Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনাকালে বিশ্বব্যপী রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর বিপর্যয়

রাইড শেয়ারিং সেবা আমাদের দেশে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি। এই খাতে সেবাদাতা কোম্পানিগুলো কয়েক বছর আগেও বেশ অপরিচিত ছিল বাংলাদেশের মানুষের কাছে। অন্তত ২০১৫ সালের আগে বলতে গেলে অচেনাই ছিল এসব। কিন্তু এরই মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছে এই কোম্পানিগুলো। ঢাকার রাস্তায় বাইক চালকের পেছনে হেলমেট পরিহিত যাত্রীর দৃশ্য এখন খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত দশকের প্রথমদিকে রাইড শেয়ারিংয়ের ধারণা বাস্তবে পরিণত করার প্রয়াস শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর অনেক দেশে যাত্রী পরিবহনখাত অনেকখানিই বদলে গিয়েছে।

করোনাভাইরাসের আগমনের ফলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। সেই পড়ন্ত অবস্থার পরিবর্তন হয়নি এখনও, চলমান রয়েছে কয়েকমাস ধরেই। অর্থনীতির অন্যতম খাত হিসেবে যাত্রী পরিবহনখাতকেও বেশ ভুগতে হচ্ছে এই আগ্রাসনের ফলে। এ দেশেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে আগে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার মাঝখানে যানজটে আটকে থেকে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠতো, সেখানে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকার মতো অবিশ্বাস্য দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে। এই দৃশ্য আপাত মধুর হলেও এক বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা গণপরিবহনের সাথে জড়িত, তাদের পেশা যে হুমকির মুখে পড়েছে সেটি আমাদের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে গিয়েছে।

হআুআুত
ঢাকার রাস্তার নিয়মিত দৃশ্য; image source: thefinancialexpress.com.bd

তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই রাইড শেয়ারিংয়ের এই সেবা গ্রহণ করা যায়। স্মার্টফোনগুলোতে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই চালকের সাথে যোগাযোগ করা যায়। এরপর নিশ্চিন্তে গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে দিলেই কাজ শেষ। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সেই সাথে যারা চালক হিসেবে সেবা দেন তারাও বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন ব্যবহারকারীদের। সব মিলিয়ে যাত্রীবান্ধব হওয়ায় রাইড শেয়ারিং সেবা ব্যবহারের গ্রাফ উর্ধ্বমুখীই ছিল এ দেশে যাত্রা শুরুর পর থেকে।

কিন্তু করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর স্বাভাবিক চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। আগে যে হারে একজন চালক যাত্রী পেতেন, সেই সংখ্যা একেবারেই কমে যেতে শুরু করে। প্রথমদিকে যেভাবে আতঙ্ক শুরু হয়েছিল, তাতে চালকেরা নিজেরাও স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে যখন যথাযথ স্বাস্থ্যসচেতনতা বজায় রাখার শর্তে সব কিছু খুলে দেয়া হয়, তাতে তারা কিছুটা চিন্তামুক্ত হতে পারেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাথমিক ধাক্কায় যেভাবে যাত্রীর সংখ্যা একেবারে কমে গিয়েছিল, এমনকি শূন্যের কোটায়ও নেমে এসেছিল অনেক চালকের ক্ষেত্রে, সেই ধকল আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর ভোক্তাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অসংখ্য মানুষ। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাটাই করেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতি গ্রহণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যদি সশরীরে উপস্থিত থাকার মতো পরিবেশ থাকত, তাহলে কর্মীরা যাতায়াতের রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো ব্যবহার করতে পারতেন। ফলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চালকেরা পর্যাপ্ত যাত্রী পেতেন, অর্থোপার্জনও বরাবরের মতো সহজ হতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যেহেতু কর্মীরা সশরীরে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না, তাই চালকরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত যাত্রীদের নাগাল ধরতে পারছেন না।

হচহবহবহ
করোনা ভাইরাস হানা দেওয়ার পর রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল; image source: tbsnews.net

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা কোম্পানিগুলো আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো অবস্থা না থাকা। যে মোটরবাইক, কার কিংবা ট্যাক্সিক্যাবে যাত্রীদের সেবা দেয়া হয়, সেগুলোতে ছ’ফুট দূরত্বে অবস্থান করা সম্ভব নয়। মোটরবাইকের ক্ষেত্রে তো একেবারে শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হয়। এখানে সামাজিক দূরত্বের বিষয় নিয়ে ভাবা পুরোটাই অবান্তর।

একজন রাইড শেয়ারিং বাহনের চালককে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় বলে ঝুঁকিও অনেক বেশি। ফলে করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে যে স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলা প্রয়োজন, তা রাইড শেয়ারিং সেবার দিক থেকে মেনে চলা প্রায় অসম্ভব। পিপিই কিংবা মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরিহিত থাকলে ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়, কিন্তু তারপরও সেটা যাত্রীদের পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিতে যথেষ্ট নয়। আমেরিকায় উবার যাত্রীদের মাস্ক পরিহিত ছবি অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশনে আপলোড করে নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবহন সেবা দেওয়ার বিধান চালু হয়েছে। কিন্তু তারপরও যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না।

মচহআহআহ
বিভিন্ন স্বাস্থ্যসুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেয়ার পরও যাত্রীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না; image source: businessinsider.com

করোনাভাইরাসের আগমনের পর ই-কমার্সের বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বাসায় আনিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে শহরে বসবাসকারীদের। এক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিংয়ে সংশ্লিষ্ট চালকদের স্বাভাবিক যাত্রীঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার বিষয়টি মাথায় আসলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। কারণ যাত্রীদের সেবা দেয়ার মাধ্যমে যে আয় হতো, সেটির তুলনায় পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যে আয় হয় তা নগণ্য। আর এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী চালকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় বেশি চাহিদা নেই।

দেশের বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোতে যারা চালকের কাজ করতেন, তাদের একটি বড় অংশ পার্ট-টাইম চালক হিসেবে ছিলেন। পড়াশোনার খরচ মেটাতে, সংসারের হাল ধরতে কিংবা অন্যান্য কাজে অপ্রতুল আয় থাকায় বাড়তি আয়ের আশায় তারা এই খাতে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু করোনা সবকিছু ভেস্তে দিয়েছে। অনেকে হতাশ হয়ে এই পেশা ত্যাগ করে বিকল্প পেশা খুঁজছেন। অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে। দুঃসময় যাচ্ছে অনেক চালকেরই।

বৈশ্বিক রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার এপ্রিলের দিকে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। প্রথমদিকে জনগণের মনে এত বেশি আতঙ্ক ছিল যে হুট করে রাইড শেয়ারিংয়ের হার একদম কমে যায়। ফলে প্রায় ৩,০০০ কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হয় তারা। এছাড়াও অনেক কর্মীর বেতন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে বাধ্য হয় তারা।

একইভাবে শেয়ারিং কোম্পানি ‘লিফট্’ তাদের ১৭ শতাংশ কর্মীকে ছাটাই করতে বাধ্য হয় এপ্রিল মাসে। ‘ওলা’ নামের আরেকটি রাইডশেয়ারিং কোম্পানি মার্চ মাসের দিকে প্রায় ১,৪০০ কর্মীকে ছাটাই করে, কারণ তাদের আয় নেমে গিয়েছিল ৯৫ শতাংশের মতো। এরকম অবস্থায় আসলে কোনো কোম্পানিরই কর্মী ছাটাই করা ছাড়া উপায় থাকে না। বছরের প্রথমদিকে অনেক কোম্পানিই বিরাট লোকসানের সম্মুখীন হলেও ধীরে ধীরে লকডাউন খোলার সুবাদে কোম্পানিগুলো আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

করোনাকালে বিশ্বব্যাপী আশি শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে রাইড শেয়ারিং সেবার ব্যবহার। এতে করে যেসব ব্যক্তি এই সেবার উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা বিপদে পড়েছেন। একইসাথে বিপদে পড়েছে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোও। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে অসংখ্য কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। কোম্পানিগুলোর আয়ের একটি অংশ রাষ্ট্রের কাছে কর হিসেবে জমা হতো। করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতের পেছনে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রেরও বিশাল অংকের অর্থ হাতছাড়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের আগ্রাসন বিপর্যয় ডেকে এনেছে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর জন্য।

Related Articles