Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিতর্কিত কৃত্রিম থাই খাল প্রকল্প ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রপথ মালাক্কা প্রণালী। এটি সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যবর্তী একটি সরু জলপথ। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৩৩ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিচালিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা পণ্যের জাহাজ এই গতিপথ দিয়ে যাতায়াত করে। ২০১৬ সালে প্রায় ৮৪,০০০ জাহাজ মালাক্কা প্রণালীর ওপর দিয়ে গমন করে।  

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সরকার ক্রাবি শহরের আন্দামান সাগর উপকূল থেকে থাইল্যান্ড উপসাগরের সংখলা শহর পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালের প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রাউথ চান-ওচা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে আদেশ দিয়েছেন এখানে কৃত্রিম খাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। সম্ভাব্য থাই খালকে পানামা খাল ও সুয়েজ খালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। এই খালটি মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরতা কমাবে। তবে এটি নির্মাণে অনেক প্রতিকূলতা ও কৌশলগত সঙ্কটও আছে, যার সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের স্বার্থ জড়িত। তাই এই খাল নিয়ে ইতিবাচক বার্তার পাশাপাশি অনেক বিতর্কও আছে।   

সম্ভাব্য থাই খাল প্রকল্পের মানচিত্র; Image Source: Bangkok post graphics

থাই খাল প্রকল্পের ইতিহাস

থাই খাল প্রকল্পের ধারণাটি নতুন কিছু নয়। চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে এটা নিয়ে প্রায় ৩৫০ বছর আগে থেকেই চিন্তা করা হচ্ছে। ১৬৭৭ সালে সায়ামের (১৯৩৯ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ড সায়াম রাজ্য বা শ্যামদেশ নামে পরিচিত ছিল) রাজা তৃতীয় রামাথিবদি ‘কানাল দি মিদি’ (Canal du Midi) খালের কথা জানতে পারেন। ফরাসিদের নির্মিত এই কৃত্রিম খালটি আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্ত করে। রাজা রামাথিবদি তখন ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইকে বলেন একজন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে জরিপ করে দেখতে এই অঞ্চলে এরকম খাল নির্মাণ করা যায় কিনা। দে ল্যামার নামের এক ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন রুট পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, এই অঞ্চল কৃত্রিম খাল নির্মাণের উপযোগী নয়। তখনকার প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। তাই ওই প্রকল্প তখন বাস্তবসম্মত ছিল না।

১৭৯৩ সালে রাজা প্রথম রামের ভাই নৌযানগুলোর গতিপথ সহজ করার জন্য একটা খালের প্রস্তাব করেন, যেন জাহাজগুলোকে সায়ামের পশ্চিম উপকূলে জলদস্যুদের সম্মুখীন হতে না হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে কয়েকটি গতিপথ নিয়ে এর সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা খাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ১৮৫৮ সালে রাজা চতুর্থ রামের শাসনামলে গ্রেট ব্রিটেন ক্রা ইস্তমাসের (ইস্তমাস বলতে সরু ভূখণ্ডকে বোঝায় যার উভয় পাশে থাকে সমুদ্র এবং এটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত দুটি ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করে) সবচেয়ে সরু অংশে একটি খাল নির্মাণের অনুমতি চায়। সরু অংশ হলেও এই ভূখণ্ড ছিল পাহাড়ি অঞ্চল। খাল নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে দেখে এই প্রকল্প বাতিল হয়।

১৮৬৩ সালে ব্রিটিশ সরকার আবার এই প্রকল্পের কথা বিবেচনা করে। এবার ক্রা উপদ্বীপের বার্মিজ অংশটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল। ১৮৭২ সালে লন্ডন থেকে ক্যাপ্টেন এজি লিপটনকে পাঠানো হয় এই অঞ্চলে কৃত্রিম খালের সম্ভাব্য গতিপথ যাচাই করার জন্য, যা ভারত থেকে হংকংয়ের দূরত্ব কমিয়ে আনবে। তখন বার্মার ভিক্টোরিয়া পয়েন্ট থেকে ক্রা নদী হয়ে থাইল্যান্ডের চামফন শহর পর্যন্ত ৩০ মাইল দূরত্বের একটি গতিপথ বিবেচনা করা হয়। নির্মাণ কার্যক্রম খুব প্রতিকূল মনে হওয়ায় এই প্রকল্পও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

১৮৬২ থেকে ১৮৮২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের পক্ষ থেকে রাজা চতুর্থ রাম এবং পরবর্তীতে রাজা পঞ্চম রামের নিকট কয়েক বার খাল নির্মাণের প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৮২ সালের জুনে স্বয়ং সুয়েজ খাল নির্মাণের উদ্যোক্তা ফার্ডিনান্ড দে লেসেপ্স এই অঞ্চল পরিদর্শন করেন খাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা বিবেচনা করতে। কিন্তু ব্রিটিশদের চাপে সায়ামের রাজা পঞ্চম রাম তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। তাছাড়া ফরাসিরা তখন ইন্দো-চীনের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে ফেলেছিল। রাজা চিন্তিত ছিলেন তারা হয়তো সায়াম রাজ্যের দখলও নিয়ে নিতে পারে।

ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ফরাসি ভাষার মানচিত্র; Image Source: Kra Isthmus Development Company

অন্যদিকে ভারত থেকে আন্দামান সাগর পর্যন্ত ফরাসিদের উপস্থিতির সম্ভাবনা গ্রেট ব্রিটেনকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। তারা চাচ্ছিল না এই খাল নির্মাণের মাধ্যমে ফ্রান্স যেন ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনীর বহর নিয়ে আসার সুযোগ পায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ব্রিটিশরা চাচ্ছিল তখন তাদের কলোনির অন্তর্ভুক্ত সিঙ্গাপুরের গুরত্ব যেন কমে না যায়। সমুদ্রবন্দর ও বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে হওয়ায় কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিঙ্গাপুর।

১৮৯৭ সালে সায়াম ও গ্রেট ব্রিটেন একটি গোপন চুক্তি করে। এতে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় যে, ব্রিটিশদের অনুমতি ব্যতীত সায়াম কারো কাছে মালয় উপদ্বীপের সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করবে না। একইসাথে ক্রা ইস্তমাসে খাল নির্মাণের ব্যাপারেও থাইদের নিরুৎসাহিত করা হয়।

গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে জাপান সরকার এই অঞ্চলের দিকে আগ্রহ দেখায়। জাপান সাম্রাজ্যের নৌবাহিনী যেন সিঙ্গাপুরের ব্রিটিশ নৌ-ঘাঁটি এড়িয়ে যেতে পারে, সে কারণে এই অঞ্চলে খাল নির্মাণ করতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশদের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি।

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থাইল্যান্ডের সাথে গ্রেট ব্রিটেনের নতুন চুক্তি হয়, যা অ্যাংলো-থাই চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির আর্টিকেল ৭ অংশে বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া থাইল্যান্ড ভারত মহাসাগরের সাথে সায়াম উপসাগরের সংযোগের জন্য কোনো খাল নির্মাণ করতে পারবে না। থাইল্যান্ড ১৯৫৪ সালে এই চুক্তি বাতিল করে।

১৯৮৩ সালের অক্টোবরে আমেরিকান বিতর্কিত রাজনীতিবিদ লিনডন লারোউশের প্রকাশিত ম্যাগাজিন এক্সিকিউটিভ ইন্টেলিজেন্স রিভিউ এর একটি আর্টিকেলে এই খাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। জাপান একপর্যায়ে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের মাধ্যমে ক্রা উপদ্বীপের পাহাড়ি ভূখণ্ড উড়িয়ে খাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে। নব্বই দশকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই অঞ্চলে খাল নির্মাণের সম্ভাব্য গতিপথ জরিপ করা হয়। সব মিলিয়ে থাই খাল নির্মাণের জন্য ১৪টি সম্ভাব্য গতিপথ বিবেচনা করা হয়।      

২০০৫ সালে এই অঞ্চলে আগ্রহ দেখানো শুরু করে চীন। থাইল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা এই অঞ্চল জরিপের জন্য একটি কমিটি তৈরির অনুমোদন দেন। কিন্তু ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সেই সরকারের পতন হলে খাল প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৩ সালে শি জিনপিং চীনের ক্ষমতায় আসলে তার ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের মধ্যে এই থাই খাল প্রকল্পও থাকে। চীনের উদ্যোগে এই প্রকল্প আবার আলোচনায় এসেছে।

থাই খাল নির্মাণের কারণ

বর্তমানে ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে জাহাজ চলাচলের জন্য তিনটি প্রণালী ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মালাক্কা প্রণালী, সুন্দা প্রণালী এবং লম্বক প্রণালী। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মালাক্কা প্রণালী। থাই খাল নির্মিত হলে মালাক্কা প্রণালীর ক্ষেত্রে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার, সুন্দা প্রণালীর ক্ষেত্রে প্রায় ২,৮০০ কিলোমিটার এবং লম্বক প্রণালীর ক্ষেত্রে প্রায় ৩,৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে আনবে। থাই খাল নির্মিত হলে জাহাজগুলোর প্রায় ২-৩ দিন সময় বাঁচবে। থাইল্যান্ডও অন্যান্য দেশের জাহাজগুলোকে তাদের খাল ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে অর্থ আয় করতে পারবে।  

মালাক্কা প্রণালী প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্রপথ। প্রস্থের দিক থেকে এর সবচেয়ে সরু অংশ সিঙ্গাপুরের নিকটে ফিলিপ চ্যানেলে, যা মাত্র আড়াই কিলোমিটার। এর সবচেয়ে অগভীর অংশের উচ্চতা মাত্র ৮২ ফুট, যা ভারী জাহাজ পরিবহণের উপযুক্ত নয়। ভারী জাহাজগুলোকে তুলনামূলক গভীর লম্বক প্রণালী দিয়ে যেতে হয়।

মালাক্কা প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জাহাজ যাতায়াত করে, যা পানামা ও সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত করা মিলিত জাহাজ সংখ্যারও দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে পানামা ও সুয়েজ খাল দিয়ে মোট ৩২,০০০ জাহাজ চলাচল করে। অন্যদিকে মালাক্কা প্রণালীতে যা ছিল প্রায় তিন গুণ। এই প্রণালীর সবচেয়ে সরু অংশ দিয়ে মাত্র একটি জাহাজ যেকোনো এক দিকে যেতে পারে। এই কারণে এখানে জাহাজ সংঘর্ষে দুর্ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট আমেরিকান এক সামরিক জাহাজের সাথে লাইবেরিয়ান বাণিজ্য জাহাজের সংঘর্ষে ১০ জন মার্কিন নেভির কর্মচারী মারা যান।

মালাক্কা প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জাহাজ যাতায়াত করে; Image Source: Olaf Sch¸lke/S¸ddeutsche Zeitung Photo

মেরিটাইম ইন্সটিটিউট অব মালয়েশিয়ার (মিমা) গবেষণা অনুসারে, মালাক্কা প্রণালীর ধারণ ক্ষমতা বছরে ১,২২,০০০ জাহাজ। কিন্তু গত কয়েক বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও বেড়েছে। ফলে এই রুটে জাহাজের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাংক অনুমান করছে বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে ২০২৫ সালে এই রুটে জাহাজের সংখ্যা হবে ১,৪০,০০০, যা ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি।  

মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো যে তেল আমদানি করে, তা মালাক্কা প্রণালী হয়েই আসে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৯০ শতাংশেরও বেশি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এই প্রণালী দিয়ে আমদানি করা হয়। চীনও ৮০ শতাংশ তেল আমদানি এই রুটেই করে থাকে। মালাক্কা প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবহণ করা হয়, যা বিশ্বের মোট তেল উৎপাদনের ১৭ শতাংশ।

একদিকে মালাক্কা প্রণালীর ওপর অতিরিক্ত বোঝার চাপ, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর চীনের তেল নির্ভরতা দিন দিন বাড়তে থাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এই সমস্যাকে ‘মালাক্কা উভয় সঙ্কট’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। চীনের জন্য তাই বিকল্প রাস্তা প্রয়োজন, যেন মালাক্কার ওপর তাদের নির্ভরতা কমে আসে।

চীন তাই ক্রা ইস্তমাসে কৃত্রিম খাল নির্মাণের জন্য থাইল্যান্ডকে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাছাড়া এখানে প্রায় ৩০ হাজার চীনা শ্রমিকও কাজ করবে। তবে শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থেই চীন এখানে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। এর পেছনে চীনের আন্তর্জাতিক আধিপত্যের উদ্দেশ্যও আছে। এই কারণে থাইল্যান্ডে নীতি-নির্ধারকদের সাথে দীর্ঘদিন লবিং করে আসছে চীন।

ক্রা ইস্তমাস অঞ্চল; Image Source: Wikimedia Commons

থাই খাল প্রকল্পের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘থাই ক্যানেল অ্যাসোসিয়েশন অব স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’। এই সংস্থাটি পরিচালিত হচ্ছে থাইল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা। তাদের সাথে চীনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। তাদের মতে এই খাল শুধু জাহাজ চলাচলেই সাহায্য করবে না, জাহাজ সম্পর্কিত অন্যান্য বাণিজ্যও বাড়িয়ে দেবে। এর মাঝে আছে জাহাজের যন্ত্রাংশ, মেরামত, আইনি সেবা ইত্যাদি। তারা দুটি মুক্ত বাণিজিক এলাকা ও একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের কথাও চিন্তা করছে এই অঞ্চলে।

মালাক্কা প্রণালীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা জলদস্যুদের আক্রমণ। সম্প্রতি জলদস্যুতার প্রবণতা অনেকটা কমে আসলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলকে জলদস্যুদের জন্য অভয়ারণ্যই মনে করা হয়। লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে এই অঞ্চলে ১৩৪টি জাহাজ জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়। ২০১০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৪৪৫। টহলরত পুলিশ, কাস্টমস অফিসার, জাহাজের ক্রু, সমুদ্র বন্দরের কর্মচারীদের দুর্নীতি ও গুপ্তচরবৃত্তির কারণে এই অঞ্চলে জলদস্যুদের উৎপাত আর জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা কম নয়। জলদস্যুদের এড়িয়ে চলাও থাই প্রকল্পের অন্যতম কারণ।

থাই খাল নির্মাণে প্রতিকূলতা

থাই খাল নির্মাণ করা প্রকৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত প্রতিকূল ও বিপজ্জনক একটি প্রকল্প। মালয় উপদ্বীপের সবচেয়ে সরু অংশের প্রস্থ মাত্র ২৬.৫ মাইল হলেও এর সিংহভাগ অংশই তেনাসেরিম পর্বতমালা, যা এই উপদ্বীপের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য এক হাজার মাইলেরও বেশি। বিভিন্ন স্থানে সমুদ্র সমতল থেকে এর উচ্চতা ২৫০ ফুট থেকে শুরু করে ৪,৬০০ ফুট পর্যন্ত। এই পাহাড়ি এলাকা খুঁড়ে খাল নির্মাণ করা খুবই দুরূহ ব্যাপার হবে।

নিয়ন্ত্রিতভাবে ‘ক্যানাল লক’ ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। কিন্তু এই লক নির্মাণ করা অনেক ব্যয়বহুল। সমুদ্র সমতল থেকে ২০০ ফুটের বেশি উচ্চতার খাল নির্মাণের ক্ষেত্রে ছয় থেকে দশটি লক নির্মাণ করতে হবে, যা পর্বতমালার দুই দিকে তিন থেকে পাঁচটি করে থাকতে হবে। 

পানামা খালে ব্যবহৃত ‘ক্যানাল লক’; Image Source: Wikimedia Commons

থাই খালের ক্ষেত্রে বর্তমানে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এতে লক ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা হয়নি। সেক্ষেত্রে হয়তো নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তাছাড়া লক ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। লকে ব্যবহার করা পানি ধরে রেখে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেড়ে যাবে।

খালকে সমুদ্র সমতলে নিয়ে আসতে আনুমানিক ১.৩ বিলিয়ন কিউবিক ইয়ার্ড মাটি সরানোর প্রয়োজন হতে পারে। সুয়েজ খাল ও পানামা খালে যা ছিল যথাক্রমে ৪৩০ ও ৪৬০ মিলিয়ন কিউবিক ইয়ার্ড। ১.৩ বিলিয়ন কিউবিক ইয়ার্ড মাটি ম্যানহাটন দ্বীপকে ৬০ ফুট আবর্জনার নিচে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই বিশাল পরিমাণ মাটি সরানোর কাজটি হবে ভয়াবহ ব্যাপার। যত দূরে সরানোর প্রয়োজন পড়বে, তত এর ব্যয় বাড়তে থাকবে। সমুদ্রে মাটি ফেলে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা অপেক্ষাকৃত সস্তা হবে। কিন্তু এটা পরিবেশের ভারসাম্য ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

থাই খাল আর্থিকভাবেও কতটা লাভজনক হবে তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ গ্যারি নরম্যান বলেছেন, এই খালের খরচ মেটানোর জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে হবে। প্রতিদিন যদি ৪০টি করে জাহাজ এই খাল দিয়ে যায়, তবে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে প্রতিটি জাহাজের খরচ পড়বে ১,১৫,০০০ মার্কিন ডলার। তাছাড়া মালাক্কা প্রণালী এড়িয়ে এই পথে গেলে সময়ও মাত্র দুই দিন বাঁচবে। মালাক্কা প্রণালী আন্তর্জাতিক জলপথের অংশ হওয়ায় এই পথে জাহাজ যাতায়াতে ফি দিতে হয় না। তাই জাহাজগুলো নতুন এই রাস্তা হলে আদৌ কতটুক ব্যবহার করবে, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা।   

এদিকে ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন এই প্রকল্পের উপকারিতা নিয়ে অনেক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তারা বলছেন জাহাজগুলো এই বিকল্প পথ ব্যবহারে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। তার চেয়ে বড় কথা সময় বাঁচবে মাত্র দশ ঘণ্টা! কারণ তুলনামূলক প্রশস্ত মালাক্কা প্রণালীতে জাহাজগুলো ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে যেতে পারে। কিন্তু খাল আরো সরু হওয়ায় এখানে জাহাজগুলোর গতি ঘণ্টায় ১০-১২ কিলোমিটারের বেশি হবে না। এই প্রকল্পে থাইল্যান্ডের সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।  তাছাড়া পর্যটনকেন্দ্রগুলোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। থাইল্যান্ডের জিডিপি’র শতকরা ২০ ভাগ আসে পর্যটন খাত থেকে। তাই এই খালকে থাইল্যান্ডের জন্য সাদা হাতি মনে করছে ভারত। 

১৯৯৩ সালে থাই খালের বদলে এখানে মহাসড়ক ও রেললাইন নির্মাণের চিন্তা করছিল থাইল্যান্ড। দুই প্রান্তেই তেল শোধনাগার ও গুদামঘর নির্মাণেরও প্রকল্প করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পও বাতিল হয়।      

ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

থাই খাল নির্মাণের ফলে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির সমীকরণ উলটপালট হয়ে যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়া বা না হওয়ার সাথে বেশ কয়েকটি দেশের স্বার্থ জড়িত। কারণ খাল নির্মাণ হয়ে গেলে কিছু দেশ ভূরাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে আর কিছু দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রের। সিঙ্গাপুর মালাক্কা প্রণালীর সবচেয়ে সরু অংশের অন্তর্গত হওয়ায় এটি নৌবাহিনীর দিক থেকে প্রতিরক্ষার জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সামুদ্রিক জাহাজগুলোর যাত্রাবিরতির জন্যও সিঙ্গাপুরের বন্দর ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সিঙ্গাপুর বঙ্গোপসাগর ও হংকংয়ের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের সময়ে বাংলায় চাষ করা পপি ফুল ব্রিটিশরা যখন হংকংয়ে জাহাজে করে নিয়ে যেত, তখন সিঙ্গাপুরেই যাত্রাবিরতি নিত।

সিঙ্গাপুরের ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর; Image Source: news.gov.sg

মালাক্কা প্রণালী দিয়ে যত জাহাজ যায়, তার শতকরা ৩০ ভাগ দক্ষিণ চীন সাগরে মালয়েশিয়ান বন্দরগুলোতে থামে। বাকি ৫০-৬০ শতাংশ থামে সিঙ্গাপুরে। থাই খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিঙ্গাপুর দিয়ে যাওয়া জাহাজের সংখ্যা ৩০-৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। সিঙ্গাপুর তার শিপিং শিল্পকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সেবামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তার মধ্যে আছে অর্থ পরিষেবা, ওয়্যারহাউজ, জাহাজ মেরামত কেন্দ্র ইত্যাদি। থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে হয়তো সিঙ্গাপুরের মতো অবস্থায় আসতে সময় লাগবে। কিন্তু তা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ধারণা করা হয় সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকেও থাইল্যান্ডের নীতি-নির্ধারকদের কাছে খাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য লবিং করা হচ্ছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বর্তমানে এই অঞ্চলে জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধে পাহাড়া দেওয়ার কাজ করছে, বিশেষ করে মালাক্কা প্রণালীতে। সিঙ্গাপুরের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী সিঙ্গাপুরের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে পারে এবং জাহাজ মেরামতের সুবিধাও নিতে পারে। তাছাড়া তারা সিঙ্গাপুরের আকাশে এয়ারক্রাফটও ব্যবহার করতে পারছে, যা আকাশপথ থেকে নজর রাখতে পারে এবং সাবমেরিন ধ্বংসকারী হিসাবেও কাজ করতে পারে। থাই খাল নির্মিত হয়ে গেলে সেদিকে আরেকটি বিকল্প পথ তৈরি হয়ে যাবে। থাইল্যান্ডের সামরিক অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে সরে আসলে তারা এখন চীনপন্থী হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সম্পর্ক, তাতে খাল নির্মাণ হলে আমেরিকা এই অঞ্চলে দুর্বল হয়ে পড়বে।

থাইল্যান্ডের জন্য এই খাল বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের উৎস হবে। তবে সুয়েজ খাল ও পানামা খালের মতো কার্যকারিতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় সেগুলোর মতো লাভজনক হতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে আছে প্রশ্ন। থাই উদ্যোক্তারা অবশ্য একে ইউরোপের রটারডাম বন্দরের মতো জাহাজ শিল্পের বিকাশ ঘটাবে বলে প্রচার করছেন।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী এই খালের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের দিকে চলাচল করতে পারবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে খাল লাভজনক না হলে থাইল্যান্ড যদি চীনের ঋণ শোধ করতে না পারে, তবে তারাও শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরের মতো চীনের ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়তে পারে। তখন হয়তো এই অঞ্চলেও চীনের নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।

এই খালটি থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি প্রদেশকে আলাদা করে দেবে। দক্ষিণের পাতানি অঞ্চলে তিনটি প্রদেশের মালয় জাতির মুসলমানরা কয়েক দশক ধরে বিদ্রোহ করে আসছে। এটা থাইল্যান্ডকে বিপদে ফেলতে পারে। পানামা খালের নির্মাণের আগে পানামা ছিল কলম্বিয়ার অংশ। তারা তখন স্বাধীনতা আন্দোলন করে আসছিল। পানামা খাল নির্মাণের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা স্বাধীন দেশে পরিণত হয়। ফলে সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি আজও বিদ্যমান। পানামার ইতিহাস থেকে মনে করা হচ্ছে থাইল্যান্ডকেও চীন ভেঙ্গে দিতে পারে। আর নতুন রাষ্ট্রে চীন এসে সেনা ঘাঁটি স্থাপন করে আঞ্চলিক আধিপত্য জারি করার চেষ্টা করতে পারে। থাইল্যান্ডের জন্য এটি তাই খাল কেটে কুমির নিয়ে আসার মতো পরিণতি হতে পারে।

থাই খাল থেকে সবচেয়ে বড় সুবিধা নিতে পারে শ্রীলংকা। শ্রীলংকার অবস্থান ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে সম্ভাব্য থাই খালের বিপরীতে। এর ভৌগলিক অবস্থান জাহাজ পরিবহণ শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে। হাম্বানটোটা আর কলোম্বো সমুদ্র বন্দরেও চীনের বিনিয়োগ আছে। খাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শ্রীলংকার বন্দরগুলোর আরো আধুনিকায়ন হবে। পণ্যবাহী জাহাজগুলো তখন সিঙ্গাপুরের বদলে শ্রীলংকায় এসে থামবে। যদি সফলতার সাথে খাল নির্মাণ সম্ভব হয়, তবে শ্রীলংকা হয়ে যেতে পারে ভারত মহাসাগরের সিঙ্গাপুর।

শ্রীলংকার হাম্বানটোটা সমুদ্র বন্দর; Image Source: Xinhua/Liu Hongru

থাই খাল থেকে সুবিধা পাবে ভিয়েতনামও। আমেরিকান কোম্পানি বেকটেল ভিয়েতনামের হন খোয়াই দ্বীপপুঞ্জে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে। এটা থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় জাহাজ মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর আর যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। এই বন্দর নির্মাণ ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ দিচ্ছে আমেরিকান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক। এই বন্দরের কৌশলগত অবস্থানের কারণে আমেরিকাও তাই এই অঞ্চলে চীনের জবাব দিতে পারবে। এই বন্দর মূলত ভিয়েতনামের কয়লা রপ্তানির জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তারপরও অর্ধেক অংশ রাখা হয়েছে অন্যান্য পণ্যের জন্য।

ভারতের জন্য এই খাল একই সাথে লাভজনক, আবার ঝুঁকিপূর্ণ। চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব বেড়ে চলছে। এই খাল নির্মাণের ফলে আন্দামান সাগর ও পূর্ব ভারত মহাসাগরে চীনের নৌবাহিনী আরো সহজেই চলাচল করতে পারবে। ভারতের জন্য এটা হবে অস্বস্তির কারণ। ভারত তাই এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। আবার থাই খালে প্রবেশের জন্য পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দিকে হয়ে আসতে হবে। ভারতের এই কৌশলগত অবস্থান ভূরাজনৈতিকভাবে এর গুরত্ব বাড়িয়ে তুলবে। তাছাড়া এতে দক্ষিণ চীন সাগরে ইন্দো-ভিয়েতনাম মৈত্রী আরো সুসংগঠিত হবে।

থাই খাল মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া উভয়ের জন্যই সুসংবাদ নিয়ে আসবে। মিয়ানমার তখন দক্ষিণ চীন সাগরে জাহাজ পরিবহণের সুযোগ পাবে। কম্বোডিয়াও ভারত মহাসাগরের সুবিধা পাবে। দুটি দেশের ক্ষেত্রেই জাহাজগুলোকে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে ১,৫০০ মাইল ঘুরে আসতে হয়। খাল নির্মাণ হলে তাদের সেটা আর করতে হবে না।

এই প্রকল্প চীনকে অনেকগুলো স্তরে সাহায্য করবে। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের সামুদ্রিক সিল্ক রোড তৈরিতে সাহায্য করবে। এর ফলে চীন অর্থনৈতিকভাবে কত গুণ লাভবান হবে তা এখনই বলা অসম্ভব। কারণ এই অঞ্চলে চীন নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলো সমুদ্র বন্দর আছে। তবে সবচেয়ে বড়ো সুবিধাটা পাবে তারা আন্দামান সাগর আর ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনীর অস্তিত্ব জানান দিয়ে। কারণ তখন মালাক্কা প্রণালীর আমেরিকান নৌবাহিনীর বাধার সম্মুখীন আর হতে হবে না। ফলে বলা যায় চীন তখন আমেরিকাকে টেক্কা দিয়ে সুপার পাওয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে যাবে।

থাই খাল প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়িত হতে পারবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। এর কাজ শেষ হতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগতে পারে। যদি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তবে তা এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে অনেক বড়ো প্রভাব ফেলবে।

Related Articles