আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রসমূহের ভৌগোলিক অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক অবস্থান একদিকে যেমন কোনো রাষ্ট্রের শক্তিমত্তার মূল উৎস হয়ে উঠতে পারে, অন্যদিকে আবার কোনো রাষ্ট্রের চিরন্তন দুর্বলতার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। 'ভারত প্রজাতন্ত্রে'র (Republic of India) অন্তর্ভুক্ত 'শিলিগুড়ি করিডোর' (Siliguri Corridor) এক্ষেত্রে একটি ভূরাজনৈতিক 'দোধারী তলোয়ার' (double-edged sword) হিসেবে কাজ করছে। একদিক থেকে দেখলে ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক ঐক্য রক্ষার ক্ষেত্রে করিডোরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, আবার অন্যদিক থেকে দেখলে করিডোরটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক একটি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বস্তুত, কেবল ভারতের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে শিলিগুড়ি করিডোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূখণ্ড।
বিশুদ্ধ ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে, শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ড। পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিলিগুড়ি (শহরটির প্রায় ৬২% দার্জিলিং জেলা ও প্রায় ৩৮% জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত) ও এর আশেপাশের অঞ্চলের সমন্বয়ে উক্ত করিডোরটি গঠিত। শিলিগুড়ি করিডোরের দৈর্ঘ্য ৬০ কি.মি. এবং প্রস্থ ২২ কি.মি., কিন্তু কোনো কোনো স্থানে করিডোরটির প্রস্থ আরো কম (১৭ কি.মি.র কাছাকাছি)। ভারতীয় রাষ্ট্রকে দুটি ভূখণ্ডে বিভক্ত করা যেতে পারে: মূল ভারতীয় ভূখণ্ড এবং উত্তর–পূর্ব ভারত। শিলিগুড়ি করিডোরের মাধ্যমে ভারতীয় রাষ্ট্রের এই দুটি অংশ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, যদি শিলিগুড়ি করিডোর না থাকতো, সেক্ষেত্রে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর–পূর্ব ভারতের কোনো স্থল সংযোগ থাকত না। উল্লেখ্য, উত্তর–পূর্ব ভারত সম্পূর্ণভাবে স্থলবেষ্টিত, অর্থাৎ উত্তর–পূর্ব ভারতের সীমান্তে কোনো সমুদ্র নেই। ফলে সমুদ্রপথে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর–পূর্ব ভারতের যোগাযোগ স্থাপনও সম্ভব নয়।
এই পর্যায়ে এসে উত্তর–পূর্ব ভারতের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া প্রয়োজন। প্রশাসনিকভাবে, অঞ্চলটি 'উত্তর–পূর্ব অঞ্চল' (North Eastern Region, 'NER') নামে পরিচিত, এবং ভারতের ২৮টি প্রদেশের মধ্যে ৮টি এই অঞ্চলে অবস্থিত। প্রদেশগুলো হচ্ছে – সিকিম, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ। এগুলোর মধ্যে সিকিম বাদে অবশিষ্ট ৭টি প্রদেশ একত্রে 'সেভেন সিস্টার্স' (Seven Sisters) নামে পরিচিতি অর্জন করেছে। এই 'সেভেন সিস্টার্স' প্রদেশগুলো রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে ভারতীয় রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দু (রাজধানী নয়াদিল্লি) থেকে বহু দূরে অবস্থিত, এবং নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অঞ্চলটির বৃহদাংশের সঙ্গে উত্তর বা দক্ষিণ ভারতের চেয়ে (এমনকি পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও) পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারের সাদৃশ্য বেশি।
এমতাবস্থায় নানাবিধ রাজনৈতিক, আর্থ–সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও অন্যান্য উপাদানের কারণে 'সেভেন সিস্টার্স' প্রদেশগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদ (বা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বাধীনতা আন্দোলন) ও নানা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা (বিশেষত জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত) বিরাজমান, এবং এর ফলে অঞ্চলটির ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য এমনিতেই বেশ কঠিন। তদুপরি, এই অঞ্চলের সীমানা ও মালিকানা পুরোপুরিভাবে সুনির্দিষ্ট নয়, কারণ চীন অরুণাচল প্রদেশের বৃহদাংশকে 'দক্ষিণ তিব্বত' হিসেবে অভিহিত করে এবং একে চীনের অন্তর্গত 'তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে'র অংশ হিসেবে দাবি করে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও উত্তর–পূর্ব ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নয়াদিল্লিকে অঞ্চলটিতে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে হয়। তদুপরি, অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ উত্তর–পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির 'লুক ইস্ট' (Look East) ও 'অ্যাক্ট ইস্ট' (Act East) নীতিদ্বয় বাস্তবায়ন করার জন্য এতদঞ্চলে বিস্তৃত ভারতীয় অর্থনৈতিক উপস্থিতি স্থাপন করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, 'লুক ইস্ট' ও 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতির মূল উদ্দেশ্যে ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের (বিশেষত অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের) বিস্তার এবং এক্ষেত্রে উত্তর–পূর্ব ভারত ভারতীয় রাষ্ট্র ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু মূল ভারতীয় ভূখণ্ড ও উত্তর–পূর্ব ভারতের মধ্যে একটিমাত্র সংযোগপথ রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে শিলিগুড়ি করিডোর, যেটি 'উত্তর–পূর্ব ভারতের প্রবেশপথ' নামে পরিচিত। মানচিত্রে এই করিডোরের আকৃতি অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো, এজন্য এই করিডোরটিকে 'ভারতের মুরগির ঘাড়' (India's Chicken Neck) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
অবশ্য করিডোরটির আকৃতিগত দিকের পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি কার্যত একটি 'চিকেন নেক', কারণ এতদঞ্চলে ভারতের কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র চাইলেই এই 'মুরগির ঘাড়' মটকে দিতে পারে, অর্থাৎ শিলিগুড়ি করিডোর দখল করে মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে উত্তর–পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। একই কারণে শিলিগুড়ি করিডোরকে ভারতের 'অ্যাকিলিসের গোড়ালি' (Achilles' heel) হিসেবেও অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য, গ্রিক মহাকাব্য 'ইলিয়াডে'র মহাবীর অ্যাকিলিসের প্রায় সমগ্র শরীরে কোনো অস্ত্রের আঘাত কার্যকর হতো না, কিন্তু তার গোড়ালি ছিল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। গ্রিক রূপকথা অনুযায়ী, ট্রোজান যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ট্রোজান রাজপুত্র প্যারিসের নিক্ষিপ্ত তীর অ্যাকিলিসের গোড়ালিতে আঘাত হানে এবং এর ফলে তিনি নিহত হন। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে খুবই শক্তিশালী কারো ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতাকে 'অ্যাকিলিস হিল' হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র, কিন্তু শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য 'অ্যাকিলিস হিল' হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য বহুবিধ সমস্যার মতো শিলিগুড়ি করিডোরের উৎপত্তির জন্যও ব্রিটেন কর্তৃক ভারতবর্ষের বিভাজন (Division of India) দায়ী। ভারতবর্ষের বিভাজনের আগে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ (তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ) একই রাষ্ট্রের অংশ ছিল এবং এজন্য মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে পূর্ববঙ্গের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে সহজেই উত্তর–পূর্ব ভারতে পৌঁছানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গ/বাংলা প্রদেশও বিভাজিত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতের ও পূর্ববঙ্গ (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ (তথা মূল ভারতীয় ভূখণ্ড) ও উত্তর–পূর্ব ভারতের মধ্যে স্থল সংযোগ রক্ষার জন্য শিলিগুড়ি ও এর আশেপাশের একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে, এবং এই অঞ্চলটিই 'শিলিগুড়ি করিডোর' নামে পরিচিত।
স্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য শিলিগুড়ি করিডোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সংকীর্ণ করিডোরটির মাধ্যমে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর–পূর্ব ভারতের সংযোগ রক্ষা হয়েছে এবং এর ফলে নয়াদিল্লির পক্ষে উত্তর–পূর্ব ভারতের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। যদি শিলিগুড়ি করিডোর না থাকতো, সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লির পক্ষে উত্তর–পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী/স্বাধীনতাকামী আন্দোলনগুলোকে দমন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তো, কারণ সেক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে অঞ্চলটিতে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম প্রেরণ করা খুবই কঠিন হয়ে যেতো। একইভাবে, যদি শিলিগুড়ি করিডোর না থাকত, সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লির পক্ষে উত্তর–পূর্ব ভারতে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে যেত। সরল ভাষায় বলতে গেলে, শিলিগুড়ি করিডোর না থাকলে খুব সম্ভবত উত্তর–পূর্ব ভারতীয় প্রদেশগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হতো এবং কার্যত ভারতের 'দ্বিতীয় বিভাজন' ঘটত।
কিন্তু শিলিগুড়ি করিডোর একদিকে যেমন ১৯৪৭–পরবর্তী ভারতীয় রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করেছে এবং উত্তর–পূর্ব ভারতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে করিডোরটি ভারতের জন্য একটি সার্বক্ষণিক ও তীব্র ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত ঝুঁকি হিসেবে বিরাজমান রয়েছে। বস্তুত ১৯৭০–এর দশকের প্রথমার্ধের আগে এই করিডোরটি ভারতের জন্য আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, কারণ সেসময় বর্তমান বাংলাদেশ ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের অংশ ছিল এবং সিকিম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই কাশ্মির সঙ্কটসহ নানাবিধ কারণে ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল, এবং বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ড (অর্থাৎ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) ছিল ভারতের জন্য শত্রুরাষ্ট্রের ভূখণ্ড। সেসময়, বিশেষত ১৯৬৫ সালের ভারতীয়–পাকিস্তানি যুদ্ধের পর থেকে, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর–পূর্ব ভারতে যাতায়াতের কোনো সুযোগ ছিল না। তদুপরি, ভারতীয় সমরবিশারদদের মধ্যে এই আশঙ্কাও ছিল যে, যুদ্ধের সময় পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে আক্রমণ চালিয়ে শিলিগুড়ি করিডোর দখল করে নিতে পারে এবং ভারতীয় রাষ্ট্রের দুই অংশের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
১৯৬০–এর দশকে চীনা–ভারতীয় দ্বন্দ্ব তীব্র রূপ ধারণ করার পর এবং বিশেষত ১৯৬২ সালের চীনা–ভারতীয় যুদ্ধে চীনের নিকট ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের পর ভারতীয় সমরবিশারদদের মনে শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর সম্ভাব্য পাকিস্তানি আক্রমণের পাশাপাশি সম্ভাব্য চীনা আক্রমণের ভীতিও সংযোজিত হয়। বিশেষত ১৯৬০–এর দশকে চীনা–পাকিস্তানি মৈত্রী স্থাপিত হওয়ার পর ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা ভারতের ওপর চীনা–পাকিস্তানি যৌথ আক্রমণের আশঙ্কা করতে থাকেন এবং এই পর্যায়ে এসে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর চীনা–পাকিস্তানি যৌথ আক্রমণের সম্ভাবনা ভারতীয় সমরবিদদের জন্য একটি 'কৌশলগত দুঃস্বপ্নে' (strategic nightmare) রূপ নেয়।
কিন্তু ১৯৭০–এর দশকের প্রথমার্ধে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দুটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে এবং এর ফলে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। প্রাথমিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল সামরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং রাজনৈতিকভাবে ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। এর ফলে দক্ষিণ দিক থেকে শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর আক্রমণের সম্ভাবনা বহুলাংশে দূরীভূত হয়। তদুপরি, ১৯৭৫ সালে স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্র ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। এর ফলে ভারতের জন্য শিলিগুড়ি করিডোরের উত্তর দিকের নিরাপত্তা অংশত বৃদ্ধি পায়। তখন থেকে ভারতের দৃষ্টিতে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার প্রতি মূল হুমকি হচ্ছে চীন, এবং এখন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বজায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির পাশাপাশি শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর–পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এটি সত্যি যে, এই করিডোর না থাকলে উত্তর–পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ হতো। বর্তমানে শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে মূল ভারতীয় ভূখণ্ড ও উত্তর–পূর্ব ভারতের মধ্যে সংযোগ রক্ষিত হয় এবং এখান দিয়েই উত্তর–পূর্ব ভারতে সৈন্য, সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু শিলিগুড়ি করিডোর সংকীর্ণ এবং এর ফলে এই করিডোর পরিবহন ব্যবস্থার দিক থেকে বরাবরই চাপে থাকে। এই করিডোর দিয়ে যে রেলপথটি গেছে, সেটিতে মাত্র একটি লাইন রয়েছে এবং করিডোরটির মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী সড়ক ও রেলপথ প্রায়ই ভূমিধস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তদুপরি, চীনের রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক উত্থানের ফলে ভারতের জন্য শিলিগুড়ি করিডোরের প্রতি নিরাপত্তা ঝুঁকির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন ও শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্যবর্তী দূরত্ব এত কম যে, চীনারা তাদের বর্তমান অবস্থান থেকেই করিডোরটির ওপর গোলাবর্ষণ করতে পারে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে চীনা সৈন্যদের শিলিগুড়ি করিডোর আক্রমণের জন্য মাত্র ১৩০ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে এবং এরপর তারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে করিডোরটি দখল করে নিতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক চীনা–ভারতীয় যুদ্ধ আরম্ভ হলে চীন যদি শিলিগুড়ি করিডোর দখল করতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে উত্তর–পূর্ব ভারতে বসবাসরত প্রায় ৫ কোটি ভারতীয় নাগরিক ও অঞ্চলটিতে মোতায়েনকৃত হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং এর ফলে যুদ্ধের প্রথম পর্যায়েই ভারত বড় ধরনের সম্মুখীন হবে।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা এরকম কিছু ঘটতে দিতে আগ্রহী নন। এজন্য ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার শিলিগুড়ি করিডোরে বিস্তৃত সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সকলেই এই করিডোরটি প্রহরা দিয়ে থাকে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং' (র') সদস্যরাও এই অঞ্চলে সক্রিয় এবং তারা এখানে চীনাদের কার্যক্রমের পাশাপাশি নেপালি, ভুটানি ও বাংলাদেশিদের কার্যক্রমের ওপরেও নজরদারি করে থাকে। কিছু কিছু ভারতীয় বিশ্লেষকের ভাষ্যমতে, শিলিগুড়ি অঞ্চলে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রবেশও এই অঞ্চলের জন্য একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি। তদুপরি, কিছু কিছু ভারতীয় বিশ্লেষক দাবি করেছেন যে, নেপালভিত্তিক ইনসার্জেন্টদের ব্যবহার করে পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা 'ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স'ও (আইএসআই) এতদঞ্চলে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে।
অবশ্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে এই অঞ্চলে চীনের কার্যক্রমই ভারতের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। চীন বরাবরই নিজেদের সামরিক অবস্থানকে শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং ২০১৭ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘটিত দোকলাম দ্বন্দ্বের এটিই ছিল মূল কারণ। উল্লেখ্য, দোকলাম মালভূমি আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটানের অন্তর্ভুক্ত এবং ভারত এই ভূখণ্ডকে ভুটানি ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু চীন এই ভূখণ্ডটির মালিকানা দাবি করে। দোকলামের উত্তরে চীনের জাতিগত তিব্বতি–অধ্যুষিত চুম্বি উপত্যকা এবং দক্ষিণে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর অবস্থিত। এমতাবস্থায় চীন দোকলাম অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারলে তাদের সামরিক উপস্থিতি শিলিগুড়ি করিডোরের একেবারে দোরগোড়ায় চলে আসবে এবং এর ফলে করিডোরটির নিরাপত্তা ঝুঁকির মাত্রা (ভারতের দৃষ্টিতে) বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য ভারত দোকলামে চীনা আধিপত্য স্থাপনের বিরোধী।
এদিকে ১৯৮৪ সাল থেকে চীনা–ভুটানি সীমান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। ১৯৯৭ সালে চীন মধ্য ভূটানের ভূখণ্ডের ওপর তাদের দাবি ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে দোকলাম অঞ্চল চীনের কাছে হস্তান্তর করার জন্য ভুটানকে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ভুটান প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে এবং ধারণা করা হয় যে, ভুটানের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভারতীয় চাপ দায়ী ছিল। অবশ্য চীন ও ভুটানের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকে। ২০১০ সালে উভয় পক্ষ বিবদমান অঞ্চল যৌথভাবে জরিপ করতে সম্মত হয় এবং ২০১৫ সাল নাগাদ এই জরিপ সম্পন্ন হয়। এমতাবস্থায় ২০১৭ সালের জুনে ভারত অভিযোগ করে যে, চীন বিতর্কিত দোকলাম অঞ্চলে সড়ক নির্মাণ করছে।
উল্লেখ্য, ভুটানি সেনাবাহিনী দোকলামে চীনের সড়ক নির্মাণে বাধা দিয়েছিল, কিন্তু চীনারা ভুটানিদের বাধা অগ্রাহ্য করে দোকলামে সড়ক নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এই সড়ক নির্মিত হলে চীনের ইয়াদং দোকলামের সঙ্গে যুক্ত হতো এবং এর ফলে চীনারা সহজেই শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে তাদের সৈন্যসামন্ত ও রসদপত্র মোতায়েন করার সুযোগ পেতো। এই পরিস্থিতিতে ভারত চীনাদের বাধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতীয় সৈন্যরা দোকলামে প্রবেশ করে। প্রায় আড়াই মাসব্যাপী দোকলামে এই দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে এবং অবশেষে ২০১৭ সালের অক্টোবরে উভয় পক্ষে একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। এই সমঝোতা অনুযায়ী ভারত দোকলাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং চীন সেখানে সড়ক নির্মাণ বন্ধ করে।
অবশ্য সেসময় বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছিলেন যে, চীন দোকলামে সড়ক নির্মাণ বন্ধ রাখলেও তাদের উক্ত অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কার্যত ২০২০ সালের অক্টোবরে জানা যায় যে, চীনারা দোকলামের কাছে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করছে, কিন্তু ভূখণ্ডটি যেহেতু ভুটানের, সেহেতু ভুটানের অনুমোদন ছাড়া ভারতের এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছিল না। তদুপরি, ২০২০ সালের মে থেকে লাদাখে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ চলছে এবং এই প্রেক্ষাপটে ভারত ভুটানের অভ্যন্তরে চীনের সঙ্গে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়াতে আগ্রহী ছিল না। ফলে ভুটানের অভ্যন্তরে চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, এবং শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা ঝুঁকিও যথারীতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২০২১ সালের অক্টোবরে চীন ও ভুটান তাদের মধ্যেকার সীমান্ত বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, কিন্তু সমঝোতা স্মারকটির শর্তাবলি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভুটান যদি এই চুক্তিতে দোকলামকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে থাকে বা সেখানে পরোক্ষ চীনা আধিপত্য স্বীকার করে নেয়, সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভারতীয় সমরবিশারদদের দীর্ঘদিনের ভীতি বাস্তবে রূপ নেবে। কিন্তু এখনো এই চুক্তির শর্তাবলি প্রকাশিত হয়নি, ফলে এই ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
অবশ্য কিছু কিছু ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তার মতে, চীনের পক্ষে শিলিগুড়ি করিডোর দখল করা বা দখল করার পর করিডোরটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে না। করিডোরটি দখলের জন্য চীনা সৈন্যদেরকে একটি অত্যন্ত সরু ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। ইয়াদং ও দোকলাম উভয় স্থানের একপাশে ভারতের সিকিম প্রদেশ এবং অন্য পাশে ভুটানি ভূখণ্ড অবস্থিত। এমতাবস্থায় চীনা সৈন্যরা যদি চুম্বি উপত্যকা থেকে একটি দক্ষিণাভিমুখী সরলরেখা ধরে শিলিগুড়ি করিডোরের দিকে অগ্রসর হয়, সেক্ষেত্রে ভারতীয় সৈন্যরা দুই পাশ থেকে অগ্রসরমান চীনা সৈন্যদের ওপর গোলাবর্ষণ করতে ও বিমান হামলা চালাতে পারবে এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে পারবে। আর চীন যদি শিলিগুড়ি করিডোর সহজে দখল করে নিতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে ভারতীয় সৈন্যরা দুই পাশ থেকে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে সহজেই করিডোরটি পুনর্দখল করে নিতে পারবে।
কিন্তু ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা যে ধরনের পরিস্থিতির কথা বলছেন, সেটি সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে একটি পরিস্থিতি মাত্র। যুদ্ধের সময় চীনা সৈন্যরা যদি কেবল দোকলামের মধ্য দিয়ে অগ্রসর না হয়ে আশেপাশের ভারতীয় ও ভুটানি দখল করে এরপর শিলিগুড়ি করিডোরের দিকে অগ্রসর হয়, সেক্ষেত্রে ভারতীয়দের পক্ষে করিডোরটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা ভারতের জন্য একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারত একটি উপায়ে শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর থেকে তাদের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে পারে এবং এই উপায়টি হচ্ছে উত্তর–পূর্ব ভারতে পৌঁছানোর জন্য পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করা। পাকিস্তানি সামরিক বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালিদ মাসুদ খানের ভাষ্যমতে, ভারত যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েই বাংলাদেশি 'মুক্তিবাহিনী'কে সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে শিলিগুড়ি করিডোরের প্রশস্ততা বৃদ্ধির জন্য কিছু বাংলাদেশি ভূখণ্ড অধিকার করে নেয়নি, সেটিই ছিল আশ্চর্যজনক। অবশ্য ২০১০–এর দশকে ভারতীয়–বাংলাদেশি সম্পর্কোন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট (অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে উত্তর–পূর্ব ভারতে যাতায়াত) ও ট্রান্সশিপমেন্ট (অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে উত্তর–পূর্ব ভারতে যাতায়াত) সুবিধা প্রদান করেছে, এবং এটি শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর ভারতের মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা হ্রাস করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চিরস্থায়ী মৈত্রী বা চিরস্থায়ী শত্রুতা বলে কিছু নেই, এবং একটি রাষ্ট্র কখনো তার নিরাপত্তার জন্য অপর কোনো রাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে না। এজন্য শিলিগুড়ি করিডোর মূল ভারতীয় ভূখণ্ড ও উত্তর–পূর্ব ভারতের মধ্যে মূল সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত হতে থাকবে এবং ভারতের দুর্বল 'চিকেন নেক' বা 'অ্যাকিলিস হিল' হিসেবে বিরাজ করতে থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন না ঘটলে ভারতীয় রাষ্ট্র ও শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্যেকার এই সম্পর্কের ধরন পরিবর্তিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
This is a Bengali article about the Siliguri Corridor, known as the 'Chichen Neck of India'. The article is primarily focused on the geopolitical importance of the corridor and its vulnerability in the context of Sino-Indian conflict.
Sources:
- Adam Bensaid. "China’s move on Doklam could cut India's access to its northeastern states." TRT World. November 26, 2020.
- Amar Diwakar. "What does the Bhutan-China border agreement mean for India?" TRT World. October 15, 2021.
- Ankit Panda. "Geography’s Curse: India’s Vulnerable ‘Chicken’s Neck’." The Diplomat. November 8, 2013.
- Bharat Verma. "The danger from China." Indian Defence Review, Volume 26, Issue 1. July 6, 2012.
- Fidel Rahmati, Mohammad Akhter Ali and M. Kamraju. "A Study on Strategic Location of Siliguri Corridor and Its Issues." International Journal of All Research Education and Scientific Methods, Volume 8, Issue 7. July 2020.
- Forrest Cookson and Tom Felix Joehnk. "China and India’s geopolitical tug of war for Bangladesh." East Asia Forum. April 11, 2018.
- Khalid Masood Khan. "Doklam and the Chicken's Neck." The Nation.
- Nafiz Farhan. "Siliguri Corridor: Geostrategic Importance and Future Challenges." Bangladesh Institute of Peace and Security Studies. September 2021.
- Rupak Bhattacharjee. "Security Vulnerbilities of India's Siliguri Corridor and their Implications." Society for Policy Studies. December 2015.
- Shaurya Karanbir Gurung. "Behind China's Sikkim aggression, a plan to isolate Northeast from rest of India." The Economic Times. July 3, 2017.
- Syed Fazl-e-Haider. "Twisting India’s Chicken’s Neck." The Interpreter. July 15, 2020.
- Townsend Middleton. "Connective Insecurities: Chokepoint Pragmatics at India's Chicken Neck." Ethnos. May 15, 2020.
- Utkarsh Srivastava. "Sikkim standoff: Strategic importance of Siliguri corridor and why India should be wary of China." Firsport. July 7, 2017.
- "India, Bangladesh to secure ‘chicken’s neck’ with rail service after 55 years." Telengana Today. December 14, 2020.
Source of the featured image: The Times of India