Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গোলাপী হ্রদ: প্রকৃতির মোহনীয় সৌন্দর্যের আধার

রহস্যময় এ নীল গ্রহের কতটুকু রহস্যই বা আমাদের জানা? বড়জোর মহাসাগরের ছোট ছোট খাদ, নীল গিরি, সুউচ্চ পর্বতমালা! তবে, সবকিছু ছাপিয়ে এখনো অনেক নিগূঢ় স্থান বিদ্যমান যাদের রহস্যময়তা আজও অজানা।

এসব রহস্যময় স্থান এখনও সময়ে-অসময়ে অনুসন্ধানী পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের চোখে ধরা দিচ্ছে। আচমকা দেখা মিলছে শান্ত, স্নিগ্ধ ও মনোরম এক বা একাধিক এলাকা। তেমনই কিছু অপরূপ অত্যাশ্চর্য স্থানের সমন্বয় গোলাপী হ্রদ (Pink Lake)। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এসব হ্রদের জানা-অজানা বিষয় নিয়েই আজকের আয়োজন।

Courtesy: RD.COM

১. লাগোনা কলোরাডা, বলিভিয়া

আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশ আর অদূরে অবস্থিত মহাসমুদ্র। এদের পাথুরে উপকূল ঘেঁষে অবস্থান করছে মনোরম সৌন্দর্যে ভরপুর লাগোনা কলোরাডা হ্রদ। ভৌগোলিকভাবে চিলির সীমানা ঘেঁষে ২৩ বর্গ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত এ হ্রদের সর্বোচ্চ গভীরতা মাত্র ৫ ফুট! যার জন্য এর অগভীর জল চিলিয়ান, আন্দিয়ান এবং বিপন্ন ফ্ল্যামিঙ্গোদের জন্যও এক অপরূপ অবসর-বিনোদন স্থান। ছোট ছোট নয়নাভিরাম গ্রামে পরিবেষ্টিত এ স্থান সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকদের কাছেও খুবই নিরাপদ। রাতের বেলা গ্রামগুলোতে রাত্রিযাপনও করতে পারেন তারা।

Courtesy: iStock

২. লেক হিলিয়ার, অস্ট্রেলিয়া

১৮০২ সাল; সদ্য আবিষ্কৃত লেক হিলিয়ার হ্রদ তার মোহনীয় গোলাপী আভা দ্বারা সাড়া ফেলে দিয়েছে পুরো পৃথিবীতে। বিভিন্ন প্রান্তের কৌতুহলী পর্যটকরাও ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট এক দ্বীপে অবস্থিত এই গোলাপী হ্রদটির দৈর্ঘ্য ১,৯৬৮ ফুট। চওড়া প্রায় ৮২০ ফুট। হ্রদের উপর থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে লেকের গোলাপী আভা সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখায়। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত হেলিকপ্টার পরিষেবাও বিদ্যমান রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যেখান থেকে তোলা সম্ভব লেকের দুর্দান্ত সব ছবি। এছাড়াও লেকটির পাশে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে পৃথিবীর শীতলতম ৬টি শুভ্র সৈকত, যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে লেকের সৌন্দর্য।

Courtesy: RD.COM

৩. হাট উপহ্রদ, অস্ট্রেলিয়া

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার এই হ্রদ তার ঝলমলে গোলাপী রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে লেকের সর্বত্র। মনোরম এই লেক মৎস্য আহরণের জন্য পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট গ্রেগরি নামক গ্রামে অবস্থিত। বিভিন্ন ঋতুতে ২৭ বর্গ মাইলের হ্রদটি তার গোলাপী বর্ণের আবরণে পরিবর্তন আনে। চারিধার রাঙিয়ে তোলে বিচিত্র সব রঙে। হ্রদের প্রধান রঙ যদিও গোলাপী, তবে এর অন্য রঙ, যেমন- লাল, নীল, বেগুনিও সমানভাবে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। শুভ্র সকাল ও সূর্যাস্তের সময় সবচেয়ে সুন্দর দেখায় এই হ্রদের দৃশ্যপট।

Courtesy: iStock

৪. লাস স্যালিনাস দে তোরেভিজা, স্পেন

ত্রয়োদশ শতকের এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, সমুদ্রের নোনাজল থেকে লবণ সংগ্রহের জন্য লেকের সাথে খনন করা হয় ছোট্ট এক খাল। খালের ভেতর দিয়ে লবণও জমতে থাকে এই লেকে। তৈরি হতে থাকে একধরনের বর্ণিল স্নিগ্ধ আভা। অতঃপর, ধীরে ধীরে লেকটি পরিণত হয় গোলাপী হ্রদে। হ্রদের প্রাণীদের প্রজনন মৌসুমে কখনো যদি এই হ্রদে যান, তবে দেখতে পাবেন হাজারও ফ্ল্যামিঙ্গো ও জলজ পাখির আনাগোনা, যা আপনার মন ভরিয়ে দেবে আনন্দের আবেশে।

Courtesy: iStock

৫. লেক রেটবা, সেনেগাল

সেনেগালে অবস্থিত এই হ্রদ স্থানীয় জনপদ ও পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মাত্র ১ বর্গ মাইল আয়তনের এই গোলাপী হ্রদ একইসাথে সেনেগালীয়দের লবণ সংগ্রহ ও পর্যটনের অন্যতম উৎস। বিভিন্ন সময়ে হ্রদের নীচ থেকে সংগ্রাহকরা সংগ্রহ করে থাকেন মজুদ পরিমাণ লবণ। এছাড়াও, নির্মল এ হ্রদের গোলাপী জলের চারপাশে প্রচুর পরিমাণ লবণ-পাহাড়েরও দেখা মেলে। একজন পর্যটক হিসেবে নভেম্বর-জুনের মধ্যবর্তী শুষ্ক মৌসুমে এখানে ভ্রমণের জন্য বের হওয়া উচিত। কেননা এসময় এর গোলাপী আভা সবচেয়ে বেশি আলোক বিচ্ছুরণ করে। সেসময় উদ্দাম ঢেউয়ের তোপে এর গোলাপী তরঙ্গও যেন পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্য।

Courtesy: RD.COM

৬. সিভাশ লবণ উপহ্রদ, রাশিয়া

কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগরের মধ্যবর্তী ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে অবস্থিত এই গোলাপী সিভাশ উপহ্রদগুলো। ২২০ মিলিয়ন মার্কিন টন লবণের মজুদদার এরা। হ্রদগুলোর জল যতই অগভীর হোক না কেন, ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ এটি। কেননা, প্রতি মৌসুমে আন্তর্জাতিকভাবে এই লবণ সংগ্রহ করা হয় এবং রপ্তানির উদ্দেশ্য মজুদ ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

Courtesy: iStock

৭. লেক ন্যাট্রন, তানজানিয়া

হ্রদটি উত্তর তানজানিয়া ও কেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত। রিফ্ট ভ্যালিতে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নীচে বসে থাকা লেক ন্যাট্রনের তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে! তা সত্ত্বেও, টকটকে গোলাপী হ্রদটি লক্ষ লক্ষ  ফ্ল্যামিঙ্গোর আবাসস্থল হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তবে, হ্রদটির ক্ষারীয় জলের pH ১০.৫-এর মতো, তাই হ্রদটি কাছ থেকে অবলোকন ও বসবাসের অযোগ্য এবং এতে বিদ্যমান কস্টিক অভিযোজনহীন প্রাণীদের ত্বক এবং চোখ পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম। যদিও এর সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

Courtesy: RD.COM

জলের রঙ গোলাপী কেন?

গোলাপী হ্রদ কোনো অপটিক্যাল ইলিউশন নয়। বরং এটি একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়। যদি সমস্ত হ্রদ তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে সবগুলো হ্রদই লবণাক্ত। প্রকৃতিবিদদের মতে, হ্রদের উচ্চ লবণাক্ততা এমন অনন্য রঙ সৃষ্টির মূল কারিগর।

যদিও আলাদাভাবে প্রতিটি হ্রদের গোলাপী রঙের সঠিক কারণ নির্ণয় করা হয়নি, তবে গবেষকদের মতে, হ্রদের উচ্চ লবণাক্ততা কিছু সংখ্যক জীবাণুকে এমন বিরূপ পরিবেশে বেড়ে ওঠতে সাহায্য করেছে। তেমনই একটি জীবাণু হলো হ্যালোফাইল মাইক্রো শেওলা। এটি Dunaliella salina নামেও পরিচিত। পর্যাপ্ত আলো, তাপ ও জলের উপরিভাগের লবণাক্ত স্তরের সাথে এই জীবাণুগুলো বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড তৈরি ও জমা করে। এই ক্যারোটিনয়েডগুলোই মূলত পানির রঙ তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপী রঙে রাঙিয়ে তোলে!

Courtesy: iStock

Language: Bangla
Topic: Pink Lake: A reservoir of enchanting beauty of nature
Feature Image: RD.COM
References: All the necessary links are hyperlinked inside the article.

Related Articles