Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিশিয়ামা ওনসেন কিওনকান: পৃথিবীর প্রাচীনতম হোটেল

অতীতের পৃথিবীতে হোটেলের কোনো প্রয়োজন ছিল না। সম্রাট, বিত্তশালী রাজা ও ধনবান জমিদাররা দূর-দূরান্তের পথিক ও মুসাফিরদের জন্য তৈরি করেন ছিমছাম, সাজানো-গোছানো পান্থশালা। নিরাপদে রাত্রি যাপনের জন্য এসব পান্থশালায় আতিথেয়তা গ্রহণ করতো সেসব মানুষজন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কতক পান্থশালায় থাকতো সুস্বাদু খাবারেরও সরবরাহ। ক্ষুধার্ত মুসাফিরেরা বিনামূল্যে গ্রহণ করতেন এসব ভোজন।

সময়ের নীরব স্রোতে একসময় বিলীন হয়ে গেছে এককালের এসব ধনাঢ্য রাজপরিবারের রাজত্বকাল। সময়ের সর্পিল সাঁকো পেরিয়ে পালাবদল ঘটেছে তাদের তৈরি করা রীতি-নীতিতে। ফলে, কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে এসব পান্থশালার গল্পও। বিপরীতে, বিনে পয়সার পান্থশালার বিকল্প হিসেবে গড়ে ওঠেছে অভিজাত সব হোটেল। পৃথিবীর প্রথম হোটেল কখন ও কোথায় তৈরি হয়েছিল তা আজও অজানা। তবে, ইতিহাসের রোমাঞ্চকর পাতায় জায়গা করে নেওয়া প্রাচীনতম হোটেলটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে সগৌরবে। জাপানে অবস্থিত এই হোটেলের নাম নিশিয়ামা ওনসেন কিওনকান।

৭০৫ সালের কথা, জাপানের সম্রাট তেনজির ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীর একমাত্র সন্তান ছিলেন ফুজিওয়ারা মাহিতো। বাবার সঙ্গে রাজদরবারে তারও ছিল অবাধ যাওয়া-আসা। একদিন তিনি দেখলেন, পান্থশালায় বিশ্রাম নেওয়া কয়েকজন মুসাফির প্রকৃতির পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বেশ জমিয়ে খোশ-গল্প করছেন। দেখে মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এসে ভর করেছে তাদের হৃদয়ে। ভাবনার শৈল্পিক পালে হাওয়ার ঝাঁপটা লাগলো মাহিতোর। ভাবলেন, ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ফুজি পর্বতের অদূরে সবুজ-লালে আচ্ছাদিত এরকম একটি পান্থশালা নির্মাণ করলে কেমন হয়?

পান্থশালার সুস্বাদু সব খাবারের পসরা; Image Source: Rocket News 24

একদিন সময় করে বাবার সঙ্গে আলোচনা করলেন এটি নিয়ে। বাবার সম্মতি পেয়ে একসময় নেওয়া হলো সম্রাটেরও অনুমতি। কিছুদিন পর দেখতে দেখতে সেখানে গড়ে ওঠলো মনোমুগ্ধকর ছোট্ট এক সরাইখানা। যেমনটা তিনি ভেবেছিলেন, প্রকৃতির মনোরম রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকলো এ হোটেলে। ধীরে ধীরে জাপানের বিত্তশালী অভিজাত ব্যক্তিবর্গ, এমনকি সম্রাটেরও চরণধূলি পড়তে লাগলো এখানে। এভাবে একসময় ছোট্ট হোটেলটি হয়ে উঠলো লোকে লোকারণ্য।

সময় গড়িয়ে যায়, নতুনত্বের পানে ধেয়ে চলে জাপানের রাজপরিবারের রাজত্বের গল্প। তবুও সগৌরবে টিকে রয় নিশিয়ামা ওনসেন কিওনকান হোটেল। কিয়ান যুগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ হোটেলের একপাশ দিয়ে বয়ে চলা সুন্দরী নদী যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে হোটেলের মোহনীয়তা। অন্যপাশে দণ্ডায়মান আকাশছোঁয়া পাহাড়, ঘন জঙ্গল ও বন্য ঝোপঝাড় বিভিন্ন ঋতুতে পরিবর্তন আনে তাদের মোহনীয় রূপে। বাহারি রঙের বিকিরণে ঝলসে দেয় হোটেলে আগত পর্যটকদের চোখ ও হৃদয়।

আচমকা একদিন নিষ্ঠুর সত্য মৃত্যুর আহ্বানে হাত বাড়িয়ে মৃতদের দুনিয়ায় পাড়ি জমান হোটেলটির নির্মাতা ফুজিওয়ারা মাহিতো। ফলে প্রকৃতির আপন নিয়মেই হোটেলের কর্ণধার হয় পরের প্রজন্ম। তখন থেকে এখন অবধি প্রায় ৫২ প্রজন্মের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে হোটেলের কার্যভার। এভাবে এখনো চলমান রয়েছে ঐতিহ্যের ধারক এই হোটেলের পরিচালনার কাজ। নবীনদের হাতে হোটেলের দায়িত্বভার আসার পর সংস্কারও হয়েছে বেশ কয়েকবার।

আকাশছোঁয়া পাহাড়, ঘন জঙ্গল ও বন্য ঝোপঝাড়ের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য; Image Source: Uniq Hotels

শেষবার যখন হোটেলের সংস্কার কাজ হয়েছিল তখন ১৯৯৭ সাল। সেসময় নতুন রূপে সংযোজন হয় বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা। যেমন, হোটেলের গরম পানির ঝর্ণার গোসলখানা, মেডিটেশন কক্ষ, অতিথিদের হাঁটা ও বসার জায়গায় প্রদান করা হয় আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে, বেশিরভাগ স্থান এখনো রাখা হয়েছে পূর্বসূরিদের তৈরি করা অভিন্ন আকৃতিতে।

২০১১ সালে প্রায় ১৩১৮ বছর পূর্বে তৈরি হওয়া এ হোটেলটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন হোটেল হিসেবে জায়গা করে নেয় গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ঐতিহাসিক এ হোটেলে এখনো পর্যটকরা আসে অবসর-বিনোদনে, রোমাঞ্চকর কক্ষে রাত্রিযাপনে। হোটেলও তার সৌন্দর্যের পানে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানায় আগের মতোই, সমানতালে। যাবেন নাকি একদিন পৃথিবীর এই প্রাচীন হোটেলে?

This is a Bengali article about the oldest hotel of the world Nishiyama Onsen Keiunkan.
Feature Image: Uniq Hotels
References:
1. The Nishiyama Onsen Keiunkan - Uniq Hotels
2. The World's Oldest Hotel Has Been in the Same Family for 52 Generations - Travel+Leisure
3. Hot Spring Hotel in Japan Has Been Run by the Same Family for 1,300 Years! - Ancient Origins.

Related Articles