www.google.com/amp/s/www.politicalholidays.com/amp/turkmenistan-geopolitics-explained
Source of the featured image: Pinterest