Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্পাইগ্লাস (শেষ পর্ব): মানব পাচারকারীদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিল যে অভিবাসী গোয়েন্দা

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবে মৃত্যুর সংবাদ প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু ভূমধ্যসাগর চোখে দেখার অনেক আগে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সাহারা পাড়ি দিয়ে লিবিয়া বা আলজেরিয়াতে পৌঁছার পথেই যে প্রতি বছর আরও প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের করুণ মৃত্যু ঘটে, সেটা আমাদের অজানাই রয়ে যায়। মরুভূমির এই যাত্রা সমুদ্রপথে যাত্রার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। এখানকার মৃত্যুও অনেক বেশি করুণ।

‘বিবিসি আফ্রিকা আই’ এর একটি বিশেষ প্রতিবেদন অবলম্বনে আমাদের এই লেখাটিতে সেরকমই একটি যাত্রার কাহিনী ফুটে উঠেছে। এই কাহিনীটি আবর্তিত হয়েছে আজাটেং নামে ঘানার এক শখের গোয়েন্দার অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে, যিনি মানবপাচারকারী একটি চক্রের উপর গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে নিজেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন। তার কাহিনী নিয়ে আমাদের চার পর্বের এই সিরিজের আজ পড়ুন ৪র্থ ও সর্বশেষ পর্ব। সবগুলো পর্ব পড়তে পারবেন এখান থেকে: ১ম পর্ব, ২য় পর্ব, ৩য় পর্ব, ৪র্থ পর্ব

বিবিসির প্রতিবেদনটি, যার উপর ভিত্তি করে আমাদের এই লেখাটি; Image Source: BBC

মালি ও আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর আল-খালিলের স্মাগলারদের ঘাঁটি থেকে পালিয়ে আজাটেং যখন আলজেরিয়ার সীমানায় এসে পৌঁছেন, ততক্ষণে ভোর হয়ে গেছে। দূর থেকেই তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন, নির্জন মরুময় এলাকাটির রাস্তা দিয়ে অনেকক্ষণ পরপর একটি-দুটি করে মালবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করছিল। সেই রাস্তা ধরেই হাঁটতে শুরু করেন আজাটেং।

কিছুক্ষণ পর যখন প্রথম গাড়িটি তার পাশ দিয়ে যেতে শুরু করে, তখন তিনি হাত উঠিয়ে সেটাকে থামার ইশারা দেন। কিন্তু গাড়িটি ছিল আলজেরিয়ান সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক। আজাটেংয়ের সামনে না থেমে সেটি শুধুমাত্র গতি একটু কমিয়ে আনে। ভেতর থেকে এক সৈন্য তার দিকে একটি পানির বোতল ছুঁড়ে মারে। এরপর হাসতে হাসতে গতি বাড়িয়ে চলে যায় সামনে।

দ্বিতীয় গাড়িটি ছিল একটি বরফবাহী ট্রাক। এর ড্রাইভার তার সামনে থেমে তাকে এক কয়েক টুকরা বরফ দেয়, কিন্তু তাকে বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। তৃতীয় ট্রাকটি থেমে তাকে এক টুকরা রুটি দেয়, কিন্তু সেও তাকে ট্রাকে তুলতে রাজি হয় না। আজাটেংয়ের আশঙ্কা হতে থাকে, এই রাস্তার উপরেই হয়তো তার মৃত্যু হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত চতুর্থ ট্রাকটি তাকে বুর্জ বাজি মুখতার শহরে নিয়ে যেতে রাজি হয়। ট্রাক ড্রাইভার ইংরেজি জানত না, আর আজাটেংও আরবি জানতেন না। দুজনে পাশাপাশি বসে নীরবে চলতে থাকে অচেনা এক শহরের উদ্দেশ্যে।

স্পাইগ্লাস; Image Source: BBC

আজাটেং তার গোয়েন্দাগিরির অভিযানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন স্পাই মুভির কাহিনীগুলো থেকে। কিন্তু মালি পার হয়ে তিনি যখন আলজেরিয়ার বুর্জ বাজি মুখতার শহরে পৌঁছেন, তখন তার পকেটে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না, পরিচয়পত্র ছিল না এবং তার গোয়েন্দাগিরির প্রধান সম্বল স্পাইগ্লাসটাও ছিল না। তিনি খুঁজে খুঁজে অভিবাসীদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে উঠেন, যেখানে পা ফেলার মতো জায়গাও আর অবশিষ্ট ছিল না।

অ্যাপার্টমেন্টটি ছিল একটি মাংসের দোকানের ঠিক সামনেই। দিনরাত বাতাসের সাথে সেখানে উটের মাংসের উৎকট গন্ধ এসে আটকা পড়ে থাকত। একদিন রাস্তায় বের হওয়ার পর এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ‘কালো অভিবাসী’ বলে ব্যঙ্গ করে এবং পাথর ছুঁড়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। সহ্য করতে না পেরে আজাটেং রাস্তার ধারে বসে কাঁদতে শুরু করেন।

পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছানোর টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে আজাটেং বুর্জ শহরে কাজে লেগে পড়েন। কনক্রিট মিক্স করা, প্লাস্টার করা, টাইলস লাগানো- যখন যে কাজ সামনে আসে, তখন সেটাই করতে থাকেন তিনি। এক বিকেলে কাজ থেকে ফেরার পথে তার সাথে সেকু নামে এক গিনিয়ান অভিবাসীর দেখা হয়ে যায়, যার সাথে আল-খালিলে থাকার সময় তার পরিচয় হয়েছিল। সেকু খোঁড়াচ্ছিল। তার নাক এবং মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল। আজাটেং জানতে পারেন, স্মাগলাররা তাকে তুচ্ছ কারণে পিটিয়ে বুর্জ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির উপর ফেলে দিয়েছিল।

আজাটেংয়ের ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র; Image Source: BBC

আজাটেং সেকুকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু চারদিন পর সেকু মারা যায়। স্থানীয় কয়েকজন স্মাগলার এসে সেকুর লাশ নিয়ে যায়। আজাটেং তাদেরকে অনুসরণ করে শহরের একপ্রান্তে অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে পৌঁছে যান। দূর থেকে তিনি দেখতে পান, স্মাগলাররা নিতান্ত অবহেলায় পিকআপ ট্রাকটি থেকে সাদা কাপড়ে পেঁচানো সেকুর লাশটি তুলে একটি অগভীর কবরে নামিয়ে রেখে বালি, পাথর এবং ইট চাপা দিয়ে চলে যায়।

অভিবাসীদের কবরস্থানের পাশেই শুধুমাত্র আলজেরিয়ান নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত আরেকটি কবরস্থান ছিল। সেখানে প্রতিটি কবর ছিল পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে সাজানো। প্রতিটি কবরের মাথার কাছে ছিল বাঁধাই করা ফলক। অন্যদিকে অভিবাসীদের কবরস্থানে নাম-ঠিকানা বিহীন কবরগুলো ছিল অনেক ঘনঘন এবং এলোমেলো। আজাটেং গুণতে শুরু করেন। প্রায় সাতশটি কবর গোণার পর তিনি হাল ছেড়ে দেন। কী লাভ হবে গুণে?

কবরস্থান থেকে আজাটেং ফিরে যান সেখানে, যেখানে সেকুর অল্প কিছু সম্বল রাখা ছিল। সেখান থেকে তিনি সেকুর আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করে নেন। ছোট করে কাটা চুলের, সুন্দর চেহারার যুবকটির আইডি কার্ডে খুবই অল্প কিছু শব্দ লেখা ছিল। নাম: সেকু, জাতীয়তা: গিনি, পেশা: ব্যবসায়ী, জন্ম: ১৯৯৬। আজাটেং আইডি কার্ডটি নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন। যদি জীবনে কখনো সেকুর পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়, তাহলে অন্তত তাকে তার মৃত্যুসংবাদটি তিনি জানাতে পারবেন।

আলজেরিয়ার মতো তিউনিসিয়ার একটি অভিবাসীদের অচিহ্নিত কবরস্থান; Image Source: infomigrants.net

জুনের প্রথম দিকে আজাটেং জানতে পারেন, শীঘ্রই স্মাগলাররা অভিবাসীদেরকে নিয়ে আলজিয়ার্সের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। দুর্গম মরুভূমির মধ্য দিয়ে ১,৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আলজিয়ার্সে পৌঁছতে সময় লাগবে তিন দিন। আজাটেং ততদিনে কিছু টাকা জমাতে পেরেছিলেন। ফলে তিনিও তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এক সকালে তিনি স্থানীয় একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়ে তার মেমোরি কার্ডটি কপি করে রেকর্ডিংগুলো নিজেই নিজের ঠিকানায় মেইল করে দেন। এরপর মেমোরি কার্ড থেকে এবং ক্যাফের হার্ড ড্রাইভ থেকে ফাইলগুলো ডিলিট করে দেন।

তিনদিন পর তাদের যাত্রা শুরু হয়। একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার জীপে ১৪ জন অভিবাসীকে তুলে দেওয়া হয়। প্রতিটি সিটে দুইজন করে বসতে হয়। আজাটেং ডানে-বামে তাকানোর কিংবা পানির বোতলটা মুখে তোলার মতো জায়গাও পাচ্ছিলেন না। এরমধ্য দিয়েই বিশ্বের অন্যতম উচ্চ তাপমাত্রার মরুভূমি দিয়ে তাদের জীপ এগিয়ে যেতে থাকে।

১০ কিলোমিটার পর তাদের জীপটা বালিয়াড়ির আড়ালে কিছুক্ষণের জন্য থামে আলজেরিয়ান সেনাবাহিনীর টহলদার ট্রাকগুলোর উপর নজরদারি করার জন্য। আজাটেং এবং তার সঙ্গীরা নেমে একটু হাত-পা ছড়িয়ে নেন। এই সময়ের মধ্যেই তাদের ঠোঁট শুকিয়ে এবং হাত-পা ফুলে উঠতে শুরু করেছিল। সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলো চলে যাওয়ার পর আবার তাদের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর তাদেরকে তুলে দেয়া হয় একটা মিনিবাসে, আলজিয়ার্সের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার জন্য।

বুর্জ থেকে আলজিয়ার্স; Image Source: BBC

আজাটেং যখন আলজেরিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, সে সময়ই আলজেরিয়া অভিবাসীদেরকে জোরপূর্বক নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর কঠোর নীতি প্রণয়ন করছিল। ঐ নীতির অধীনে পরবর্তী বছর আলজেরিয়ান কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার অভিবাসীকে তাদের বাসা থেকে, রাস্তা থেকে এবং কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে ধরে নিয়ে মরুভূমিতে ফেলে দিয়ে আসে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, নারী-শিশুসহ সব বয়সী অভিবাসীদেরকে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে মরুভূমির ৩০ কিলোমিটার পথ পায়ে হাঁটিয়ে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আলজিয়ার্সে গিয়ে আজাটেং আবার একটা কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ নেন ভ্রমণের পরবর্তী অংশের টাকা জোগাড় করার জন্য। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় ইবরাহিম মুসা নামের আরেকজন ঘানিয়ান অভিবাসীর সাথে। তারা দুজনে মিলে সেখানে নগন্য অর্থের বিনিময়ে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে থাকেন। মাঝেমাঝেই আলজেরিয়ান নিরাপত্তাবাহিনী অভিবাসীদের খোঁজে হানা দিতে থাকে তাদের কনস্ট্রাকশন সাইটে।

ইবরাহিম যখন শুনতে পায়, আলজেরিয়ান সেনাবাহিনী অভিবাসীদেরকে ধরে ধরে সাহারাতে ফেলে আসছে, তখন সে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেয়। আলজেরিয়া থেকে সে প্রথমে নাইজারে ফিরে যায় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে জাতিসংঘের এক ক্যাম্পের সহায়তায় নিজের দেশ ঘানায় পত্যাবর্তন করে। আজাটেং কনস্ট্রাকশন সাইটের কাজ ছেড়ে দিয়ে আলজিয়ার্সের পথে পথে রাত কাটাতে শুরু করেন। পকেটের শেষ পয়সাটি ফুরিয়ে যাওয়ার পর তিনি জীবনে কখনো যেটা ভাবেননি, ভিক্ষা করতে শুরু করেন।

আলজেরিয়ার মরুভূমিতে ছেড়ে দেওয়া আফ্রিকান অভিবাসীরা; Image Source: dailymaverick.co.za

ভিক্ষা করতে গিয়েই আজাটেংয়ের পরিচয় হয় ২১ বছর বয়সী এক আলজেরিয়ান আইনের ছাত্র হুসামের সাথে। হুসাম আজাটেংয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে আজাটেং তাকে তার জীবনের গল্প এবং তার স্পাইগ্লাস অভিযানের কথা বিস্তারিত খুলে বলেন। এরপর হুসাম এক অবিশ্বাস্য কাজ করে। সে আজাটেংকে বাস স্টেশনে নিয়ে যায় এবং নিজের পকেট থেকে ২২০ ইউরো দিয়ে টিকেট কেটে তাকে ঘানাগামী একটি বাসে তুলে দেয়।

প্রায় তিন মাসের এক ব্যর্থ অভিযান শেষে মালি এবং বুরকিনা ফাসো হয়ে জুলাইয়ের ২ তারিখে আজাটেং ফিরে আসেন নিজের মাতৃভূমিতে। দেশে ফিরে এসেই আজাটেং তার রেকর্ড করা সকল প্রমাণ একত্রিত করেন এবং সেগুলোর একাধিক কপি তৈরি করে একাধিক প্যাকেটে ভরে জাতিসংঘের বিভিন্ন অফিসে এবং ঘানার মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দেন। তারপর শুরু হয় তার দীর্ঘ প্রতীক্ষা। যখন তিনি প্রায় হাল ছেড়ে দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ একদিন তার ফোন বেজে ওঠে। 

ঘানার রাজধানী আক্রায় ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির একটি শাখা আছে, যার কাজ হচ্ছে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্মাগলিং, আধুনিক দাস ব্যবসা এবং মানব পাচারসহ বড় বড় অপরাধ দমনে সহায়তা করা। ২০১৭ সালের আগস্টেের এক সকালে সংস্থাটির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নিল অ্যাবট যখন আক্রায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের একটি কনফারেন্সে মিটিং করছিলেন, তখন এক কর্মকর্তা তাকে জানায়, তাদের ঠিকানায় এক অভিবাসী গোয়েন্দার সাহারা অভিযানের প্রমাণ সংক্রান্ত একটি অদ্ভুত প্যাকেজ এসেছে।

আজাটেংয়ের গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত স্মাগলারদের ছবি; Image Source: BBC

নিজের অফিসে ফিরে নিল অ্যাবট নিজেই মেইলরুমে গিয়ে প্যাকেটটি সংগ্রহ করেন। বাদামী কাগজে মোড়া খামটি খুলে তিনি দেখতে পান তার সামনে পড়ে আছে বিশাল এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার টুকরো টুকরো ফলাফল- গোপন চশমা দিয়ে রেকর্ড করা ভিডিও, স্মাগলারদের ছবি, ফোন নাম্বার, টাকা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ডায়েরিতে লেখা অভিবাসীদের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। 

নিল অ্যাবট আজাটেংকে তার অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে তিনি এবং তার এক সহকারী টানা তিন সপ্তাহ ধরে আজাটেংয়ের কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার অভিযানের প্রতিটি ঘটনার বিবরণ শোনেন। আজাটেং ধৈর্য্য ধরে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন, স্মাগলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত এলাকাগুলোর মানচিত্র এঁকে দেন, যাত্রাপথগুলো এবং যাত্রাপথের চেকপয়েন্টগুলোর অবস্থান মানচিত্রে চিহ্নিত করে দেন।

তারপর পেরিয়ে যায় আরো তিন মাস। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি থেকে আবারো ফোন করা হয় আজাটেংকে। তাকে জানানো হয়, তার দেয়া তথ্য-প্রমাণগুলো মালির আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তারা গাও শহরে অপারেশন চালিয়েছে এবং বেশ কিছু সম্ভাব্য স্মাগলারকে গ্রেপ্তার করেছে। যে লক্ষ্য নিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে আজাটেং এক অসম্ভব অভিযান শুরু করেছিলেন, সেটা কিছুটা হলেও ফল দিয়েছে।

আজাটেংয়ের গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত স্মাগলারদের ছবি; Image Source: BBC

কিন্তু তার অভিযান এখনো শেষ হয়নি। আলজেরিয়া থেকে ঘানায় ফিরে আসার কয়েকদিন পরেই তিনি দেশটির গিনিয়ান দূতাবাসে গিয়েছিলেন। সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন সেকু নামের সেই নিহত গিনিয়ান অভিবাসীর আইডি কার্ডটি। তার ভাষায়, ছেলেটি হয়তো কারো পুত্র, কারো ভাই, অথবা কে জানে, হয়তো কারো বাবা। তার পরিবার কী জানে, সেকুর ভাগ্যে কী ঘটেছিল?

দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে আজাটেং অনুরোধ করেছিলেন, সেকুর পরিবারের সন্ধান বের করে দেয়ার জন্য, যেন তিনি নিজে তাদেরকে তার মৃত্যুসংবাদ দিতে পারেন। কিন্তু তিনঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর দূতাবাসের এক সহকারী কর্মকর্তা এসে তাকে জানায়, এই নামের কারো পরিবারের সন্ধান তাদের জানা নেই।

আজাটেং বর্তমানে বাস করেন আক্রার নিকটবর্তী একটি ছোট শহরে। মাটির তৈরি দুই রুমের ছোট বাসাটির একটি ছোট ঘরে থাকেন তিনি নিজে, আর পাশের অপেক্ষাকৃত বড় ঘরটিতে থাকে তার নতুন কেনা ভেড়াগুলো। তিনি আবারও টাকা জমানোর চেষ্টা করছেন। এবার অবশ্য ইউরোপে যাওয়ার জন্য নয়, বরং সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা অর্জন করার জন্য।

এরমধ্যেই তিনি আবারও নতুন একটি স্পাইগ্লাস কিনে নিয়েছেন। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ব্যাকপ্যাকটিতে দুটি জিনিস সব সময়ই থাকে- তার নতুন স্পাইগ্লাসটি এবং সেকুর আইডি কার্ডটি।

This article is in Bangla language. It's the story of a young Ghanian migrant, who tried to spy on the people smugglers with hs secret spectacles. The story is based on a BBC Africa Eye special report. All the references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: BBC

Related Articles