Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রেকর্ড গড়া জোড় লাগা যমজ ভাইয়ের গল্প

এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, গড়ে ২ লক্ষ নবজাতক জন্মের বিপরীতে একটি জোড় যমজ বাচ্চা পাওয়া যায়। জন্ম নেওয়া জোড় যমজ বাচ্চাদের বেঁচে থাকার হারটাও অনেক কম। ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেঁচে থাকার প্রবণতা দেখা যায় এই বাচ্চাদের। বাকিরা প্রসব হওয়ার আগে কিংবা কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যুবরণ করে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই হয় মেয়ে জোড় যমজ। তবে ১৯৫১ সালে জন্ম নেওয়া রনি এবং ডনি গ্যালইয়ন নামের দুই জোড় যমজ ভাই অলৌকিকভাবে বেঁচে আছেন এখনো। ভেঙ্গে দিয়েছেন আগের দুই জোড় যমজের বেশিদিন বেঁচে থাকার রেকর্ড। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই দুই জোড় যমজ ভাইয়ের কাহিনী।

রনি এবং ডনি গ্যালইয়ন; Image Source: Mirror.co.uk

১৯৫১ সালের ২৮শে অক্টোবর। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বেভারক্রিকে ইলিন গ্যালইয়ন নামে এক নারীর প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলো। স্বামী তাকে নিয়ে ওহাইওর সেইন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ছুটলেন। জোড় যমজ তো দূরে থাক, তারা যমজ বাচ্চার কথাও চিন্তা করেননি। কিন্তু জন্মের সময় প্রথমে ডনির মাথা এবং পরবর্তীতে রনির পা মায়ের পেট থেকে বের হয়ে জানান দেয় জোড় যমজ বাচ্চার আগমন।

দুই ভাই আলাদা আলাদা হৃৎপিণ্ড ও আলাদা পাকস্থলী নিয়ে জন্মায়। তাদের আলাদা করে দুই হাত ও দুই পা বিরাজমান। কিন্তু বুক থেকে শুরু করে কুঁচকি পর্যন্ত জোড়া লাগানো। যার কারণে দুজনকে সবসময় মুখোমুখি হয়ে থাকতে হয়। গত ৬৭ বছর ধরে মুখোমুখি হয়েই কাটিয়েছেন রনি ও ডনি গ্যালইয়ন। 

জন্মের শুরু থেকে ডাক্তারদের পরামর্শে প্রথম দু বছর হাসপাতালের কক্ষে বেড়ে ওঠেন তারা। দু বছর ধরে ডাক্তাররা দুই ভাইকে নিরাপদে আলাদা করার উপায় খুঁজেছেন। কিন্তু কোনো অপারেশনই তাদের দুজনের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। তাই গ্যালইয়ন দম্পত্তি কোনো অপারেশন না করানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত একসাথেই জীবন যাপন করছেন দুই ভাই।

পরিবারের সাথে দুই ভাই; Image Source: Dayton Daily News

শুরু থেকেই মানুষের সহজাত আকর্ষণ ছিল দুই ভাইয়ের উপর। হাসপাতালে প্রথম দু বছর কাটানোর পর পরবর্তী দু বছর ঘরের ভেতরই বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেন তারা। চার বছর বয়স থেকে বাবার সাথে রনি ও ডনি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ শুরু করে। ষাটের দশকে আমেরিকায় এরকম উৎসব বেশ জনপ্রিয় ছিল। সমাজে যেসব মানুষকে বিকলাঙ্গতার জন্য অবহেলার চোখে দেখা হতো, তাদেরকে এই উৎসবে স্বাগত জানানো হতো।

রনি এবং ডনি সে উৎসবে নিজেদের সম্প্রদায়ের সাথে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। দুই ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন সেই সময়ের সবচেয়ে ছোট মানুষ খ্যাত পিট ও ভাইকিং উপাধি পাওয়া জোহান। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে এই সম্প্রদায়কে নিজেদের একটি বড় পরিবার বলেও আখ্যা দেন রনি গ্যালইয়ন। এদিকে ওয়েসলি গ্যালইয়ন চেয়েছিলেন উৎসবে যাওয়ার পাশাপাশি তারা যেন স্কুলেও যায়। তবে সেই আশা গুড়েবালি হয়ে যায়। কোনো স্কুলই তাদের ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল অন্য বাচ্চাদের মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটাবে এই যমজ, তাই ভর্তি না করানোই শ্রেয়।

মঞ্চের শো’তে রনি এবং ডনি গ্যালইয়ন; Image Source: All That Interesting

স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পেরে বিভিন্ন কার্নিভালে দুই ভাই পুরোদমে কাজ করা শুরু করেন। বিকলাঙ্গ বা জন্ম থেকেই অস্বাভাবিক মানুষদের নিয়ে এসব শো পরিচালিত হতো। সেই শো’গুলোয় কাজ করে অর্থও পেতেন তারা। দুই ভাইয়ের আয়ের উপরই চলতো পুরো সংসার। নয় ভাইবোন, বাবা-মা সহ পুরো পরিবারই তাদের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল।

১৯৭০ এর শুরুর দিকে আমেরিকান সরকার এ ধরনের শো নিষিদ্ধ করে। এর ফলে তারা অন্য স্থানে চলে যান। সেখানে বিভিন্ন মঞ্চের শো’তে কাজ করা শুরু করে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১, এই দুই বছর সার্কাস পার্টির সাথে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ান। এরপর দুই ভাই মঞ্চ কাজ থেকে অবসর নেন। এতদিনে পাওয়া অর্থ দিয়ে ওহাইওর ডেইটনে একটি বাড়ি কেনেন তারা।

রনি ও ডনির জীবন মধুর ছিল না একদমই। সমাজ যে তাদের স্বাভাবিক চোখে দেখতো না, তা তারা সর্বপ্রথম টের পান স্কুল ভর্তি হতে না পেরে। প্রথম প্রথম শো’গুলোয় কাজ করার খাতিরে অনেকের কাছেই পরিচিত মুখ ছিলেন তারা। প্রায়ই মাঝরাতে ফোন করে তাদের উত্যক্ত করতো আশেপাশের স্থানীয় লোকজন। ডেইটনে নিজেদের বাড়িতেও শান্তিতে থাকতে পারেনি তারা। স্থানীয় কিশোর কিশোরীরা বাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে দিয়ে কিংবা গ্লাসে থুথু মেরে জ্বালাতন করতো। তবে উপকার করার মতো মানুষও ছিল আশেপাশে। প্রায়ই রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর গ্যালইয়ন ভাইদ্বয় দেখতো তাদের বিল অন্য কেউ দিয়ে গেছেন।

একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধুও দুজন; Image Source: Daily Mail

দিনের ২৪ ঘণ্টাই দুই ভাই একে অপরের মুখোমুখি হয়ে থাকেন। সারাক্ষণ মুখোমুখি হয়ে থাকায় মাঝেমাঝে নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব লাগে বলে জানিয়েছেন তারা। এটি কদাচিৎ হাতাহাতিতেও রূপ নেয়। তবে হাতাহাতি করাটা উভয়ের জন্যই আত্মঘাতী বলে এখন আর সেসবে জড়ান না রনি ও ডনি। সবকিছু একপাশে রেখে দুই ভাই হচ্ছেন একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। অনেকবার আলাদা হওয়ার জন্য অপারেশন টেবিলে বসতে বলা হলেও সাফ না করে দিয়েছেন তারা।

যুবক বয়সে গ্যালইয়ন ভাতৃদ্বয়; Image Source: Pinterest

২০০৯ ও ২০১০ পুরো দুই বছর জুড়ে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হয় তাদেরকে। রনির ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধে। সংক্রামক হওয়ায় ডনির শরীরেও সেটি ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে উভয়ের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাদেরকে তাৎক্ষাণিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুই সপ্তাহ পর সুস্থ হলে তাদের দেখভালের জন্য কিছুদিন নিজের বাড়িতে রেখে দেন ছোট ভাই জিম গ্যালইয়ন এবং তার স্ত্রী ম্যারি। সেখানে ২ বছর ধরে বসবাস করেন করে। ছোট ভাই জিম গ্যালইয়ন জানিয়েছেন এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী মানুষরাও এগিয়ে এসেছিলেন। আশেপাশের সবাই মিলে টাকা তুলে জিমের বাড়ির সাথে দুই ভাইয়ের থাকার সুবিধার্থে আরেকটি কক্ষ তৈরি করে দেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেন দুই ভাই।

বর্তমানে দুই ভাইয়ের অবস্থা; Image Source: Pinterest

দুই ভাইয়ের মধ্যেই ছিল বেঁচে থাকার তাড়না। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকা জোড় যমজ হওয়া। জিম গ্যালইয়ন জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই সেই দিনটির হিসাব করা শুরু করেন তারা। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর সেই সীমায় এসে পৌঁছান দুই ভাই। একসাথে ৬২ বছর ৮ মাস ৮ দিন কাটিয়ে দেওয়ার পর তারা পেছনে ফেলেন ইতালিতে ১৮৭৭ সালে জন্ম নেওয়া জিওকোমো ও জিওভানি বাতিস্তা নামের আগের রেকর্ডধারী দুই জোড় যমজকে। তারা বেঁচে ছিলেন ৬৩ বছর। তাদেরকে পেছনে ফেলে রনি ও ডনি গ্যালইয়নের বয়স এখন ৬৭ বছর। বিশ্বরেকর্ড নিজেদের করে নেওয়ার পর নিজ বাড়িতে একটি পার্টিরও আয়োজন করেন দুই ভাই। তারা বেঁচে আছেন এখনো। 

This Bangla article is about the conjoint twin brothers who were alive for the record time span. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Feature Image : Alchetron

Related Articles