Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ভূমিকা || পর্ব–১

চলমান রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তৃত পরিসরের আন্তঃরাষ্ট্রীয় ‘প্রচলিত যুদ্ধ’ (inter-state conventional war)। এই যুদ্ধের একপক্ষে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি রাশিয়া এবং রুশ–সমর্থিত দুটি প্রোটো–রাষ্ট্র (proto-state) গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুগানস্ক, যাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে পূর্ব ইউরোপীয় স্লাভিক–অর্থোডক্স রাষ্ট্র বেলারুশ। যুদ্ধের অপরপক্ষে রয়েছে ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক শক্তি ইউক্রেন, যাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলো, নরওয়ে, তুরস্ক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড, অর্থাৎ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেনে রুশ অগ্রগতি প্রতিহত করা এবং ইউক্রেনীয়দের ব্যবহার করে রুশদের যত বেশি সম্ভব ক্ষতিসাধন করা।

চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আনম্যানড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকল (কমব্যাট ড্রোন), লয়টারিং মিউনিশন্স (আত্মঘাতী ড্রোন), ট্যাঙ্ক–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, জাহাজ–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার কামান এবং মাল্টিপল রকেট লঞ্চার। প্রত্যেক ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার সময় ইউক্রেনীয় ও পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম দাবি করেছে, উক্ত সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে যুদ্ধের মোড় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে যাবে, কিন্তু কার্যত এখনও পশ্চিমাদের দ্বারা সরবরাহকৃত কোনো সামরিক সরঞ্জামই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেনি।

যুদ্ধ শুরুর আগে এবং যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে যে সামরিক সরঞ্জামকে ইউক্রেনের জন্য ‘গেম–চেঞ্জার’ বা ‘যুদ্ধের মোড় পরিবর্তনকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো, সেটি হচ্ছে তুরস্ক কর্তৃক নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ আনম্যানড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকল (ইউসিএভি)। তুর্কি–নির্মিত এই ড্রোন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছে, এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্রের বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। অন্তত যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেনীয়দের এবং ইউক্রেন সমর্থকদের ধারণা ছিল, বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন এই যুদ্ধে ইউক্রেনের ‘বিজয়’ লাভে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বস্তুত, এই যুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ভূমিকা সম্পর্কে ইউক্রেনীয়রা এতটাই আশাবাদী ছিল যে, তারা উক্ত ড্রোনকে নিয়ে গান রচনা করে ফেলে! যুদ্ধ চলাকালে তুরস্ক বেশ কয়েকবার ইউক্রেনকে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের চালান সরবরাহ করেছে।

‘মিনি আকিল্লি মুহিম্মাৎ’ (স্মার্ট মাইক্রো মিউনিশন্স) বা এমএএম সজ্জিত তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি বায়রাক্তার টিবি–২ কমব্যাট ড্রোন; Source: Bayhaluk/Wikimedia Commons

কিন্তু যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেনীয়দের ও ইউক্রেন সমর্থকদের মধ্যে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন নিয়ে যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছিল, সেটি এখন অনেকাংশেই স্তিমিত হয়ে এসেছে, এবং ইউক্রেনীয় ও পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো এখন তুর্কি ড্রোনের পরিবর্তে অন্যান্য বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামকে ‘গেম–চেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যা দিতে শুরু করেছে। অবশ্য ইউক্রেনীয় সৈন্যরা এখনও বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। চলমান যুদ্ধে তুরস্ক–নির্মিত বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন কার্যত কেমন ভূমিকা রেখেছে, সেটি এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয়।

পটভূমি: ইউক্রেনীয় সঙ্কট ও দনবাস যুদ্ধে এবং রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ভূমিকা

২০১৪ সালের এপ্রিলে ইউক্রেন এবং দনবাসে সদ্য স্থাপিত দুটি রুশপন্থী রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুগানস্কের মধ্যে ‘দনবাস যুদ্ধ’ (এপ্রিল ২০১৪ – ফেব্রুয়ারি ২০২২) শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেয়, এবং দনেৎস্ক ও লুগানস্কের পক্ষ নিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যুদ্ধের এই নতুন পর্যায়কে এই নিবন্ধে ‘রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ‘দনবাস যুদ্ধ’ ও ‘রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ’কে বস্তুত তিনটি পর্যায় থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে, এই যুদ্ধ দুটি ইউক্রেনের অভ্যন্তরে বিদ্যমান পূর্ব ইউক্রেনীয়–পশ্চিম ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্ব ও রুশপন্থী–পশ্চিমাপন্থী দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ; আঞ্চলিক পর্যায়ে, এই যুদ্ধ দুটি রুশ–ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্বের ফলাফল; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, এই যুদ্ধ দুটি রুশ–পশ্চিমা ও রুশ–মার্কিন দ্বন্দ্বের পরিণতি।

দনবাস যুদ্ধ এবং চলমান রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধে তুরস্ক এবং তুরস্ক–নির্মিত বায়রাক্তার টিবি–২ কমব্যাট ড্রোনের ভূমিকা বিশেষ কৌতূহলোদ্দীপক। তুরস্ক মার্কিন–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘ন্যাটো’র অন্যতম প্রধান সদস্য, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররাষ্ট্র। তদুপরি, তুর্কি রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক ইউক্রেনে তুর্কি প্রভাব বিস্তার করতে বিশেষভাবে আগ্রহী, এবং সিরিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ ককেশাস ও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তুরস্ক রাশিয়ার বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম এক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এমতাবস্থায় রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর আগপর্যন্ত রুশ–ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্বে তুরস্ক সাধারণভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে আসছিল, এবং তুরস্ক ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির জোরালো সমর্থক ছিল।

২০২১ সালের এপ্রিলে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তুর্কি রাষ্ট্রপতি রেজেপ এরদোয়ান (ডানে) এবং ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি; Source: Murat Cetinmuhurdar/Presidential Press Office/Reuters via Al Jazeera

এমতাবস্থায় ইউক্রেন দনেৎস্ক ও লুগানস্ক রাষ্ট্রদ্বয়ের ধ্বংস সাধন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন কিনতে শুরু করে। বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের নির্মাতা হচ্ছে তুর্কি অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘বায়কার’, এবং উক্ত কোম্পানির ‘মুখ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা’ (Chief Technology Officer) হচ্ছেন তুর্কি রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের জামাতা সেলজুক বায়রাক্তার। ২০১৪ সালের আগস্টে ড্রোনটি প্রথমবারের মতো উড্ডয়ন করে। তুর্কি সশস্ত্রবাহিনী ২০১৫ সাল থেকে সাফল্যের সঙ্গে উক্ত ড্রোনকে তুরস্ককেন্দ্রিক কুর্দি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘পিকেকে’ (কুর্দি: Partiya Karkerên Kurdistan, ‘PKK’) ও সিরিয়াকেন্দ্রিক কুর্দি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ওয়াইপিজি’র (কুর্দি: Yekîneyên Parastina Gel, ‘YPG’) বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, এবং এর মধ্য দিয়ে ড্রোনটি প্রথমবারের মতো পরিচিতি লাভ করে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো তাদের বিমানবাহিনীর জন্য তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ক্রয়ের উদ্দেশ্যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উক্ত চুক্তি অনুসারে, বায়কার কোম্পানি দুই বছরের মধ্যে ইউক্রেনকে ১২টি ড্রোন, ৩টি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন সিস্টেম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে, এবং উক্ত ড্রোনবহর ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়। তদুপরি, ইউক্রেনীয় ড্রোন অপারেটররা তুরস্কে উক্ত ড্রোন পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ইউক্রেনীয় সরকার ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর জন্য ৪৮টি এবং ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর জন্য ৬টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ সালে ইউক্রেন ও তুরস্ক যৌথভাবে কমব্যাট ড্রোন উৎপাদনের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

২০২০ সালে সংঘটিত তিনটি যুদ্ধ বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। এই যুদ্ধ তিনটি ছিল যথাক্রমে: ২০২০ সালের জানুয়ারি–অক্টোবরে লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সংঘটিত তুরস্ক ও তুর্কি–সমর্থিত ত্রিপোলিকেন্দ্রিক লিবীয় সরকার এবং রুশ, ফরাসি, ইমারাতি ও মিসরীয়–সমর্থিত তোবরুককেন্দ্রিক লিবীয় সরকারের মধ্যকার যুদ্ধ; ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি–মার্চে ইদলিবে সংঘটিত তুরস্ক ও তুর্কি–সমর্থিত সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো এবং রুশ ও ইরানি–সমর্থিত সিরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ; এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর–নভেম্বরে নাগর্নো–কারাবাখ ও আশেপাশের অঞ্চলে সংঘটিত তুর্কি–সমর্থিত আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া ও আর্তসাখের মধ্যকার যুদ্ধ। তিনটি যুদ্ধেই তুরস্ক ও তুর্কি মিত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রধানত সোভিয়েত–নির্মিত সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত ছিল, এবং তুরস্ক ও তাদের মিত্ররা বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার করে তিনটি রণাঙ্গনেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোভিয়েত–নির্মিত সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংসে সক্ষম হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ২০২০ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধে আজারবাইজানি বিজয় উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজয়সূচক সামরিক প্যারেডের সময় আজারবাইজানি বিমানবাহিনীর একটি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন প্রদর্শন করা হচ্ছে; Source: Website of the President of Azerbaijan via Wikimedia Commons

বিশেষত ২০২০ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধ ছিল বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের জন্য এক সুবর্ণ বাণিজ্যিক সুযোগ। ১৯৮৮–৯৪ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধে আর্মেনিয়া ও আর্তসাখের নিকট আজারবাইজান শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়, এবং আজারবাইজানি–নিয়ন্ত্রিত নাগর্নো–কারাবাখের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ও তার আশেপাশের ৭টি আজারবাইজানি জেলার সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আর্তসাখের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে যায়। কিন্তু ২০২০ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধে আজারবাইজান আর্মেনিয়া ও আর্তসাখকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় এবং বিগত যুদ্ধে হারানো ৭টি আজারবাইজানি জেলার সম্পূর্ণ অংশ ও নাগর্নো–কারাবাখের একাংশ আবার আজারবাইজানিদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই যুদ্ধে আজারবাইজানিরা বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আর্মেনীয় ও আর্তসাখ সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করে, এবং তুর্কি ও আজারবাইজানি প্রচারণায় এই যুদ্ধে আজারবাইজানি বিজয়ের কৃতিত্ব বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনকে দেয়া হয়।

এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাপী বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়। বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনগুলোকে দেখা হচ্ছিল সুলভ, কার্যকর, এবং সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য এক দারুণ অস্ত্র হিসেবে। ফরাসি প্রচারমাধ্যমের ভাষ্য অনুসারে, এ সময় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনগুলো ‘হট কেকে’র মতো বিক্রি হতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিজেদের অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তুরস্কের কাছ থেকে উক্ত ড্রোন ক্রয় করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইথিওপিয়া স্বাধীনতাকামী/বিচ্ছিন্নতাবাদী তিগ্রাই অঞ্চলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এবং মরক্কো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ক্রয় করেছে।

অনুরূপভাবে, ইউক্রেনও তাদের অভ্যন্তরীণ শত্রু দনেৎস্ক ও লুগানস্ক, এবং বহিঃশত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিজস্ব বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনবহর গড়ে তুলতে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠে। বস্তুত, ২০২০ সালের আগে থেকেই তারা উক্ত ড্রোন কিনতে শুরু করেছিল, কিন্তু ২০২০ সালের যুদ্ধগুলোয়, বিশেষত আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধে, ড্রোনটির কার্যকারিতা দেখার পর তারা উক্ত ড্রোন ক্রয়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ইউক্রেনীয় প্রচারমাধ্যম এ সময় খোলাখুলিভাবে এই মর্মে বক্তব্য রাখতে শুরু করে যে, আজারবাইজান যেভাবে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার করে ১৯৮৮–৯৪ সালের যুদ্ধে হারানো ভূখণ্ডের সিংহভাগ পুনর্দখল করেছে, সেভাবে ইউক্রেন উক্ত ড্রোন ব্যবহার করে দনেৎস্ক ও লুগানস্ক দখল করতে সক্ষম হবে।

২০২১ সালের আগস্টে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সামরিক প্যারেডের আগে অনুশীলনের সময় ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর একটি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন প্রদর্শন করা হচ্ছে; Source: Efrem Lukatsky/Reuters via Euronews

২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর একটি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দনেৎস্ক সশস্ত্রবাহিনীর একটি সোভিয়েত–নির্মিত ১২২ মিলিমিটার ‘ডি–৩০’ হাউইটজার ধ্বংস হয়। এটি ছিল দনবাসে যুদ্ধে ইউক্রেন কর্তৃক প্রথমবারের মতো তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোনের ব্যবহার। ঘটনাটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করে। বস্তুত, উক্ত ঘটনাকে চলমান রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের বহুসংখ্যক অন্তর্নিহিত কারণের মধ্যে একটি হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। ২০১৪ সালের ইউরোমাইদান বিপ্লব/অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেন রাশিয়াকে তাদের প্রধান বহিঃশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, এবং ব্যাপক সামরিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইউক্রেন কর্তৃক বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন কেনা ছিল উক্ত সামরিকায়ন প্রক্রিয়ারই অংশ। রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইউক্রেন সবচেয়ে জনবহুল ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। এমতাবস্থায় রাশিয়া তার সীমান্তে সামরিক দিক থেকে ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে ওঠা অত্যন্ত শত্রুভাবাপন্ন ও পশ্চিমাপন্থী ইউক্রেনকে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছিল।

বস্তুত, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকেই রাশিয়া রুশ–ইউক্রেনীয় সীমান্ত বরাবর এবং ইউক্রেন দনেৎস্ক–ইউক্রেনীয় ও লুগানস্ক–ইউক্রেনীয় সীমান্ত বরাবর সৈন্য সমাবেশ শুরু করে। ইউক্রেন কর্তৃক দনেৎস্কের ওপর বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণ পরিচালনার পর থেকে উভয়পক্ষের সৈন্য সমাবেশের ব্যাপকতা আরো বৃদ্ধি পায়। রাশিয়া, দনেৎস্ক ও লুগানস্ক আশঙ্কা করছিল যে, ইউক্রেন যেকোনো মুহূর্তে দনেৎস্ক ও লুগানস্কের ওপর পূর্ণ মাত্রায় ঝটিকা আক্রমণ চালাবে। অন্যদিকে, ইউক্রেন ও পশ্চিমাবিশ্বের বক্তব্য ছিল- রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালাবে।

অবশেষে, ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন দনেৎস্ক ও লুগানস্কের ওপর পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ চালায়। প্রত্যুত্তরে রাশিয়া দনেৎস্ক ও লুগানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে, রাষ্ট্র দুটির সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং রাষ্ট্রদ্বয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে। ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব একে ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে শুরু করে। রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ চলাকালে যেসব রাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম তুরস্ক, এবং তুরস্ক কর্তৃক ইউক্রেনকে সরবরাহকৃত সামরিক সরঞ্জামগুলোর মাঝে মুখ্য বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন।

রাশিয়ায় একটি বিধ্বস্ত বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন প্রদর্শিত হচ্ছে। রুশ সাংবাদিক আলেক্সান্দর রোগাৎকিনের বক্তব্য অনুসারে, সিরিয়ার ইদলিবে সিরীয় সৈন্যরা রুশ–নির্মিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে উক্ত ড্রোন ভূপাতিত করে। অন্যদিকে, রুশ মার্সেনারি সংগঠন ‘ওয়াগনার গ্রুপে’র অনানুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রদত্ত বক্তব্য অনুসারে, লিবিয়ায় রুশ মার্সেনারিরা রুশ ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ব্যবহার করে ড্রোনটি ভূপাতিত করে; Source: Rustam Bogaudinov/Voenny Osvedomitel/VK via Rob Lee/Twitter

রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের প্রারম্ভিক পর্যায়ে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ভূমিকা

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ইউক্রেনের কাছে ঠিক কয়টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ছিল, সেটি একটি অস্পষ্ট বিষয়। ২০১৯ সালে ইউক্রেন ১২টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ক্রয় করে, এবং ২০২০ সাল নাগাদ সেগুলো ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ইউক্রেনীয় সরকার ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর জন্য আরো ৪৮টি এবং ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর জন্য ৬টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করে, কিন্তু রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর আগে সেগুলোর সবগুলো ইউক্রেনে পৌঁছায়নি বলে প্রতীয়মান হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর কাছে ৩৬টি এবং ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর কাছে অন্তত ২টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ছিল। অবশ্য এই সংখ্যাটি আরো কম বা আরো বেশি হতে পারে।

চলমান রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন প্রকৃতপক্ষে ঠিক কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে, সেটি নির্ধারণ করা একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এর মূল কারণ হচ্ছে উভয়পক্ষ কর্তৃক পরিচালিত তীব্র ‘প্রচারণা যুদ্ধ’। যুদ্ধের একেবারে শুরু থেকেই ইউক্রেনীয় সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে প্রচারণা যুদ্ধ পরিচালনা করছে, এবং দাবি করে আসছে যে, যুদ্ধে রাশিয়া বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের সরকারগুলো ও প্রচারমাধ্যমগুলো বিনা প্রশ্নে ইউক্রেনীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যগুলোকে গ্রহণ করছে, এবং এর পাশাপাশি নিজেরাও রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এর বিপরীতে রাশিয়াও ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে প্রচারণা যুদ্ধ পরিচালনা করছে। কিন্তু রুশ প্রচারণা যুদ্ধ তুলনামূলকভাবে কম তীব্র ও অসংগঠিত। তদুপরি, রুশ সরকার এই যুদ্ধে ইউক্রেনের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যেসব দাবি করে এসেছে, এখন ইউক্রেনীয় সরকারি কর্মকর্তারাই সেসব দাবিকে স্বীকার করে নিচ্ছেন। সুতরাং, রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্যের ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সরকারের তুলনায় রুশ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা অন্তত আংশিকভাবে বেশি।

রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রচারণা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের কার্যকারিতা। স্বাভাবিকভাবেই রুশরা বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনকে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনকে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে প্রমাণের প্রচেষ্টা চালিয়েছে, এবং এই ড্রোনের আক্রমণে রুশদের প্রকৃতপক্ষে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ইউক্রেনীয় সরকার দাবি করেছে, রুশদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে বহুগুণ বেশি। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ‘ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স’ (ওসিন্ট) প্ল্যাটফর্মগুলো (যেমন: ওরিক্স, ওসিন্টটেকনিক্যাল, বেলিংক্যাট, ইউক্রেন ওয়েপন্স ট্র‍্যাকার) খোলাখুলিভাবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সুতরাং, তাদের প্রদত্ত তথ্যাদিকেও বিনা প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।

তদুপরি, বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন তুরস্কের জাতীয় গৌরবের একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে, এবং এজন্য উক্ত ড্রোনের কার্যকারিতা সংক্রান্ত যেকোনো সমালোচনা তুর্কিদের ও তুরস্ক সমর্থকদের জন্য একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে রূপ নিয়েছে। এমতাবস্থায় রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের ব্যবহার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো বিশ্বাস করার আগে যাচাই–বাছাই করে নেয়া প্রয়োজন।

যুদ্ধের প্রারম্ভে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর কুলবাকিনো বিমানঘাঁটি রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনবহরের একাংশ উক্ত বিমানঘাঁটিতে মোতায়েনকৃত ছিল; OSINTtechnical/Twitter

রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের প্রথম দিন (২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকেই ইউক্রেনীয়রা রুশ, দনেৎস্ক ও লুগানস্ক সৈন্যদের বিরুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ এয়ার ডিফেন্স সৈন্যরা দনেৎস্কের আকাশে একটি ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ভূপাতিত করে। ঘটনাটি ছিল এই যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর প্রথম ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। লুগানস্ক সশস্ত্রবাহিনীর ভাষ্য অনুসারে, ২৪ ফেব্রুয়ারি লুগানস্কের স্মেলোয়ে ও স্তেপোভয়ে গ্রাম দুটোর কাছে লুগানস্ক সৈন্যরা দুটি ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ভূপাতিত করে। দনেৎস্ক সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল এদুয়ার্দ বাসুরিনের ভাষ্য অনুসারে, ২৪ ফেব্রুয়ারি দনেৎস্কের ভিক্তরোভকা ও বোগদানোভকার কাছে দনেৎস্ক সৈন্যরা একটি ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ভূপাতিত করে। অর্থাৎ, যুদ্ধের প্রথম দিনে ৪টি ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ভূপাতিত হয়।

একই দিনে রুশ ‘কালিবর’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের নিকোলায়েভ/মিকোলাইভ প্রদেশের রাজধানী নিকোলায়েভ/মিকোলাইভের নিকটে অবস্থিত কুলবাকিনো বিমানঘাঁটি বিধ্বস্ত হয়, এবং বিমানঘাঁটির অধিনায়ক দিমিত্রো ফিলোনেঙ্কো একটি ভিডিও বার্তায় জানান, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানঘাঁটিটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। উক্ত বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনবহরের একাংশ মোতায়েনকৃত ছিল, এবং উল্লিখিত রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের ফলে সেগুলো ভূমিতে থাকা অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে যায়।

২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ ‘কালিবর’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের খেমেলনিৎস্কি/হেমেলনিৎস্কি প্রদেশের স্তারোকনস্তান্তিনভ/স্তারোকোস্তিয়ান্তিনিভ শহরের কাছে অবস্থিত স্তারোকনস্তান্তিনভ/স্তারোকোস্তিয়ান্তিনিভ বিমানঘাঁটি বিধ্বস্ত হয়। উক্ত বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনবহরের আরেক অংশ মোতায়েনকৃত ছিল, এবং উল্লিখিত রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের ফলে সেগুলো ভূমিতে থাকা অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে যায়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে, ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর অন্তত ৩৫টি বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন হয় ভূপাতিত হয়, নয়তো ভূমিতে থাকা অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে যায়। বস্তুত যুদ্ধের এই প্রারম্ভিক পর্যায়ে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের নিষ্ক্রিয়তা বিশ্লেষকদের আশ্চর্যান্বিত করে।

কিন্তু রুশ/দনেৎস্ক/লুগানস্ক সশস্ত্রবাহিনী এবং ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনবহরের মধ্যকার এই লড়াই মোটেই একতরফা ছিল না। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই ইউক্রেনীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষত টুইটার ও টেলিগ্রামে, রুশদের বিরুদ্ধে বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোনের কার্যকারিতা সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করতে শুরু করে। এ সময় ইউক্রেনীয়রা ও ইউক্রেন সমর্থকরা ধারণা করতে শুরু করে, বায়রাক্তার টিবি–২ ড্রোন ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে।

Related Articles